মোঃ শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ করা হচ্ছে দুই ভাগে। সিরাজগঞ্জ প্রান্তের ১ নম্বর পিলার থেকে মাঝনদী বরাবর ২৩ নম্বর পিলার পর্যন্ত কাজ করছে জাপানের আইএইচআই ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিস্টেমস ও সুমিতোমো মিত্সুই কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের জয়েন্ট ভেঞ্চার (আইএইচআই-এসএমসিসি)। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর পশ্চিম প্রান্তের ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার অংশের কাজ করছে এ প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে মাঝনদীর ২৪ নম্বর পিলার থেকে টাঙ্গাইল প্রান্তের ৫০ নম্বর পিলারের কাজ করছে আরেক জাপানি ঠিকাদার ওবায়েশি করপোরেশন, টিওএ করপোরেশন ও জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের জয়েন্ট ভেঞ্চার (ওটিজে)।
প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির মাধ্যমে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর জন্য সুপারস্ট্রাকচার তৈরি করছে এগুলোর নির্মাণকাজ তদারকিতে সুপারভাইজারও নিযুক্ত করেছেন ঠিকাদাররা। পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়েও তৃতীয় পক্ষের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুপারস্ট্রাকচারগুলো পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছে। রেলওয়ের নিয়োগ দেয়া এ প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্র দেয়ার পর সেগুলো আনা হবে বাংলাদেশে।
তিন ধরনের সুপারস্ট্রাকচার তৈরি করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর জন্য—টাইপ সি, টাইপ বি ও টাইপ এ।দুটি টাইপ সি সুপারস্ট্রাকচার বসানো হবে সেতুর দুই প্রান্তে। দুই স্প্যান দিয়ে তৈরি হচ্ছে একটি টাইপ সি সুপারস্ট্রাকচার, যা বসবে তিনটি পিলারে। দুই প্রান্তে দুটি টাইপ সি সুপারস্ট্রাকচারের পর সেগুলোর সঙ্গে বসানো হবে দুটি টাইপ বি সুপারস্ট্রাকচার। তিনটি স্প্যান নিয়ে হবে একেকটি টাইপ বি সুপারস্ট্রাকচার, যা বসবে চারটি পিলারে। মাঝের পিলারগুলোয় বসানো হবে টাইপ এ সুপারস্ট্রাকচার। এগুলোর প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার।
পুরোপুরি তৈরি অবস্থায় ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসবে এসব সুপারস্ট্রাকচার। বাংলাদেশে আনার পর এগুলোয় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না। নির্মাণ করা ৫০টি পিলারের ওপর এসব সুপারস্ট্রাকচার বসালেই তৈরি হবে যাবে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর পরিকাঠামো। এ কাঠামোর ভেতরেই বসানো হবে রেলপথ।
বর্তমানে সুপারস্ট্রাকচারগুলো ফেব্রিকেশন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্যাকেজ-১-এর সব সুপারস্ট্রাকচার ফেব্রিকেশনের কাজ শেষ হয়েছে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত রেলসেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ। করোনা মহামারীর কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। এজন্য ঠিকাদারদের বাড়তি কয়েক মাস সময় দেয়ার প্রয়োজন হবে। পরিকল্পনা হচ্ছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি বাড়ানোর। এ সময়ের মধ্যেই সেতুর সব কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল শুরু করা সম্ভব হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর সিরাজগঞ্জ অংশে (প্যাকেজ-২) পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে নয়টি পিলারে।নির্মাণযন্ত্রের পাঁচটি ইউনিট দিয়ে চলছে পাইলিংয়ের কাজ। এ অংশে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কাজের অগ্রগতি তুলনামূলক কম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইএইচআই-এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পের নির্মাণযন্ত্রগুলো আনার কথা ছিল মিয়ানমার থেকে। কিন্তু দেশটিতে সমরিক শাসন জারি হলে পরিকল্পনায় বদল এনে অন্য দেশ থেকে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়। এজন্য অগ্রগতি কিছুটা কম। তবে কাজে গতি আনতে আরো একাধিক সেট নির্মাণ উপকরণ আগামী মে মাসের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে অগ্রগতি বিবেচনায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই এগোচ্ছে টাঙ্গাইল অংশের (প্যাকেজ-১) কাজ। ২৭টি পিলারের মধ্যে ২৪টিতেই চলছে পাইলিংয়ের কাজ পাইলিং শেষ করে ৪৫ থেকে ৪৯ নম্বর পিলারে চলছে এখন কাঠামো তৈরির কাজ। প্রকল্প এলাকায় দায়িত্বরত
ওটিজে জয়েন্ট ভেঞ্চারের জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. আসাদ বণিক বার্তাকে বলেন, নির্মাণকাজ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ২৭ থেকে ৫০ নম্বর পিলারের পাইলিং করা হচ্ছে। তবে পর্যায়ক্রমে শুরু করায় কোনো পিলারে পাইলিং কাজের অগ্রগতি বেশি, কোনোটিতে তুলনামূলক কম।
সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের মধ্যে বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুটি চালু হয় ১৯৯৮ সালে। এ সেতুতে ডুয়াল গেজের একটি রেলপথ থাকলেও সেতুর নিরাপত্তার জন্য ট্রেন পরিচালনা করা হয় অত্যন্ত ধীরগতিতে। চলতে পারে না পণ্যবাহী ট্রেন। নতুন রেলসেতুটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন আসবে। কমবে ভ্রমণ সময়। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেলসেতুটি চালু হলে ঢাকা থেকে খুলনার মধ্যে যাতায়াতে ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিট সময় বাঁচবে। একইভাবে ঢাকা-রাজশাহীর মধ্যে দেড় ঘণ্টা, ঢাকা-দিনাজপুরের মধ্যে ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিট ও ঢাকা-রংপুরের মধ্যে যাতায়াতে সময় বাঁচবে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট। পাশাপাশি ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ লিংক হয়ে উঠবে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু।