প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বাগেরহাটের চিতলমারিতে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় নৃশংসভাবে যুবককে কুপিয়ে হত্যার মূল হোতাসহ ০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব ৬।
র্যাব ফোর্সেস আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে এবং সন্মানিত নাগরিকদের জন্য টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের আলোকে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানা এলাকার মাদ্রাসা পড়ুয়া এক কিশোরীকে স্থানীয় বখাটে দ্বীন ইসলাম মুন্সি প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে আসছিল। গত ২৫ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ উক্ত কিশোরী দর্জি বাড়ি থেকে বোরকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বখাটে দ্বীন ইসলাম তাকে বিভিন্ন ধরণের কু-প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে। বখাটে দ্বীন ইসলামের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে শ্লীলতাহানী করে ও চড় থাপ্পর মারে। কিশোরী বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি পরিবারের কাছে জানায়। কিশোরীর চাচাতো ভাই ভিকটিম জব্বার শেখ(৩৫) বখাটে দ্বীন ইসলামের বাড়ীতে গিয়ে উক্ত ঘটনার উপযুক্ত বিচার দাবি করলে আসামীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেয়। গত ০৫ মে ২০২৩ তারিখ রাতে ভিকটিম জব্বার শেখ ও তার শ্যালক রাজিব শেখ চিতলমারী থানাধীন কলিগাতী বাজার থেকে মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথিমধ্যে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ওঁত পেতে থাকা বখাটে আসামী দ্বীন ইসলাম, তার ভাই দেলোয়ার ও বাবা ডাবলু মুন্সিসহ তাদের সহযোগীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলাপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ভিকটিম জব্বার শেখ ও রাজিব শেখকে গুরুতর জখম করে। ভিকটিম জব্বার শেখ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আসামী ডাবলু মন্সি ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভিকটিম রাজিব শেখকে কোপ দিলে তার নাড়িভূড়ি বের হয়ে ঝুলে পড়ে। ভিকটিমের ভাই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভিকটিম জব্বার শেখ ও রাজিব শেখকে উদ্ধার করে চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জব্বার শেখকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর ভিকটিম রাজিবকে মুমূর্ষু অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে এলাকাবাসী স্তম্ভিত হয়ে পড়ে এবং ক্ষোভে ফেটে পরে। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় উত্তেজিত জনতা আসামীদের চারটি ঘরে আগুন দিয়ে ভস্মিভূত করে দিয়ে তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। বর্বর হত্যাকান্ডের ঘটনায় সর্বস্তরের এলাকাবাসী প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে এবং গত ৮ মে ২০২৩ তারিখ চিতলমারীর ত্রিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাধারন শিক্ষার্থী ও বিপুল সংখ্যক এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার ও জব্বার শেখের হত্যাকান্ডের সঠিক বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এ ঘৃণ্য হত্যাকান্ডটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হয় এবং জনমনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
এ বিষয়ে ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকান্ডের বিষয়ে জানতে পেরে র্যাব-৬ (সদর কোম্পানি) খুলনার একটি আভিযানিক দল ছায়া তদন্ত শুরু করে ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৬ (সদর কোম্পানি) খুলনার একটি চৌকস আভিযানিক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যশোর জেলার কোতয়ালী থানাধীন সাখারিগাতী এলাকা হতে ০৮ মে ২০২৩ তারিখ হত্যাকান্ডের মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যে উক্ত হত্যা মামলার পলাতক প্রধান ০৩ আসামী ১। দেলোয়ার হোসেন ওরফে সবুজ মুন্সি(৩০), ২। দ্বীন ইসলাম ওরফে আকাশ মুন্সি (২৬) ও ৩। ছত্তার ওরফে ডাবলু মুন্সি (৫৫) সর্ব সাং-গোড়া নালুয়া, থানা-চিতলমারী, জেলা-বাগেরহাটদের গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানায় হস্তান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন