বাংলাদেশ ০৬:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
মির্জাগঞ্জে বৃষ্টি কামনায় ইস্তিস্কার নামাজ আদায় শনিবারের ছুটি ও আমাদের অবস্থান মির্জাগঞ্জে বিনাদোষে দুই নারীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হলেন যে নারী। নবীনগরে সড়ক ও খালের জায়গা দখলের চলছে মহোৎসব! চট্টগ্রামে সহ সারা দেশে সাংবাদিকের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ‘সিইউজে’ সিংগাইরে সাংবাদিকের চাঁদাবাজি,দুই জন আটক দিনাজপুরে সজনের ডাটার বাম্পার ফলন সাংবাদিক হামলার মামলায় সুদেব মাষ্টার জেল হাজতে প্রেরণ চট্টগ্রাম টেকপাড়া ও এয়াকুব নগরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে নগদ অর্থ ও শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ পিরোজপুরের চরখালী ফেরীতে মেট্রোপলিটন পরিবহনের ধাক্কায় ফেরী থেকে একাধিক মোটরসাইকেল নদীতে কটিয়াদীতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত সাত গ্রামের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এড. রেজাউল করিম বালিয়াডাঙ্গীতে খাপড়া ওয়ার্ড দিবসে শহীদদের স্মরণে সিপিবির লাল পতাকা মিছিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। স্কুলের জমি দখলের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন 

মায়ের সঙ্গে শেষ কথা” জয়-পুতুল ছাড়া আমার সময় কাটেনা, হাসু তোরা ফিরে আয়!

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৩৪:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ অগাস্ট ২০২২
  • ১৭১২ বার পড়া হয়েছে
 সোহেল সানি 
হাসু, জয়-পুতুল ছাড়া যে আমার সময় কাটেনা, তোরা দ্রুত দেশে ফিরে আয়। আর শোন তোর আব্বা আমাকে শেখ শহীদের বিয়েতে যেতে দেননি। তাঁর বোঝা উচিত ছিল শহীদ আমার একমাত্র বোনের ছেলে। মা বড়মেয়ে শেখ হাসিনাকে নিদারুণ এ কষ্টের কথা বলে অঝোরে কেঁদেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু প্রায় সপরিবারে নিহত হওয়ার মাত্র চার দিন আগে শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে এ কথাগুলো বলেছিলেন তাঁর মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালীন স্মৃতি চারণ করে বলেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাইয় পশ্চিম জার্মানিতে যাওয়ার পর একবারই আমার মায়ের সঙ্গে কথা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ভাষায় চার দিনের ব্যবধানে বয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ওপর এক রোজকেয়ামত। শেখ হাসিনার নিদারুণ কষ্টের ধারাপাত বর্ণনার আগে কিভাবে তিনি হত্যাযজ্ঞের খবর পেয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গের অবতারণা করছি। 
পশ্চিম জার্মানির তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ছিলেন সিংহপুরুষ হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। তাঁর বাসায় ছিলেন ডঃ এমএ ওয়াজেদ মিয়া, সহধর্মিণী শেখ  হাসিনা, পুত্রকন্যা ও শ্যালিকা শেখ রেহানা। ১৫ আগস্ট বাইরে থাকা হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী তাঁর সহধর্মিণীকে ফোন করেন কাক ডাকা ভোরে। তিনি সহধর্মিণীকে বলেন ডঃ এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে পাইয়ে দিতে। ঘুম থেকে জাগিয়ে ডঃ ওয়াজেদের হাতে রিসিভার তুলে দেন বেগম চৌধুরী। ওপাশ থেকে ভারাক্রান্ত কন্ঠে হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী জানান, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। এখনি যেনো শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা না জানানো হয়।
“যাওয়ার আগের ঘটনা”
শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম এ ক্লাশের ছাত্রী। তাঁকে পশ্চিম জার্মানি যেতে হবে স্বামী ডঃ ওয়াজেদের কাছে। তাই ছুটি মঞ্জুর করাতে ছুটে গিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ আবদুল মতিন চৌধুরীর কাছে। কিন্তু বাধ সাধলেন উপাচার্য।
তিনি বললেন যেতে চাও ১৫ আগস্টের পরে যাও। তোমার বাবা এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘আচার্য’ হিসাবে এই প্রথম বরণ করবে। তুমি শুধু তাঁর মেয়ে নও, এই বিশ্ববিদ্যালয়েরও ছাত্রী। অতএব তুমি এই ঐতিহাসিক বরণ-উৎসব রেখে  বিদেশ যেতে পারবে না।
শেখ হাসিনা সবিনয়ে স্যারকে বললেন, আমি ১৫ আগস্ট পর্যন্ত থেকে যেতে চেষ্টা করবো। দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে বাসায় ফেরেন শেখ হাসিনা। মাকে স্যারের কথাগুলো শুনালেন। মা বলেন, শিক্ষকের আদেশ শিরোধার্য, ১৫ আগস্টের পরেই যাবে।
