শাহাদাত হোসেন
নোয়াখালী (কােম্পানীগঞ্জ) প্রতিনিধি:
ছোট ফেনী নদী (Little Feni River) ভারতের পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্যে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার দক্ষিণ পূর্বভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গুনবতীর কাছে নোয়াখালী জেলায় প্রবেশ করেছে। আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেলের উত্তর-পূর্বে বামনী নদীতে পড়েছে। এ নদীতে বাঁকের সংখ্যা অনেক বেশি। ডাকাতিয়া, গুমতি প্রভৃতি জলধারা এ নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে যে প্রবাহ জালিকা সৃষ্টি করেছে তা এ এলাকার ভূভাগকে কয়েকটি নাতিবৃহৎ আয়তক্ষেত্রে বিভক্ত করেছে। নদীটি এ অবস্থান ২২০.৪৬ মিনিট উত্তর ও ৯১০.২২৬০ পূশ্চিম দ্রাঘিমায় লক্ষ্য করা যায়।
ফেনী ছোট নদীতে নাব্যসংকট দিন দিন বাড়ছে। বর্ষা মৌসুমে মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে এটা প্রকট আকার ধারণ করছে। পলির কারণে এই সংকট তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন নদী নিয়ে গবেষণায় যুক্ত বিশেষজ্ঞরা। অপরিকল্পিত ড্রেজিং, ড্রেজিং-পরবর্তী ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে না পারা ও নিয়মিত ড্রেজিং না করার কারণে ফেনী ছোট নদী এবং সংযুক্ত খালগুলাে নাব্য ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে মত দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
‘ফেনী ছােট নদীর’ নাব্য ধরে রাখা আমাদের জন্য এখন চ্যালেঞ্জ। আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে নদীতে পলি পড়ে যাচ্ছে। পলি পড়ার বড় কারণ নদীর পাড় দখল হওয়া। পলির কারণে পানিপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। শুধু তাই নয়, পলির কারণে নদীর তলদেশ ভরে গেলে পানির উচ্চতা বেড়ে বন্যা হওয়ার অন্যতম কারণ।
নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বিভিন্ন স্থানে অসমভাবে গর্ত হচ্ছে। সে কারণে পানিপ্রবাহের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে তা আঘাত করে।
ফেনী ছােট ছোট নদীগুলো নাব্যসংকটের মুখে পড়েছে। সেই কারণগুলো হলো- নদীর ক্রমাগত দখল, অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দীর্ঘদিন কচুরিপানা জমে থেকে নদী ভরাট, স্বল্প উচ্চতা ও নদীকে দুই পাশ থেকে সংকুচিত করে নির্মিত স্বল্প দৈর্ঘ্যের ব্রিজ-কালভার্ট, দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় থাকা স্লুইস গেট ও অন্যান্য হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার, দীর্ঘদিন নদীকে খননের আওতায় না আনা ও খননের পর ড্রেজড ম্যাটেরিয়ালের যথাযথ ব্যবস্থাপনা না হওয়ার কারণ নাব্যসংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের অভিমত, ফেনী ছােট নদী’র সঙ্গে সংযুক্ত খাল-বিল, জলাশয়ের নাব্য পুনরুদ্ধারে খনন, ড্রেজড ম্যাটেরিয়ালের সঠিক ব্যবস্থাপনা, কচুরিপানা অপসারণ, ব্যাংক টু ব্যাংক ব্রিজ নির্মাণ, নদীভাঙন রোধ, নদীতে স্থাপিত সব অবৈধ বাঁধ উচ্ছেদ করতে হবে।
অন্যদিকে নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে উজানের বিভিন্ন স্থানে ড্যাম ও ব্যারাজ নির্মাণ। এ ছাড়া রয়েছে নানাবিধ অভ্যন্তরীণ কারণ।
ফেনী নদীর বুকে অবৈধ বাঁধ ও মাটির রাস্তা নির্মাণ, মাইলের পর মাইলজুড়ে কারেন্ট জাল স্থাপন, নদীর উজান ও ভাটিতে প্রবাহ বন্ধ করে নদীকে টুকরো করে জলমহাল হিসেবে ইজারা গ্রহণ, নদীর মুখে অপরিকল্পিত কালভার্ট ও স্লুইস গেট নির্মাণ, নদীর বুকে দীর্ঘদিন ধরে কচুরিপানার স্তূপ জমে নদীর গতি মন্থর হওয়া, নদীর জায়গা সংকুচিত করে স্থাপনা নির্মাণ।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে নদীর গুরুত্ব নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জলপথ’ (ওয়াটারওয়েস ফর সাস্টটেইনেবল ফিউচার)।