বেড়া প্রতিনিধি : পাবনার বেড়া বালিকা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নায়েব আলীকে গত বছরের ১৯ জুলাই বিধি বহির্ভূতভাবে তৎকালীন এডহক কমিটি সাময়িকভাবে বহিস্কার করে। বিধি অনুযায়ী বহিস্কারকালীন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতার অর্ধেক প্রাপ্য এবং প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আলাদা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার কথা। কিন্তু তাকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও এডহক কমিটি বহিস্কার করার এখতিয়ার রাখেন না।
স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি নায়েব আলী কে স্কুলে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষক স্কুলে গেলে ওই ব্যক্তি বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের গালিগালাজ করেন ও তাদের হুমকি প্রদান করে থাকেন।
গত ১ জুন নায়েব আলী কিছু সময়ের জন্য স্কুলে গেলে তার কিছুক্ষণ পরেই স্কুলে উক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রবেশ করে খণ্ডকালীন পিয়ন (দারোয়ান) মনিরকে প্রধান শিক্ষক নায়েব আলীর প্রবেশের অপরাধে তাড়িয়ে দেন।
জানা যায়, বেড়ার জনৈক প্রভাবশালী ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের পুকুর ভোগদখল করাসহ স্কুলের জায়গা দখল করে পাশ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রান্নাঘর তৈরির চেষ্টা করলে প্রধান শিক্ষক নায়েব আলী তাতে বাঁধা দেন। সেই থেকে নায়েব আলীর সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করে স্কুলের সর্বনাশ করে চলেছেন এবং তার কোন আদেশ অমান্য করলে তাকেই রোষালনে পড়তে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ছাত্রী এই প্রতিবেদককে জানায়, প্রধান শিক্ষক নায়েব আলী সৎ চরিত্রবান ও কড়া প্রশাসক ছিলেন, আমরা তাকে পূর্বের ন্যায় স্বপদে দেখতে চাই। তিনি নিউজিল্যান্ড থেকে ট্রেনিং করে এসেছেন। তারা আরও জানায়, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।
প্রধান শিক্ষক নায়েব আলী জানান, আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাহায্য এবং শুভদৃষ্টি কামনা করছি। বহিস্কারের পর হতে আর্থিক দৈনতার মধ্যে আছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছি।
উপজেলার রতনগঞ্জ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের বলেন, উনি আমাদের সজ্জন সহকর্মী ছিলেন, বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বেড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, তিনি আমাদের সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তার এই অপসারণ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখান, নায়েব আলী এমনই একজন শিক্ষক। সমিতির সকল শিক্ষক এই বিষয়ে অত্যন্ত মর্মাহত। তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষক-কর্মচারীকে তিন থেকে ছয় মাসের বেশি সময় কাল নিয়ম অনুযায়ী অপসারণ করে রাখা যায় না। এটা নিয়ম বহির্ভূত ও গর্হিত কাজ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খবির উদ্দিন জানান, বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ওই স্কুল পরিচালনা কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি ও বেড়া পৌর মেয়র এড. আসিফ শামস রঞ্জন সাহেবের সঙ্গে সম্ভাব্য দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করা হবে।