বাংলাদেশ ১১:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
রাজশাহীতে সক্রিয় আমের সিন্ডিকেট, দাম হবে দ্বিগুন আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে শোকাজ। সরকারী সফরে আসছেন পুলিশ প্রধান বৃহত্তর সি‌লে‌টের কৃতি সন্তান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ইসলাম অবমাননায় সাময়িক বহিষ্কার কুবি শিক্ষার্থী স্বপ্নীল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় তার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল নাইক্ষংছড়িতে নির্বাচন হবে স্বচ্ছ-সুষ্ঠ-অবাধ-নিরপেক্ষ ব্যতায় ঘটলে দায়ী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রাঙ্গাবালী থানার কর্মকর্তার সাথে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সৌজন্য সাক্ষাৎ ড. সজীবকে সমর্থন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন গিয়াস উদ্দিন  ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীর পক্ষে নাইঘর বাসীর একাত্মতা প্রকাশ প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে পরিবেশ বান্ধব গাছ উপহার দিলো ঐক্য-বন্ধন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবন নিয়ে মারামারি সালথার তরুণ কবি নাইমের কবিতা, আমিও মানুষ। রাজশাহীতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার শীর্ষক অ্যাডভোকেসী সম্মেলন রাঙ্গাবালীতে চেয়াম্যান প্রার্থীর ভাইয়ের মৃতুতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে নির্বাচনী প্রচারণা রাজশাহীতে ১৫ দিনব্যাপী গ্রীষ্মকালীন কারুশিল্প উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধন

চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১১ বছরের পলাতক আসামি র‌্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেফতার।

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:৩০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০২২
  • ১৬৫৭ বার পড়া হয়েছে

চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১১ বছরের পলাতক আসামি র‌্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেফতার।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

পূর্ব শত্রæতার জেরে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১১ বছরের পলাতক আসামি র‌্যাব-৩ কর্তৃক মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে গ্রেফতার।

 

 

র‌্যাব-৩ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামী গ্রেফতার করে। যার মধ্যে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর ০৩ টি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামী মোঃ হেলাল হোসেনকে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকা থেকে গ্রেফতার, রাজধানীর শাহজাহানপুরের জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং পথচারী কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকান্ডের অন্যতম ০৪ জন আসামীদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার, বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার। এছাড়াও র‌্যাব-৩ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কিছু দুর্ধর্ষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

 

 

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৯ অগাস্ট ২০২২ রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ জিকু (৩২), পিতা-আওলাদ হোসেন রিপন, ধোলাইখাল, রায়সাহেব বাজার, নাসির উদ্দিন সর্দ্দার লেন, কোতোয়ালী, ডিএমপি, ঢাকাকে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

 

 

ধৃত আসামী জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ভিকটিম রজব আলী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। কিন্তু ভিকটিমদের বাসা ছিল লালচাঁন মোকাল্লেম পাড়ায় এবং ধৃত আসামী জিকুর বাসা ছিল রায়সাহেব বাজার এলাকায়। তারা পরস্পর বন্ধু হলেও এলাকা ভিত্তিক উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে গ্রæপিং ছিল। ভিকটিম এবং ধৃত জিকু দুজনেই মাদকাসক্ত ছিল। তারা পাড়ার বন্ধুদের সাথে দল বেধে মাদক সেবন করত। একদিন মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখন ভিকটিম রজব আলী তাদের মাদক সেবন সঙ্গী সজিব নামে একজনের মোবাইল জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করে সকলে মিলে দল বেধে মাদক সেবন করে। পরবর্তীতে জামানতের টাকা পরিশোধ না করেই তারা ভিকটিমের নিকট জামানত দেওয়া মোবাইলটি দাবী করে।

 

 

 

 

উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শত্রæতার সৃষ্টি হয়। উক্ত শত্রæতার জের ধরে রায়সাহেব পাড়া এলাকার ছেলেরা জিকুর নেতৃত্বে রহিম ওরফে আরিফ, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে। ২০১১ সালের ২৪ জুলাই রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে মোবাইলের দোকানে ভিকটিম রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও ৪/৫ জন ভিকটিম রজব আলীকে ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে ১৬/এ কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়।

