রুনু ক্রাইম রিপোর্টার পটুয়াখালী
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পটুয়াখালী, ভোলা নদীতে অবাধে চলছে গলদা ও বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ। এতে দেশের ধ্বংস হচ্ছে নদী ও সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। জেলেরা চিংড়ি পোনার জন্য নষ্ট করছে শত শত প্রজাতি মাছের পোনা। প্রকাশ্যে গলদা-বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকটি উপজেলার স্থানীয়রা।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলা, বাউফল উপজেলা, কলাপাড়া উপজেলা ও গলাচিপা উপজেলা পার্শ্ববর্তী ভোলা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধরা হচ্ছে গলদা-বাগদা চিংড়ি পোনা।
বিশেষ করে দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে কোটি কোটি টাকার অবৈধ গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণুর ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে।
অবৈধ ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। মাঝে মধ্যে পুলিশ, মৎস্য অধিদপ্তর ও র্যাব অভিযান চালালেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেযাচ্ছে রেণুু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের মূলহোতারা।
এ পোনা অতি ক্ষুদ্র হওয়ায় তা ধরতে যে জাল ব্যবহার করা হয় তাতে ধ্বংস হয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। এ জন্য নদীতে চিংড়ি পোনা শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে সে নিষেধাজ্ঞা মানছে না জেলেরা। এপ্রিল-জুন এ তিন মাস পটুয়াখালী ও ভোলা উপকূলীয় অঞ্চলে গলদা-বাগদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির রেনু অবস্থান করে এবং জোয়ারের সময় এসব রেনু পোনা পাড়ে চলে আসে। তখন এক শ্রেণির জেলেরা এ গলদা-বাগদা চিংড়ি পোনা ধরতে গিয়ে নদী ও সামুদ্রিক অনন্য প্রজাতির বিভিন্ন পোনা নিধন করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গলাচিপা, বাউফল, কলাপাড়া ও দশমিনা তেতুলিয়া নদী থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে ভোলা নদী ও পটুয়াখালী এলাকা জুড়ে চলছে গলদা-বাগদা চিংড়ির পোনা ধরার মহাউৎসব। ছেলে, বুড়ো, শিশু সবাই মশারি এবং ঠেলা জাল নিয়ে চিংড়ি রেণু আহরণ করছে। একজন জেলে প্রতিদিন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ পোনা ধরতে পারে। প্রতিটি পোনা তারা আড়তদারের কাছে দুই থেকে আড়াই টাকা দরে বিক্রি করে। আড়তদার চিংড়ি ঘের-মালিকদের কাছে প্রতিটি পোনা সাড়ে তিন থেকে চার টাকা দরে বিক্রি করেন। মহাজনরা অগ্রিম ঋণ দেওয়ায় পোনা শিকারে উত্সাহী হয়ে এসব জেলেরা।
রেনু পোনা শিকারি জেলেরা জানান, গলদা চিংড়ির পোনা ধরা যে অবৈধ, তা তারা জানেন। কিন্তু বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই রেনু পোনা শিকার করতে হচ্ছে তাদের।
নদীর গলদা চিংড়ির পোনা অল্প সময়ে বড় হয়ে যায়। এ জন্য যশোর, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ দেশের চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে পোনার কদর বেশি। জেলেদের কাছ থেকে তারা রেনু পোনা কিনে গলদা ও বাগদা চিংড়ির ঘের মালিকদের কাছে বিক্রি করেন।
এ ব্যবসায় তাদের লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, ২০/২৫ কিলোমিটার নদীপথ সবসময় নজরদারিতে রাখা সম্ভব হয় না। মানুষ সচেতন না হলে রেণু নিধন বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ। তবে প্রায়ই নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে তিনি জানান।
দশমিনা থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, অবৈধ রেণু ব্যবসা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।