![](https://banglaralonews.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
স্বীকৃতি বিশ্বাস
কাব্য সাহিত্য, সঙ্গীত রচয়িতা, নাট্যকার, সাংবাদিক, পত্রিকা সম্পাদনার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত সিকান্দার আবু জাফরের আজ ১০৩ তম জন্মদিন।
তিনি ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্ণ নাম সৈয়দ আল্ হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখ্ত সিকান্দার। পিতার নাম সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেম। পেশায় তিনি কৃষক ও ব্যবসায়ী ছিলেন। পিতৃব্য সৈয়দ জালালুদ্দীন হাশেম। সিকান্দার আবু জাফর স্থানীয় তালা বি.দে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর আবু জাফর কলকাতার রিপন কলেজে (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ আইন কলেজ) পড়েন।
১৯৪১ সালে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের নবযুগ পত্রিকায় যোগ দেন। এছাড়া তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মিল্লাত-এ চাকরি করেন। “ জনতার সংগ্রাম চলবেই,আমাদের সংগ্রামচলবেই ”-তার রচিত বিখ্যাত গান। দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। পঞ্চাশের দশকে রেডিও পাকিস্তানের শিল্পী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি সাহিত্য পত্রিকা ‘সমকাল’-এর প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্যিক হিসেবে সিকান্দার আবু জাফরের যে খ্যাতি তার চেয়েও অনেক বেশি প্রসিদ্ধ সাহিত্য সম্পাদক হিসাবে। সাহিত্য পত্রিকা “সমকাল”-এর প্রকাশনা ও সম্পাদনা তাঁর জীবনের একটি তাৎপর্যময় ঘটনা। পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে তিনি পূর্ববঙ্গের সাহিত্য আন্দোলনে নতুন যুগের সঞ্চার করেন।
এ পত্রিকায় ষাটের দশকের নামি-দামি সকল কবি-লেখকের রচনা প্রকাশিত হয়। লেখার সাবধানি ও নৈর্ব্যক্তিক নির্বাচন, প্রতিভাবান নতুন লেখকদের মর্যাদা প্রদান, মনোযোগী সম্পাদনা এবং মুদ্রণ পরিপাট্যের জন্য “সমকাল” সকল কবি- সাহিত্যিক নিকট স্বপ্নের পত্রিকা হয়ে উঠেছিল। একই সঙ্গে এটি প্রগতিশীল বাংলা সাহিত্য ধারার অগ্রগামী সাহিত্য পত্রে পরিণত হয়েছিল। তার নিজরেও প্রচুর লেখা এ পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ‘বাংলা ছাড়ো’ কবিতাটি।
সিকান্দার আবু জাফরের সাহিত্য প্রতিভার প্রকাশ ঘটে কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস, কিশোর সাহিত্য ও অনুবাদে। কবি প্রতিভার প্রকাশ ঘটে তাঁর লেখা প্রসন্ন প্রহর (১৯৬৫), বৈরী বৃষ্টিতে (১৯৬৫), তিমিরান্তিক (১৯৬৫), বৃশ্চিক লগ্ন (১৯৭১), বাংলা ছাড় কাব্য গ্রন্থের মাধ্যমে। নাটক সম্পাদনা করেন সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৫), মহাকবি আলাওল (১৯৬৬), শকুন্ত উপাখ্যান (১৯৫২), মাকড়সা (১৯৬০)।
সমাজের একটি বিশেষ আবেগ প্রবণ শ্রেণী কিশোর- কিশোরী। এদের কথা মাথায় নিয়ে জয়ের পথে,নবী কাহিনী।উপন্যাস রচনা করেন মাটি আর অশ্রু,পূরবী, নতুন সকাল,জয়ের পথ।অনুবাদ করেন রুবাইয়াৎ ওমর খৈয়াম,সেন্ট লুইয়ের সেতু,বারনাড মালামুডের যাদুর কলস।
তিনি ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরষ্কার, ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর একুশে পদক ও ১৯৯৯ সালে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় গুণাম্বিত প্রখ্যাত কবি সিকান্দার আবু জাফর -এর জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।