বাংলাদেশ ১১:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক যুবকের লাশ প্রভাবের পরোয়া করে না ঠাকুরগাঁওয়ের ভোটাররা ইসলাম অবমাননায় স্বপ্নীলের শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে শোক সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত  অতিরিক্ত খাজনা আদায় ও সিন্ডিকেটে কমছে ধানের দাম  বিশ্ব পরিবেশ দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ফাইনালে রাবি রাবিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী ডিভিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি ক্যাম্প ফের খাবারের দাম বৃদ্ধি, রাবি প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দোকানিদের রাবিতে গ্যাস ক্রোমাটোগ্রাফির উপর কর্মশালা অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহার আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইউপি সদস্য রিপন হত্যা মামলার পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। কাউখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরোধ-কোন্দলে লড়াই হবে ত্রিমুখী ফুলবাড়ী খাদ্য গুদামে ইরি বোরো ধান ও চাউল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন  বিপুল পরিমানে ফেন্সিডিল পাঁচারকালে ২জন কুখ্যাত মাদক কারবারী আটক। বিআরটিসি লাইসেন্স ও সরকারি অনুমোদন ব্যতীত জিপিএস ট্র্যাকার, ট্রেসলক জিপিএস ট্র্যাকার, মোটোলক রিমোর্ট ও ফ্রিকোয়েন্সী যন্ত্র সামগ্রীসহ ০৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

বীরত্ব ও প্রেমময়ীতার নিরব স্বাক্ষী সখিনার সমাধি।

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:৪৪:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ১৬১৪ বার পড়া হয়েছে