 

 

 

 

সেখানে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেমসহ সকলে মিলে রজব আলীর উপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করলে ভিকটিম রজব আলী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সে সময় রজব আলী চিৎকার করলে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে তারা সকলে পালিয়ে যায়। রজব আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীরা প্রথমে নিকটস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

 

 

ঐ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালে ০৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৩ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়। বিজ্ঞ আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ০১ আগস্ট ২০১৯ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। উক্ত আসামীরা সকলেই পলাতক ছিল। এছাড়াও একই রায়ে ০৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ০৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়।

 

 

 

আসামীর জীবন বৃতান্তঃ ধৃত আসামীর পেশা মটর মেকানিকস। সে ১০ বছর বয়স হতে ধোলাইখাল এলাকায় ওয়ার্কশপে কাজ শিখে। সে প্রাইভেটকারের যেকোন যান্ত্রিক ত্রæটি সহজেই শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে। তার মাসিক আয় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। কিন্তু সে ১৪ বছর বয়সেই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তার রোজগারের দুই তৃতীয়াংশ সে মাদকের পিছনে ব্যয় করে। প্রতিদিন পারিশ্রমিক পাওয়ার পরই সে মাদক ক্রয় করে। যেদিন রোজগার বেশি হয় সেদিন সে বেশি পরিমানে মাদক সেবন করে। ২০০৭ সালে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার ০২ জন কন্যা ও ০১ জন পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী বর্তমানে দুবাই প্রবাসী। তার সন্তানেরা তার শ্বশুরবাড়ি বরিশালে লালিত পালিত হচ্ছে।

 

 

 

পলাতক জীবনঃ একদিন এই মাদকই তার জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে। ২৪ জুলাই ২০১১ তারিখ হত্যাকান্ডের ঘটনার দিন তারা সকলে মিলে ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিল। কিন্তু উক্ত ঘটনায় রজব আলী মৃত্যু বরণ করলে ঘটনার পরপরই ধৃত আসামী মাতুয়াইল এলাকায় জনৈক মনুমিয়ার বাড়িতে আত্মগোপনে চলে যায়। দীর্ঘ আট মাস পলাতক থাকার পর সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে তিন বছর ছয় মাস জেল খাটে। জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর সে বরিশাল তার শ্বশুরবাড়ি চলে যায় এবং কোর্টে হাজিরা দেওয়া হতে বিরত থেকে পলাতক জীবন যাপন শুরু করে। সেখানে নিজেকে মটর মেকানিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে কাজ করে।

 

 

অদ্যাবধি তার কোন এনআইডি না থাকায় সে নিজের নাম পরিবর্তন করে নাসির উদ্দিন নামে নিজেকে পরিচয় দেয়। মটর মেকানিকের কাজ জানায় সে অতি সহজেই কর্মস্থল পরিবর্তন করতে পারত। সে প্রাইভেটকারের যেকোন যান্ত্রিক ত্রæটি সহজেই শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে। এজন্য যেকোন ওয়ার্কশপে তার নাম পরিচয় যাচাই না করেই চাকুরি পেয়ে যেত। এভাবে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর সে আবার ঢাকায় ফিরে আসে। সে লম্বা চুল ও দাড়ি রেখে বেশ বদল করে নাসির উদ্দিন পরিচয়ে ধোলাইখাল এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে। পলাতক সময়ে সে তার সকল নিকট আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে।

 

 

 

উক্ত সময়ে তার মাদকাসক্তির পরিমান আরও বাড়তে থাকে। তার রোজগারের সমস্ত টাকাই সে মাদকের পিছনে ব্যয় করতে থাকে। এরপর তার ওয়ার্কশপের এক সহকর্মীর পরামর্শে সে মুন্সীগঞ্জের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়। উক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার অংশ হিসেবে ধৃত জিকুর চুল ও দাড়ি কেটে দেয়। এভাবেই তার আসল চেহারা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রকাশ পায় এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সে প্রায় ০৮ বছর যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারী জীবন যাপন করছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

বীণা রানী দাস, পিপিএম (বার)
পুলিশ সুপার
স্টাফ অফিসার (মিডিয়া)
পক্ষে পরিচালক

আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello
জনপ্রিয় সংবাদ

রাজশাহীতে সক্রিয় আমের সিন্ডিকেট, দাম হবে দ্বিগুন

চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১১ বছরের পলাতক আসামি র‌্যাব-৩ কর্তৃক গ্রেফতার।

আপডেট সময় ০৮:৩০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ অগাস্ট ২০২২

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

পূর্ব শত্রæতার জেরে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১১ বছরের পলাতক আসামি র‌্যাব-৩ কর্তৃক মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে গ্রেফতার।

 

 

র‌্যাব-৩ বিগত দিনগুলোতে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতারের অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামী গ্রেফতার করে। যার মধ্যে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর ০৩ টি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সিরিয়াল কিলার খ্যাত দুর্ধর্ষ ফেরারি আসামী মোঃ হেলাল হোসেনকে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকা থেকে গ্রেফতার, রাজধানীর শাহজাহানপুরের জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং পথচারী কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যাকান্ডের অন্যতম ০৪ জন আসামীদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার, বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার। এছাড়াও র‌্যাব-৩ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ছদ্মবেশী বেশ কিছু দুর্ধর্ষ খুনী, ডাকাত এবং ধর্ষককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

 

 

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ০৯ অগাস্ট ২০২২ রাতে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে চাঞ্চল্যকর রজব আলী হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ জিকু (৩২), পিতা-আওলাদ হোসেন রিপন, ধোলাইখাল, রায়সাহেব বাজার, নাসির উদ্দিন সর্দ্দার লেন, কোতোয়ালী, ডিএমপি, ঢাকাকে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

 

 

ধৃত আসামী জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, ভিকটিম রজব আলী তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। কিন্তু ভিকটিমদের বাসা ছিল লালচাঁন মোকাল্লেম পাড়ায় এবং ধৃত আসামী জিকুর বাসা ছিল রায়সাহেব বাজার এলাকায়। তারা পরস্পর বন্ধু হলেও এলাকা ভিত্তিক উঠতি বয়সের যুবকদের মধ্যে গ্রæপিং ছিল। ভিকটিম এবং ধৃত জিকু দুজনেই মাদকাসক্ত ছিল। তারা পাড়ার বন্ধুদের সাথে দল বেধে মাদক সেবন করত। একদিন মাদক সেবনের সময় তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখন ভিকটিম রজব আলী তাদের মাদক সেবন সঙ্গী সজিব নামে একজনের মোবাইল জামানত রেখে মাদকের টাকা সংগ্রহ করে সকলে মিলে দল বেধে মাদক সেবন করে। পরবর্তীতে জামানতের টাকা পরিশোধ না করেই তারা ভিকটিমের নিকট জামানত দেওয়া মোবাইলটি দাবী করে।

 

 

 

 

উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে শত্রæতার সৃষ্টি হয়। উক্ত শত্রæতার জের ধরে রায়সাহেব পাড়া এলাকার ছেলেরা জিকুর নেতৃত্বে রহিম ওরফে আরিফ, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগার, মন্টি, মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শহীন চাঁন খাদেম ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদার বাবু ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করে। ২০১১ সালের ২৪ জুলাই রাতে রাজধানীর কোতোয়ালি থানাধীন নবাবপুরে মোবাইলের দোকানে ভিকটিম রজব আলী টাকা রিচার্জ করতে গেলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিকুসহ আরও ৪/৫ জন ভিকটিম রজব আলীকে ঢাকা জজ কোর্টের পিছনে ১৬/এ কোর্ট হাউজ স্ট্রিটের পূর্ব পাশে নিয়ে যায়।

 

 

 

 

সেখানে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা মোঃ মিলন ওরফে চোপা মিলন, আকাশ ওরফে রাসেল, ফরহাদ হোসেন ওরফে ফরহাদ, সজিব আহমেদ খান, শাহীন চাঁন খাদেমসহ সকলে মিলে রজব আলীর উপর এলোপাতাড়ি আক্রমণ করে বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করলে ভিকটিম রজব আলী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সে সময় রজব আলী চিৎকার করলে চারপাশ থেকে লোকজন ছুটে এলে তারা সকলে পালিয়ে যায়। রজব আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় পথচারীরা প্রথমে নিকটস্থ ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

