কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তিকৃত রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এ কাজ চলছে দীর্ঘদিন থেকে। রুই, কার্পু মাছের পরিবর্তে পাঙ্গাস মাছ ও মালভোগ করার পরিবর্তে মনুয়া কলা (চিনি চম্পা), চিকন চালের পরিবর্তে মোটা চালের ভাত রোগীদের সরবরাহ করা হয়। একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন খাবারের ১৭৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও নিম্ন মানের খাবার সরবরাহ করায় তা মুখে নিতে পারেন না রোগীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, দরপত্র অনুযায়ী একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন সকালে ১টি রুটি, ১টি মালভোগ কলা, ১টি ডিম ও ২৫ গ্রাম চিনির জন্য মোট ৩৬ টাকা ২৫ পয়সার বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া দুপুর ও রাতে চিকন চালের ভাত, কার্পু বা রুই মাছ, খাঁসি বা ব্রয়লার মুরগির মাংস, মুগ ডাল, ফুলকপি, গোল আলু, সীম, পটলসহ সর্বমোট ১৭৫ টাকার বরাদ্দ রয়েছে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৬ বছর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের খাবার সরবরাহ করে আসছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা (দপ্তর সম্পাদক) শাহীনুর আলমগীরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স অন্বেষা ট্রেডার্স। নির্ধারিত
মেন্যু ও মান অনুযায়ী রোগীদের খাবার সরবরাহ না করে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
সরেজমিন সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরে ভর্তিকৃত রোগীদের খাবার দিচ্ছেন মমতাজ নামের একজন নারী। দুপুরে খাবারে রয়েছে পাঙ্গাস মাছের তরকারি ও মোটা চালের ভাত। তিনি বলেন, শনিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার মাংসের তরকারি দেয়া হয়। এছাড়া অন্যান্য দিন মাছ দেয়া হয়। ঠিকাদারের লোক আমাকে যা এনে দেয়, আমি তাই রান্না করে সরবরাহ করি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগী ফুলবাবু (৫০), বাবলু মিয়া (৪০), আবুল কাশেম (৫১) জানান, সকালে চিড়া, ১টি ডিম ও ১টি মনুয়া কলা (চিনিচম্পা) দেয়া হয়। দুপুরে বড় বড় আলুর তরকারির সাথে পাঙ্গাস মাছ ও মোটা চালের ভাত। তারা বলেন, তরকারিতে মাছের গন্ধ লেগেই থাকে। ডাল ও ভাজির ব্যবস্থা থাকলে ভালো হত। আর যে মোটা চালের ভাত দেয়া হয় তা অনেকেই খেতে পারেন না। খাবারের মান খুবই নিম্ন মানের। তাই অনেকেই হাসপাতালের খাবার না নিয়ে বাহির থেকে খাবার কিনে আনেন। দুপুরে ও রাতে একই খাবার দেয়া হয়। মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা মমতাজ বেগম বলেন, এতো মোটা চালের ভাত খাওয়া খুবই কষ্টকর। তরকারি মান খুবই খারাপ। ৫ দিন থেকে ভর্তি রয়েছি। একদিন ব্রয়লার মুরগীর মাংস দেয়া হয়েছে। অন্যান্য দিনগুলোতে শুধু পাঙ্গাস মাছ।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার ও উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক শাহীনুর আলমগীর জানান, হাসপাতালে কি খাবার দেয়া হচ্ছে তা আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেশকাতুল আবেদ বলেন, হাসপাতালের খাবার সরবরাহ নিয়ে প্রশ্ন থাকায় বিষয়টি দেখাশুনার জন্য আরএমও (আবাসিক কর্মকর্তা) কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) মাঈদুল ইসলাম রোগীদের নিম্ন মানের খাবার সরবরাহ করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নিম্ন মানের খাবার সরবরাহের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।