বাংলাদেশ ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
শরীয়তপুর ২২ বছরের স্বামীর বাড়িতে ৪৩ বছর বয়সী স্ত্রীর অনশন। রাজশাহীতে সক্রিয় আমের সিন্ডিকেট, দাম হবে দ্বিগুন আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে শোকাজ। সরকারী সফরে আসছেন পুলিশ প্রধান বৃহত্তর সি‌লে‌টের কৃতি সন্তান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ইসলাম অবমাননায় সাময়িক বহিষ্কার কুবি শিক্ষার্থী স্বপ্নীল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় তার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল নাইক্ষংছড়িতে নির্বাচন হবে স্বচ্ছ-সুষ্ঠ-অবাধ-নিরপেক্ষ ব্যতায় ঘটলে দায়ী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রাঙ্গাবালী থানার কর্মকর্তার সাথে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সৌজন্য সাক্ষাৎ ড. সজীবকে সমর্থন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন গিয়াস উদ্দিন  ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরীর পক্ষে নাইঘর বাসীর একাত্মতা প্রকাশ প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে পরিবেশ বান্ধব গাছ উপহার দিলো ঐক্য-বন্ধন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবন নিয়ে মারামারি সালথার তরুণ কবি নাইমের কবিতা, আমিও মানুষ। রাজশাহীতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার শীর্ষক অ্যাডভোকেসী সম্মেলন রাঙ্গাবালীতে চেয়াম্যান প্রার্থীর ভাইয়ের মৃতুতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে নির্বাচনী প্রচারণা

ঝালকাঠীর দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত গতি-সড়ক অবকাঠামো দায়ী।

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:১৮:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
  • ১৫৮৯ বার পড়া হয়েছে

 ঝালকাঠীর দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত গতি-সড়ক অবকাঠামো দায়ী।

মশিউর রহমান রাসেল।।
ঝালকাঠির রোড এক্সিডেন্টে ১৪ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ।

তদন্ত প্রতিবেদনঃ-
ঝালকাঠির দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত গতি-সড়ক অবকাঠামো দায়ী
* গাবখানে হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিড রাডার গান ছিল না
* ট্রাকে ধারণক্ষমতার চেয়ে ৫ টন বেশি সিমেন্ট ছিল
* গাবখান সেতু এলাকায় ছিল মাল্টি ডিসিপ্লিনারি প্রবলেম।

এবারের ঈদযাত্রায় ঝালকাঠির গাবখান টোলপ্লাজায় দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও আহত হন অনেকে। ঘটনার পরপরই গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চালকদের লাইসেন্স ও বাসের ফিটনেস না থাকা, ওভারটেকিং করা, সড়কে অবৈধ যান, সড়কের অবকাঠামোয় ত্রুটি, ট্রাকে ওভারলোড, অতিরিক্ত গতি এবং গতিরোধের জন্য নির্দেশনা না দেওয়াকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল ঝালকাঠির গাবখান সেতু টোলপ্লাজায় সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক সামনে থাকা একটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার এবং দুটি ইজিবাইককে চাপা দেওয়ায় ১৪ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। এ দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়।

ঈদযাত্রার আলোচিত এ দুর্ঘটনার কারণ জানাতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গাবখান সেতু সংলগ্ন দুর্ঘটনার জন্য ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরোজকে প্রধান করে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিতুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঝালকাঠি জোনের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাহবুবুর রহমান ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হককে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ বিষয়ে কথা হলে তদন্ত কমিটির সদস্য ড. আরমানা সাবিহা হক গণমাধ্যমকে বলেন, সেতু থেকে নামার পর গতিরোধের জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যেই নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে সেটি টোলপ্লাজার একেবারেই কাছাকাছি। পাশাপাশি গাবখান সেতু এলাকায় আঁকাবাঁকা সড়ক বা স্পাইরাল কার্ভ বেশি থাকায় অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আমি অনেক সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত করেছি। কিছু বিষয় ছাড়া সড়কের অবকাঠামো ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই আমরা চালককে দোষারোপ করি। কিন্তু সড়কের অবকাঠামো ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনে না কেউ। দুর্ঘটনা কমাতে হলে শুধু সড়কের উন্নয়ন করলেই হবে না, অবকাঠামো ত্রুটি দূর করতে হবে। জানান বুয়েটের এআরআই’র সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হক।

