প্রেস বিজ্ঞপ্তি
রাজধানীর মোহাম্মাদপুর কেন্দ্রিক ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসী গ্যাং ‘কব্জি কাটা গ্রুপ’ এর অন্যতম মূলহোতা টাকলা হায়াতসহ ০৯ সন্ত্রাসীকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব; উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট র্ফোস হিসেবে অত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোড়ালো তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য কর্তৃক ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এ সকল সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও মামলা রুজু হয়। বিভিন্ন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। অতি সম্প্রতি মোহাম্মদপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র্যাব। ফলশ্রুতিতে র্যাবের টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়ীবাঁধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাই, চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসী গ্যাং ‘কবজি কাটা গ্রুপ’ এর অন্যতম মূলহোতা (১) মোঃ হায়াত @ টাকলা হায়াত (৪০), পিতা- মৃত মিকাইল, থানা- চিতলমাড়ি, জেলা- বাগেরহাট, (২) মোঃ সাগর (১৯), পিতা- মোঃ হিরা, থানা- টঙ্গী, জেলা- মুন্সীগঞ্জ, (৩) মোঃ ইসমাইল হোসেন (১৯), পিতা-মৃত মোঃ হানিফ, থানা- লক্ষীপুর সদর, জেলা- লক্ষীপুর, (৪) মোঃ সুমন (৪৫), পিতা- মোঃ সামছু, থানা- মাদারীপুর সদর, জেলা- মাদারীপুরদের গ্রেফতার করে।
র্যাব-২ অপর একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবি কবরস্থান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপর একটি সন্ত্রাসী গ্যাং ‘বিরিয়ানী সুমন গ্রুপ’ এর মূলহোতা (১) মোঃ সুমন @বিরিয়ানী সুমন (২৮), পিতা-মোঃ আসলাম, থানা- মোহাম্মদপুর, জেলা-ঢাকা এবং তার সহযোগী (২) মোঃ বাদল (২৬), পিতা- মোঃ সাইদুল, থানা-মোহাম্মদপুর, জেলা-ঢাকা, (৩) মোঃ আকাশ (১৯), পিতা- মোঃ সুমন, থানা- মোহাম্মদপুর, জেলা-ঢাকা, (৪) মোঃ রাব্বি (২৮), পিতা- মৃত আরমান, থানা- মোহাম্মদপুর, জেলা-ঢাকা ও (৫) মোঃ রাসেল (৩৮), পিতা- মোঃ নাসির বেপারী, থানা- কেরানীগঞ্জ, জেলা-ঢাকাদের’কে গ্রেফতার করা হয়।
উদ্ধার করা হয় ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় ধারালো অস্ত্র। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা পূর্বের বিভিন্ন অপরাধ এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন সহিংসতা সৃষ্টির পরিকল্পনা সর্ম্পকে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত ০৪ জন কব্জি কাটা গ্রুপ এবং ০৫ জন বিরিয়ানী সুমন গ্রুপ এর সদস্য। তাদের দুটি গ্রুপে প্রায় ৩০-৩৫ জন সদস্য রয়েছে। কব্জি টাকা গ্রুপটি সন্ত্রাসী আনোয়ার ও টাকলা হায়াত এর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে।
এছাড়াও তারা আনোয়ার সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। এই গ্রুপের সদস্যরা পূর্বে আনোয়ার গ্রুপ নামে অন্তরভুক্ত ছিল। নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দলের কারনে তারা ২/৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। বিরিয়ানি সুমন গ্রুপটি গেৃফতারকৃত সুমন @বিরিয়ানী সুমন এর নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে।
গ্রেফতারকৃতরা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। তারা বর্ণিত এলাকাসমূহে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো।
এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ বর্ণিত এলাকাসমূহে মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল। মূলত তারা মোহাম্মদপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন গাড়ীর হেলপার ও ড্রাইভার, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা ইত্যাদি পেশার আড়ালে তারা মূলত মোহাম্মদপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত হায়াত টাকলা হায়াত সন্ত্রাসী আনোয়ারের অন্যতম প্রধান সহযোগী। পূর্বে সে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদকের ব্যবসা করত। সে আনোয়ারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে মোহাম্মদপুর ও তার আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণ সহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিল। সন্ত্রাসী আনোয়ারের অবর্তমানে সে গ্যাংটি পরিচালনা করে আসছে এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে এবং এ সকল মামলায় কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত সাগর, ইসমাইল ও সুমন তারা কব্জি কাটা গ্রুপের সদস্য।
তারা গ্রেফতারকৃত টাকলা হায়াত এর নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে এবং এ সকল মামলায় কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ সুমন বিরিয়ানী সুমন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করা জন্য ১৫-২০ জনের ‘বিরিয়ানী সুমন গ্রুপ’ নামে একটি সন্ত্রাসী গ্যাং তৈরি করে। সে এই সন্ত্রাসী গ্যাং এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে উক্ত এলাকায় মাদক ব্যবসা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত ১২টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
এ সকল মামলায় একাধিক বার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত বাদল, আকাশ, রাব্বি ও রাসেল গ্রেফতারকৃত বিরিয়ানী সুমন এর সহযোগী। তারা গ্রেফতারকৃত বিরিয়ানি সুমন এর নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন এলাকায় টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে এবং উক্ত মামলা সমূহে কারোভোগ করেছে বলে জানা যায়।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা মোহাম্মাদপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য গ্রেফতারকৃতরা পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়। এ উদ্দেশ্যে তারা এলাকায় ধারালো অস্ত্রসহ শো-ডাউন, বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণকে ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার পরিকল্পনা করছিল।
এছাড়াও তারা রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে পেশিশিক্ত প্রদর্শনের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় যেত বলে জানা যায়। মূলত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে পেশি শক্তি প্রদর্শন ও সহিংসতা করার পরিকল্পনা করছিল জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সহকারী পরিচালক
লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং
পক্ষে পরিচালক