মোঃ ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতাঃ কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে রামগঞ্জ থেকে শীতলপাটি শিল্প। জানা গেছে উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় শীতলপাটি তৈরি হয়। পাটি শিল্প বাংলাদেশের লোকাচারে জীবন ঘনিষ্ঠ ও ঐতিহ্যবাহী লৌকিক উপাদান। এক সময় ছিল গ্রামের বাড়িতে অতিথিরা এলে প্রথমেই বসতে দেওয়া হতো পাটিতে। গৃহকর্তার বসার জন্যও ছিল বিশেষ ধরনের পাটি। বর্তমানে মুসলিম-হিন্দু বিয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ শীতলপাটি। গরমকালে শীতলপাটির কদর একটু বেশিই। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের দুপুরে এই পাটি দেহ-মনে শীতলতা আনে।
এখানকার তৈরি শীতলপাটি দেশের বিভিন্ন স্থানে গেলেও এখন পুঁজির অভাবে সংকটে রয়েছে কারিগররা। দেখা যায়, গরমের কয়েক মাস শীতলপাটির কদর বাড়ে। তাই কাজের ব্যস্ততাও অন্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়। আগের তুলনায় শীতলপাটির কদর কম হলেও থেমে নেই তাদের পাটি তৈরির কাজ।
শীতলপাটি বুনে তাদের সংসার চলে। কিন্তু বেতের মূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরি, পাশাপাশি পুঁজির অভাবে আজ এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন মাপ ও নামের শীতলপাটি বুনা হয়। যেমন নয়নতারা, আসমানতারা, জোড়াকেচিরা, সিকি, আধুলি, টাকা ইত্যাদি।
এসব নাম ছাড়াও বিভিন্ন আকৃতি ও বৈচিত্র্য ভরপুর শীতলপাটি শহর ও গ্রামের বাজারে পাওয়া যায়। অতীতে মসজিদ ও বিয়ে বাড়িতে শীতলপাটি ব্যবহৃত হতো। কিন্তু যুগের বিবর্তনে এখন আর শীতলপাটি ব্যবহার না করে কার্পেট ও ডেকোরেটার্সের আসবাবপত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে বাড়তি আরাম আয়েশের জন্য শীতলপাটি এখনও অভিজাত পরিবারগুলোতে দেখা যায়। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও সুক্ষ ও মসৃণ শীতলপাটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অপ্রতুল। যুগ যুগ ধরে পাটি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও নায্যমূল্য না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে এই পেশা ছেড়েছেন। তবে ঐতিহ্য হিসেবে বীরেশের মতো হাতেগোনা কিছু পরিবারে এখনও টিকে আছে পাটি শিল্পে। টানাপোড়নই যাদের জীবন সঙ্গী। শ্রীরামপুর গ্রামের পাটিশিল্পী রহিমা বলেন, আগে ১৬ ভাগ মানুষই পাটি তৈরি করতো, এখন আছে দুই ভাগ।
অন্য কাজ পাইলে আমিও পাটি তৈরি করা ছেড়ে দিতাম। সরকারি সহযোগিতা পেলে কিছু স্বচ্ছলভাবে আমরা কাজ করতে পারতাম। শীতলপাটির প্রধান উপকরন মুর্তাকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সিদ্ধ করে সুক্ষ ও মসৃণ আঁশ বের করে শীতলপাটি বুনতে হয়। বুননের সময় বিভিন্ন ডিজাইন করার জন্য পছন্দমত রঙের মধ্যে বেতকে চুবিয়ে নেওয়া হয়। সুক্ষ ও মসৃণ ৭ ফুট দৈঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থের একটি শীতলপাটি বুনতে একজন দক্ষ কারিগরের সময় লাগে ৪ থেকে ৫ মাস।
শীতল পাটির কারু পল্লী গুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, তিন চার জন গ্রুপ করে রং- বেরংয়ের বেত দিয়ে তৈরি করছে বিভিন্ন রকমের ফুল করা পাটি। আবার কেউ অন্যদের নতুন পাটির জো তুলে দিচ্ছে। শৈল্পিক উপস্থাপনায় এবং নির্মাণ কুশলতার কারণে দক্ষ ও সুনিপুণ একজন পাটিকর নারীর কদরও রয়েছে সর্বত্র। হাতের বুনা পাটির মধ্যে আড়াই থেকে ৩ হাত পাইকারি বাজারে ২৫০ টাকা, ৩-৪ হাত ৪০০ টাকা, ৪-৫ হাত ৫০০ টাকা এবং ৫-৬ হাত ৯০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।