মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ
বরিশাইল্যা আমড়া, উৎপাদনে সেরা আমরা। ঝালকাঠির রাজাপুরের বিভিন্ন এলাকার আমড়া বিভিন্ন শহর ঢাকা, খুলনা, যশোর ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যাচ্ছে। ভেজাল মুক্ত , ভিটামিন সি যুক্ত টসটসে তাজা রসালো সুস্বাদু বরিশালের ঝালকাঠির রাজাপুরের মিষ্টি ও লোভনিয় আমড়া নিজ এলাকার বাইরেও সমাদ্রিত। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আমড়া ক্রয় করে বিভিন্ন শহরে নিয়ে বিক্রি করছেন। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। তাতে চাষি ও ক্রেতা উভয়ই বেজায় খুশি।
রাজাপুর উপজেলার আংগারিয়া গ্রামের আমড়া চাষি মোঃ শাহ আলম নান্নু ও পুটিয়া খালি গ্রামের মোঃ মিঠু তালুকদার বলেন, আমড়া হচ্ছে এই এলাকার একটি সবচেয়ে লাভজনক ফসল। কারণ, আমড়া চাষে কোন সার,ঔষধ দিতে হয়না। আমড়া চাষে কোন ফসলি জমির দরকার হয়না। বাড়ির আঙ্গিনায়, পরিত্যাক্ত জমি, বাড়ি ও জমির সিমানায় মাটি ওলট-পালট করে রোপন করলেই খুব ভালো ফসল হয়। ফলন অনুসারে প্রতিটি গাছের আমড়া ৫শ’ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।
শাহআলম নান্নু আরও বলেন, এবছর পর্যন্ত তার ৬০ টি গাছে আমড়ার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় ৮০ হাজার টাকার আমড়া বিক্রি করেছেন। কয়েকদিন পরেই আমড়া তুলে নিবেন ক্রেতারা। তার রোপা ছোট-বড় এক শতাধিক আমড়া গাছ রয়েছে। এ বছর ৬০টি আমড়া গাছে ফল ধরলেও আগামি ১/২ বছরের মধ্যে সব আমড়া গাছে ফল ধরবে বলে জানান তিনি। সব গাছে আমড়া ধরলে বছরে দেড় লক্ষাধিক টাকার আমড়া উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা করছেন। কেউ বেকার বসে না থেকে অথবা কাজের ফাকে প্রত্যেকের বাড়িতে বা পরিত্যক্ত যায়গায় আমড়া গাছ রোপন করা উচিত। কারণ এটা বিনা খরচে একটি লাভজনক ফসল।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমড়া চাষ লাভ জনক হওয়ায় প্রতি বছরই উপজেলায় আমড়ার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমন কোন টাকা খরচ ও শ্রম ছাড়াই আমড়া চাষ করা যায় বলে এ ফসল বেশী লাভ জনক। প্রতি বছর জুলাই মাসের শেষের দিক থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমড়ার চাড়া রোপন করা হয়। কলমের চাড়া হলে সেই গাছে ফলন ধরতে ১ থেকেে দেড় বছর সময় লাগে। তবে বিচি থেকে চাড়া হলে সেই গাছে ফলন ধরতে ৩ থেকে ৪ বছর সময় লাগে বলে কৃষি অফিস জানান।
রাজাপুর উপজেলার বড় গালূয়া ইউনিয়নের ক্ষুদ্র মৌসুমি আমড়া ব্যবসায়ী নাইম হোসেন বলেন, জুন/জুলাই মাসে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমড়া গাছের ফলন আনুসারে আমড়া ক্রয় করা হয়। প্রতি গাছ প্রতি ফলন বেদে ৫শ’ থেকে ৮ হাজার টাকায় ক্রয় করা হয়। আগষ্ট/সেপ্টেম্বর মাসে গাছ থেকে আমড়া তুলে একশ’ কেজির বস্তায় প্যাকেট জাত করা হয়। প্রতি বস্তা আমড়া ক্রয় মূল্য পড়ে প্রায় ১৫শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা করে।
এর পরে যত্নসহকারে গাড়িতে করে ঢাকার নীলসা এলাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতি বস্তা আমড়া বিক্রয় করা হয় ২ হাজার ২শ’ টাকা থেকে ২ হাজার ৪শ’ টাকা পর্যন্ত। এলাকার আমড়া বিভিন্ন সহরে গিয়ে কয়েক হাত ঘুড়ে ভোক্তার হাতে পৌছাতে প্রতিটি আমড়া বিক্রি হয় ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত।
এবিষয়ে রাজাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসা: শাহিদা শারমিন আফরোজ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী চাষিড়া আমড়া চাষ করে পোকার আক্রমণ থেকে ফলন রক্ষা করতে পেরেছেন এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভালো ফলন পেয়েছেন। গত বছরের তুলনায় এবছর ভালো ফলন পেয়েছেন। কৃষকরা দামও ভালো পাচ্ছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ভালো মুনাফা পাচ্ছেন। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীরা খুব খুশি। এবছর উপজেলায় মোট ২৬ হেক্টর জমিতে আমড়ার চাষ করা হয়েছে।