মোঃ শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মা-বাবার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী শিল্পী খাতুনের পাশে দাঁড়িয়েছেন দ্য বার্ড সেফটি হাউসের চেয়ারম্যান ও সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস।
সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুরা এলাকায় শিল্পীর পরিবারকে স্বাবলম্বী করার জন্য একটি ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান, চারটি ছাগল, জামা-কাপড় ও খাদ্যসামগ্রীসহ নগদ টাকা তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ ইশরাত জাহান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব, ফলদা শরিফুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার দত্তসহ স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এর আগে শিল্পীর পরিবারের জন্য মানবিক সহায়তা চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন মামুন বিশ্বাস। পরে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ আর্থিক সহায়তা পাঠান।
জানা গেছে, উপজেলার অর্জুনার জগৎপুরা গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাসমত মোল্ল্যার (৮০) ছোটবেলায় জ্বর হওয়ার পর সঠিক চিকিৎসা না করায় দৃষ্টি হারান। বসতবাড়ি যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে মধ্য জগৎপুরা সড়কের পাশে একটি টিনের ঘর তুলে সেখানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম মানসিক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী এবং মেয়ে শিল্পী শারীরিক প্রতিবন্ধী।
বিভিন্ন নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ঠিকই কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা পরে তাদের খোঁজখবর নেন না। ফলে প্রতিবন্ধী হলেও সরকারি কোনো ভাতার আওতায় আসেনি। পাননি কোনো সরকারি সহযোগিতা। এতে জীবন বাঁচাতে প্রতিবন্ধিতা দূরে ঠেলে শিল্পী খাতুন রাস্তায় ও হাট-বাজারে ভিক্ষাবৃত্তি করে মা-বাবার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। তবে সারা দিনের ভিক্ষার টাকায় সংসার চলে না। শরীরে অসুখ বাসা বাঁধলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারেন না তারা।
মামুন বিশ্বাস বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি অসহায় ওই পরিবারটির কথা। পরে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিল্পীদের স্বাবলম্বী করতে এবং পাশে দাঁড়াতে ফেসবুকে একটি পোস্ট করি। এতে অনেকেই তাদের সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছেন।
তিনি আরো বলেন, পরিবারটির জন্য ১ লাখ ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে সেই টাকায় তাদের জন্য একটি ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান, চারটি ছাগল, তার পরিবারের সবার জন্য দুটি করে পোশাক, খাদ্যসামগ্রী, টিউবওয়েল মেরামতসহ নগদ টাকা দেওয়া হয়। শিল্পীকে আর ভিক্ষাবৃত্তি করে তার বাবা-মাকে খাওয়াতে হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ ইশরাত জাহান বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরই বিষয়টি নজরে আসে। পরে দ্রুত শিল্পী ও তার বাবার ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। অসহায় পরিবারটির জন্য এগিয়ে আসার জন্য সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে ধন্যবাদ জানান তিনি।