বীরত্ব ও প্রেমময়ীতার নিরব স্বাক্ষী সখিনার সমাধি।

মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কেল্লা তাজপুর গ্রামের কুমড়ী নামক স্থানে সতের শতকের মুঘল সম্রাজ্যের স্মৃতিবহন করছে বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধি। এক নারীর অপ্রতিরোধ্য প্রেমের নিরব সাক্ষ্য দেয় এই সমাধি।
সখিনার সমাধিটি গৌরীপুর থেকে ১৪/১৫ কিলোমিটার দূরত্বে।সরেজমিনে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে একটি গেটসম্বলিত সীমানা প্রাচীর। প্রধান ফটকের সীমানা প্রাচীরে পাথরখণ্ডে লেখা আছে বীরাঙ্গনা সখিনার কাহিনি।
জানা যায়, কেল্লা তাজপুরের মুঘল দেওয়ান উমর খাঁর সুকন্যা ছিলেন সখিনা। একদিকে তিনি ছিলেন অপরূপ সুন্দরী, অন্যদিকে সর্ববিদ্যায় পারদর্শী। তার রূপ-গুণের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল বহুদূর পর্যন্ত।
৫০ থেকে ৬০ মাইল দূরবর্তী বারভূঁইয়ার অন্যতম কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ির স্বাধীন শাসক ঈশা খাঁর নাতি ফিরোজ খাঁ সখিনার রূপ ও গুনের বর্ণনা শুনে তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সে সময় দেওয়ান উমর খাঁ পরিবারের কঠোর পর্দাপ্রথা চালু থাকায় সখিনাকে দেখার সুযোগ ছিল না।
ফিরোজ খাঁ দরিয়া নামের এক নারীকে তসবি বিক্রেতা সাজিয়ে উমর খাঁর অন্তঃপুর তথা সখিনার বাসগৃহে পাঠান। দরিয়ার মুখে ফিরোজ খাঁর অসামান্য রূপ-গুণের কথা শুনে সদ্য যৌবন প্রাপ্ত সখিনাও তাকে ভালোবেসে ফেলেন। ফিরোজ খাঁ উমর খাঁর দরবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু কন্যাপক্ষ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। লজ্জা ও ক্ষোভে ফিরোজ খাঁ বিশাল বাহিনী নিয়ে কেল্লা তাজপুরে অভিযান চালান। অতর্কিত আক্রমণে উমর খাঁর বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পরাজয় বরণ করে। তখন ফিরোজ সখিনাকে নিজের কাছে নিয়ে যান এবং বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেন।
কিন্তু উমর খাঁ এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরোজ খাঁ-কে বন্দী করেন। তার সৈন্যবাহিনী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। সে সময় পুরুষবেশে যুদ্ধে অংশ নেন সখিনা। স্বামীর পক্ষে বাবার বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধ। সখিনার অংশগ্রহণে উমর খাঁর বাহিনী বিপন্নপ্রায় হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি পাল্টে যায় উমর খাঁর জনৈক উজিরের কুমন্ত্রণায়। গুজব রটিয়ে দেওয়া হয় ফিরোজ খাঁ তার স্ত্রী সখিনাকে তালাক দিয়েছেন।
এ খবর সখিনার কানে পৌঁছালে তিনি ভেঙে পড়েন। যুদ্ধ কৌশল সঠিকভাবে পরিচালনার শক্তি হারান। একসময় বিপক্ষ শক্তির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শিরোস্ত্রাণ খুলে গেলে দেখা যায় বীর সখিনার মুখ। উমর খাঁ কন্যাকে হারিয়ে শোকে পাগল প্রায়। এরপর ফিরোজ খাঁকে বন্দীশালা থেকে মুক্তি দেন।
জনশ্রুতি আছে, এরপর থেকে প্রতি সন্ধ্যায় দরবেশধারী ফিরোজ খাঁ প্রদীপ জ্বেলে সখিনার সমাধির পাশে নিশ্চুপে বসে থাকতেন। তিনি আমৃত্যু সখিনাকে না পাওয়ার বেদনায় কাতর ছিলেন। এই প্রেম ইতিহাসে অমর। এই গল্প একদিকে বীরত্বের অন্যদিকে এক বিয়োগের।
সখিনার সমাধিটি গিলাফ দিয়ে ঢাকা। উপরে একটি ছাউনি আছে। সবথেকে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য হলো সমাধিটি ঘিরে রেখেছে অনেক কাঠ গোলাপের গাছ। গাছগুলো দেখে মনে হলো বীরাঙ্গনা সখিনার শৌর্য, বীর্যের প্রতীক। আবার মনে হলো গাছগুলো বড় মায়ায় সমাধিটি ঘিরে রেখেছে। যেন কন্যার প্রতি মাতৃমমতার ছায়া। ডালপালাগুলো কোথাও কোথাও শূন্যের দিকে উঠে গেছে আবার মাটির সঙ্গে মিশে আছে। বীরাঙ্গনা সখিনা একদিকে ছিলেন কোমল মনের অধিকারী অন্যদিকে যোদ্ধা। সখিনার জীবন যেন নারীপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello
জনপ্রিয় সংবাদ

