ওসমানীনগর প্রতিনিধি::
বন্যায় ভাসছে সিলেটের ওসমানীনগর,দূর্যোগময় এই গোটা উপজেলার চারদিকে বানবাসী মানুষদের মধ্যে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এমন পরিস্থিতিতে নিজ অফিসে কর্মচারীর জন্মদিন পালন করে সমালোচনা মুখে পড়েছেন ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজ নীলীমা রায়হানা।
মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিজ অফিসে কেক কেটে উপজেলা নির্বাহী অফিসের নাজির ফাইম রোম্মানের জন্মদিন পালন করা হয়। প্রশাসনিক কক্ষের ভিতরে কেক কাটাসহ নানা অপ্যাায়নের মাধ্যমে জন্মদিন অনুষ্ঠান পালনের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড দিলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগেও একাধিক বার নিজ অফিসে ঝাকঝমকপূর্ন ভাবে কর্মচারীদের জন্মদিন পালন করেছেন ইউএনও নীলমা রায়হানা। তবে চলমান বন্যায় প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চারিদিকে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এমন অবস্থায় নিজ অফিসে জন্মদিনের আয়োজন করা সমিচিন নয় বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এদিকে, অভিযোগ উঠেছে অফিসে বসে বন্যা আক্রান্তদের তালিকা করায় সেই তালিকায়ও রয়েছে গরমির।ফলে ত্রাণ সহায়তা পেতে বিলম্ব হয় বন্যা আক্রান্তদের। পরে এই বিষয়ে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর সংশোধন করা হয় তালিকা খোলা হয়েছে কন্টোল রুম।
এছাড়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সাথে সম্বনয় না করে ত্রাণ বিতরণ এবং সরকারি ত্রাণ উপজেলা কর্মচারীদের সংগঠনের ফান্ডে দেয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ইউএনও নিলীমা রায়হানার বিরুদ্ধে।
উপজেলার একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, বন্যায় পানিবন্দি এবং আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা অসহায় মানুষদের জন্য সরকারী ভাবে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ত্রাণ বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে। ফলে নিজেদের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ করছেন তারা।
সরকারী ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সাথে কোন ধরণের সম্বনয় করছেন না ইউএনও। এমনকি সংকটময় এই মূহূত্বে উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির কোন সভার আয়োজন করা হয়নি। ফলে কোনো এলাকায় বেশি আবার কোনো এলাকায় এখনও সরকারী ত্রান পৌছাতে বিলম্ব হচ্ছে। এস বিষয়ে জনগনের রোশানলে পড়তে হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের।
এদিকে, অনুষ্ঠানে কেক কাটার পর উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা জন্মদিন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে ফাইম রোম্মানের হাতে বিভিন্ন উপঢৌকন তুলে দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতেও দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিগুলোতে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের একাধিক দপ্তরসহ উপজেলা জুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উে ছে। দূর্গত এলাকার ক্ষোদ ইউএনও কার্যালয়ে ঘটা করে নাজিরের জন্মদিন পালন বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের পাশাপাশি বিভিন্ন জন বিভিন্ন বিরুপ মন্থব্য করছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলীমা রায়হানা ওসমানীনগর উপজেলায় যোগদানের পর থেকে সরকারী অফিসে কর্মকর্তা -কর্মচারীদের জন্মদিন পালন করে ছবিগুলো ফেইসবুকে আপলোড করা প্রশাসনিক কাজের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অনেকের।
এর আগেও সরকারী অফিসে ঘটা করে জন্মদিন পালন করে সামলোচনার মুখে পড়েছিলেন, ওসমানীনগর থানার সাবেক ওসি আবদ্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজহারুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক চৌধুরী‘র সিএ-(কাম-কম্পিউটার অপারেটর) শামীম আহমদ এবং ইউএনও অফিসের সিএ-(কাম-কম্পিউটার অপারেটর) মোশফিকুর রহমান জুলফিকারের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ইউএনও‘র কক্ষে ঘটা করে জন্মদিন পালন হয়েছিল।
সচেতনমহলের দাবি, যেখানে বন্যায় লাখ লাখ মানুষ গৃহছাড়া হয়ে খাদ্যের জন্য আহাকার করছে। সেখানে ইউএনও মহোদয় অনাড়ম্বরভাব নিজ অফিস কক্ষে কর্মচারীর জন্মদিন পালন না করে সেই টাকা দিয়ে হয়তো ১০জন বন্যার্তদের আহারের ব্যবস্থা করলে ভাল হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের একাধিক কর্মরতারা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ পকাশ করে বলেন, বন্যার মধ্যে আমাদের কাজ করেই সময় পাচ্ছি না। জন্মদিন পালনের দাওয়াত পেয়েছি কিন্তু অনুষ্ঠানে যাইনি। বড় কর্তারাও যদি অফিসে কেক কাটার আয়োজন করেন আমাদের বলার কিছু নেই। তবে অনেকেই আমাদের ফোন করে বিরুপ মন্থব্য করছেন।
সরকারি অফিসে কর্মচারীর জন্মদিন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে একাধিকাবর ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলীমা রায়হানার সরকারি মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: আনোয়ার সাদাত বলেন, সরকারি অফিসে বসে জন্মদিন পালন কোন অবস্থাতেই সমিচিন নয়। সার্বিক বিষয় খতিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।