র্যাব-১৩ এর অভিযানে রংপুরে মরিচক্ষেত থেকে মুখপোড়ানো যুবকের লাশ উদ্ধারের ক্লুলেস ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার মূলপরিকল্পনাকারীসহ সরাসরি জড়িত ০৩ জন আসামী গ্রেফতার ও হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব নিয়মিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, অপহৃত ভিকটিম উদ্ধার, ডাকাতসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যপক অভিযান চালিয়ে আসছে।
গত ২৩ জুন ২০২৪ ইং তারিখ রংপুর জেলার কোতয়ালী থানাধীন ৪নং সদ্যপুষ্কুরনী ইউনিয়নের অন্তর্গত কাটাবাড়ি জমিদারপাড়া বিলের মধ্যে জনৈক আকমল হোসেনের মরিচ খেতে ভিকটিম ইজিবাইক চালক মোঃ আলী(১৭) এর মৃতদেহ পাওয়া যায়। ভিকটিমের নানী মোছাঃ মঞ্জিলা বেগম (৬০) মৃত দেহ দেখে লাশ সনাক্ত করে।
ঘটনাটি স্থানীয় এবং জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ভিকটিমের খালু মোঃ মোক্তার হোসেন (৩৯) জানায় ভাগিনা ভিকটিম মোঃ আলী তারা ইজি বাইক ভাড়ায় চালাইতো। গত ২১/০৬/২০২৪ ইং তারিখ অনুমান বিকাল ০৪.০০ ঘটিকার সময় মোঃ মোক্তার হোসেন এর ইজি বাইক নিয়ে রিজার্ভ ভাড়ার কথা বলে কাফ্রিখাল পরিষদ বাজার হতে চলে যায়।
পরবর্তীতে একই তারিখ রাত্রী অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম বাড়ী ফিরে না আসিলে তার ব্যবহৃত মোবাইল কল দিলে তা বন্ধ পাই এবং তাকে বিভিন্ন জায়গায় ও জায়গীরহাট থেকে নয়ারহাট অটোরিক্সা স্ট্যান্ডে খোঁজাখুজি করে।
পরবর্তীতে গত ২৩/০৬/২০২৪ খ্রি. তারিখ সকাল অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকার সময় স্থানীয় ফুয়াদ মেম্বারের মাধ্যমে সংবাদ পাই যে, ৪নং সদ্যপুষ্কুরনী ইউনিয়নের অন্তর্গত কাটাবাড়ি জমিদারপাড়া বিলের মধ্যে জনৈক আকমল হোসেনের মরিচ খেতে একটি অজ্ঞাত লাশ পরে আছে। ভিকটিমের আত্মীয় স্বজন ও উপস্থিত লোকজন ভিকটিম ইজিবাইক চালক মোঃ আলী (১৭) এর মৃতদেহ উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের খালু নিজে বাদী হয়ে ২৩/০৬/২০২৪ ইং তারিখে হত্যাসহ ঘটনার আলামত গোপন করেছে মর্মে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন।
এরই ধারাবাহিকতায়, র্যাব-১৩, রংপুর একটি চৌকস আভিযানিক দল উক্ত ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১৩, রংপুর গত ২৪/০৬/২০২৪ ইং তারিখ ১। মোঃ রেদোয়ান মিয়া (২১), পিতা-মোঃ মোকছেদুল ইসলাম, সাং-আলীপুর, থানা-মিঠাপুকুর, জেলা-রংপুর’কে রাত্রী ০২.০০ ঘটিকায় তার নিজ বসতবাড়ি হতে, ২। মোঃ ইসলাম মিয়া (২৪), পিতা-মোঃ কেরামত আলী, সাং-আশরাফপুর, থানা-মিঠাপুকুর, জেলা-রংপুর’কে একই তারিখ রাত ০৩.৩০ ঘটিকায় এবং ৩। মোঃ মোক্তার হোসেন (৩৯), পিতা-মোঃ আব্দুর রউপ, সাং-আলীপুর, থানা-মিঠাপুকুর, জেলা-রংপুর’কে একই তারিখ দুপুর ১২.৩০ ঘটিকায় পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া স্মৃতি গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ এর সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে গ্রেফতার করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীগণ জানায় যে, মূল পরিকল্পনাকারী মামলার বাদী অথাৎ ভিকটিমের খালু আসামী মোঃ মোক্তার হোসেন (৩৯) এর পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সহযোগী আসামী ইজিবাইক চালক রেদোয়ান মিয়া (২১) ভাড়ার কথা বলে ভিকটিমসহ তারা কাটাবাড়ি জমিদারপাড়া বিলের মধ্যে জনৈক আকমল হোসেনের মরিচ খেতের পাশে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামী মোঃ মোক্তার হোসেন ভিকটিমের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করলে ভিকটিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
সে সময় মোক্তারের কথা মোতাবেক আসামী রেদোয়ান ভিকটিমের মৃত্যূ নিশ্চিত করতে ভিকটিমের গোপনাঙ্গে ও সারা শরীরে এসিড ঢেলে দেয়। আসামীগণ ভিকটিমের মৃত্যূ নিশ্চিত করতঃ জনৈক আকমল হোসেনের মরিচ খেতে ভিকটিমের লাশ ফেলে দেয় এবং ইজি বাইকের ০৪টি ব্যাটারী খুলে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে আসামী রেদোয়ান মিয়া (২১)’কে গ্রেফতার করে তাকে জিঙ্গাসাবাদ করে তার দেওয়া তথ্য মতে মামলার বাদী হয়ে ভিকটিমের খালু আসামী মোঃ মোক্তার হোসেন (৩৯) ও আসামী মোঃ ইসলাম মিয়া (২৪)দ্বয়’কে গ্রেফতার করা হয় এবং ইজি বাইকের ০৪টি ব্যাটারী উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।