কিন্তু সন্ধ্যায় শেখ হাসিনাকে টেলিফোন স্বামী ড. ওয়াজেদের। উপাচার্যের আপত্তির কথা জানান স্বামীকে। শিশুপুত্র জয়ের প্রচন্ড জ্বরের কথাও বলেন। এসব কথা মানতে চাইলেন না ডঃ ওয়াজেদ। রাগস্বরে বললেন, বাজার-সদায় করেছি, ছুটি নিয়েছি, আর এসব কি বলছো? উপর্যুক্ত কথাগুলো শেখ হাসিনার।
স্বামীর মুখের ওপর না করে বরং শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমরা ৩০ জুলাই রওয়ানা হচ্ছি। এ কারণে আর শেখ হাসিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতার বরণ উৎসব আর দেখা হলো না। যে বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪৯ সালে তাঁর বাবার ছাত্রত্ব কেড়ে নিয়েছিল।
যাহোক শেখ হাসিনা স্বামীর মনরক্ষার জন্য ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই শিশু পুত্রকন্যা জয়-পুতুল ও ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে আকাশ পথে উড়ে গেলেন পশ্চিম জার্মানিতে। 
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ডায়েরিতে  লিখেছেন জানিয়ে বলেছিলেন, এমন রোজকেয়ামতের দিন, কোনদিন যেন কারো জীবনে কখনো না আসে। যেমনটি আমার জীবনে এসেছে। মাঝেমধ্যে মনে উদয় হয়, সেদিন যদি ভিসি স্যারের কথা অমান্য না করে ঢাকায় থেকে যেতেন, তাহলে আমার জন্য সেটাই ভালো হতো। বেঁচে থাকা এই জীবনটাতে সে কি যন্ত্রণা তা প্রকাশ করার ভাষা নেই।
সব হারিয়ে এমন বেঁচে থাকতে তো আমি চাইনি। প্রতিদিন পলে পলে দ্বগ্ধ হওয়া, সব হারানোর প্রচন্ড দাবদাহ সমস্ত অন্তরজুড়ে যে তুষের আগুনের ধিকিধিকি জ্বলনীর জীবন, এ জীবন তো আমি চাইনি। এর চেয়ে মা, বাবা,ভাই ও ভাবীদের সঙ্গে আমিও চলে যেতে পারতাম, তাহলে প্রতিদিনের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে তো বেঁচে যেতাম। আমার জন্য সেটাই ভালো হতো।
তিনি বলেছিলেন, আমি সেদিন কেন যে স্যারের নিষেধ শুনলাম না, আমি সেই কেনোর জবাব খুঁজে ফিরি। আমার দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়, আমায় কুঁরেকুঁরে খায়। দলপাকানো বেদনায় আমার কন্ঠ রুদ্ধ হয়। স্মৃতির নিদারুণ কষাঘাতে জর্জরিত হই।
শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন “আমার সেই স্যার ডঃ আব্দুল মতিন চৌধুরীও নিস্তার পাননি। ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট  উপাচার্য পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করে মিথ্যা মামলায় কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফেরার পর একবার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়। সেটা ২৩ জুন সন্ধ্যায় শিক্ষাবিদ মাজাহারুল ইসলামের বাসায়। আমাকে এক সংবর্ধনা দিয়েছিলে তিনি। কিন্তু নিয়তি কি নিষ্ঠুর! সেই প্রিয় স্যার পরের দিন পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নেন।
শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ডায়েরীর পাতায় আমার জীবনের সব চাইতে করুণ ও বেদনাঘণ হাহাকার পরিপূর্ণ একটি বিশেষ স্মৃতি রয়েছে মহান ওই মানুষটিকে নিয়ে। ভীষণ ব্যস্ত দিনেও যখন আমি কদাচিৎ একা বসে ভাবি তখন ফেলে আসা জীবনের স্বপ্নমধুর কিংবা বিষাদ-বেদনার স্মৃতির অর্গল তখনই উন্মুক্ত হয়।
আমি বেদনায় বিমুঢ় হয়ে যাই।সমব্যথায় অংশীদার হয়ে আমার ছোট বোন শেখ রেহানাও বেঁচে আছে। আমার মতো প্রচন্ড শোকের দাব-দাহকে বুকের গভীরে ছাইচাপা দিয়ে। যা নিরন্তর কেবল আমাদের অন্তরকে ক্ষত বিক্ষত করে। স্মৃতির দংশন একমাত্র আমি ছাড়া আর কাউকে কখনোই সহ্য করতে হয়নি। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার প্রার্থনা, আমার মতো যেন কাউকে কখনোই এমন ভয়ানক স্মৃতিচারণ করতে না হয়। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মানুষের কিছু স্মৃতি থাকে যা কখনো অর্ন্তহিত হয় না।
এমনকি ম্লান বা হাল্কাও হয় না। আমি যেন প্রত্যক্ষ করি, স্যারের সঙ্গে সেই কথোপকথন। তখনই প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভব করি আমার সমস্ত বুক জুড়ে। অন্তর কেবল প্রচন্ড শূণ্যতায় আর্তনাদ করে। বুকের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে একাকার হয়ে যায়। চোখের দৃষ্টি অজান্তেই ঝাঁপসা হয়। আমি আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।
 লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।
আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello
জনপ্রিয় সংবাদ

মির্জাগঞ্জে বৃষ্টি কামনায় ইস্তিস্কার নামাজ আদায়

মায়ের সঙ্গে শেষ কথা” জয়-পুতুল ছাড়া আমার সময় কাটেনা, হাসু তোরা ফিরে আয়!

আপডেট সময় ০৯:৩৪:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ অগাস্ট ২০২২
 সোহেল সানি 
হাসু, জয়-পুতুল ছাড়া যে আমার সময় কাটেনা, তোরা দ্রুত দেশে ফিরে আয়। আর শোন তোর আব্বা আমাকে শেখ শহীদের বিয়েতে যেতে দেননি। তাঁর বোঝা উচিত ছিল শহীদ আমার একমাত্র বোনের ছেলে। মা বড়মেয়ে শেখ হাসিনাকে নিদারুণ এ কষ্টের কথা বলে অঝোরে কেঁদেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু প্রায় সপরিবারে নিহত হওয়ার মাত্র চার দিন আগে শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে এ কথাগুলো বলেছিলেন তাঁর মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালীন স্মৃতি চারণ করে বলেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাইয় পশ্চিম জার্মানিতে যাওয়ার পর একবারই আমার মায়ের সঙ্গে কথা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ভাষায় চার দিনের ব্যবধানে বয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ওপর এক রোজকেয়ামত। শেখ হাসিনার নিদারুণ কষ্টের ধারাপাত বর্ণনার আগে কিভাবে তিনি হত্যাযজ্ঞের খবর পেয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গের অবতারণা করছি। 
পশ্চিম জার্মানির তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ছিলেন সিংহপুরুষ হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। তাঁর বাসায় ছিলেন ডঃ এমএ ওয়াজেদ মিয়া, সহধর্মিণী শেখ  হাসিনা, পুত্রকন্যা ও শ্যালিকা শেখ রেহানা। ১৫ আগস্ট বাইরে থাকা হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী তাঁর সহধর্মিণীকে ফোন করেন কাক ডাকা ভোরে। তিনি সহধর্মিণীকে বলেন ডঃ এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে পাইয়ে দিতে। ঘুম থেকে জাগিয়ে ডঃ ওয়াজেদের হাতে রিসিভার তুলে দেন বেগম চৌধুরী। ওপাশ থেকে ভারাক্রান্ত কন্ঠে হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী জানান, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। এখনি যেনো শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা না জানানো হয়।
“যাওয়ার আগের ঘটনা”
শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এম এ ক্লাশের ছাত্রী। তাঁকে পশ্চিম জার্মানি যেতে হবে স্বামী ডঃ ওয়াজেদের কাছে। তাই ছুটি মঞ্জুর করাতে ছুটে গিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ আবদুল মতিন চৌধুরীর কাছে। কিন্তু বাধ সাধলেন উপাচার্য।
তিনি বললেন যেতে চাও ১৫ আগস্টের পরে যাও। তোমার বাবা এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘আচার্য’ হিসাবে এই প্রথম বরণ করবে। তুমি শুধু তাঁর মেয়ে নও, এই বিশ্ববিদ্যালয়েরও ছাত্রী। অতএব তুমি এই ঐতিহাসিক বরণ-উৎসব রেখে  বিদেশ যেতে পারবে না।
শেখ হাসিনা সবিনয়ে স্যারকে বললেন, আমি ১৫ আগস্ট পর্যন্ত থেকে যেতে চেষ্টা করবো। দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে বাসায় ফেরেন শেখ হাসিনা। মাকে স্যারের কথাগুলো শুনালেন। মা বলেন, শিক্ষকের আদেশ শিরোধার্য, ১৫ আগস্টের পরেই যাবে।
কিন্তু সন্ধ্যায় শেখ হাসিনাকে টেলিফোন স্বামী ড. ওয়াজেদের। উপাচার্যের আপত্তির কথা জানান স্বামীকে। শিশুপুত্র জয়ের প্রচন্ড জ্বরের কথাও বলেন। এসব কথা মানতে চাইলেন না ডঃ ওয়াজেদ। রাগস্বরে বললেন, বাজার-সদায় করেছি, ছুটি নিয়েছি, আর এসব কি বলছো? উপর্যুক্ত কথাগুলো শেখ হাসিনার।
স্বামীর মুখের ওপর না করে বরং শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমরা ৩০ জুলাই রওয়ানা হচ্ছি। এ কারণে আর শেখ হাসিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতার বরণ উৎসব আর দেখা হলো না। যে বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪৯ সালে তাঁর বাবার ছাত্রত্ব কেড়ে নিয়েছিল।
