প্রেস বিজ্ঞপ্তি
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার’কে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-২।
”বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোরাল ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, খুনী, ছিনতাইকারী, অপহরণ প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িত দীর্ঘদিনের পলাতক দন্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব ইতোমধ্যে জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
র্যাব-২ এর বিশেষ অভিযানে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার’কে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধাপরাধী মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার সহ রাজাকার বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার হাতালিয়া এলাকা ও চরখালী এলাকায় অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা-গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কাজ করে। রাজাকার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে ধৃত আসামি মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার উপরোল্লিখিত মানবতা বিরোধী কাজে সরাসরি অভিযুক্ত।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার সহ অন্যান্য রাজাকারা পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানার পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামের বৌদ্ধ বিহারী পল্লীর চিত্ত রঞ্জন বেপারী, সুধীস চন্দ্র বেপারী, স্বরৎ চন্দ্র মাঝি, রশিদ ঘরামী, ওপেন্দ্র নাথ মিস্ত্রি, গঙ্গাচর, নিরোধ চন্দ্র বালা, অমূল্য, সর্মূল্য ও অনন্ত চাষিকে গুলি করে হত্যা করে।
এছাড়াও লুট, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মত অপরাধে জড়িত ছিল। উক্ত ঘটনায় ২০১৫ সালে নিহত নিরোধ চন্দ্র বালার ছেলে বিজয় চন্দ্র বালা পিরোজপুর আদালতে ধৃত আসামী মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার ও তার সহযোগী অন্যান্য রাজাকারদের বিরুদ্ধে অবৈধ আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ, হত্যা-গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অপরাধে একটি মামলা করেন।
পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৬ইং সালের ১২ এপ্রিল তদন্ত শুরু করেন এবং ২০১৮ সালের ০৬ নভেম্বর মামলার তদন্ত শেষ করেন।
তদন্ত শেষে ৩৩ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যের প্রেক্ষিতে আসামির বিরুদ্ধে ভান্ডারিয়া থানার পূর্ব পশারিবুনিয়া গ্রামের সাতজনকে ধরে নিয়ে হত্যা, চরখালী গ্রামের সুরবালা দাসীকে ধর্ষণ, চরখালী গ্রামের চন্দ্র কান্তি মিস্ত্রি ও মনোরঞ্জন মিস্ত্রিকে ধরে নিয়ে নির্যাতন এবং পূর্ব পশারিবুনিয়া ও হাতালিয়া গ্রামের ১৮ জনকে হত্যার অভিযোগ ছাড়াও অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ০৪টি অভিযোগ আনা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক একটি মামলা যার কমপ্লেইন্ট রেজিঃ ৬৬, তারিখ ১২/০৪/২০১৬ইং, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (বাংলাদেশ) মামলা নং-০২/২০১৯ রুজু হয়। আসামির বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার এর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ২০/০৭/২০২৩ইং তারিখ মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার’কে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। র্যাব-২ বর্ণিত মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ডিত পলাতক আসামি মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার’কে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-২ এর নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ২১/০৯/২০২৩ইং তারিখ রাত অনুমান ২০.০০ ঘটিকায় অভিযান পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (বাংলাদেশ) কর্তৃক মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামি যুদ্ধাপরাধী মোঃ নুরুল আমিন হাওলাদার, পিতা-মৃত সামছুল হক হাওলাদার, সাং-হাতালিয়া, থানা-ভান্ডারিয়া, জেলা-পিরোজপুর’কে ডিএমপি ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন ঢাকা উদ্যান এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
শিহাব করিম, সিনিঃ এএসপি
সিনিঃ সহকারী পরিচালক (মিডিয়া)
পক্ষে অধিনায়ক
মোবাঃ ০১৭৭৭-৭১০২০৩