প্রেস বিজ্ঞপ্তি
ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন বালিয়ারপুর মহাসড়কে ডাকাতি প্রস্তুতিকালীন সময়ে দুর্ধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্র ‘ঠান্ডা-শামীম বাহিনী’র ডাকাত সর্দারসহ ১১ জনকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব।
এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। বর্তমান সময়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী, প্রতারক চক্র, চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী, নৈরাজ্যকারী, বিভিন্ন মামলার আসামী, অপহরণকারী, মানবপাচারকারী, জালনোট ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী এবং ডাকাতসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব সদা সচেষ্ট।
https://youtu.be/s6dcF_GD4YQ
সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। র্যাব এই সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রদের গ্রেফতারে বিশেষ গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অদ্য রাত ০১০৫ ঘটিকার সময় সাভার থানার বলিয়ারপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতি প্রস্তুতিকালীন সময়ে সংঘবদ্ধ দুর্ধর্ষ ডাকাত দল ‘ঠান্ডা-শামীম বাহিনী’র মূলহোতা ১। মোঃ শামিম @ সব্দুল (৩০), পিতাঃ মৃত মজিবুর রহমান, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা এবং সহযোগী ২। মোঃ আনিসুর রহমান @ ঠান্ডা (৪৫), পিতাঃ মৃত বুদুন শেখ, কালাই, জয়পুরহাট, ৩। মোঃ সালাউদ্দিন (২৩), পিতাঃ মোঃ সামসুল ইসলাম দুদু মিয়া, সাঘাটা, গাইবান্ধা, ৪। মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন (৩১), পিতাঃ মোঃ সাগির মাহমুদ সাগর, দুপচাচিয়া, বগুড়া, ৫। মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩৫), পিতাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম বুদা, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট, ৬। মোঃ জাহাঙ্গীর সরকার (৪০), পিতাঃ মৃত এসারত উল্লাহ সরকার, সাঘাটা, গাইবান্ধা, ৭। মোঃ সজিব ইসলাম (২৫), পিতাঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম বাবু, সদর, নাটোর, ৮। মোঃ জীবন সরকার (৩৪), পিতাঃ মোঃ শহিদুল সরকার, সাঘাটা, গাইবান্ধা, ৯। শ্রী স্বপন চন্দ্র রায় (২১), পিতাঃ শ্রী ধীনেশ চন্দ্র রায়, তারাগঞ্জ, রংপুর, ১০। মোঃ মিনহাজুর ইসলাম (২০), পিতাঃ মৃত লুৎফর রহমান, সাঘাটা, গাইবান্ধা এবং ১১। শ্রী মাধব চন্দ্র সরকার (২৬), পিতাঃ শ্রী অজিত চন্দ্র সরকার, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিকট হতে বিদেশি পিস্তল ০১ টি, পাইপগান ০১ টি, ওয়ান শুটারগান ০২ টি, গুলি ০৬ রাউন্ড, ম্যাগাজিন ০১ টি, শাবল ০১ টি, রশি ০৩ টি, লোহার রড ০১ টি, চাপাতি ০১ টি, রামদা ০২ টি, চাইনিজ কুড়াল ০১ টি, করাত ০১ টি, হাউজ কাটার ০১ টি, ছুরি ০২ টি, টর্চ লাইট ০২ টি, ব্যাগ ১১ টি, হ্যাক্ধসঢ়;সো ব্লেড ০২ টি, দা ০১ টি, লেজার লাইট ০২ টি, প্লাস ০২ টি, দেশি কুড়াল ০১ টি এবং হাতুরী ০১ টি উদ্ধার করা হয়। ৪। গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঠান্ডা-শামীম বাহিনীর মূলহোতা শামীম @ সব্দুল এবং তাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড আনিসুর @ ঠান্ডা।
তাদের নাম অনুসারে উক্ত বাহিনীর নাম রাখা হয় ঠান্ডা-শামীম বাহিনী। উক্ত বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গৃহ ডাকাতি, সড়ক ডাকাতি, গাছ কেটে রাস্তায় যড়ড়.পড়স স¦াক্ষরের সময়-০৬:৪৭ রিপোর্ট-১ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাত্রীবাহী বাস, গরুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন মালামালের গুদামে ডাকাতি করে আসছে। ঠান্ডা-শামীম বাহিনীর সদস্যরা অন্ধকার রাস্তায় ওৎ পেতে থাকত। ডাকাতি করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিত নির্ধারিত স্থানের নিকটবর্তী স্টেশনে ডাকাত দলের সদস্য টার্গেট বাস/ট্রাক/মাইক্রোবাস সম্পর্কে সংকেত দিত।
এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধির উপর নজরদারি করে মূল ডাকাত দলের নিকট তথ্য সরবরাহ করত। অনুকূল সংকেত পাওয়া মাত্রই ডাকাত দলের মধ্যে গাছ কাটার দায়িত্ব প্রাপ্ত সদস্যরা দ্রুত গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে দিত। অন্যদিকে ডাকাত দলের অপর সদস্যরা বাস/ট্রাক/মাইক্রোবাসের চালক ও যাত্রীদের অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যেত। যেখানে গাছ কাটার সুযোগ থাকেনা সেখানে তারা চালকের চোখে আলো ফেলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডাকাতি করত। এসব ডাকাতির ঘটনায় শামীম এবং আনিসুর@ ঠান্ডা একাধিকবার আইন- শৃংঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে।
জেলহাজতে থাকার সময় তাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন অপরাধীদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে জামিনে বের হয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে বর্ণিত ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলে। তাদের বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। এছাড়াও, তারা যে এলাকায় ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে উক্ত এলাকার স্থানীয় অপরাধী ডাকাত/মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও পরিবহন শ্রমিক/গোডাউনের কর্মচারী/নৈশ প্রহরীদের সাথে যোগসাজশ করে ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করে থাকে। ডাকাতিই হচ্ছে তাদের মূল পেশা।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ডাকাতির পরিকল্পনা চুড়ান্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পরবর্তীতে সার্বিক বিচার বিবেচনা করে আনিসুর@ ঠান্ডা, শামীম এবং সালাউদ্দিন একত্রে বসে ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করে। কোন জায়গায় কখন কিভাবে ডাকাতি করা হবে, ডাকাতির তথ্য সংগ্রহের জন্য কাকে নিয়োগ করতে হবে, কিভাবে ডাকাতি সম্পন্ন করা হবে, ডাকাতিকৃত মালামাল কোথায় কখন কিভাবে পরিবহন, সংরক্ষণ ও কার নিকট বিক্রি করে অর্থ আদায় করা হবে ইত্যাদি পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানে সালাউদ্দিন পূর্বেই গোপনে অবস্থান করে তথ্য সংগ্রহ করত। ডাকাতি শেষে নির্বিঘেœ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার বিষয়ে ঠান্ডা-শামীমকে পরিকল্পনা প্রদান করত এবং ঠান্ডা-শামীম এর নির্দেশনা অনুযায়ী উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করত। ৬। গ্রেফতারকৃত ইখতিয়ার উদ্দিন উক্ত বাহিনীর অন্যতম সদস্য। সে পেশায় ড্রাইভার। বিভিন্ন সময় ডাকাতির ধরণ অনুযায়ী মিনি ট্রাক/মাইক্রোবাসসহ চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন সরবরাহ করে নিজে চালকের ভূমিকা পালন করত। ডাকাতির পূর্বে ঘটনাস্থল রেকি, ডাকাতির সময় ও ডাকাতি শেষে ঘটনাস্থল হতে পলায়ন এবং ডাকাতির মালামাল পরিবহনের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
গ্রেফতারকৃত সাইফুল পেশায় রাজমিস্ত্রি। ডাকাতি করার সময় সে তালা ভাঙ্গা, দেওয়াল ভাঙ্গা, গাড়ীর দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করাসহ ডাকাতির মালামাল বিক্রির দায়িত্ব পালন করে থাকে। ৮। গ্রেফতারকৃত মিনহাজুল এবং মাধব চন্দ্র ‘ঠান্ডা-শামীম বাহিনী’র তথ্যদাতার কাজ করে থাকে। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে স্থানীয় অপরাধীদের সাথে ঠান্ডা-শামীম বাহিনীর যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ডাকাতি পূর্ব রেকি এবং ডাকাতির সময় স্থানীয় অপরাধীদের সাথে অবস্থান করে ডাকাতিতে অংশ নেয়। মহাসড়কে ডাকাতির সময় তারা গাছ কেটে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কাজ করে থাকে। ৯। গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর পেশায় ইট ভাটার শ্রমিক, সজীব ও জীবন পেশায় গার্মেন্টস শ্রমিক, স্বপন চন্দ্র পরিবহন শ্রমিক। তারা এসব পেশার আড়ালে ডাকাত দলের সাথে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। ডাকাতি শেষে তারা আবার নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত হয়ে পড়ে।
গ্রেফতারকৃত আনিসুর@ ঠান্ডা ২০০৪ সাল থেকে ডাকাতি করে আসছে। ২০১৬ সালে শামীম এর সাথে তার পরিচয়ের সূত্রে তারা একসাথে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতে যড়ড়.পড়স স¦াক্ষরের সময়-০৬:৪৭ রিপোর্ট-১ থাকে। এছাড়াও, ঠান্ডা-শামীম বাহিনী তাদের ডাকাতির ধরণ এবং চাহিদা অনুযায়ী ভাড়ায় লোকবল সংগ্রহ করে থাকে। এই বাহিনী ইতোমধ্যে গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, টাঙ্গাইল এলাকায় বহু ডাকাতি করেছে বলে জানা যায়। তারা বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে। ডাকাতি হতে প্রাপ্ত মালামালের অর্ধেক আনিসুর@ ঠান্ডা এবং শামীম ভাগ করে নিত। বাকী অর্ধেক মালামাল অন্যদের কাজের গুরুত্ব অনুযায়ী ভাগ করে দেয়া হত। ডাকাতি হতে প্রাপ্ত সম্পদ ভোগ বিলাস ও মামলার খরচ মেটাতে ব্যয় করত বলে জানা যায়। আসামিরা সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়ার শেরপুর এলাকার মহাসড়কে ডাকাতির কথা স্বীকার করে।
এছাড়াও, তারা সাভারের হেমায়েতপুরে ১টি ব্যাটারীর কারখানায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বেই তারা গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃত ‘ঠান্ডা-শামীম বাহিনী’র মূলহোতা শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ০৭ টি ডাকাতি মামলা ও আনিসুর@ ঠান্ডা’র বিরুদ্ধে ডাকাতি, মাদক ও বিভিন্ন অপরাধের ০৫ টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। বীনা রানী দাস, পিপিএম (সেবা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (অপস্ধসঢ় ও ইন্ট শাখা) পক্ষে পরিচালক