বাংলাদেশ ০৭:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
এপেক্স শো-রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি লাইব্রেরিয়ান রফিকুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা মামলার আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। প্রচণ্ড তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন: পথচারীদের সহায়তায় এগিয়ে আসছে তরুণ ঐক্য ব্লাড ডোনার ও স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন রাবিতে প্রথমবারের মতো হাসান আজিজুল হক সাহিত্য উৎসব অনুষ্ঠিত রাবিতে নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র: উদ্বেগ প্রকাশ করে সংযুক্তের দাবি রাজশাহী নগরীর কেদুরমোড় এলাকার মাদক কারবারী তোসলি গ্রেফতার গণধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত প্রধান আসামী মোক্তার গ্রেফতার। পিরোজপুর জেলা সরকারি কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নতুন কমিটির পরিচিতি সভা প্রচণ্ড গরমের পর টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী‌তে স্বস্তির বৃষ্টি। কালকিনিতে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় আজ শুভ উদ্বোধন হলো শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। পাথরঘাটায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাইবার মামলা প্রতিবাদে মানববন্ধন ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাঈল কর্তৃক বর্বর গনহত্যার প্রতিবাদে সিলেট মহানগর শিবিরের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত। মুলাদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার তালুকদারের উড়োজাহান প্রতিকের সমর্থনে গনসংযোগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহ- সভাপতি হলেন কোরবান শেখ

হোয়াইট কলার অপরাধ

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১১:১১:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২
  • ১৮১৪ বার পড়া হয়েছে

হোয়াইট কলার অপরাধ

সোহেল সানি

হোয়াইট কলার অপরাধ। নেই কোন এর আইনগত সংজ্ঞা নেই। বাংলা শব্দে এটা “ভদ্রবেশী অপরাধ” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপত্তি হলেও ক্রমে তা বিভিন্ন রাষ্ট্রে এ ধরণের অপরাধ কর্মে লিপ্ত ব্যক্তিদের অভিহিত করা হচ্ছে ‘হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল’ রূপে। হোয়াইট কলার অপরাধ সর্বাপেক্ষা সংঘটিত হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের করপোরেট বা করপোরেশনে। অভিযোগ থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, করপোরেট অপরাধের প্রধানতম উদ্দেশ্যই হলো, অধিকতর মুনাফা অর্জন।

 

 

করপোরেট অপরাধের প্রকৃতি উন্মোচন করেন প্রখ্যাত মার্কিন অপরাধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাদারল্যান্ড। তিনি আমেরিকার ৭০টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে (করপোরেশনে) এ ধরণের জনস্বার্থ পরিপন্থী কর্মকান্ড উদঘাটন করেন। “হোয়াইট কলার অপরাধ” তত্ত্বের উদ্ভাবকও তিনি।

 

 

সাদারল্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে হোয়াইট কলার অপরাধ ধারণার একটি রূপরেখা প্রণয়নের প্রয়াস পান।

 

 

অন্যান্য অপরাধ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ব্যবসায় অধিক মুনাফা লাভ এবং স্বীয় শক্তি বৃদ্ধির লালসাকে কেন্দ্র করেই হোয়াইট কলার অপরাধের উৎপত্তি ঘটেছে।

 

 

১৯৩৯ সালে সর্বপ্রথম হোয়াইট কলার ক্রিমিনালদের আসল অপরাধী এবং অপরাধকে দন্ডবিধি আইনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করেন।

 

 

সাধারণতঃ হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা সাধারণ অপরাধীদের তুলনায় অধিকতর বুদ্ধিমান, আচরণে ভারসাম্যপূর্ণ, কর্মজীবনে কৃতকার্য এবং সমাজে উঁচু পদমর্যাদার অধিকারী।

 

 

এসব অপরাধ অপ্রত্যক্ষ, নৈর্ব্যক্তিক এবং ছদ্মনামে সংঘটিত হয় বলেও তাঁরা সহমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে, এসব ভদ্রবেশী অপরাধীর কৃতকর্ম সহজে সাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়না। অথচ, হোয়াইট কলার ক্রিমিনালদের অপরাধের অর্থনৈতিক ফলাফল অন্যান্য সাধারণ অপরাধের অপেক্ষা অনেক গুণ বেশী।

 

অর্থনৈতিক ক্ষয় ক্ষতির চেয়ে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী। কারণ এরা বিশ্বাস ভঙ্গ করে। ফলে অবিশ্বাসের জন্ম হয়। এতে কর বিস্তৃত পরিসরে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যা রাষ্ট্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

 

 

ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যাপক অপরাধমূলক আচরণ সংঘটিত হবার ফলে প্রখ্যাত অপরাধ অপরাধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাদারল্যান্ড সর্বপ্রথম হোয়াইট কলার অপরাধ’ বা ভদ্রবেশী অপরাধ’ তত্ত্বের প্রকাশ ঘটে ১৯৩৯ সালে।আমেরিকান সমাজবিজ্ঞান সমিতির সভায় সভাপতির ভাষণে এ তত্ত্বের উদ্ভাবনপূর্বক বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সাদারল্যান্ড।

 

 

সমাজতাত্ত্বিক ও মানসিক বৈকল্যের কারণে মানুষ অপরাধ করে – এই গতানুগতিক ব্যাখ্যা পক্ষপাতদুষ্ট নমুনার ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়াকে অকার্যকর অভিহিত করে হোয়াইট কলার অপরাধের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। আর্থসামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিগণও যে অপরাধের উর্ধ্বে এমন ভ্রান্ত ধারণাকে অস্বীকার করেন অপরাধবিজ্ঞানীরা।

 

 

গতানুগতিক ব্যাখ্যায় কেবলমাত্র নিম্নশ্রেণীর লোকেরাই অপরাধ করে-এমন ধারণাকে তিরস্কৃত করা হয়। উচ্চ আর্থসামাজিক শ্রেণীভুক্ত কোন ব্যক্তি যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দন্ডবিধি আইনের পরিপন্থী কর্ম করেন তবে তাকে হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল বলা যায়। যেহেতু এসব অপরাধ প্রতারণার সামিল, এবং জন স্বার্থের পরিপন্থী। এ জন্যে আইনে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা আইনের প্রতিই প্রকারান্তরে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলেন।

 

হোয়াইট কলার অপরাধ বলতে বোঝানো হয়েছে যে, ষ্টক এক্মচেঞ্জ পরিচালনায় অসদুপায় অবলম্বন, ট্রাস্ট ফান্ডের আত্মসাৎ এবং করপোরেট বা কর্পোরেশনের ব্যবসা ক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয়, সংবাদপত্র ও রাষ্ট্রীয় বেতার-টিভিসহ সরকারি – বেসরকারি গণমাধ্যমসমুহে বিজ্ঞাপনে মিথ্যার আশ্রয়, ভুল তথ্য পরিবেশন এবং কন্ট্রাক্ট পাবার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষপ্রদানকে হোয়াইট কলার বা ভদ্রবেশী অপরাধ সংশ্লিষ্ট দেশসমুহে পুনঃপুনঃ সংঘটিত হচ্ছে। এ ধরণের অপরাধ সম্পর্কিত ব্যবসায়ী ক্ষেত্রের ন্যায় অসৎ আচরণ বিশ্লেষণে প্রয়োগ করেন।

 

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে সরকারি রেশনিং ব্যবস্থাসহ মূল্যনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে প্রতারণামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিভিন্ন চিত্র “The Black Market’ নামক গ্রন্থে উপস্থাপন করেন মার্শাল বি ক্লিনার্ড। হার্বাট ইডেলহার্জ হোয়াইট কলার অপরাধ বলতে এমন সব বেআইনী কর্মের উল্লেখ করেন যা কেবল মাত্র কুট বুদ্ধির দ্বারা সংঘটিত হয়। ফ্রাংক হারটুংগ ডেট্রয়েট শহরে পাইকারী মাংস বিক্রয় সম্পর্কে এক সমীক্ষায় প্রমাণ করেন ১৯৪২ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত ৮২টি প্রতিষ্ঠিত মাংস ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ১৯৫টি আইন ভঙ্গের দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত হয়। অধিক মুনাফা লাভের জন্যই তাদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

 

 

বুদ্ধির দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ব্যাখ্যা হার্বাট ইডেলহার্জের মতে, হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা নানাভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে বা পর্দার অন্তরালে থেকে অপরাধের আশ্রয় নেন। অসতর্কতার সুযোগ হাতিয়ে নিয়ে সাধারণত তারা অপরাধ কর্মটি হাসিল করেন। শিক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি এসব ভদ্রবেশী অপরাধীর কার্যাবলী সম্পর্কে প্রশ্নে জড়াতে চান না। অপরাধী শিক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বুঝতে দিতে চায়না যে, সে প্রকৃতই শিক্ষতির শিকার হয়েছেন। জনসাধারণের স্বার্থের পরিপন্থী এমনতর কাজ করার অভিপ্রায়কে চলমান রাখতে হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখে। অপরাধ চাপা দিতে তারা প্রতারণামূলক দলিলাদি বা প্রমাণপত্র তৈরি করে।

 

 

হোয়াইট কলার অপরাধ কি এবং কেন?

এ দেশেও কিভাবে গ্রাস করেছে তা তুলে ধরা হবে ধারাবাহিক এ বিশেষ বিশ্লেষণ ধর্মী প্রতিবেদনে। যাতে থাকবে চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতারণা, করপোরেট অপরাধসরকারি উচ্চপদস্থ দুর্নীতি এবং  রাজনৈতিক প্রতারণা ও দুর্নীতি।

 

 

 

 

আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello
জনপ্রিয় সংবাদ

এপেক্স শো-রুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি

হোয়াইট কলার অপরাধ

আপডেট সময় ১১:১১:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২

হোয়াইট কলার অপরাধ

সোহেল সানি

হোয়াইট কলার অপরাধ। নেই কোন এর আইনগত সংজ্ঞা নেই। বাংলা শব্দে এটা “ভদ্রবেশী অপরাধ” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর উৎপত্তি হলেও ক্রমে তা বিভিন্ন রাষ্ট্রে এ ধরণের অপরাধ কর্মে লিপ্ত ব্যক্তিদের অভিহিত করা হচ্ছে ‘হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল’ রূপে। হোয়াইট কলার অপরাধ সর্বাপেক্ষা সংঘটিত হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের করপোরেট বা করপোরেশনে। অভিযোগ থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। অপরাধ বিজ্ঞানীদের মতে, করপোরেট অপরাধের প্রধানতম উদ্দেশ্যই হলো, অধিকতর মুনাফা অর্জন।

 

 

করপোরেট অপরাধের প্রকৃতি উন্মোচন করেন প্রখ্যাত মার্কিন অপরাধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাদারল্যান্ড। তিনি আমেরিকার ৭০টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানে (করপোরেশনে) এ ধরণের জনস্বার্থ পরিপন্থী কর্মকান্ড উদঘাটন করেন। “হোয়াইট কলার অপরাধ” তত্ত্বের উদ্ভাবকও তিনি।

 

 

সাদারল্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে হোয়াইট কলার অপরাধ ধারণার একটি রূপরেখা প্রণয়নের প্রয়াস পান।

 

 

অন্যান্য অপরাধ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ব্যবসায় অধিক মুনাফা লাভ এবং স্বীয় শক্তি বৃদ্ধির লালসাকে কেন্দ্র করেই হোয়াইট কলার অপরাধের উৎপত্তি ঘটেছে।

 

 

১৯৩৯ সালে সর্বপ্রথম হোয়াইট কলার ক্রিমিনালদের আসল অপরাধী এবং অপরাধকে দন্ডবিধি আইনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করেন।

 

 

সাধারণতঃ হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা সাধারণ অপরাধীদের তুলনায় অধিকতর বুদ্ধিমান, আচরণে ভারসাম্যপূর্ণ, কর্মজীবনে কৃতকার্য এবং সমাজে উঁচু পদমর্যাদার অধিকারী।

 

 

এসব অপরাধ অপ্রত্যক্ষ, নৈর্ব্যক্তিক এবং ছদ্মনামে সংঘটিত হয় বলেও তাঁরা সহমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে, এসব ভদ্রবেশী অপরাধীর কৃতকর্ম সহজে সাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়না। অথচ, হোয়াইট কলার ক্রিমিনালদের অপরাধের অর্থনৈতিক ফলাফল অন্যান্য সাধারণ অপরাধের অপেক্ষা অনেক গুণ বেশী।

 

অর্থনৈতিক ক্ষয় ক্ষতির চেয়ে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও ব্যাপক এবং সুদূরপ্রসারী। কারণ এরা বিশ্বাস ভঙ্গ করে। ফলে অবিশ্বাসের জন্ম হয়। এতে কর বিস্তৃত পরিসরে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যা রাষ্ট্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

 

 

ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যাপক অপরাধমূলক আচরণ সংঘটিত হবার ফলে প্রখ্যাত অপরাধ অপরাধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাদারল্যান্ড সর্বপ্রথম হোয়াইট কলার অপরাধ’ বা ভদ্রবেশী অপরাধ’ তত্ত্বের প্রকাশ ঘটে ১৯৩৯ সালে।আমেরিকান সমাজবিজ্ঞান সমিতির সভায় সভাপতির ভাষণে এ তত্ত্বের উদ্ভাবনপূর্বক বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সাদারল্যান্ড।

 

 

