বুড়িচং কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
সারাদেশের পাইকারী সব্জি বিক্রেতাদের কাছে নিমসার যেন একটা বহুল পরিচিত বাজারের নাম। একনামেই এর অবস্থান, পরিচিতি ক্রেতা-বিক্রেতা সবার কাছে। জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার স্কুল-কলেজ ঘেষে বিগত শতাব্দির ’৮০ দশকে বাজারটির যাত্রা শুরু। আস্তে আস্তে বাজারটির ব্যস্ততার পাশাপাশি দোকান-পাটের পরিধিও বাড়তে থাকে। সরকার নির্ধারিত ও ব্যক্তিগত জায়গায় বাজারের অস্তিত্ব থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র মহাসড়কের পাশে থাকা সড়ক ও জনপথের জায়গায় অস্থায়ী ঘর নির্মান করে সেগুলো বিভিন্নস্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে লাখ লাখ টাকা অগ্রিমসহ মাসিক হাজার হাজার টাকায় ভাড়া দেয়।
গত ৮ও ৯ নভেম্বর সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সিনিয়র কমিশনার মোঃ মাঈনুদ্দিনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ,ফায়ারসার্ভিস সদস্যদের উপস্থিতিতে বুলডোজার দিয়ে অস্থায়ী কমপক্ষে ৫’শতাধিক এসব অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুড়িয়ে দিলে অনেকটা পথে বসার উপক্রম হয় এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক,পরিবারসহ কয়েক হাজার কর্মচারীর। অভিযোগ রয়েছে প্রভাবশালী লোকজন ভাসমান দোকানীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম নেওয়াসহ মাস শেষে প্রতিটি দোকান থেকে হাজার হাজার টাকা গুনলেও উচ্ছেদ অভিযানের খবরে কেউ এগিয়ে আসেনি।
এঅবস্থায় কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখিন এসব ব্যবসায়ীরা। নিমসার বাজারটি রাত বাড়ার সাথে সাথে ব্যস্ততা বাড়ে। আবার দিনের আলো যত বাড়তে থাকে বাজারের ব্যস্ততাও তত কমতে থাকে। প্রতিদিন এই বাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তসহ জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলা থেকে বিভিন্ন প্রকারের শাক-সব্জি,ফল-মুলছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে আসে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক,ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্ত¡ ভোগীরা।
এই বাজারে স্থানীয় বুড়িচং উপজেলা প্রশাসন থেকে বাজারের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ করা হলেও সেটা খুবই অপ্রতুল। এঅবস্থায় কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গাছাড়াও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী চক্র মহাসড়ক,সড়ক দ্বীপ ও মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে নিমসার – বরুড়া সড়কের পাশের সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় অনুমতি ছাড়াই শত শত অস্থায়ী দোকার ঘর নির্মান করে। আর সেগুলো সড়কের পাশে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক স্থানে হওয়ায় দুরদুরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা আগ্রহভরে ভাড়া নেয়।
এসময় তাদের যাচাই-বাছাই করার কোন সুযোগও থাকে না, কোন প্রতিপক্ষ না থাকায়। এসুযোগ নিযে প্রভাবশালীরা অবস্থান ভেদে প্রতিটি ছোট-বড় দোকান থেকে সর্বনিন্ম ২ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫/২০ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রিম গ্রহন ছাড়াও প্রতি মাসে এসব দোকান থেকে সর্বনিন্ম ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫/২০হাজার টাকা গ্রহন করেন। ব্যবসায়ীরাও সন্দেহ না থাকায় স্বাচ্ছন্দে ব্যবসার কারণে এককালীন টাকা দেওয়ার পর প্রতি মাসে ভাড়াও পরিশোধ করেন। এখানে ঘর ভাড়া করে কেউ আড়ৎ দিচ্ছেন, যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা তরিতরকারি ক্রয় করে স্তুপ করছেন। পরবর্তীতে স্থানীয়ও আশপাশের নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, চ্ট্টগ্রাম, ব্রাহ্মনবাড়িয়াসহ কুমিল্লার বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত পাইকার এসে এসব আড়ৎ থেকে মালামাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য।
এসব ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ঋণের টাকায় ব্যবসা করছেন দাবী করে আরো বলেন, মাস শেষে ঘর ভাড়া, দোকানের কর্মচারীদের বেতন, নিজের পরিবার পরিজনের ব্যয়সহ ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে যেখানে তাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে, সেখানে হঠাৎ সামান্য কয়েক ঘন্টার ঘোষণায় দোকান স্থানান্তর করতে গিয়ে ব্যবসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয় দোকান, অন্যদিকে মুল বেঁচা-কেনার সময়ে ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা।
ইয়াসিন,সাখাওয়াৎ, মোসলেম, খোরশেদ, ইউনুস, দেলোয়ার নামে বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বিগত সময়ে বাজার উচ্ছেদ করতে প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই ঘোষনা দিলেও এবারের স্বল্প সময়ের ঘোষনায় দোকানীরা হতাশ। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বলেও জানান তারা। তবে ব্যবসায়ীরা যেখানে আর্থিক ক্ষতি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায়, সেখানে ভাসমান দোকান বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রভাবশালীরা রয়েছেন একেবারে ফুরফুরে মেজাজে। তাদের কেউ আশ^স্ত করছে আবারো ঘর নির্মান করে দিবে এজন্য কিছুদিন অপেক্ষার কথা বলছে দোকানীদের। তবে, সড়ক ও জনপথ থেকে বলা হয়েছে, আবারো দোকান-পাট নির্মান করলে, আবারো উচ্ছেদ অভিযান চলবে।