নিজস্ব সংবাদ : 
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেট এর বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ মোবাইল ও আইএমইআই পরিবর্তনকারী সরঞ্জামাদিসহ চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের ০৬ জন সদস্য র্যাব-৯ এর কাছে গ্রেফতার। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের নৃশংস ও ঘৃণ্যতম অপরাধ বিশেষ করে মাদক উদ্ধার, ধর্ষণ, হত্যা মামলা, জঙ্গি দমন, সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, ডাকাত, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় র্যাবের প্রতিটি সদস্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে জনসাধারণের জন্য একটি নিরাপদ বাসযোগ্য সমাজ তথা দেশ বিনির্মাণে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজ, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, চুরি-ছিনতাই ও চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেট চক্রের তৎপরতা বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসকল চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের সদস্যরা সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা, ব্যাগ, মোবাইল সহ বিভিন্ন মূল্যবান দ্রব্যাদি ছিনতাই করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। এরই প্রেক্ষিতে মোবাইল চুরি ও ছিনতাইকারী চক্রের এসব সদস্যদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-৯, সিলেট গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ছিনতাই ও চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেট এর সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৯, সিলেট এর একাধিক আভিযানিক দল গত ১০ জুন ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ এসএমপি-সিলেট এর কোতয়ালী থানাধীন বন্দর বাজারস্থ করিম উল্লাহ মার্কেটের ৩য় তলায় একাধিক মোবাইল সার্ভিসিং দোকানে অভিযান পরিচালনা করে মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারী চক্র এবং মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনকারী সংঘবদ্ধ চক্রের ০৬ জন সক্রিয় সদস্যকে বিপুল পরিমাণ চোরাই মোবাইল এবং মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনকারী বিভিন্ন ডিভাইসসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, সিলেট শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় একাধিক সংঘবদ্ধ মোবাইল চুরি ও ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। খুবই অল্প সময়ে চুরি- ছিনতাইয়ের কাজ শেষে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে চুরি ও ছিনতাইকৃত এসব মোবাইল পরবর্তীতে আইএমইআই পরিবর্তন করা হয়। পাশাপাশি তারা মোবাইলের কেসিন, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে এই সকল মোবাইল বিভিন্ন অপরাধ করার জন্য অপরাধীরা ক্রয় করে থাকে।
গ্রেফতারকৃত এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে বলে জানা যায়। ব্র্যান্ড এবং কোয়ালিটি ভেদে এসব মোবাইলের দাম বিভিন্ন পরিমাণ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। গ্রেফতারকৃত এই চক্রটি প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজারের অধিক মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে বলে জানায়। তারা ব্র্যান্ড ও কোয়ালিটিভেদে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই যে কোন মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা- ১। নজিবুল ইসলাম জেবলু (২২), পিতা- রফিকুল ইসলাম সেতাব, সাং- রাউয়াই উম্মর কবুল, থানা- দক্ষিন সুরমা, জেলা- সিলেট, ২। মোঃ আব্দুর রহিম (২৮), পিতা- মোঃ বাচ্চু মিয়া, সাং- লামাপাড়া, থানা- শাহপরান, জেলা- সিলেট, ৩। মোঃ মাসুদ মিয়া (২৩), পিতা- মোঃ আকল মিয়া, সাং-ভবানীপুর, থানা- বাহুবল, জেলা-হবিগঞ্জ, ৪। মোঃ ইমন (২২), পিতা- আমির আলী, সাং- ধরাদরপুর, থানা- দক্ষিন সুরমা, জেলা- সিলেট, ৫। মিজানুর রহমান (২২), পিতা- মানিক মিয়া, সাং- সিলামটিকরপাড়া, থানা- মোঘলাবাজার, জেলা- সিলেট, ৬। আব্দুর রহমান (২২), পিতা- আব্দুর রজ্জাক, সাং- ধরাদরপুর, থানা- দক্ষিন সুরমা, জেলা- সিলেট।
গ্রেফতারকালে তাদের নিকট হতে ২৩১ টি স্মার্ট মোবাইল, ১০ টি বাটন মোবাইল, ১০ টি ট্যাব, ০২ টি পিসি, ০৩ টি মনিটর, ০২ টি কীবোর্ড, ০২ টি মাউস, ০১ টি হার্ডড্রাইভ, ০২ টি পেনড্রাইভ, নগদ ৭৫,৫৫০ টাকা এবং ০১ টি আইএমইআই পরিবর্তনকারী ডিভাইস জব্দ করা হয়। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গ্রেফতারকৃতদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। চোরাই মোবাইল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে র্যাব-৯, সিলেট এর গোয়েন্দা তৎপরতা এবং চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
