রবিউল ইসলাম, রাজশাহী প্রতিনিধিঃ আপনারা আমার মুরগিগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন বিদ্যুৎ বন্ধ হলে ফ্যান বন্ধ হয়ে যাবে। ফ্যান বন্ধ হলে তিব্র গরমে আমার মুরগিগুলো মারা যাবে। দয়া করে আমাকে ১ঘন্টা সময় দিন। আর্তনাদ, অনুরোধ, কাকুতি-মিনতি করে কথাগুলো বলছিলেন, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ছাতারী গ্রামের আরাফাত পোল্টি ফার্মের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন।
সোমবার (১৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ছাতারী গ্রামে আরাফাত পোল্টি ফার্মে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মরে যাওয়া মুরগি গুলোর সাথে নিজের ছবি তুলে এভাবেই অসহায়ত্তের কথা বলেন জাহাঙ্গীর।
জানা যায়, নাটোর পল্লী বিদুৎ সমিতি-২ এর বাঘা জোনাল অফিসের একটি দল উপজেলার ছাতারি গ্রামের আরাফাত পোল্টি ফার্মে অভিযান পরিচালনা করেন।
মাত্র দুই মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে খামারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ সময় পল্লী বিদ্যুতের অভিযান দলকে অনেক অনুরোধ, আর্তনাদ ও আকুতি-মিনতি করে ১ ঘন্টা সময় চেয়েছিলেন খামার মালিক। প্রয়োজনে তাৎক্ষনিক টাকাও পরিশোধ করতে চেয়েছিলেন সে।
এতেও কোন লাভ হয়নি খামারী জাহাঙ্গীরের। রাখা হয়নি তার আকুল আবেদন ও রাখা হয়নি কোনো কথা। বিছিন্ন করা হয়েছে সংযোগ। জৈষ্ঠের তীব্র গরমে সংযোগ বিচ্ছিন্নের কয়েক ঘন্টার মধ্যে স্টোক করে মারা যায় খামারের অর্ধশতাধিক ডিম উৎপাদনকারী মুরগি। এছাড়া আরও শতাধিক মুরগি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েন খামার মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যেহেতু ওই দিন গরমের মাত্রা ছল তীব্র যার কারনে বিদ্যুৎ অফিস তার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পারতেন।
বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখার কারণ জানতে চাইলে খামার মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, খাবার ও ঔষধের দাম বাড়তি ডিম বিক্রি করে খাবারের দাম দিতেই সব ফুরিয়ে যায়। তবুও আমি অনেক কষ্ট করে টাকা যোগার করেছিলাম কিন্তু আমি বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়ার আগেই তারা আমার বাড়িতে হাজির হন এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। জাহাঙ্গীর হোসেন জরিমানাসহ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে নতুন সংযোগ পায় বিকেল ৫ টার দিকে। এর মধ্যেই খামারের অর্ধশতাধিক মুরগি মারা যায়। জাহাঙ্গীর হোসেন আরও বলেন, আমাদের মতো খামারীদের প্রতিনিয়ত নানা রকম ঝুকি মোকাবেলা করে খামার পরিচালনা করতে হয়। রাত-দিন কষ্ট ও পরিশ্রম করে আমরা খামার পরিচালনা করি। এতে দেশের মানুষের জন্য আমিষের চাহিদা পূরন হয়। আমারা কি এতটুকু মানবিক অধিকার পেতে পারিনা।
বিষয়ে বাঘা সাব-জোনাল অফিসের ডিজিএম শ্রী সুবীর দত্ত বলেন, তার ৩ মাসের বিদ্যুৎ বিল বাঁকী রয়েছে। তাছাড়া সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ৩ ঘন্টার মধ্যে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এমনো দিন আছে,জান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৫/৭ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকেনা। অথচ ৩ ঘন্টার ব্যবধানে এতো মুরগি মারা যায়। এটা বিশ্বাস করা কঠিন বলে আমার মনে হয়।
উল্লেখ্য,খামারী জাহাঙ্গীরের জরিমানাসহ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের শেষ সময়-১৩ ই জুন ছিলো। এর পরেও তার কথায় কনো কর্ণপাত করা হয়নি। পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের এমন নির্দয় আচরণে মারা গেছে ডিম উৎপাদনকারী মুরগী, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে খামারী। এ-র দায় এখন কে নেবে ?