রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতাঃ
রামগঞ্জে সেবার নামে চলছে অমানবিক চিকিৎসা বাণিজ্য। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার কর্মচারী-কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিশন দিয়ে চলছে এসব প্রাইভেট হাসপাতাল। সর্দি-কাশি চুলকানি থেকে শুরু করে যেকোনো রোগী জরুরী বিভাগ কিংবা বহির্বিভাগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে মোটা অংকের কমিশন প্রপ্তিতে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করার জন্য ডাক্তাররা বেশিরভাগ রোগীকে ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন।
এইসব হাসপাতাল ক্লিনিক গুলোতে নিজস্ব সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ হাসপাতাল- ক্লিনিকে নিজস্ব কোনো চিকিৎসক নেই, নেই কোন ডিপ্লোমা ডিগ্রী দ্বারী নার্স, কোথায় কোথায় ও দেখা মিলেনা ডিপ্লোমা ডিগ্রীদ্বারী প্যাথলোজিস্ট। অন কলের মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকগণ এই হাসপাতাল ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সরকারি হাসপাতালগুলোর পাঁচশত গজ দূরত্বের মধ্যে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকতে পারবে না।
এমন আইন থাকলেও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ঘিরে ১০ থেকে ৫০ গজের মধ্যে রয়েছে ৪টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এ ছাড়াও এসব প্রতিষ্ঠানের বৈধ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার পিছনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন সুধী সমাজ। জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একশ্রেণীর ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও আয়া এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সাথে নির্ধারিত কমিশন বানিজ্যে জড়িত।
অনেক ডাক্তার ডিউটিও করেন। তাছাড়া প্রত্যেকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্ট সেন্টারের পক্ষ থেকে বহিরাগত একটি দালাল চক্র রয়েছে। ফলে হাসপাতালে আসা রোগীদেরকে নানা সমস্যা দেখিয়ে ভাগিয়ে নিচ্ছে ওই সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। এতে গ্রাম থেকে আসা নিরীহ মানুষ গুলি দালালদের খপ্পরে সর্বশান্ত ও চরম ভোগান্তি স্বীকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৩১ শষ্যা বিশিষ্ট রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ থেকে ৫০ গজের মধ্যে রামগঞ্জ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টি সেন্টার, ডক্টরস পয়েন্ট এন্ড ডায়াগনস্টিক, মেডিনোভা ডায়াগনস্টি সেন্টার ও উদ্ভোধনের অপেক্ষায় রয়েছে রামগঞ্জ ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তালিকায় রয়েছে হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাঃ গুনময় পোদ্দারসহ মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ নাজমুল হক, ডাঃ রওশন জামিল ভূইয়া, ডাঃ ফরহাদুল কাদের। সরকারী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ডাক্তারের রুমে সামনে রয়েছে ১ থেকে ২ জন করে একটি দালাল চক্র। তারা রোগী স্লিপ নিয়ে বাহির হলে টানা হেছড়া শুরু দেয়।
উপজেলা ভাটরা থেকে নিরা বেগম (৪০) নামের একজন রোগী ডাঃ নাজমুল হকের চেম্বার থেকে বাহির হলে স্লিপটি টেনে নিতে চেষ্টা করে রাজন নামের একজন দালাল। এ সময় রাজন তাকে রামগঞ্জ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক পরিচয় দেয়। এর কিছুক্ষন পর সোয়া ১১টায় ডাঃ নাজমুল হক কল পেয়ে দ্রুতগতিতে হাসপাতালের রোগী রেখে চলে যান ডক্টরস পয়েন্ট এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখতে। একই সময় রামগঞ্জ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় সরকারী হাসপাতালের স্লিপ হাতে পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে আসছে জগতপুর গ্রামের সাদিয়া আক্তারসহ ১০ থেকে ১৫ রোগী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন ষ্ট্রাপ বলেন- হাসপাতালে এ গুলি নিত্য দিনের ঘটনা।
এ হাসপাতালের লোকজন জড়িত থাকার কারনে তারা এসব করতে পারে। শিক্ষক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, সমাজকর্মী জহিরুল ইসলামসহ অনেকে বলেন- প্রতিদিন গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল ,গরীব অসহায় নারী পুরুষরা সরকারী হাসপাতালের লোকজনের যোগসাজসে প্রাইভেট ক্লিনিক গুলির দালালের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে বদনাম হচ্ছে।
এদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে বলে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। রামগঞ্জ ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এমডি বাচ্ছু মিয়া বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন পায়নি, তবে পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইন্সেস নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছি। অনুমোদনের জন্য কাগজপত্রও জমা দিয়েছি। রামগঞ্জ উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ গুনময় পোদ্দার জানান, হাসপাতাল সংলগ্ন এসব অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলির ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শীঘ্রই ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। হাসপাতালের ডাক্তারদেরকে নির্দেশনা দেওয়া আছে ডিউটির সময় অন্য কোথাও চেম্বার করতে পারবে না। তারপরও যদি কেউ অমান্য করে তাহলে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ক্লিনিক গুলি অনুমতি ব্যাতিত আমার নামসহ ডাক্তারদের নাম ব্যবহার করছে।