বাংলাদেশ ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
ব্রাহ্মণপাড়ায় টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যেতে পারে কৃষকের স্বপ্ন, দ্বিগুণ ক্ষতির শঙ্কা ভয়ংকর মাদক ব্যবসায়ী শামীমের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী নবম গ্রেড হতে পারে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের ভিত্তি বুড়িচংয়ে স্কুলের ছাত্রের নিখোঁজের ৬ দিন পর পুকুর থেকে ভাসমান লাশ উদ্ধার যারা চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী তারা আমার কর্মী নয় এবং বিএনপি’র কেউ না-শফিকুর রহমান কিরন। ইলিশ মাছের দাম বেশী হওয়া সাধারণ মানুষ ইলিশ খেতে পারেনা: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। হোসেনপুরে প্রকাশ্যে দিবালোকে ইসলামিক স্থাপনা ভাঙচুরের চেষ্টা জাকারিয়া সরদার হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোঃ নজরুল ইসলাম লাল্টুকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৬। রাঙ্গাবালীতে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন বাঙ্গু হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। মির্জাগঞ্জে বিএনপির অফিস ভাঙচুর যুবলীগ নেতা গ্রেফতার জামালপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৪ উদযাপিত খানসামা সাংবাদিকদের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ১৬০০ মিটার রাস্তা পাকা না হওয়ায় হাজারো মানুষের জনদুর্ভোগ চরমে। হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে বদলগাছীতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

নবম গ্রেড হতে পারে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের ভিত্তি

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:২৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • ১৫৯৩ বার পড়া হয়েছে

 

 

 

মো. ওমর ফারুক

দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে বেহাল অবস্থার চিত্র পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা মোটামুটিভাবে দেখতে পাই। আর এ অবস্থা বোঝার জন্য খুব বেশি বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই, দেশের সাধারণ নাগরিক সহ সচেতন সবাই শিক্ষার বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষার পরিস্থিতি নিয়ে কমবেশী অবগত।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা শেষে দক্ষ মানবসম্পদ হয়ে যে শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসবার কথা, কার্যত তারা জাতির জন্য বোঝা হিসেবে আসছে! আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষা দান করছি তা অত্যন্ত নিম্নমানের এবং আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনেক ক্ষেত্রেই অচল ও অক্ষম! আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা পড়ানো হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে এ শিক্ষার প্রয়োগ নেই। আবার যেগুলোর প্রয়োগ আছে সেগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কার্যকর ভাবে পড়ানো হচ্ছে না। আর সবচেয়ে বড় ত্রুটি রয়েছে শিক্ষাদানে নিয়োজিত শিক্ষক ও শিক্ষাদান পদ্ধতি মনিটরিং ব্যবস্থার উপর।

এছাড়াও এই শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার জন্য অপরিকল্পিত কারিকুলাম ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও কর্মমুখী শিক্ষা বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের সাধারণ শিক্ষার দিকে জোর দেওয়ায় বিশেষভাবে দায়ী। এছাড়াও শিক্ষাদানের জন্য মেধাবী শিক্ষক না পাওয়া এবং না পাওয়ার অন্যতম কারণ শিক্ষকদের অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান। আমাদের দেশে সবচেয়ে অবহেলার পেশা শিক্ষকতা। এখানে শিক্ষকদের না আছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, না আছে পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা; না আছে কোনো নিরাপত্তা।

এই পেশাকে প্রাথমিক ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণির, মাধ্যমিকের দ্বিতীয় শ্রেণির এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় রাখা হয়েছে। শিক্ষকদের পদমর্যাদার এই বৈষম্য শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের কে পিছিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের পদমর্যাদা উন্নয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অনেকেই যুক্তি দেখাতে পারেন বা শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন কিন্তু আমরা যদি বাইরের দিকে দেখি তাহলে দেখবেন জার্মানি শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কি করেছিল!

‘জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল শিক্ষকদের বেতন যখন সর্বোচ্চ করে দিলেন তখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মহল এর কারণ জানতে চাইল। তখন তিনি হাসিমুখে বলেছিলেন- “আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাষ্ট্রনায়ক কিংবা সমাজের বৃহৎ পেশায় নিয়োজিত কিন্তু যাদের হাতে আমাদের বিদ্যার্জনের হাতেখড়ি তাদের কীভাবে আমাদের থেকে কম পারিশ্রমিক দিতে পারি?”

শিক্ষা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিবর্গ মনে করেন শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা উচিত আর এ কাজটি করতে হলে এই মুহূর্তে সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের না হলেও অন্তত মাধ্যমিক স্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কর্মরত শিক্ষকদের প্রবেশ পদটি প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা সম্পন্ন করা উচিত। কেননা মাউশি’র বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা স্বাধীনতার পর থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ মর্যাদা নিয়ে কর্মরত রয়েছেন।

এই শিক্ষকদের সমমর্যাদার এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিচের মর্যাদার পদগুলো নানা সময়ে আপগ্রেড হয়ে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের পদটি প্রথম শ্রেণির ক্যাডার মর্যাদায় উন্নীত হওয়া উচিত বলে এ খাত নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। কারণ বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় উপরের সবগুলো পদই ক্যাডার সিডিউল ভুক্ত।

এছাড়াও শিক্ষকদের কাজে মানসিক আনন্দ এবং পেশার বৈচিত্র আনতে নির্দিষ্ট সময় পরপর অন্তত ৪ থেকে ৫ ধাপ বিশিষ্ট একটি ক্যারিয়ার পাথ বা পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। আর ৪ থেকে ৫ ধাপ বিশিষ্ট ক্যারিয়ার পাথ করতে সরকারের আর্থিক দায় খুব বেশি বৃদ্ধি হবে না কারণ চাকরি জীবনের শুরুতে একজন শিক্ষক যে বেতন নিয়ে শুরু করেন বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির কারণে চাকরিজীবনের শেষ ধাপ পর্যন্ত তিনি যেভাবে বর্ধিত বেতন পান (সর্বশেষ ২০১৫ পে স্কেল অনুযায়ী পদোন্নতি না হলেও উচ্চতর গ্রেড পান) এই বিষয়গুলোকে সমন্বয় করে পদসোপান তৈরি করা কঠিন নয়। এ কাজটি করলে একদিকে যেমন শিক্ষকদের পেশায় বৈচিত্র সৃষ্টি হবে, পেশায় সন্তুষ্টি আসবে, তেমনি মেধাবী মানব সম্পদ শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হবে।

শিক্ষকদেরকে আমরা টেনে নিচে নামাতে নামাতে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে এসেছি যে এখন কেউ আর শিক্ষকতা পেশায় আসতেই চাইছে না! তাই মেধাবী মুখ শিক্ষক বানাতে বা মেধাবীদেরকে এই পেশার প্রতি আকৃষ্ট করতে এবং ধরে রাখতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রবেশ পদকে নবম গ্রেড এবং তাদের পেশায় বৈচিত্র আনতে চার বা পাঁচটি ধাপে একাডেমিক পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী। আর এ কাজটি করতে পারলে আমরা যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট যুগে আছি এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টকে সহজেই মানব সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে -ইনশাআল্লাহ।

অন্যদিকে, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার কথা যদি বলি তাহলে অবশ্যই শিক্ষা প্রশাসনে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত অভিজ্ঞ জনসম্পদকে নিয়োগ বা পদায়ন করতে হবে। যিনি শিখন বিজ্ঞান বা প্যাডাগজি সম্পর্কে জানেন তার পক্ষেই শিক্ষা প্রশাসক হওয়া উপযুক্ত এবং এই ধারা আমাদের এই উপমহাদেশে শুরু থেকেই প্রচলিত আছে। এছাড়াও যিনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে সেই বিষয়ে পরিচালনার দায়িত্ব দিলে সেই কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়। অতীতে কয়েকজন সচিব চেয়েছিলেন শিক্ষকদের দিয়ে নয়, আমলাদের দিয়ে মাউশি চালাবেন।

তাদের ধারণা, শিক্ষকরা শিক্ষা প্রশাসন চালাতে পারেন না, আমলারা প্রশাসন চালাতে দক্ষ। বেশ শক্ত করেই প্রতিবাদ হয়েছিলো বিষয়টির বিরুদ্ধে। খোদ সেনাবাহিনীর শিক্ষা প্রশাসনের পরিচালক কিন্তু শিক্ষা কোরের, ইনফ্যান্ট্রির নয়। তাহলে সিভিলে কেন শিক্ষকগণ নয়? উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে চিকিৎসা প্রশাসনে চিকিৎসকদের থেকে যেমন নিয়োগ হয়, উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে তেমনিভাবে বিসিএস সাধারন শিক্ষা ক্যাডার থেকে শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঠিক তেমনিভাবে মাধ্যমিকের জন্য বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার কার্যক্রম পরিচালনায় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের নিয়োগ বা পদায়ন দেয়া উচিত।

আর এ কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১ সংশোধন করে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনে মাউশির বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় শিক্ষকদের পদায়নের/পদোন্নতির যে সুযোগ আছে সেটিকে গতিশীল করা এবং চেয়ার ভিত্তিক পদোন্নতি প্রথা বাতিল করে তথা পদোন্নতির যোগ্য পদ এবং পদায়নযোগ্য পদ আলাদা করে পদসোপান প্রণয়ন করলে শিক্ষকদের পদোন্নতি পাবার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ কাজটি করলে ২৮/৩০ বছর চাকরি করেও শিক্ষকরা যে পদোন্নতি পাচ্ছেন না বা একই পদ থেকে বৈচিত্রহীন ভাবে নিরানন্দে তীব্র মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে অবসরে যাচ্ছেন সেই বন্ধ্যাত্ব অন্তত ঘুষবে এবং রাষ্ট্রও এক বিশাল দায় মুক্ত হবে।

আবার, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষত মাধ্যমিক শিক্ষার মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ (২৭ নং অধ্যায়ের ৬ নং কলাম পৃষ্ঠা-৬৪) এর আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ভেঙে দুইটি আলাদা অধিদপ্তর যথা বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কলেজ শাখার নেতৃত্বে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর গঠন করা। সেইসাথে শিক্ষা কার্যক্রম সঠিক বাস্তবায়নে রুট লেভেল পর্যন্ত মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে প্রাথমিকের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে শিক্ষা পরিদর্শক ও নিয়ন্ত্রক এবং মাধ্যমিকের জন্য বিদ্যমান বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখাকে যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করা উচিত।

কারণ এত বিশাল সংখ্যক অর্থাৎ ব্যানবেইজ পরিসংখ্যান ২০২২ অনুযায়ী – “দেশে বর্তমানে ২০,৩৫৩ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং ৪৭৪৭টি কলেজ বা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কয়েক লাখ শিক্ষকের কার্যক্রমের তদারকি, চাকুরী ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, পরিদর্শন ও যথাযথ মনিটরিং করা মাউশির বর্তমান জনবল দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য ১,৮০০ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা “কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর” এবং ৯,৬০৬টি মাদ্রাসার জন্য আলাদা “মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর” গঠন করা হলেও প্রায় ২১ হাজারের কাছাকাছি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী মাধ্যমিকের জন্য একটি আলাদা অধিদপ্তরের উদ্যোগ না নেওয়াটা অস্বাভাবিক নয় কী? মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ শাখা (College Branch) এবং বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার (School & Inspection Branch) এর মধ্যে বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তাদের ইতিহাস খুবই শোষণ-বঞ্চনার। এ যেন স্বাধীন দেশেই আরেক উপনিবেশবাদের গল্প।

দীর্ঘদিন ধরে শোষণের শিকার মাধ্যমিক যেন কলেজ শাখার কলোনীতে পরিণত হয়েছে! শোষণ-বঞ্চনার বলছি এজন্য যে এখানে কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তাগণ অপ্রাপ্তির নানা ধরণের হতাশায় নিমজ্জিত। তবে কলেজ শাখার সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সংখ্যায় কম হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (শিক্ষা ভবনের) ৯৫ ভাগের বেশি পদে কলেজ শিক্ষকগণ (শিক্ষা ক্যাডার) বসে আছেন! সঙ্গত কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৮১%( মাউশি’র অধীনে মোট প্রতিষ্ঠানের) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের গতি মন্থর হয়ে রয়েছে।

তাছাড়া মাউশিতে কর্মরত প্রায় সকল কর্মকর্তা (প্রকৃত অর্থে মাত্র ৩টি পদ ব্যতীত) কলেজ শিক্ষক (সা. শিক্ষা ক্যাডার) হওয়ায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকগণ অধিদপ্তরে তাঁদের দাপ্তরিক কাজের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সুবিধা পান না উল্টো অনেক ক্ষেত্রেই নানা ধরণের ভোগান্তির শিকার হন। ফলে বিশাল কলেবরে মাউশি মাধ্যমিক শিক্ষার উপর ঠিকমত নজর দিতে পারছেই না বিপরীত দিকে উচ্চ শিক্ষার মানও তলানিতে নিয়ে এসেছে। ফলে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা বাস্তবায়নের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মাউশি’র ওপেন সিক্রেট দুর্নীতি এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা প্রায় ভঙ্গুর!

তাই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকগণ মনে করেন- জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর নির্দেশনা মোতাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়নে এবং দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর করতে মাধ্যমিকের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। সংবিধানের মূল চেতনাকে সমুন্নত রাখা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪ অর্জনে এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর কার্যক্রম টেকসইভাবে পরিচালনার জন্য এবং একই সাথে শিক্ষকতা পেশার প্রবেশ পদে সমতা বিধানের জন্য এমপিও শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডে এবং বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) সিডিউল ভুক্ত বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রবেশ পদটিকে নবম গ্রেডের বিসিএস সাধারন শিক্ষা ক্যাডারে উন্নীত করা একান্ত প্রয়োজন।

এছাড়াও শিক্ষকদের কাজে বৈচিত্র আনতে চাকুরী জীবনে সবেচেয়ে বড় আকাঙ্খা পদোন্নতি প্রথা চালু করতে ৪/৫ টি ধাপ বিশিষ্ট পদসোপান বাস্তবায়ন করা অতীব প্রয়োজন। আর নতুন বাংলাদেশে বৈষম্য নিরসনে ছাত্র শিক্ষক সমন্বয়ে গঠিত সরকার এ কাজটি দ্রুতই করবেন বলে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিদগ্ধজন মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন।

লেখক: মো. ওমর ফারুক, শিক্ষক, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা।
মূখপাত্র, স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি, ঢাকা; বাংলাদেশ।

 

 

 

 

 

আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello

ব্রাহ্মণপাড়ায় টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যেতে পারে কৃষকের স্বপ্ন, দ্বিগুণ ক্ষতির শঙ্কা

নবম গ্রেড হতে পারে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নের ভিত্তি

আপডেট সময় ০৭:২৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

 

 

 

মো. ওমর ফারুক

দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে বেহাল অবস্থার চিত্র পত্রিকার পাতা খুললেই আমরা মোটামুটিভাবে দেখতে পাই। আর এ অবস্থা বোঝার জন্য খুব বেশি বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই, দেশের সাধারণ নাগরিক সহ সচেতন সবাই শিক্ষার বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষার পরিস্থিতি নিয়ে কমবেশী অবগত।

প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা শেষে দক্ষ মানবসম্পদ হয়ে যে শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসবার কথা, কার্যত তারা জাতির জন্য বোঝা হিসেবে আসছে! আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শিক্ষা দান করছি তা অত্যন্ত নিম্নমানের এবং আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনেক ক্ষেত্রেই অচল ও অক্ষম! আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা পড়ানো হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে এ শিক্ষার প্রয়োগ নেই। আবার যেগুলোর প্রয়োগ আছে সেগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কার্যকর ভাবে পড়ানো হচ্ছে না। আর সবচেয়ে বড় ত্রুটি রয়েছে শিক্ষাদানে নিয়োজিত শিক্ষক ও শিক্ষাদান পদ্ধতি মনিটরিং ব্যবস্থার উপর।

এছাড়াও এই শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল অবস্থার জন্য অপরিকল্পিত কারিকুলাম ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও কর্মমুখী শিক্ষা বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের সাধারণ শিক্ষার দিকে জোর দেওয়ায় বিশেষভাবে দায়ী। এছাড়াও শিক্ষাদানের জন্য মেধাবী শিক্ষক না পাওয়া এবং না পাওয়ার অন্যতম কারণ শিক্ষকদের অপর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান। আমাদের দেশে সবচেয়ে অবহেলার পেশা শিক্ষকতা। এখানে শিক্ষকদের না আছে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, না আছে পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা; না আছে কোনো নিরাপত্তা।

এই পেশাকে প্রাথমিক ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণির, মাধ্যমিকের দ্বিতীয় শ্রেণির এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় রাখা হয়েছে। শিক্ষকদের পদমর্যাদার এই বৈষম্য শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের কে পিছিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের পদমর্যাদা উন্নয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অনেকেই যুক্তি দেখাতে পারেন বা শিক্ষকদের পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন কিন্তু আমরা যদি বাইরের দিকে দেখি তাহলে দেখবেন জার্মানি শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কি করেছিল!

‘জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল শিক্ষকদের বেতন যখন সর্বোচ্চ করে দিলেন তখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মহল এর কারণ জানতে চাইল। তখন তিনি হাসিমুখে বলেছিলেন- “আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাষ্ট্রনায়ক কিংবা সমাজের বৃহৎ পেশায় নিয়োজিত কিন্তু যাদের হাতে আমাদের বিদ্যার্জনের হাতেখড়ি তাদের কীভাবে আমাদের থেকে কম পারিশ্রমিক দিতে পারি?”

শিক্ষা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিবর্গ মনে করেন শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা উচিত আর এ কাজটি করতে হলে এই মুহূর্তে সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের না হলেও অন্তত মাধ্যমিক স্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কর্মরত শিক্ষকদের প্রবেশ পদটি প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা সম্পন্ন করা উচিত। কেননা মাউশি’র বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা স্বাধীনতার পর থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণীর পদ মর্যাদা নিয়ে কর্মরত রয়েছেন।

এই শিক্ষকদের সমমর্যাদার এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিচের মর্যাদার পদগুলো নানা সময়ে আপগ্রেড হয়ে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের পদটি প্রথম শ্রেণির ক্যাডার মর্যাদায় উন্নীত হওয়া উচিত বলে এ খাত নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। কারণ বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় উপরের সবগুলো পদই ক্যাডার সিডিউল ভুক্ত।

এছাড়াও শিক্ষকদের কাজে মানসিক আনন্দ এবং পেশার বৈচিত্র আনতে নির্দিষ্ট সময় পরপর অন্তত ৪ থেকে ৫ ধাপ বিশিষ্ট একটি ক্যারিয়ার পাথ বা পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত। আর ৪ থেকে ৫ ধাপ বিশিষ্ট ক্যারিয়ার পাথ করতে সরকারের আর্থিক দায় খুব বেশি বৃদ্ধি হবে না কারণ চাকরি জীবনের শুরুতে একজন শিক্ষক যে বেতন নিয়ে শুরু করেন বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির কারণে চাকরিজীবনের শেষ ধাপ পর্যন্ত তিনি যেভাবে বর্ধিত বেতন পান (সর্বশেষ ২০১৫ পে স্কেল অনুযায়ী পদোন্নতি না হলেও উচ্চতর গ্রেড পান) এই বিষয়গুলোকে সমন্বয় করে পদসোপান তৈরি করা কঠিন নয়। এ কাজটি করলে একদিকে যেমন শিক্ষকদের পেশায় বৈচিত্র সৃষ্টি হবে, পেশায় সন্তুষ্টি আসবে, তেমনি মেধাবী মানব সম্পদ শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হবে।

শিক্ষকদেরকে আমরা টেনে নিচে নামাতে নামাতে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে এসেছি যে এখন কেউ আর শিক্ষকতা পেশায় আসতেই চাইছে না! তাই মেধাবী মুখ শিক্ষক বানাতে বা মেধাবীদেরকে এই পেশার প্রতি আকৃষ্ট করতে এবং ধরে রাখতে মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রবেশ পদকে নবম গ্রেড এবং তাদের পেশায় বৈচিত্র আনতে চার বা পাঁচটি ধাপে একাডেমিক পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী। আর এ কাজটি করতে পারলে আমরা যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট যুগে আছি এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টকে সহজেই মানব সম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে -ইনশাআল্লাহ।

অন্যদিকে, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার কথা যদি বলি তাহলে অবশ্যই শিক্ষা প্রশাসনে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত অভিজ্ঞ জনসম্পদকে নিয়োগ বা পদায়ন করতে হবে। যিনি শিখন বিজ্ঞান বা প্যাডাগজি সম্পর্কে জানেন তার পক্ষেই শিক্ষা প্রশাসক হওয়া উপযুক্ত এবং এই ধারা আমাদের এই উপমহাদেশে শুরু থেকেই প্রচলিত আছে। এছাড়াও যিনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে সেই বিষয়ে পরিচালনার দায়িত্ব দিলে সেই কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়। অতীতে কয়েকজন সচিব চেয়েছিলেন শিক্ষকদের দিয়ে নয়, আমলাদের দিয়ে মাউশি চালাবেন।

তাদের ধারণা, শিক্ষকরা শিক্ষা প্রশাসন চালাতে পারেন না, আমলারা প্রশাসন চালাতে দক্ষ। বেশ শক্ত করেই প্রতিবাদ হয়েছিলো বিষয়টির বিরুদ্ধে। খোদ সেনাবাহিনীর শিক্ষা প্রশাসনের পরিচালক কিন্তু শিক্ষা কোরের, ইনফ্যান্ট্রির নয়। তাহলে সিভিলে কেন শিক্ষকগণ নয়? উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে চিকিৎসা প্রশাসনে চিকিৎসকদের থেকে যেমন নিয়োগ হয়, উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে তেমনিভাবে বিসিএস সাধারন শিক্ষা ক্যাডার থেকে শিক্ষকদের নিয়োগ হয় ঠিক তেমনিভাবে মাধ্যমিকের জন্য বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার কার্যক্রম পরিচালনায় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের নিয়োগ বা পদায়ন দেয়া উচিত।

আর এ কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে বিসিএস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১ সংশোধন করে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশাসনে মাউশির বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় শিক্ষকদের পদায়নের/পদোন্নতির যে সুযোগ আছে সেটিকে গতিশীল করা এবং চেয়ার ভিত্তিক পদোন্নতি প্রথা বাতিল করে তথা পদোন্নতির যোগ্য পদ এবং পদায়নযোগ্য পদ আলাদা করে পদসোপান প্রণয়ন করলে শিক্ষকদের পদোন্নতি পাবার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ কাজটি করলে ২৮/৩০ বছর চাকরি করেও শিক্ষকরা যে পদোন্নতি পাচ্ছেন না বা একই পদ থেকে বৈচিত্রহীন ভাবে নিরানন্দে তীব্র মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে অবসরে যাচ্ছেন সেই বন্ধ্যাত্ব অন্তত ঘুষবে এবং রাষ্ট্রও এক বিশাল দায় মুক্ত হবে।

আবার, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিশেষত মাধ্যমিক শিক্ষার মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ (২৭ নং অধ্যায়ের ৬ নং কলাম পৃষ্ঠা-৬৪) এর আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ভেঙে দুইটি আলাদা অধিদপ্তর যথা বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কলেজ শাখার নেতৃত্বে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর গঠন করা। সেইসাথে শিক্ষা কার্যক্রম সঠিক বাস্তবায়নে রুট লেভেল পর্যন্ত মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে প্রাথমিকের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে শিক্ষা পরিদর্শক ও নিয়ন্ত্রক এবং মাধ্যমিকের জন্য বিদ্যমান বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখাকে যুগোপযোগী ও শক্তিশালী করা উচিত।

কারণ এত বিশাল সংখ্যক অর্থাৎ ব্যানবেইজ পরিসংখ্যান ২০২২ অনুযায়ী – “দেশে বর্তমানে ২০,৩৫৩ টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং ৪৭৪৭টি কলেজ বা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কয়েক লাখ শিক্ষকের কার্যক্রমের তদারকি, চাকুরী ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা রক্ষা, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, পরিদর্শন ও যথাযথ মনিটরিং করা মাউশির বর্তমান জনবল দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য ১,৮০০ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা “কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর” এবং ৯,৬০৬টি মাদ্রাসার জন্য আলাদা “মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর” গঠন করা হলেও প্রায় ২১ হাজারের কাছাকাছি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী মাধ্যমিকের জন্য একটি আলাদা অধিদপ্তরের উদ্যোগ না নেওয়াটা অস্বাভাবিক নয় কী? মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ শাখা (College Branch) এবং বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার (School & Inspection Branch) এর মধ্যে বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তাদের ইতিহাস খুবই শোষণ-বঞ্চনার। এ যেন স্বাধীন দেশেই আরেক উপনিবেশবাদের গল্প।

দীর্ঘদিন ধরে শোষণের শিকার মাধ্যমিক যেন কলেজ শাখার কলোনীতে পরিণত হয়েছে! শোষণ-বঞ্চনার বলছি এজন্য যে এখানে কর্মরত শিক্ষক/কর্মকর্তাগণ অপ্রাপ্তির নানা ধরণের হতাশায় নিমজ্জিত। তবে কলেজ শাখার সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সংখ্যায় কম হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (শিক্ষা ভবনের) ৯৫ ভাগের বেশি পদে কলেজ শিক্ষকগণ (শিক্ষা ক্যাডার) বসে আছেন! সঙ্গত কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৮১%( মাউশি’র অধীনে মোট প্রতিষ্ঠানের) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের গতি মন্থর হয়ে রয়েছে।

তাছাড়া মাউশিতে কর্মরত প্রায় সকল কর্মকর্তা (প্রকৃত অর্থে মাত্র ৩টি পদ ব্যতীত) কলেজ শিক্ষক (সা. শিক্ষা ক্যাডার) হওয়ায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকগণ অধিদপ্তরে তাঁদের দাপ্তরিক কাজের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সুবিধা পান না উল্টো অনেক ক্ষেত্রেই নানা ধরণের ভোগান্তির শিকার হন। ফলে বিশাল কলেবরে মাউশি মাধ্যমিক শিক্ষার উপর ঠিকমত নজর দিতে পারছেই না বিপরীত দিকে উচ্চ শিক্ষার মানও তলানিতে নিয়ে এসেছে। ফলে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা বাস্তবায়নের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থা, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মাউশি’র ওপেন সিক্রেট দুর্নীতি এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা প্রায় ভঙ্গুর!

তাই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকগণ মনে করেন- জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর নির্দেশনা মোতাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের উন্নয়নে এবং দুর্নীতি ও বৈষম্য দূর করতে মাধ্যমিকের জন্য একটি স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। সংবিধানের মূল চেতনাকে সমুন্নত রাখা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৪ অর্জনে এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর কার্যক্রম টেকসইভাবে পরিচালনার জন্য এবং একই সাথে শিক্ষকতা পেশার প্রবেশ পদে সমতা বিধানের জন্য এমপিও শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডে এবং বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) সিডিউল ভুক্ত বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রবেশ পদটিকে নবম গ্রেডের বিসিএস সাধারন শিক্ষা ক্যাডারে উন্নীত করা একান্ত প্রয়োজন।

এছাড়াও শিক্ষকদের কাজে বৈচিত্র আনতে চাকুরী জীবনে সবেচেয়ে বড় আকাঙ্খা পদোন্নতি প্রথা চালু করতে ৪/৫ টি ধাপ বিশিষ্ট পদসোপান বাস্তবায়ন করা অতীব প্রয়োজন। আর নতুন বাংলাদেশে বৈষম্য নিরসনে ছাত্র শিক্ষক সমন্বয়ে গঠিত সরকার এ কাজটি দ্রুতই করবেন বলে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিদগ্ধজন মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন।

লেখক: মো. ওমর ফারুক, শিক্ষক, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা।
মূখপাত্র, স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি, ঢাকা; বাংলাদেশ।