 

 

ঐ ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় রজবের ভাই জুম্মন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালে ০৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৩ জনকে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয়। বিজ্ঞ আদালত ১৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ০১ আগস্ট ২০১৯ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন। উক্ত রায়ে জিকু, রহিম ওরফে আরিফ ও আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে টাইগারকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। উক্ত আসামীরা সকলেই পলাতক ছিল। এছাড়াও একই রায়ে ০৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ০৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়।

 

 

 

আসামীর জীবন বৃতান্তঃ ধৃত আসামীর পেশা মটর মেকানিকস। সে ১০ বছর বয়স হতে ধোলাইখাল এলাকায় ওয়ার্কশপে কাজ শিখে। সে প্রাইভেটকারের যেকোন যান্ত্রিক ত্রæটি সহজেই শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে। তার মাসিক আয় প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। কিন্তু সে ১৪ বছর বয়সেই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তার রোজগারের দুই তৃতীয়াংশ সে মাদকের পিছনে ব্যয় করে। প্রতিদিন পারিশ্রমিক পাওয়ার পরই সে মাদক ক্রয় করে। যেদিন রোজগার বেশি হয় সেদিন সে বেশি পরিমানে মাদক সেবন করে। ২০০৭ সালে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তার ০২ জন কন্যা ও ০১ জন পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী বর্তমানে দুবাই প্রবাসী। তার সন্তানেরা তার শ্বশুরবাড়ি বরিশালে লালিত পালিত হচ্ছে।

 

 

 

পলাতক জীবনঃ একদিন এই মাদকই তার জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে। ২৪ জুলাই ২০১১ তারিখ হত্যাকান্ডের ঘটনার দিন তারা সকলে মিলে ভিকটিম রজব আলীকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিল। কিন্তু উক্ত ঘটনায় রজব আলী মৃত্যু বরণ করলে ঘটনার পরপরই ধৃত আসামী মাতুয়াইল এলাকায় জনৈক মনুমিয়ার বাড়িতে আত্মগোপনে চলে যায়। দীর্ঘ আট মাস পলাতক থাকার পর সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে তিন বছর ছয় মাস জেল খাটে। জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর সে বরিশাল তার শ্বশুরবাড়ি চলে যায় এবং কোর্টে হাজিরা দেওয়া হতে বিরত থেকে পলাতক জীবন যাপন শুরু করে। সেখানে নিজেকে মটর মেকানিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ওয়ার্কশপে কাজ করে।

 

 

অদ্যাবধি তার কোন এনআইডি না থাকায় সে নিজের নাম পরিবর্তন করে নাসির উদ্দিন নামে নিজেকে পরিচয় দেয়। মটর মেকানিকের কাজ জানায় সে অতি সহজেই কর্মস্থল পরিবর্তন করতে পারত। সে প্রাইভেটকারের যেকোন যান্ত্রিক ত্রæটি সহজেই শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে। এজন্য যেকোন ওয়ার্কশপে তার নাম পরিচয় যাচাই না করেই চাকুরি পেয়ে যেত। এভাবে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর সে আবার ঢাকায় ফিরে আসে। সে লম্বা চুল ও দাড়ি রেখে বেশ বদল করে নাসির উদ্দিন পরিচয়ে ধোলাইখাল এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে। পলাতক সময়ে সে তার সকল নিকট আত্মীয়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে।

 

 

 

উক্ত সময়ে তার মাদকাসক্তির পরিমান আরও বাড়তে থাকে। তার রোজগারের সমস্ত টাকাই সে মাদকের পিছনে ব্যয় করতে থাকে। এরপর তার ওয়ার্কশপের এক সহকর্মীর পরামর্শে সে মুন্সীগঞ্জের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হয়। উক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ তাদের চিকিৎসার অংশ হিসেবে ধৃত জিকুর চুল ও দাড়ি কেটে দেয়। এভাবেই তার আসল চেহারা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে প্রকাশ পায় এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সে প্রায় ০৮ বছর যাবৎ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরারী জীবন যাপন করছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

বীণা রানী দাস, পিপিএম (বার)
পুলিশ সুপার
স্টাফ অফিসার (মিডিয়া)
পক্ষে পরিচালক