যাহোক শেখ হাসিনা স্বামীর মনরক্ষার জন্য ১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই শিশু পুত্রকন্যা জয়-পুতুল ও ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে আকাশ পথে উড়ে গেলেন পশ্চিম জার্মানিতে। 
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ডায়েরিতে  লিখেছেন জানিয়ে বলেছিলেন, এমন রোজকেয়ামতের দিন, কোনদিন যেন কারো জীবনে কখনো না আসে। যেমনটি আমার জীবনে এসেছে। মাঝেমধ্যে মনে উদয় হয়, সেদিন যদি ভিসি স্যারের কথা অমান্য না করে ঢাকায় থেকে যেতেন, তাহলে আমার জন্য সেটাই ভালো হতো। বেঁচে থাকা এই জীবনটাতে সে কি যন্ত্রণা তা প্রকাশ করার ভাষা নেই।
সব হারিয়ে এমন বেঁচে থাকতে তো আমি চাইনি। প্রতিদিন পলে পলে দ্বগ্ধ হওয়া, সব হারানোর প্রচন্ড দাবদাহ সমস্ত অন্তরজুড়ে যে তুষের আগুনের ধিকিধিকি জ্বলনীর জীবন, এ জীবন তো আমি চাইনি। এর চেয়ে মা, বাবা,ভাই ও ভাবীদের সঙ্গে আমিও চলে যেতে পারতাম, তাহলে প্রতিদিনের অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে তো বেঁচে যেতাম। আমার জন্য সেটাই ভালো হতো।
তিনি বলেছিলেন, আমি সেদিন কেন যে স্যারের নিষেধ শুনলাম না, আমি সেই কেনোর জবাব খুঁজে ফিরি। আমার দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়, আমায় কুঁরেকুঁরে খায়। দলপাকানো বেদনায় আমার কন্ঠ রুদ্ধ হয়। স্মৃতির নিদারুণ কষাঘাতে জর্জরিত হই।
শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন “আমার সেই স্যার ডঃ আব্দুল মতিন চৌধুরীও নিস্তার পাননি। ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট  উপাচার্য পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করে মিথ্যা মামলায় কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফেরার পর একবার তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়। সেটা ২৩ জুন সন্ধ্যায় শিক্ষাবিদ মাজাহারুল ইসলামের বাসায়। আমাকে এক সংবর্ধনা দিয়েছিলে তিনি। কিন্তু নিয়তি কি নিষ্ঠুর! সেই প্রিয় স্যার পরের দিন পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নেন।
শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ডায়েরীর পাতায় আমার জীবনের সব চাইতে করুণ ও বেদনাঘণ হাহাকার পরিপূর্ণ একটি বিশেষ স্মৃতি রয়েছে মহান ওই মানুষটিকে নিয়ে। ভীষণ ব্যস্ত দিনেও যখন আমি কদাচিৎ একা বসে ভাবি তখন ফেলে আসা জীবনের স্বপ্নমধুর কিংবা বিষাদ-বেদনার স্মৃতির অর্গল তখনই উন্মুক্ত হয়।
আমি বেদনায় বিমুঢ় হয়ে যাই।সমব্যথায় অংশীদার হয়ে আমার ছোট বোন শেখ রেহানাও বেঁচে আছে। আমার মতো প্রচন্ড শোকের দাব-দাহকে বুকের গভীরে ছাইচাপা দিয়ে। যা নিরন্তর কেবল আমাদের অন্তরকে ক্ষত বিক্ষত করে। স্মৃতির দংশন একমাত্র আমি ছাড়া আর কাউকে কখনোই সহ্য করতে হয়নি। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমার প্রার্থনা, আমার মতো যেন কাউকে কখনোই এমন ভয়ানক স্মৃতিচারণ করতে না হয়। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মানুষের কিছু স্মৃতি থাকে যা কখনো অর্ন্তহিত হয় না।
এমনকি ম্লান বা হাল্কাও হয় না। আমি যেন প্রত্যক্ষ করি, স্যারের সঙ্গে সেই কথোপকথন। তখনই প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভব করি আমার সমস্ত বুক জুড়ে। অন্তর কেবল প্রচন্ড শূণ্যতায় আর্তনাদ করে। বুকের মধ্যে দুমড়েমুচড়ে একাকার হয়ে যায়। চোখের দৃষ্টি অজান্তেই ঝাঁপসা হয়। আমি আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।
 লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।