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক যুবকের লাশ

বীরত্ব ও প্রেমময়ীতার নিরব স্বাক্ষী সখিনার সমাধি।

আপডেট সময় ০৮:৪৪:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩
মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কেল্লা তাজপুর গ্রামের কুমড়ী নামক স্থানে সতের শতকের মুঘল সম্রাজ্যের স্মৃতিবহন করছে বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধি। এক নারীর অপ্রতিরোধ্য প্রেমের নিরব সাক্ষ্য দেয় এই সমাধি।
সখিনার সমাধিটি গৌরীপুর থেকে ১৪/১৫ কিলোমিটার দূরত্বে।সরেজমিনে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে একটি গেটসম্বলিত সীমানা প্রাচীর। প্রধান ফটকের সীমানা প্রাচীরে পাথরখণ্ডে লেখা আছে বীরাঙ্গনা সখিনার কাহিনি।
জানা যায়, কেল্লা তাজপুরের মুঘল দেওয়ান উমর খাঁর সুকন্যা ছিলেন সখিনা। একদিকে তিনি ছিলেন অপরূপ সুন্দরী, অন্যদিকে সর্ববিদ্যায় পারদর্শী। তার রূপ-গুণের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল বহুদূর পর্যন্ত।
৫০ থেকে ৬০ মাইল দূরবর্তী বারভূঁইয়ার অন্যতম কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ির স্বাধীন শাসক ঈশা খাঁর নাতি ফিরোজ খাঁ সখিনার রূপ ও গুনের বর্ণনা শুনে তাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সে সময় দেওয়ান উমর খাঁ পরিবারের কঠোর পর্দাপ্রথা চালু থাকায় সখিনাকে দেখার সুযোগ ছিল না।
ফিরোজ খাঁ দরিয়া নামের এক নারীকে তসবি বিক্রেতা সাজিয়ে উমর খাঁর অন্তঃপুর তথা সখিনার বাসগৃহে পাঠান। দরিয়ার মুখে ফিরোজ খাঁর অসামান্য রূপ-গুণের কথা শুনে সদ্য যৌবন প্রাপ্ত সখিনাও তাকে ভালোবেসে ফেলেন। ফিরোজ খাঁ উমর খাঁর দরবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু কন্যাপক্ষ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। লজ্জা ও ক্ষোভে ফিরোজ খাঁ বিশাল বাহিনী নিয়ে কেল্লা তাজপুরে অভিযান চালান। অতর্কিত আক্রমণে উমর খাঁর বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পরাজয় বরণ করে। তখন ফিরোজ সখিনাকে নিজের কাছে নিয়ে যান এবং বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করেন।
কিন্তু উমর খাঁ এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরোজ খাঁ-কে বন্দী করেন। তার সৈন্যবাহিনী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। সে সময় পুরুষবেশে যুদ্ধে অংশ নেন সখিনা। স্বামীর পক্ষে বাবার বিরুদ্ধে সেই যুদ্ধ। সখিনার অংশগ্রহণে উমর খাঁর বাহিনী বিপন্নপ্রায় হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি পাল্টে যায় উমর খাঁর জনৈক উজিরের কুমন্ত্রণায়। গুজব রটিয়ে দেওয়া হয় ফিরোজ খাঁ তার স্ত্রী সখিনাকে তালাক দিয়েছেন।
এ খবর সখিনার কানে পৌঁছালে তিনি ভেঙে পড়েন। যুদ্ধ কৌশল সঠিকভাবে পরিচালনার শক্তি হারান। একসময় বিপক্ষ শক্তির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শিরোস্ত্রাণ খুলে গেলে দেখা যায় বীর সখিনার মুখ। উমর খাঁ কন্যাকে হারিয়ে শোকে পাগল প্রায়। এরপর ফিরোজ খাঁকে বন্দীশালা থেকে মুক্তি দেন।
জনশ্রুতি আছে, এরপর থেকে প্রতি সন্ধ্যায় দরবেশধারী ফিরোজ খাঁ প্রদীপ জ্বেলে সখিনার সমাধির পাশে নিশ্চুপে বসে থাকতেন। তিনি আমৃত্যু সখিনাকে না পাওয়ার বেদনায় কাতর ছিলেন। এই প্রেম ইতিহাসে অমর। এই গল্প একদিকে বীরত্বের অন্যদিকে এক বিয়োগের।
সখিনার সমাধিটি গিলাফ দিয়ে ঢাকা। উপরে একটি ছাউনি আছে। সবথেকে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য হলো সমাধিটি ঘিরে রেখেছে অনেক কাঠ গোলাপের গাছ। গাছগুলো দেখে মনে হলো বীরাঙ্গনা সখিনার শৌর্য, বীর্যের প্রতীক। আবার মনে হলো গাছগুলো বড় মায়ায় সমাধিটি ঘিরে রেখেছে। যেন কন্যার প্রতি মাতৃমমতার ছায়া। ডালপালাগুলো কোথাও কোথাও শূন্যের দিকে উঠে গেছে আবার মাটির সঙ্গে মিশে আছে। বীরাঙ্গনা সখিনা একদিকে ছিলেন কোমল মনের অধিকারী অন্যদিকে যোদ্ধা। সখিনার জীবন যেন নারীপ্রেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।