রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দুই দিনব্যাপী শৈত্যোৎসব ও পিঠা-পুলি মেলা শুরু হয়েছে। এবারের মেলায় দুই শতাধিক বাহারি পদের পিঠা নিয়ে প্রায় অর্ধ শতাধিক স্টল বসেছে। এদিকে ‘শ্বশুরবাড়ি পিঠার’ স্টলেই ৫০ পদের বাহারি পিঠা নিয়ে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১০ শিক্ষার্থী।
শ্বশুরবাড়ি পিঠার স্টল থেকে দুই দিনব্যাপী পিঠা বিক্রি করে যা লভ্যাংশ হবে তার ১০% অর্থ দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) রাতে হেঁটে হেঁটে চা বিক্রি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা খরচ চালানো এক অসহায় মায়ের পাশে দাঁড়াবেন স্টলের আয়োজক সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্রশিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (টিএসসিসি) সামনে এ মেলা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউলিয়ানার আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ পিঠা-পুলি উৎসব।
সরেজমিনে গিয়ে শ্বশুরবাড়ি পিঠার স্টলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা তাদের নিজের হাতের তৈরি নকশী পিঠা, ডিমের পিঠা, জামাই পিঠা, ঝাল পুলি, সুজি পিঠা, জামাই পিঠা কম্ব, গোলপ পিঠা, প্যাপার পিঠা, গোলাপ ফুল, ক্ষীর পুলি, চুই সেমাই, ঝিনুক পিঠা, তিলের ভাপা পুলি, গাজরের নারুসহ অর্ধ শতাধিক পিঠা নিয়ে বসেছেন। ৬ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে পাওয়া যাচ্ছে এসব পিঠা। রঙবেরঙের পিঠা খেতে স্টলের সামনে ভিড় জমিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
‘শশুরবাড়ি পুলির আসর’ স্টলের উদ্যােক্তারা জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পিঠা উৎসব খুবই জমজমাট হয়ে থাকে। এখানে এসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শীতের পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি দারুণ সময় কাটান। এবছর শখের বসে বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে এ স্টল নিয়ে বসেছেন তারা। আনন্দের সাথে সবাই মিলে পিঠা বানানো, স্টলে বসে বিক্রি করা, সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়ে অনবদ্য সময় অতিবাহিত হচ্ছে তাদের। এছাড়া পিঠা বিক্রির যে লভ্যাংশ থাকবে তার দশ শতাংশ অসহায় মানুষের সাহায্যের জন্য ব্যয় করবেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মিরাজ আহমেদ বলেন, পিঠা মেলাতে এসে হরেকরকম পিঠাপুলি দেখে খুবই ভালো লাগছে। অনেক ধরণের পিঠা খেলাম। তবে আজকের এ মেলাতে সবচেয়ে ভালো লেগেছে শশুরবাড়ি পুলির আসরের ব্যতিক্রমধর্মী এমন উদ্যােগ। লভ্যাংশের দশ শতাংশ অসহায় মানুষের সাহায্যে ব্যয় করার সিন্ধান্ত নিয়েছে তারা। সাধুবাদ জানাচ্ছি তাদের এ মহান উদ্যােগকে।
স্টলের উদ্যােক্তাদের একজন সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, লাভের অংশের ১০% আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অসহায় মানুষের পিছনে খরচ করতে চাই। আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মা কে চিনি। যিনি হাজারো উপার্জনে সক্ষম হয়েও ভীক্ষাবৃত্তি করা মানুষের সারিতে না দাড়িয়ে একটা ফ্ল্যাক্স আর কয়েকটা ওয়ানটাইম গ্লাস নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেন। তিনি তার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানোর জন্য অনবরত সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। পুরো শীতের সময় সন্ধ্যা থেকে ৮/৯টা পর্যন্ত জোহা চত্বরের সামনে চা বিক্রি করেন তিনি। তার সংগ্রামকে আমরা আন্তরিকভাবে সম্মান জানাই। যতবার দেখা হয় আমাদের “বাবা” বলে সম্বোধন করে। তাই আমরা সন্তান হিসেবে এই “মা” কে আমাদের লভ্যাংশ থেকে সহযোগিতা করতে চাই।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দিনব্যাপী দেড় শতাধিক বাহারি পদের নকশি পিঠা নিয়ে জমে উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শৈত্যোৎসব ও পিঠা-পুলি মেলা ১৪৩০। আছে নাচ-গান-আনন্দ-উল্লাস, আবৃত্তি, বিতর্কসহ সাংস্কৃতিক আয়োজনও।