সমাজতাত্ত্বিক ও মানসিক বৈকল্যের কারণে মানুষ অপরাধ করে – এই গতানুগতিক ব্যাখ্যা পক্ষপাতদুষ্ট নমুনার ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়াকে অকার্যকর অভিহিত করে হোয়াইট কলার অপরাধের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। আর্থসামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিগণও যে অপরাধের উর্ধ্বে এমন ভ্রান্ত ধারণাকে অস্বীকার করেন অপরাধবিজ্ঞানীরা।

 

 

গতানুগতিক ব্যাখ্যায় কেবলমাত্র নিম্নশ্রেণীর লোকেরাই অপরাধ করে-এমন ধারণাকে তিরস্কৃত করা হয়। উচ্চ আর্থসামাজিক শ্রেণীভুক্ত কোন ব্যক্তি যদি পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দন্ডবিধি আইনের পরিপন্থী কর্ম করেন তবে তাকে হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল বলা যায়। যেহেতু এসব অপরাধ প্রতারণার সামিল, এবং জন স্বার্থের পরিপন্থী। এ জন্যে আইনে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা আইনের প্রতিই প্রকারান্তরে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলেন।

 

হোয়াইট কলার অপরাধ বলতে বোঝানো হয়েছে যে, ষ্টক এক্মচেঞ্জ পরিচালনায় অসদুপায় অবলম্বন, ট্রাস্ট ফান্ডের আত্মসাৎ এবং করপোরেট বা কর্পোরেশনের ব্যবসা ক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয়, সংবাদপত্র ও রাষ্ট্রীয় বেতার-টিভিসহ সরকারি – বেসরকারি গণমাধ্যমসমুহে বিজ্ঞাপনে মিথ্যার আশ্রয়, ভুল তথ্য পরিবেশন এবং কন্ট্রাক্ট পাবার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষপ্রদানকে হোয়াইট কলার বা ভদ্রবেশী অপরাধ সংশ্লিষ্ট দেশসমুহে পুনঃপুনঃ সংঘটিত হচ্ছে। এ ধরণের অপরাধ সম্পর্কিত ব্যবসায়ী ক্ষেত্রের ন্যায় অসৎ আচরণ বিশ্লেষণে প্রয়োগ করেন।

 

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে সরকারি রেশনিং ব্যবস্থাসহ মূল্যনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে প্রতারণামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিভিন্ন চিত্র “The Black Market’ নামক গ্রন্থে উপস্থাপন করেন মার্শাল বি ক্লিনার্ড। হার্বাট ইডেলহার্জ হোয়াইট কলার অপরাধ বলতে এমন সব বেআইনী কর্মের উল্লেখ করেন যা কেবল মাত্র কুট বুদ্ধির দ্বারা সংঘটিত হয়। ফ্রাংক হারটুংগ ডেট্রয়েট শহরে পাইকারী মাংস বিক্রয় সম্পর্কে এক সমীক্ষায় প্রমাণ করেন ১৯৪২ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত ৮২টি প্রতিষ্ঠিত মাংস ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ১৯৫টি আইন ভঙ্গের দায়ে অপরাধী সাব্যস্ত হয়। অধিক মুনাফা লাভের জন্যই তাদের বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

 

 

বুদ্ধির দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ব্যাখ্যা হার্বাট ইডেলহার্জের মতে, হোয়াইট কলার ক্রিমিনালরা নানাভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে বা পর্দার অন্তরালে থেকে অপরাধের আশ্রয় নেন। অসতর্কতার সুযোগ হাতিয়ে নিয়ে সাধারণত তারা অপরাধ কর্মটি হাসিল করেন। শিক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি এসব ভদ্রবেশী অপরাধীর কার্যাবলী সম্পর্কে প্রশ্নে জড়াতে চান না। অপরাধী শিক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বুঝতে দিতে চায়না যে, সে প্রকৃতই শিক্ষতির শিকার হয়েছেন। জনসাধারণের স্বার্থের পরিপন্থী এমনতর কাজ করার অভিপ্রায়কে চলমান রাখতে হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখে। অপরাধ চাপা দিতে তারা প্রতারণামূলক দলিলাদি বা প্রমাণপত্র তৈরি করে।

 

 

হোয়াইট কলার অপরাধ কি এবং কেন?

এ দেশেও কিভাবে গ্রাস করেছে তা তুলে ধরা হবে ধারাবাহিক এ বিশেষ বিশ্লেষণ ধর্মী প্রতিবেদনে। যাতে থাকবে চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতারণা, করপোরেট অপরাধসরকারি উচ্চপদস্থ দুর্নীতি এবং  রাজনৈতিক প্রতারণা ও দুর্নীতি।