রংপুর প্রতিনিধি :
রংপুরের মিঠাপুকুরে ভুমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজ। উপজেলার ১০ নং-বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের পলিপাড়া (মাসিমপুর) মৌজায় সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। তবে এখানকার নির্মাণাধীন ঘরগুলো করা হচ্ছে নদীর বালু দিয়ে। যমুনেশ্বরী নদীর নিকটবর্তী এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বালু সরবরাহ করছেন একটি প্রভাবশালী চক্র। নদীতে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে দিনের পর দিন বালু উত্তোলন করার কারণে ভেঙে যাচ্ছে নদীর পাড়। চাষীরা হারাতে বসেছে আবাদী জমি। অপরিকল্পিতভাবে বালু তোলার কারণে শত শত একর আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার চরম ঝুকি দেখা দিলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ঠদের। একই সঙ্গে নদীর উপর আশ্রয়ের ঘরগুলো সংলগ্ন ড্রেজার মেসিন দিয়ে বালু তোলায়,আশ্রয়নের ঘরগুলোই বা কতদিন টিকবে তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের পলিপাড়া মৌজায় ভুমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত হচ্ছে সরকারী আশ্রয়ন প্রকল্প। প্রতিটি আবাসনের জন্য প্রায় ২লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ইতোমধ্যে এখানে ৬০টি আবাসনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরো ৪০টি আবাসন নির্মানের কাজ শেষের পথে। গত প্রায় ১বছর ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জোহরার সার্বিক তত্বাবধানে এই নির্মান কাজ দ্রুততার সাথে চলছে। এই আবাসন প্রকল্পের অতি নিকট দিয়ে প্রবাহিত যমুনেশ্বরী নদীর ভাঙ্গন নিয়ে নদীর তীরবর্তী বসবাসরতদের অনেক আগ থেকেই চিন্তার শেষ নেই। তার উপর অতিরিক্ত শংকা সৃষ্টি করেছে আবাসন প্রকল্পের মাত্র পঞ্চাশ ফুটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আবাসনের সামনেই যমুনেশ্বরী নদী হতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
উপজেলার একটি সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য স্থানীয় মরাহাটি এলাকার বাদিন্দা শাহীন মন্ডল নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে এই আবাসন স্থানে থাকা যমুনেশ্বরী নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। যার ফলে এই আবাসন প্রকল্পসহ আশেপাশে থাকা আবাদী জমি, বসতবাড়ী, রাস্তা ভাঙ্গনের মুখে পড়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে প্রকল্প এলাকা থেকে উত্তরপশ্চিমে হাফ কিলোমিটার দুরে নদীর পাড় ভাঙছে। এমনকি আবাসনের সামনে পশ্চিম-উত্তর কোনে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসী বুলু মিয়া, মোস্তফা, সেলিম রহমানসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের লোকজনের সামনেই প্রকাশ্যে দীর্ঘদিন হতে যমুনেশ্বরী নদীর আবাসনের সামনে থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদীর পাড় থেকে মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন মরাহাটি এলাকার শাহীন মন্ডল। সে সাংবদিক হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করলেই নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়, তাই প্রকাশ্যে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
তারা বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের আয়না, তারাই যদি বিবেকহীন কাজ করে তখন আর কি-বা করার আছে! যেহেতু প্রশাসনের লোক কিছু বলে না, তাই স্থানীয় লোকজনও কিছু বলতে সাহস পায়না। আবাসনের পাশেই যমুনেশ্বরী নদী থেকে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে অনেকদিন ধরে বালু উত্তোলন ও নদীর পাড় থেকে মাটি উত্তোলন করায় এরইমধ্যে আবাসনের সামনে পশ্চিম-উত্তর কোনে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আশংকা করছেন এই বালু-মাটি উত্তোলনের প্রভাবে সামনে আগত বর্ষা মৌসুমে এখানকার আবাসন প্রকল্পসহ আশেপাশের আবাদী জমি, বসতবাড়ী, রাস্তা ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়তে পারে। স্থানীয়রা এব্যাপারে মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসনের কার্যকরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় একটি সাংবাদিক সংগঠনের সদস্য শাহীন মন্ডল মুঠোফোনে বলেন, ইউএনওর নির্দেশে তিনি বালু তুলছেন। এর বেশী তিনি বলতে পারবেন না বলেই মোবাইল ফোন কেটে দেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন ভুমি সহকারী অফিসার আঃ রহিম বলেন, বিষয়টি জানার পর প্রাথমিকভাবে ঐ ব্যক্তিকে বাধা নিষেধ করা হয়েছে। তাতেও কাজ না হওয়ায় বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, পলিপাড়া মাসিমপুর আবাসন প্রকল্পের কাজ অনেক আগে শুরু হয়ে এখন শেষ পর্যায়ে। বালু কে তুলছে কিভাবে প্রকল্পে কাজে নেওয়া হচ্ছে আমি বলতে পারবো না। তবে প্রকল্পের সবকিছু তত্ত্বাবধান ও বাস্তবায়ন করেছেন ইউএনও স্যার। আমি অল্পদিন হয় এসেছি। এবিষয়ে কিছু বলতে পারবোনা।
মিঠাপুকুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) রুহুল আমিন বলেন, একটি বালিকনাও কেউ নদী থেকে উঠাতে পারবেনা। যদি উঠায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অথচ কোনো ব্যবস্হা না নিয়ে তিনি অজানা কারনে চুপ করে আছেন।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা-মিঠাপুকুরে দায়িত্বরত থাকার সময়, যমুনেশ্বরী নদী থেকে বালু তুলে আশ্রয়ন প্রকল্প ভরাটের কাজ করতে সাংবাদিককে নির্দেশ দিয়েছেন কি!না, জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছিলেন, বালু তিনি ক্রয় করেছেন। কে বালু দিচ্ছে আর কোথা থেকে বালু আসছে,তার জানা নাই।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক ডঃ চিত্রলেখা নাজনীন জানান, বিষয়টি তার জানা ছিলোনা। খুব দ্রুতগতিতে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখে জরুরি ব্যবস্হা নিবেন।