ডেস্ক প্রতিবেদনঃ আয়ারল্যান্ডে এই প্রথম মাঙ্কিপক্সে রোগে আক্রান্ত হয়েছে এক নারী। এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য সংস্থা। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আয়ারল্যান্ডের হেলথ সার্ভিস এক্সিকিউটিভ (এইচএসসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এখনও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। এ ছাড়া আর এক নাগরিককে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সন্দেহভাজন রোগী হিসেবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি নতুনভাবে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ বেশ কিছু দেশে মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে এ রোগে সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমাগত উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই রোগ সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
মাঙ্কিপক্স সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের গবেষকদের মতে, মাঙ্কিপক্সকে আগে যৌনবাহিত রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি) বলছে, ‘যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে’ বেশির ভাগ মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
মাঙ্কিপক্স আসলে কী ? মাঙ্কিপক্স হচ্ছে একটি ভাইরাস। এটি পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। জ্বর, গায়ে ব্যথা, আকারে বড় বসন্তের মতো গায়ে গুটি ওঠাকে আপাতত মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আফ্রিকায় দড়ি কাঠবিড়ালি, গাছ কাঠবিড়ালি, গাম্বিয়ান ইঁদুর, ডর্মিসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বানর এবং অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটলেও তা সীমিত সংখ্যায় হয়ে থাকে।
মাঙ্কিপক্স যেভাবে ছড়ায়- রক্ত, শারীরিক তরল ও সংক্রমিত প্রাণীর শ্লেষ্মার সরাসরি সংস্পর্শে এলে মানুষের শরীরে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ ছাড়া, শ্বাস-প্রশ্বাস, সংক্রমিত ব্যক্তির ত্বকের ক্ষত বা তার ব্যবহৃত জিনিসপত্রের সংস্পর্শে এলে মানুষে মানুষে সংক্রমণ ঘটতে পারে।
গত সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষ থেকে পুরুষে শারীরিক সংসর্গে এই রোগ ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। তবে এ বিষয়ে এখনও স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
মাঙ্কিপক্স কতটা মারাত্মক? মাঙ্কিপক্স সাধারণত উপসর্গ দেখা দেওয়ার দুই থেকে চার সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই সময় বেশি হয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যান। এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। তবে এ রোগ ছড়ানোর মাত্রা, রোগীর শারীরিক অবস্থা ও কী কী জটিলতা তৈরি হয়েছে, তার ওপর এর ভয়াবহতা নির্ভর করে। এ রোগের একটি ধরণ এতটাই ভয়ংকর যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ শতাংশ এ রোগে মারা যেতে পারেন।
চিকিৎসা পদ্ধতি কি? এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর। কিন্তু বিশ্বজুড়ে গুটিবসন্তে আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়ায় বর্তমানে এ রোগের টিকা পাওয়া খুবই কঠিন। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এরিক ফিগেল-ডিং বলেন, গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে কার্যকর এটা ভালো সংবাদ। কিন্তু খারাপ সংবাদ হচ্ছে, ৪৫ বছরের নিচে অনেকেরই এই টিকা দেওয়া নেই।
১৯৭০ সালে জায়ারে বর্তমানে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে প্রথম মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়। এ রোগে প্রথম আক্রান্ত হয় ৯ বছর বয়সী এক শিশু। ১৯৭০ সালের পর থেকে আফ্রিকার ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ে। আর ২০০৩ সালে আফ্রিকার বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই রোগ শনাক্ত হয়। ছড়িয়ে পড়া এই বিরল রোগ মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশও। এরইমধ্যে দেশের সবগুলো বন্দরে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বন্দরে সতর্কতার জারির বিষয়টি জানিয়ে বলেছেন, নতুন কোনো রোগের তথ্য পাওয়া গেলে বন্দরগুলোতে সতর্কতা জারি করা স্বাস্থ্য বিভাগের একটা রুটিন ওয়ার্ক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশের সব বন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সন্দেহভাজন কেউ এলে যেন তাকে চিহ্নিত করা যায় এবং দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয় সেজন্য এয়ারপোর্টে মেডিক্যাল অফিসারদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জনদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে অধিদপ্তরের এই পরিচালক বলেন, জেলা পর্যায়ে আমরা চিঠি দিয়েছি। তবে যেহেতু সব জায়গায় পোর্ট নেই সেজন্য সব জায়গায় এটা এখনো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এয়ারপোর্ট দিয়েই যেহেতু আসতে পারে তাই এ ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি সতর্কতা রয়েছে।