মোঃ নুরনবী ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
বার বার লোকসান। তারপরও সাদা সোনা নামে খ্যাত রসুন আবাদে ঝুঁকছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কৃষকরা। গত বছরের তুলনায় চলতি মওসুমে রসুনে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাড়েনি রসুনের দাম। বরং বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গত বছরে রসুনের মূল্য বঞ্চিত হলেও এবছর এই অঞ্চলের কৃষকেরাইদ রসুন চাষ করে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ২৯৫০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরে ছিল ৩৭৫০ হেক্টর। এ বছর রসুনের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কমেছে রসুনের আবাদ। তারপরও সেচ ও সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর উপজেলায় রসুনের ভাল ফলনের মাধ্যমে কৃষক লাভবান হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার জুগীরঘোপা, কায়েমপুর, জোয়ার, কাচিনীয়া, আগ্রা, গুলিয়ারা ও গোয়ালডিহি গ্রামে রসুন বেশি চাষ করা হয়েছে। কেউবা রসুনে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন আবার কেউবা যত্ন নিচ্ছেন। চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত মৌসুমের শুরুতে রসুনের ভালো দাম থাকলেও শেষ সময়ে এসে রসুনের দাম পায়নি কৃষকরা। দাম ভাল না পাওয়ায় এ বছর অনেকেই কমে দিয়েছে রসুন চাষ।
ভাবকি ইউনিয়নের গুলিয়ারা গ্রামের আলামিন ইসলাম জানান, এবছর ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি বীজ, সার-কীটনাশক ও সেচ বাবদ খরচ হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। বপন ও নিড়ানী সহ শ্রমিক খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এতে তার বিঘা প্রতি মোট ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছে। ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ মণ রসুন পাওয়া যায়। গড়ে প্রতি মণ রসুন আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা করে হলে দাম পাওয়া যায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকার মতো। রসুন ঘরে তোলা, বাছাই ও বাজারজাতকরণে আরও প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ বাদ দিলেও লাভ থাকে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
একই এলাকার বাবুল ইসলাম জানান, চলতি বছরে ৩ বিঘা বর্গা (লীজ) নিয়ে রসুন আবাদ করেছেন। রসুন চাষে খরচ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। উপায়ান্ত না পেয়ে এনজিও থেকে লক্ষাধিক টাকা সুদে করে নিয়ে রসুনের আবাদ করেছেন। অনুকুল আবহাওয়া না পেলে অথবা ফসলের ন্যায্য মুল্য না পেলে ঋনের বোঝা সুদের টাকা দিতে পথে বসতে হবে তাকে।
উপজেলা কৃষি অফিসার বাসুদেব রায় জানান, বাজারে দাম ভাল না থাকায় এবছর কমেছে রসুন চাষ। তবে আবহাওয়া ভাল থাকায় এবছর হেক্টর প্রতি ১০ মে.টনের বেশি ফলনের আশা করা যাচ্ছে। এছাড়াও রসুন চাষীদের উৎসাহিত করার জন্য উন্নত জাতের বারি রসুন- ১ ও বারি রসুন-৩ চাষ করতে কৃষকদেরকে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। তাই এবারও রসুনের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
ক্যাপশনঃ খানসামা উপজেলার গুলিয়ারা গ্রামের আলামিন ইসলাম তার রসুন ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন।