বাংলাদেশ ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
শ্রীমঙ্গলে আড়াই বছরের প্রতিবন্ধী শিশুকে বিষ খাইয়ে হত্যা কালকিনিতে স্ত্রীর জন্য শিক্ষকদের কাছে ভোট চাওয়ার অভিযোগ সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন- ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা নব-নির্বাচিত ময়না চেয়ারম্যানকে গণসংবর্ধনা রাবি শিক্ষার্থী জিসানের শতাধিক নিরীক্ষাধর্মী ছবি নিয়ে একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী রাবি সায়েন্স ক্লাবের ” Win the Career Race” কর্মশালার আয়োজন অনিয়মের অভিযোগে ইটভাটায় অর্থদন্ড করে ভ্রাম্যমাণ আদালত রাবিতে শুরু হল দুই দিনব্যাপী আরিইউসিসি জব ফেয়ার কেন্দ্রীয় ম‌হিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠ‌নিক সৈয়দা রা‌জিয়া মোস্তফা’র পৈত্রিক বসতঘরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড যতদিন বাচবো মুলাদীর মানুষের সাথে থাকবো-মিঠু খান মির্জাগঞ্জের উপজেলা নির্বাচনে, প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা কয়রায় হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত আট বছরের ঘুমন্ত শিশুকে কোলে করে ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে ধর্ষনের চেষ্টা নাগরপুরে নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতাদের সাথে মতবিনিময় করলেন – পান্না সিলেট আসার পথে দুর্ঘটনায় ব্যান্ড শিল্পী আহসান তানভীর পিয়াল নিহত।

সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ খামখেয়ালিপনার বহিঃপ্রকাশ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:০৯:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জুন ২০২২
  • ১৬৭৭ বার পড়া হয়েছে

সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ খামখেয়ালিপনার বহিঃপ্রকাশ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

হটাৎ অদ্ভুত শব্দে সবকিছু কেঁপে ওঠে। জানালার কাচ ভেঙ্গে পড়ছে, ঘরে রাখা টিভি থেকে শুরু করে সবাবপত্র থরথরে  কাঁপুনি দিয়ে নিচে পড়তে থাকে। সীতাকুণ্ডের চার থেকে দশ কিলোমিটার দুর পর্যন্ত ভয়াবহ বিস্ফোরণের প্রভাব পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখার ঝলকানি দেখে মনে হচ্ছে বুঝি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। হ্যাঁ যুদ্ধ ঠিকিই শুরু হয়েছে সীতাকুণ্ডের  কনটেইনার ডিপোর আশেপাশে থাকা সমস্ত জীবের জীবনে।

 

 

এই যুদ্ধ একাত্তরের মতো প্রস্তুতিমূলক যুদ্ধ নয় এই যুদ্ধ প্রস্তুতিবিহীন নিশ্চিত প্রাণঘাতি যুদ্ধ। অন্যকে বাঁচবার সাথে  নিজেকেও বাঁচবার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে বলে যুদ্ধবিরতি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের দৃশ্য বলিউড কিংবা হলিউড যেকোনো সিনেমার দৃশ্যকে হারমানাতে বাধ্য করেছে। নির্মিত হয়েছে  বাস্তবজগতে মানুষসহ অসংখ্য জীবের মৃত্যু পরাদেহের গন্ধে আর হাসপাতালে হাত-পা কাটা মানুষের আর্তনাদ, রাসায়নিক পদার্থ বিস্ফোরণে সারাশরীর জ্বলছে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আহাজারির দৃশ্য।এ যেন আরেক হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকি শহর।

 

 

গ্রামে বেড়ে ওঠার সুবাদে দেখেছি কারোর বাড়িতে আগুন লাগলে প্রথমে বাড়ির মালিক প্রাণপণ চেষ্টা করেন আগুন নেভাতে। নিজের চেষ্টা ব্যর্থ হলে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন সাহায্যে জন্য। ফলে প্রতিবেশীগণ তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানার চেষ্টা করে কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন আবার কেউবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে আটকাপড়া মানুষ উদ্ধারের জন্য কৌশলে জ্বলন্ত ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়তো পুরোবাড়ি রক্ষা করা যায় না  কিন্তু কিছু না কিছু সম্পদের শেষরক্ষা হয়।

 

কিন্তু আমরা সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে কি দেখলাম? চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজে নামলে ডিপোর মালিক কিংবা কর্মকর্তা কেউই সাথে ছিলেন না। বরং তাঁরা বেপাত্তা! ফলে কনটেইনারের ভেতর কি আছে পরিস্কার জ্ঞান না থাকায় আগুন নেভানোর কাজে পানি প্রয়োগ করায় সর্বনাশ  ঘটে যায়। কনটেইনার ডিপোতে যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ছিলো সেটা অবগত না করার কারণে আজ সীতাকুণ্ড হিরোশিমা নাগাসাকিতে পরিনত হয়েছে। রাসায়নিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন শুধুমাত্র হাইড্রোজেন পার অক্সাইডে নয় অন্যান্য দাহ্য রাসায়নিক বিদ্যমান। বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক পদার্থ রাখার অনুমতি আছে কি-না সেটিও প্রশাসনের অজ্ঞাত।

 

 

প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে বিদেশের সঙ্গে এদেশের ব্যবসা চলে সেই ডিপোতে কিসের অনুমতি আছে আর কিসের নেই এই তথ্য  প্রশাসন কিংবা কোনো মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই কেন? কর্মরত শ্রমিকদের ঝুঁকিতে ফেলে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটানোর আয়োজন কি একদিনে হয়েছে? এতোদিন ডিপোটি সরকারের নজরে ছিলো কি-না? যদি থাকে তাহলে  ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ যে শ্রমিকগুলোর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এবং মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই  করে চলেছে এসবের  দায়ভার কে নিবে?

 

 

বিস্ফোরণের ফলে যাদের অমানবিক মৃত্যু হয়েছে এবং যারা মৃত্যুর যন্ত্রণা নিয়ে এখনো বেঁচে আছে তাঁদের পরিবারের জন্য অর্থবরাদ্দের ঘোষণা এসেছে। এক থেকে নয় অঙ্কের পিছনে পর্যাক্রমে শূন্য লাগিয়ে অর্থ বাড়িয়ে কি কখনো জীবন ফেরানো যায়?! কখনো কি গিয়েছে?! যে মা হাজারো যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তানকে পেটে ধারণ করেছে, নিজে কম খেয়ে সন্তানকে খেয়ে বেঁচে থাকার শেষ সম্বল হিসেবে বড় করেছে সেই মায়ের চোখের সামনে সন্তান যখন আগুনে পুরে কালো ছাই হয়ে পড়ে আছে তখন যন্ত্রণায় বুক ফাটা মা’কে অঙ্কের পিছনে শূন্য ভর্তি অর্থের বিনিময়ে সন্তানকে ফিরে পাবেন? যে সন্তান তাঁর বাবার  স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সে কি কখনো তা অর্থের বিনিময়ে ফিরে পাবেন? সারাজীবন একসাথে পথ চলার, সুখে দুঃখে পাশে থাকার শপথ নেওয়া স্ত্রী যে তাঁর স্বামীকে হারিয়েছে বাকিজীবনে কি আর ভরসার একমাত্র ব্যক্তিকে ফিরে পাবেন? পুঁজিবাদী সমাজে সবকিছুকে পুঁজির বিনিময়ে কেনা চেষ্টা করলেও  মা-বাবা তাঁর সন্তান’কে, সন্তান তাঁর মা-বাবা’কে, স্ত্রী তাঁর স্বামী’কে, স্বামী তাঁর স্ত্রী’কে পুঁজির বিনিময়ে ফিরেন পান না।

 

 

আমরা ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের কথা ভুলিনি। কিন্তু ঠিকিই ভুলে গেছি রানা প্লাজা ধসের মধ্য দিয়ে  আমাদের কি শিক্ষা দিয়ে গেছে। রানা প্লাজার বহুতল ভবন নির্মানাধীন সমস্যার কারণে, দায়িত্বহীনতার কারণে, জীবনকে নয় বরং পুঁজিকে বড় করে দেখার কারণে কত মানুষের রক্তে মাটি ভিজেছে তা না ভুললেও ভুলে গেছি মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা। ভুলে গেছি বলেই সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ এবার অতীতের ইতিহাসকে পরাজিত করেছে

 

 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মর্মান্তিক নতুন ইতিহাস দাঁড় করিয়েছে। রানা প্লাজা ধসে নিহত  এক হাজার ৩৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে আর পঙ্গুত্ব বরণ করেছে প্রায় হাজারখানেক শ্রমিক। নয় বছরেও কি আমরা এতো শ্রমিকের মৃত্যু  আর পঙ্গুত্ব বরণের বিচার পেয়েছি? তবে কি শ্রমিকের জীবনের কোনো মূল্য নেই? বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফল সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ নয় কি? এসব কি নতুন কিছু? না! নতুন কিছু না। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লাশের গন্ধ আছে, রুপগঞ্জে কারখানায়  শ্রমিকের কান্না ভেসে আছে। আর কত যুক্ত হবে? এভাবে অপমৃত্যুর দায়ভার কে নিবে?

 

 

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ফলে রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়েছে। বিভিন্ন খাল বিল নলের ভেতর দিয়ে সমুদ্রে গড়ানোর  চেষ্টা থামানো হলেও হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ যেসব রাসায়নিক পদার্থ ছিলো তা বি স্ফোরণের ফলে বাতাসের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে যারা আগুন নেভানোর কাজে বিএম কনটেইনার ডিপোতে এসেছে তাঁদের অজান্তেই  শরীরে কেমিক্যাল প্রবেশ করেছে। বায়ুতে মিশে আস্তে আস্তে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন প্রকাশ করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক সংরক্ষণ সম্পূর্ণরুপে অবৈজ্ঞানিক। লোকালয়ের মধ্যে  এগুলো কোনো।

আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello
জনপ্রিয় সংবাদ

শ্রীমঙ্গলে আড়াই বছরের প্রতিবন্ধী শিশুকে বিষ খাইয়ে হত্যা

সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ খামখেয়ালিপনার বহিঃপ্রকাশ

আপডেট সময় ০৪:০৯:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ জুন ২০২২

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

হটাৎ অদ্ভুত শব্দে সবকিছু কেঁপে ওঠে। জানালার কাচ ভেঙ্গে পড়ছে, ঘরে রাখা টিভি থেকে শুরু করে সবাবপত্র থরথরে  কাঁপুনি দিয়ে নিচে পড়তে থাকে। সীতাকুণ্ডের চার থেকে দশ কিলোমিটার দুর পর্যন্ত ভয়াবহ বিস্ফোরণের প্রভাব পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখার ঝলকানি দেখে মনে হচ্ছে বুঝি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। হ্যাঁ যুদ্ধ ঠিকিই শুরু হয়েছে সীতাকুণ্ডের  কনটেইনার ডিপোর আশেপাশে থাকা সমস্ত জীবের জীবনে।

 

 

এই যুদ্ধ একাত্তরের মতো প্রস্তুতিমূলক যুদ্ধ নয় এই যুদ্ধ প্রস্তুতিবিহীন নিশ্চিত প্রাণঘাতি যুদ্ধ। অন্যকে বাঁচবার সাথে  নিজেকেও বাঁচবার যুদ্ধ। এই যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে বলে যুদ্ধবিরতি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের দৃশ্য বলিউড কিংবা হলিউড যেকোনো সিনেমার দৃশ্যকে হারমানাতে বাধ্য করেছে। নির্মিত হয়েছে  বাস্তবজগতে মানুষসহ অসংখ্য জীবের মৃত্যু পরাদেহের গন্ধে আর হাসপাতালে হাত-পা কাটা মানুষের আর্তনাদ, রাসায়নিক পদার্থ বিস্ফোরণে সারাশরীর জ্বলছে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আহাজারির দৃশ্য।এ যেন আরেক হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকি শহর।

 

 

গ্রামে বেড়ে ওঠার সুবাদে দেখেছি কারোর বাড়িতে আগুন লাগলে প্রথমে বাড়ির মালিক প্রাণপণ চেষ্টা করেন আগুন নেভাতে। নিজের চেষ্টা ব্যর্থ হলে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন সাহায্যে জন্য। ফলে প্রতিবেশীগণ তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানার চেষ্টা করে কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন আবার কেউবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে আটকাপড়া মানুষ উদ্ধারের জন্য কৌশলে জ্বলন্ত ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়তো পুরোবাড়ি রক্ষা করা যায় না  কিন্তু কিছু না কিছু সম্পদের শেষরক্ষা হয়।

 

কিন্তু আমরা সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডে কি দেখলাম? চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজে নামলে ডিপোর মালিক কিংবা কর্মকর্তা কেউই সাথে ছিলেন না। বরং তাঁরা বেপাত্তা! ফলে কনটেইনারের ভেতর কি আছে পরিস্কার জ্ঞান না থাকায় আগুন নেভানোর কাজে পানি প্রয়োগ করায় সর্বনাশ  ঘটে যায়। কনটেইনার ডিপোতে যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ ছিলো সেটা অবগত না করার কারণে আজ সীতাকুণ্ড হিরোশিমা নাগাসাকিতে পরিনত হয়েছে। রাসায়নিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন শুধুমাত্র হাইড্রোজেন পার অক্সাইডে নয় অন্যান্য দাহ্য রাসায়নিক বিদ্যমান। বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিক পদার্থ রাখার অনুমতি আছে কি-না সেটিও প্রশাসনের অজ্ঞাত।

 

 

প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে বিদেশের সঙ্গে এদেশের ব্যবসা চলে সেই ডিপোতে কিসের অনুমতি আছে আর কিসের নেই এই তথ্য  প্রশাসন কিংবা কোনো মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই কেন? কর্মরত শ্রমিকদের ঝুঁকিতে ফেলে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটানোর আয়োজন কি একদিনে হয়েছে? এতোদিন ডিপোটি সরকারের নজরে ছিলো কি-না? যদি থাকে তাহলে  ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ যে শ্রমিকগুলোর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এবং মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই  করে চলেছে এসবের  দায়ভার কে নিবে?

