লেখকঃ বুলবুল আহমেদ চৌধুরীঃ আমাদের দেশে মাঝেমাঝেই পোশাক নিয়ে বিশেষ করে নারীর পোশাক বা বেশভূষা নিয়ে বেশ অপ্রীতিকর ও অসম্মানজনক ঘটনা হর-হামেশা ঘটে। কিছু কিছু ঘটনা-তো আমার মগজের উপর দিয়ে যায়, বোধগম্য হয়না মোটেই। যেমন ধরুন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন তো ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একসাথে পুকুরে-ডোবায় বা বিপরীত পাড়ে গোসল করেছি। কই তখন তো নারীর অর্ধনগ্ন শরীর আমাদের পাশবিকতা বা জৈবিক অদম্য শক্তিকে উসকে দেয়নি। তাহলে, আজ কেন ওড়নাবিহীন বক্ষ বা জিন্সের সাথে মানানসই নিতম্ব আমাদের শক্তিহীন করে দিচ্ছে। আমরা ছোট বেলায় যৌবনে যেসব মেয়েদের সাথে ছোয়াছুয়ি খেলেছি আজ মাঝবয়সে সেই মেয়েই মহিলা হয়ে বোরকায় নিজেকে লুকিয়ে রাখে।
ধর্মীয় মত অনুসারে, পোশাক ভৌগলিক প্রয়োজন, জলবায়ুর ধরণ বা অর্থনৈতিক কাজ অনুযায়ী গড়ে উঠে নাই। সৃষ্টির শুরুতে গন্ধম ফল ভঙ্গন করার মধ্য দিয়ে আদি মাতা হাওয়া প্রথম লজ্জাবতী হোন এবং নিজের তথাকথিত গোপনাঙ্গ ঢেকে রাখার তাগিদ অনুভব করেন। কিন্তু আমাদের অতীত আর বর্তমান বাস্তব জ্ঞান ভিন্ন কথা বলে।
এক সময় প্রাণিজগতের অন্যান্য প্রাণীর মতো আমাদের পূর্বপুরুষরাও নগ্নই থাকতেন। পৃথিবী যখন শীতল আর ঋতু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রার হেরফের হওয়া শুরু হয় তখনই শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার প্রাকৃতিক প্রয়োজন থেকেই মানুষ গাছের বাকল আর বশ করা প্রাণীর চামড়া দিয়ে শরীরকে ঢেকে নিত। নারী-পুরুষ বেআব্রু থাকলেও প্রাকৃতিক প্রয়োজনের বাইরে এতো তৃষ্ণা তো তখন দেখা যায়নি।
পোশাক লজ্জা নিবারন বা সৌন্দর্যের তাগিদ থেকে নয় উপর্যুক্ত কারন থেকেই উত্থিত হয়েছে। শরীরের যে অঙ্গ কাজের উপযোগী নয় তাকে ঢেকে রেখে আর যা অপরিহার্য তাকে উন্মুক্ত রেখে পোশাকের চল শুরু হয়েছে। হাজার হাজার বছরের পথ পক্রিমায় আজ ঢেকে রাখা অঙ্গগুলো লজ্জাস্থান নামে পরিচিতি লাভ করে এবং অহেতুক আর বিনে কারনে আজ সেসব অঙ্গ চুম্বকে পরিণত হয়ে আমাদের শরীরে চার্জ তৈরি করে পাশবিকতার জন্ম দেয়া শুরু করেছে।
এখানে পোশাক ব্যাপার না, সমস্যা আমাদের গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার মধ্যে। আর এতো, সুরা বাকারা বা বাইবেলের পবিত্র জটিল বানী নয় যে বোঝা দুষ্কর। আমিই নিজেই দুই কালের সন্ধিক্ষণের মানুষ। ছোটবেলা থেকে সাওতালসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ব্যাপক মানুষের বাড়িতে আমার যাতায়াত ছিল। তাদের মেয়েরা ওড়না-ব্লাউজ পড়তো না, যে পোশাক পড়তো একটু চেষ্টা করলেই প্রায় ৯০ ভাগ শরীর দেখা সম্ভব ছিলো কিন্তু আমার দৃষ্টি ছিল বিনীত আর মগজ ছিল সক্রিয় তাই এসব আমার পাশবিকতাকে নয় নান্দনিকতা আর সৌন্দর্যবোধকে জাগিয়ে তুলতো।
আজ কী এমন হলো! পাশার দান উল্টে গেল যে। আসলে, এখানেই পুঁজিবাদের আসল সফলতা। ঘটনা চোখের সামনে ঘটছে অথচ কারন খুজছি ২৫০০-৩০০০ বছর আগের দর্শন আর যুক্তি দিয়ে। এই আমিই তো দেখছি! মানছি না কেন!
আমরা কি জন্ম থেকেই পাশবিক! ধর্ষক বা নির্মম! না, মূল ঘটনা সমাজ কি শিখিয়ে দেয়ার জন্য কি মনন গড়তে চায়। অর্থাৎ হিসাব বরাবর। শয়তান আজ পৃথিবীর শাসনকর্তা আবার ঐ শয়তানই আমাদের মধ্যে আল্লাহর আইন আর ভীতিকে জাগিয়ে নিজের কার্য হাসিল করে চলেছে। শরীরের উপরে মগজ, নিচে শরীরকে বহন ও ধারন করার জন্য দুটো পা, হাতিয়ারকে বহন করার জন্য প্রাণীর সবচেয়ে শক্তিধর অঙ্গ দুটো হাত, দেখার জন্য চোখ, আর যৌনাঙ্গ- যার ব্যবহার খুবই কম, তাই তাকে ঢেকে রাখাই উত্তম গন্য করা মানুষ আজ উল্টো ভেবে চলেছে।
আরে ভাই, গোটা মানবদেহের সবচেয়ে অকেজো আর দূর্বল কিছু অংশ বা অঙ্গ সবচেয়ে আকর্ষণীয় বা লোভনীয় হয় কেমনে। এরই নাম পুঁজিবাদ। শালারা, অকেজোকে শক্তিশালী করে আর কেজোকে করে অক্ষম। যেমন, বেকার। হাতের মতো অঙ্গের সঞ্চালনের সুযোগ নেই। হাতের শক্তি গিয়ে লিঙ্গকে উসকে দিয়ে পাশবিকতা চর্চার উন্মাদনাই যত নাটের গুরু ভাই।