মাহফুজ হাসান, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
মেধা, যোগ্যতা আর আন্তরিকতাই মানুষকে আত্মকর্মশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সফল চেয়ারম্যান মো: সিরাজ উদ্দিন একজন সফল কৃষক হিসেবে এলাকায় ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। শ্রমিকের সাথে নিজে মাঠে কোমর বেঁধে অংশ নিচ্ছেন ফসল ফলানোর। সেই কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করেন। কখনো হাতে কোদাল কখনো লাঙ্গলের ফলা, আর কখনোবা খেত নিড়ানি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।
তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলা হোসেনপুর উপজেলা সিদলা ইউনিয়নের চর বিশ্বনাথ পুর। তিনি বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার সিদলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। অত্যন্ত সততা ও সুনামের সাথে সিদলা ইউনিয়নকে আধুনিক মডেল হিসেবে গড়ে তোলেন। এজন্য কুড়িয়েছেন অগনিত সুনাম ও সুখ্যাতি। কিন্তু এ বছর জনগণের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। মনোনিবেশ করেন কৃষি ক্ষেত্রে।
ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। লেখাপড়া শেষ করে ভাগ্য উন্নয়নের নেশায় ছুটে গিয়েছিলেন বিদেশে। কিন্তু সেখানে কাজে মন টেকেনি। ফিরে এলেন মাটি ও এলাকার মানুষের টানে। মানব সেবায় সবসময় তার মন কাদে। তাই জনসেবায় আত্মনিয়োগে জনগণের সুখে দুখে ছুটে চলেন এই নিবেদিত মানুষ।
এখন মনোনিবেশ করেছেন কৃষি ক্ষেত্রে। কৃষি কাজ করেই তিনি বেশ সফল। তিনি নিজের জমিতে একের পর এক ফসল আবাদ করে যাচ্ছেন। এতে রয়েছে তার ব্যাপক সফলতা। তিনি একজন সফল কৃষক। এমনটাই দাবি তার।
তিনি বলেন, কৃষি প্রধান দেশে কৃষি আমাদের উন্নয়নের চালিকা শক্তি। কৃষির উন্নয়ন হলে দেশের উন্নয়ন ঘটবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা যাতে পতিত না থাকে সেই লক্ষ্যে নিজের জমি গুলোকে নিজ হস্তে আবাদ করছি। এতে একদিকে নিজে লাভবান হচ্ছি অপরদিকে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে মনে করি।
সিরাজ উদ্দিন জানালেন, এ বছর তিনি নিজের ৩ একর জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এই আলু চাষে এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আলু মাড়াইয়ের ধুমধাম শুরু হয়েছে। বাজারে আলুর দাম কম। তবুও চার লক্ষ টাকা আলু বিক্রি করতে পারবেন তিনি। আলু খেতে আলুর পাশাপাশি ভুট্টা চাষ করেছেন। এছাড়াও ২ একর জমিতে বাদাম, মরিচ, মিষ্টি আলু, সরিষা করেছেন। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ভাবেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী তিনি।
কৃষি কাজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরো বলেন, মাঝে মধ্যে প্রাকৃতিক কারণে ফসল নষ্ট হলেও তিনি কখনই হাল ছাড়েননি। নতুন উদ্যমে নতুন করে ফসল আবাদ করেছেন। ভালো মাটি ও আবহাওয়া কৃষির জন্য বেশ উপযোগী বলে মনে করেন এই সফল কৃষক।
আগে শুধু ধান চাষাবাদ করলেও তিনি এখন সব ফসল ফলান। বর্তমান সময়ের কৃষি প্রযুক্তি তার কাছে খুবই সহজ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি পড়াশুনা করেছেন এমএ পর্যন্ত। পারিবারিক জীবনে তিন মেয়ে ও এক ছেলে তার। বর্তমানে স্ত্রী ছেলে ও মেয়ে নিয়ে তার ছয়জনের সংসার। কৃষির আয় দিয়েই চলছে ছোট সংসারটি এবং অর্থনৈতিকভাবে হচ্ছেন লাভবান।
সিরাজ উদ্দিন বলেন, কৃষি কাজ অত্যন্ত লাভজনক পেশা। এখানে আত্মনিয়োগ করলে পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আনা সম্ভব। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরির আশায় ঘোরাফেরা করে। চাকরি না পেলেও বেকার যুবকদের হতাশাগ্রস্ত না হয়ে কৃষি কাজের পরামর্শ দিয়েছেন সিরাজ উদ্দিন।
সিরাজ উদ্দিন আরো বলেন, যখন যে মৌসুম সেই মৌসুমে ফসল আবাদ করে উপার্জন করা সম্ভব। শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়েরা কৃষি কাজ করে বাড়তি উপার্জন করতে পারবে। কৃষি কাজ করলে নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন হবে বলে মনে করেন সিরাজ উদ্দিন।
সিদলা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালাম মানিক বলেন, সিরাজ উদ্দিন একজন ভালো চাষি। উনার মতো ব্যক্তি কৃষি কাজে জড়িত হয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উনার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই কৃষিতে আত্মনিয়োগ করছেন।
হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক আশরাফ আহমেদ (সোহাগ) বলেন, একজন সৌখিন মনের মানুষ সিরাজ উদ্দিন উনার কৃষিকর্মে আত্মনিয়োগ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরুল কায়েস জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন আসলে অনুকরণীয় হতে পারে। উনার ফসল উৎপাদনে আলাদা বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়। ফলে ওনাকে অনুকরণ করছেন এলাকার অনেক কৃষক।