 

 

বিস্ফোরণের ফলে যাদের অমানবিক মৃত্যু হয়েছে এবং যারা মৃত্যুর যন্ত্রণা নিয়ে এখনো বেঁচে আছে তাঁদের পরিবারের জন্য অর্থবরাদ্দের ঘোষণা এসেছে। এক থেকে নয় অঙ্কের পিছনে পর্যাক্রমে শূন্য লাগিয়ে অর্থ বাড়িয়ে কি কখনো জীবন ফেরানো যায়?! কখনো কি গিয়েছে?! যে মা হাজারো যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তানকে পেটে ধারণ করেছে, নিজে কম খেয়ে সন্তানকে খেয়ে বেঁচে থাকার শেষ সম্বল হিসেবে বড় করেছে সেই মায়ের চোখের সামনে সন্তান যখন আগুনে পুরে কালো ছাই হয়ে পড়ে আছে তখন যন্ত্রণায় বুক ফাটা মা’কে অঙ্কের পিছনে শূন্য ভর্তি অর্থের বিনিময়ে সন্তানকে ফিরে পাবেন? যে সন্তান তাঁর বাবার  স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সে কি কখনো তা অর্থের বিনিময়ে ফিরে পাবেন? সারাজীবন একসাথে পথ চলার, সুখে দুঃখে পাশে থাকার শপথ নেওয়া স্ত্রী যে তাঁর স্বামীকে হারিয়েছে বাকিজীবনে কি আর ভরসার একমাত্র ব্যক্তিকে ফিরে পাবেন? পুঁজিবাদী সমাজে সবকিছুকে পুঁজির বিনিময়ে কেনা চেষ্টা করলেও  মা-বাবা তাঁর সন্তান’কে, সন্তান তাঁর মা-বাবা’কে, স্ত্রী তাঁর স্বামী’কে, স্বামী তাঁর স্ত্রী’কে পুঁজির বিনিময়ে ফিরেন পান না।

 

 

আমরা ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের কথা ভুলিনি। কিন্তু ঠিকিই ভুলে গেছি রানা প্লাজা ধসের মধ্য দিয়ে  আমাদের কি শিক্ষা দিয়ে গেছে। রানা প্লাজার বহুতল ভবন নির্মানাধীন সমস্যার কারণে, দায়িত্বহীনতার কারণে, জীবনকে নয় বরং পুঁজিকে বড় করে দেখার কারণে কত মানুষের রক্তে মাটি ভিজেছে তা না ভুললেও ভুলে গেছি মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা। ভুলে গেছি বলেই সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ এবার অতীতের ইতিহাসকে পরাজিত করেছে

 

 

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মর্মান্তিক নতুন ইতিহাস দাঁড় করিয়েছে। রানা প্লাজা ধসে নিহত  এক হাজার ৩৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে আর পঙ্গুত্ব বরণ করেছে প্রায় হাজারখানেক শ্রমিক। নয় বছরেও কি আমরা এতো শ্রমিকের মৃত্যু  আর পঙ্গুত্ব বরণের বিচার পেয়েছি? তবে কি শ্রমিকের জীবনের কোনো মূল্য নেই? বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফল সীতাকুণ্ডের বিস্ফোরণ নয় কি? এসব কি নতুন কিছু? না! নতুন কিছু না। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লাশের গন্ধ আছে, রুপগঞ্জে কারখানায়  শ্রমিকের কান্না ভেসে আছে। আর কত যুক্ত হবে? এভাবে অপমৃত্যুর দায়ভার কে নিবে?

 

 

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের ফলে রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে ছড়িয়েছে। বিভিন্ন খাল বিল নলের ভেতর দিয়ে সমুদ্রে গড়ানোর  চেষ্টা থামানো হলেও হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ যেসব রাসায়নিক পদার্থ ছিলো তা বি স্ফোরণের ফলে বাতাসের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে যারা আগুন নেভানোর কাজে বিএম কনটেইনার ডিপোতে এসেছে তাঁদের অজান্তেই  শরীরে কেমিক্যাল প্রবেশ করেছে। বায়ুতে মিশে আস্তে আস্তে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন প্রকাশ করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক সংরক্ষণ সম্পূর্ণরুপে অবৈজ্ঞানিক। লোকালয়ের মধ্যে  এগুলো কোনো।