তদন্ত কমিটির সদস্য ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রধানতম কারণ হিসেবে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের ওভারলোড এবং অতিরিক্ত গতি দায়ী করা হয়েছে। ট্রাকটির ধারণক্ষমতা ১৫ টন হলেও সিমেন্টের পরিমাণ ছিল ২০ টন। সড়কটিতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার হলেও ট্রাকটি ৬৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলছিল।

এভাড়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তাছাড়া তিনি ছিলেন বদলি ড্রাইভার। মূল চালক ঈদের ছুটিতে ছিলেন। সাধারণত বদলি চালকদের দ্রুততম সময়ে ট্রিপ শেষ করার তাগাদা থাকে। তাই এ দুর্ঘটনায় চালকের গাফিলতিও রয়েছে।

এআরআইয়ের সহকারী অধ্যাপক বলেন, যে কোনো টোলপ্লাজা ও সড়ক জংশনের ৫০০ মিটার আগে গতি কমানোর নির্দেশনা থাকে। ‘সামনে টোল প্লাজা, গতি কমান’ এ ধরনের সাইনবোর্ড থাকে। কিন্তু গাবখান সেতুর ১৩০ ফুট আগে সেই নির্দেশনা ছিল। সে নির্দেশিকাও (সাইনবোর্ড) চোখে পড়ার মতো নয়। টোল প্লাজায় গতি নিয়ন্ত্রণে ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও সেখানে তা ছিল না। কাজেই এত অল্প দূরত্বের সাইনবোর্ড দেখে চালক গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। আর সেতু থেকে নামার পর স্বভাবতই গাড়ির গতি বেশি থাকে যার ফলে এ দুর্ঘটনা।

তিনি বলেন, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের সড়কে কিছুটা দূরত্ব পরপর ভয়াবহ বাঁক রয়েছে। গাবখান ব্রিজটিও স্পাইরাল কার্ভের মতো। সেখানে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও তা নেই। সেতু থেকে নামার পরে সড়কের দু’পাশে ১২ ফুট করে গভীর খাদ রয়েছে। নিয়মানুযায়ী সেখানে প্রতিবন্ধক থাকার কথা থাকলেও এর দেখা মেলেনি।

সড়কের দু’পাশে ১০ মিটার ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন থাকার কথা। কোনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তা সড়কের পাশে থেকে সেই ক্লিয়ারিং জোনে চলে যাবে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার মূল সড়কে এসে চলবে।

এ অধ্যাপক বলেন, ঝালকাঠির ওই সড়কের পাশে ক্লিয়ারিং জোন দূরে থাক নানা অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। গাবখানে যে অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার খুব কাছে ছিল চায়ের দোকান। ট্রাক আরেকটু এগিয়ে গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। এছাড়া নিয়মানুযায়ী সড়কের প্রশস্ত অংশে টোলপ্লাজা হওয়ার কথা। কিন্তু সড়কের সরু অংশে টোলপ্লাজা করা হয়েছে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি সেতু এলাকায় মূল সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক ছিল।

এছাড়া ঝালকাঠির সড়কে থ্রি-হুইলার, নছিমন-করিমন, অটোরিকশাসহ নানা অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহনের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব বাহনের চালকরা হুট করে আঞ্চলিক মহাসড়কে চলে আসে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব যানবাহনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে অধিক প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ঝালকাঠির দুর্ঘটনার পরে তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকটি সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। এতে সড়কের যেসব অংশে দু’পাশে গভীর খাদ রয়েছে সেখানে ভরাট করতে হবে। আঞ্চলিক সড়কগুলোর দু’পাশে ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন তৈরি করা। পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাংশ (স্পিড ওয়ার্নিং ডিভাইস) বসাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া সিমেন্টবোঝাই ট্রাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সিমেন্ট পরিবহনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। ওই সুপারিশমালায় সড়কে থ্রি-হুইলার বা অনিবন্ধিত যানবাহন চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এগুলো চলাচল বন্ধের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, গাবখান সেতু এলাকায় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি প্রবলেম ছিল। এখানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জনবল সংকট রয়েছে, কিন্তু যে জনবল রয়েছে তাদের দক্ষতাও কম। সড়ক আইন কার্যকরের বিষয়টি পুলিশের ওপরও বর্তায়। গাবখানে হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিড রাডারগান ছিল না।

দুর্ঘটনা কমানের উপায় জানতে চাইলে বুয়েটের এ অধ্যাপক বলেন, আমি অনেক গুলো দুর্ঘটনার তদন্ত করেছি। কিছু বিষয় ছাড়া সড়কের অবকাঠামো ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়। দুর্ঘটনা রোধে যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়, দেখা যাবে বেশিরভাগই ঘুরেফিরে একই কথা চলে আসে। আমরা দুর্ঘটনা ঘটলেই প্রথমে চালককে দোষারোপ করি। কিন্তু সড়কের অবকাঠামো ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনে না কেউ। এসব দুর্ঘটনা কমাতে হলে শুধু সড়কের উন্নয়ন করলেই হবে না, অবকাঠামো ত্রুটি দূর করতে হবে। সব সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপই পারবে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে।

আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello
জনপ্রিয় সংবাদ

শরীয়তপুর ২২ বছরের স্বামীর বাড়িতে ৪৩ বছর বয়সী স্ত্রীর অনশন।

ঝালকাঠীর দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত গতি-সড়ক অবকাঠামো দায়ী।

আপডেট সময় ০৯:১৮:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
মশিউর রহমান রাসেল।।
ঝালকাঠির রোড এক্সিডেন্টে ১৪ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ।

তদন্ত প্রতিবেদনঃ-
ঝালকাঠির দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত গতি-সড়ক অবকাঠামো দায়ী
* গাবখানে হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিড রাডার গান ছিল না
* ট্রাকে ধারণক্ষমতার চেয়ে ৫ টন বেশি সিমেন্ট ছিল
* গাবখান সেতু এলাকায় ছিল মাল্টি ডিসিপ্লিনারি প্রবলেম।

এবারের ঈদযাত্রায় ঝালকাঠির গাবখান টোলপ্লাজায় দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত ও আহত হন অনেকে। ঘটনার পরপরই গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চালকদের লাইসেন্স ও বাসের ফিটনেস না থাকা, ওভারটেকিং করা, সড়কে অবৈধ যান, সড়কের অবকাঠামোয় ত্রুটি, ট্রাকে ওভারলোড, অতিরিক্ত গতি এবং গতিরোধের জন্য নির্দেশনা না দেওয়াকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল ঝালকাঠির গাবখান সেতু টোলপ্লাজায় সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক সামনে থাকা একটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার এবং দুটি ইজিবাইককে চাপা দেওয়ায় ১৪ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। এ দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়।

ঈদযাত্রার আলোচিত এ দুর্ঘটনার কারণ জানাতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গাবখান সেতু সংলগ্ন দুর্ঘটনার জন্য ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরোজকে প্রধান করে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিতুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঝালকাঠি জোনের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাহবুবুর রহমান ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হককে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এ বিষয়ে কথা হলে তদন্ত কমিটির সদস্য ড. আরমানা সাবিহা হক গণমাধ্যমকে বলেন, সেতু থেকে নামার পর গতিরোধের জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। যেই নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে সেটি টোলপ্লাজার একেবারেই কাছাকাছি। পাশাপাশি গাবখান সেতু এলাকায় আঁকাবাঁকা সড়ক বা স্পাইরাল কার্ভ বেশি থাকায় অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আমি অনেক সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত করেছি। কিছু বিষয় ছাড়া সড়কের অবকাঠামো ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই আমরা চালককে দোষারোপ করি। কিন্তু সড়কের অবকাঠামো ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনে না কেউ। দুর্ঘটনা কমাতে হলে শুধু সড়কের উন্নয়ন করলেই হবে না, অবকাঠামো ত্রুটি দূর করতে হবে। জানান বুয়েটের এআরআই’র সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হক।

তদন্ত কমিটির সদস্য ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রধানতম কারণ হিসেবে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের ওভারলোড এবং অতিরিক্ত গতি দায়ী করা হয়েছে। ট্রাকটির ধারণক্ষমতা ১৫ টন হলেও সিমেন্টের পরিমাণ ছিল ২০ টন। সড়কটিতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার হলেও ট্রাকটি ৬৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলছিল।

এভাড়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তাছাড়া তিনি ছিলেন বদলি ড্রাইভার। মূল চালক ঈদের ছুটিতে ছিলেন। সাধারণত বদলি চালকদের দ্রুততম সময়ে ট্রিপ শেষ করার তাগাদা থাকে। তাই এ দুর্ঘটনায় চালকের গাফিলতিও রয়েছে।

এআরআইয়ের সহকারী অধ্যাপক বলেন, যে কোনো টোলপ্লাজা ও সড়ক জংশনের ৫০০ মিটার আগে গতি কমানোর নির্দেশনা থাকে। ‘সামনে টোল প্লাজা, গতি কমান’ এ ধরনের সাইনবোর্ড থাকে। কিন্তু গাবখান সেতুর ১৩০ ফুট আগে সেই নির্দেশনা ছিল। সে নির্দেশিকাও (সাইনবোর্ড) চোখে পড়ার মতো নয়। টোল প্লাজায় গতি নিয়ন্ত্রণে ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও সেখানে তা ছিল না। কাজেই এত অল্প দূরত্বের সাইনবোর্ড দেখে চালক গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। আর সেতু থেকে নামার পর স্বভাবতই গাড়ির গতি বেশি থাকে যার ফলে এ দুর্ঘটনা।

তিনি বলেন, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের সড়কে কিছুটা দূরত্ব পরপর ভয়াবহ বাঁক রয়েছে। গাবখান ব্রিজটিও স্পাইরাল কার্ভের মতো। সেখানে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও তা নেই। সেতু থেকে নামার পরে সড়কের দু’পাশে ১২ ফুট করে গভীর খাদ রয়েছে। নিয়মানুযায়ী সেখানে প্রতিবন্ধক থাকার কথা থাকলেও এর দেখা মেলেনি।

সড়কের দু’পাশে ১০ মিটার ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন থাকার কথা। কোনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তা সড়কের পাশে থেকে সেই ক্লিয়ারিং জোনে চলে যাবে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার মূল সড়কে এসে চলবে।

এ অধ্যাপক বলেন, ঝালকাঠির ওই সড়কের পাশে ক্লিয়ারিং জোন দূরে থাক নানা অবকাঠামো গড়ে উঠেছে। গাবখানে যে অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার খুব কাছে ছিল চায়ের দোকান। ট্রাক আরেকটু এগিয়ে গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। এছাড়া নিয়মানুযায়ী সড়কের প্রশস্ত অংশে টোলপ্লাজা হওয়ার কথা। কিন্তু সড়কের সরু অংশে টোলপ্লাজা করা হয়েছে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি সেতু এলাকায় মূল সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক ছিল।

এছাড়া ঝালকাঠির সড়কে থ্রি-হুইলার, নছিমন-করিমন, অটোরিকশাসহ নানা অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহনের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব বাহনের চালকরা হুট করে আঞ্চলিক মহাসড়কে চলে আসে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব যানবাহনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে অধিক প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ঝালকাঠির দুর্ঘটনার পরে তদন্ত কমিটি বেশ কয়েকটি সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। এতে সড়কের যেসব অংশে দু’পাশে গভীর খাদ রয়েছে সেখানে ভরাট করতে হবে। আঞ্চলিক সড়কগুলোর দু’পাশে ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন তৈরি করা। পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাংশ (স্পিড ওয়ার্নিং ডিভাইস) বসাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া সিমেন্টবোঝাই ট্রাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সিমেন্ট পরিবহনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। ওই সুপারিশমালায় সড়কে থ্রি-হুইলার বা অনিবন্ধিত যানবাহন চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এগুলো চলাচল বন্ধের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, গাবখান সেতু এলাকায় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি প্রবলেম ছিল। এখানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জনবল সংকট রয়েছে, কিন্তু যে জনবল রয়েছে তাদের দক্ষতাও কম। সড়ক আইন কার্যকরের বিষয়টি পুলিশের ওপরও বর্তায়। গাবখানে হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিড রাডারগান ছিল না।

দুর্ঘটনা কমানের উপায় জানতে চাইলে বুয়েটের এ অধ্যাপক বলেন, আমি অনেক গুলো দুর্ঘটনার তদন্ত করেছি। কিছু বিষয় ছাড়া সড়কের অবকাঠামো ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়। দুর্ঘটনা রোধে যেসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়, দেখা যাবে বেশিরভাগই ঘুরেফিরে একই কথা চলে আসে। আমরা দুর্ঘটনা ঘটলেই প্রথমে চালককে দোষারোপ করি। কিন্তু সড়কের অবকাঠামো ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনে না কেউ। এসব দুর্ঘটনা কমাতে হলে শুধু সড়কের উন্নয়ন করলেই হবে না, অবকাঠামো ত্রুটি দূর করতে হবে। সব সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপই পারবে দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে।