বাংলাদেশ ০৯:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
সিরাজগঞ্জে জিংক ধান সম্প্রসারণে উপ-সহকারী কৃষি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত নয় ইউনিয়নে ইচ্ছামতো নেওয়া হচ্ছে ওয়ারিশ সনদের মূল্য চ্যালেঞ্জে ফেনী’র ছোট নদীর নাব্য উত্তরবঙ্গে মৌ-চাষী সমিতির সভাপতি রশিদ সম্পাদক শিশির সাহা বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিয়ার সহ ১জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ময়মনসিংহে সিপিবি’র সমাবেশ ও লাল পতাকার মিছিল মঠবাড়িয়ায় কলেজ অধ্যক্ষের নাম ভাঙিয়ে খাল দখলের অভিযোগ দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগে পিরোজপুর জেলা নাসিং ইনস্টিটিউট অবরুদ্ধ করেছে শিক্ষার্থীরা রাণীশংকৈলে গণ অধিকার পরিষদের আনন্দ র‌্যালি অনুষ্ঠিত মান্দার ছাত্রদল নেতাদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময়। ভান্ডারিয়ায় সাবেক ছাত্রদল নেতার নামে বিএনপির কর্মীর মামলা নাইক্ষংছড়িতে ইয়াবাসহ পৃথক পৃথক অভিযানে ৪ কারবারি আটক বুড়িচংয়ে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কমিটি গঠন ভালুকায় বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিসের শুভ উদ্বোধন গৌরীপুর মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির এডহক কমিটির সভাপতি তানজীন চৌধুরী

জেলে থেকে মাছ চাষী, রাষ্ট্রীয় পদক পেলেন গৌরীপুরের যতীন্দ্র

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:০৪:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০২৩
  • ১৬১৪ বার পড়া হয়েছে

 

ওবায়দুর রহমান, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে রেণু পোনা উৎপাদনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় মৎস্য পদক-২০২৩ পান ময়মনসিংহের গৌরীপুরের যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ। গত মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজধানী ঢাকার ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী জাতীয় মৎস্য পদক (ব্রোঞ্জ) তুলে দেন যতীন্দ্র বর্মণের হাতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম।
নয় সদস্যের অভাব অনটনের সংসারে পড়াশোনা হয়ে উঠেনি তাঁর। সংসারের চাহিদা মেটাতে ও জীবিকার তাগিদে ছোটবেলাতেই বেছে নিতে হয় জেলে পেশা। একটি ঝাঁকি (থাপা) জাল দিয়ে খাল-বিল থেকে মাছ শিকার করে সন্ধ্যায় বাজারে বিক্রি করেছেন। বাড়তি আয়-রোজগারের জন্য পারিশ্রামিকের বিনিময়ে অন্যের মৎস্য খামারে শ্রম বিক্রির সময়ই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখেন যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মন। হাড়ভাঙা খাটুনি ও শ্রমে মাটির ব্যাংকে জমানো পাঁচশ টাকায় ১৯৯৫ সালে মাছ চাষের জন্য একটি পুকুর ভাড়া নেন যতীন্দ্র। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। মাছ চাষের আয়ে ২০০৫ সালে গৌরীপুর-রামগোপালপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাহাদুর গ্রামে গড়ে তোলেন বর্মণ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও হ্যাচারী।
যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
শুক্রবার সকালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় হ্যাচারির পুকুরে মাছের খাবার ছিটাচ্ছেন যতীন্দ্র। কয়েকজন কর্মচারী মিলে করেছেন পুকুর ও হ্যাচারির চৌবাচ্চা পরিচর্যার কাজ। একটি পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ শুরু করা যতীন্দ্রের হ্যাচারিতে এখন ২৫টি পুকুর রয়েছে। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষের। যতীন্দ্রের হ্যাচারিতে রুই, কাতল, মৃগেল, সরপুঁটি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, কার্ফু, কালিবাউশ সহ দেশি-বিদেশী বিভিন্ন মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন করা হয়।
স্থানীয়দের খামারিদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০ জন খামারি এই হ্যাচারি থেকে নিয়মিত মাছের পোনা ও রেণু সংগ্রহ করেন। তাই বছর শেষে ভাল লাভের মুখ দেখেন তিনি। করেছেন জমি ও বাড়ি। যতীন্দ্রের বয়স এখন বাষট্টি। মাছ চাষের পাশাপাশি সঙ্গীত ও যাত্রাশিল্পী হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছেন। মাছ চাষে বেকার যুবকদের উদ্বুব্ধ করতে নিয়মিত লিখেন গান ও নাটিকা। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ এগুলো বিভিন্ন সেমিনারে প্রচার করেন।
১৯৭৫ সালে তার গান শোনে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন জমিদার রুহিনী কান্ত লাহিড়ি চৌধুরী তাকে পৌর শহরের বাগানবাড়িতে এক খন্ড জায়গা উপহার দেন। সেই জায়গাতেই বাড়ি তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এখন এই মাছ চাষি।

যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বলেন, ছোটবেলায় খাল-বিলে মাছ শিকার করার পাশাপাশি হ্যাচারিতে কাজ করতাম। সেখান থেকেই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখা। শুরুটা সহজ ছিলনা, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছি। পেয়েছি জাতীয় পুরস্কার। মাছ চাষ ও গান আমার নেশা। এগুলো নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষের সর্বশেষ যে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ ও রেণু উৎপাদন করতেন। আদর্শ এই মাছ চাষি জাতীয় মৎস্য পদক সম্মানা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি আরো ভালো কিছু করে সুনাম বয়ে আনবেন এটাই প্রত্যাশা।
জনপ্রিয় সংবাদ

সিরাজগঞ্জে জিংক ধান সম্প্রসারণে উপ-সহকারী কৃষি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

জেলে থেকে মাছ চাষী, রাষ্ট্রীয় পদক পেলেন গৌরীপুরের যতীন্দ্র

আপডেট সময় ০৪:০৪:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০২৩

 

ওবায়দুর রহমান, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহে রেণু পোনা উৎপাদনে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় মৎস্য পদক-২০২৩ পান ময়মনসিংহের গৌরীপুরের যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ। গত মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজধানী ঢাকার ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী জাতীয় মৎস্য পদক (ব্রোঞ্জ) তুলে দেন যতীন্দ্র বর্মণের হাতে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম।
নয় সদস্যের অভাব অনটনের সংসারে পড়াশোনা হয়ে উঠেনি তাঁর। সংসারের চাহিদা মেটাতে ও জীবিকার তাগিদে ছোটবেলাতেই বেছে নিতে হয় জেলে পেশা। একটি ঝাঁকি (থাপা) জাল দিয়ে খাল-বিল থেকে মাছ শিকার করে সন্ধ্যায় বাজারে বিক্রি করেছেন। বাড়তি আয়-রোজগারের জন্য পারিশ্রামিকের বিনিময়ে অন্যের মৎস্য খামারে শ্রম বিক্রির সময়ই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখেন যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মন। হাড়ভাঙা খাটুনি ও শ্রমে মাটির ব্যাংকে জমানো পাঁচশ টাকায় ১৯৯৫ সালে মাছ চাষের জন্য একটি পুকুর ভাড়া নেন যতীন্দ্র। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। মাছ চাষের আয়ে ২০০৫ সালে গৌরীপুর-রামগোপালপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাহাদুর গ্রামে গড়ে তোলেন বর্মণ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও হ্যাচারী।
যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামে।
শুক্রবার সকালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় হ্যাচারির পুকুরে মাছের খাবার ছিটাচ্ছেন যতীন্দ্র। কয়েকজন কর্মচারী মিলে করেছেন পুকুর ও হ্যাচারির চৌবাচ্চা পরিচর্যার কাজ। একটি পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষ শুরু করা যতীন্দ্রের হ্যাচারিতে এখন ২৫টি পুকুর রয়েছে। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষের। যতীন্দ্রের হ্যাচারিতে রুই, কাতল, মৃগেল, সরপুঁটি, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, কার্ফু, কালিবাউশ সহ দেশি-বিদেশী বিভিন্ন মাছের পোনা ও রেণু উৎপাদন করা হয়।
স্থানীয়দের খামারিদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০ জন খামারি এই হ্যাচারি থেকে নিয়মিত মাছের পোনা ও রেণু সংগ্রহ করেন। তাই বছর শেষে ভাল লাভের মুখ দেখেন তিনি। করেছেন জমি ও বাড়ি। যতীন্দ্রের বয়স এখন বাষট্টি। মাছ চাষের পাশাপাশি সঙ্গীত ও যাত্রাশিল্পী হিসাবে সুনাম কুড়িয়েছেন। মাছ চাষে বেকার যুবকদের উদ্বুব্ধ করতে নিয়মিত লিখেন গান ও নাটিকা। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ এগুলো বিভিন্ন সেমিনারে প্রচার করেন।
১৯৭৫ সালে তার গান শোনে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন জমিদার রুহিনী কান্ত লাহিড়ি চৌধুরী তাকে পৌর শহরের বাগানবাড়িতে এক খন্ড জায়গা উপহার দেন। সেই জায়গাতেই বাড়ি তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন এখন এই মাছ চাষি।

যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ বলেন, ছোটবেলায় খাল-বিলে মাছ শিকার করার পাশাপাশি হ্যাচারিতে কাজ করতাম। সেখান থেকেই মাছ চাষের স্বপ্ন দেখা। শুরুটা সহজ ছিলনা, পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছি। পেয়েছি জাতীয় পুরস্কার। মাছ চাষ ও গান আমার নেশা। এগুলো নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, যতীন্দ্র চন্দ্র বর্মণ একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষের সর্বশেষ যে প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ ও রেণু উৎপাদন করতেন। আদর্শ এই মাছ চাষি জাতীয় মৎস্য পদক সম্মানা পেয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি আরো ভালো কিছু করে সুনাম বয়ে আনবেন এটাই প্রত্যাশা।