বাংলাদেশ ০৪:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
নলছিটির ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির চাঁদাবাজী।। মহাসচিবের কাছে অভিযোগ। পা দিয়ে লিখে আলিম পাশ করলো রাসেল নাইক্ষ‍্যংছড়ি মদিনাতুল উলুম মডেল ইন: ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা আলিম পরীক্ষায় এবারও শীর্ষস্থানে নলছিটি সুবিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদা দাবীর অভিযোগ ভান্ডারিয়ায় শিল্পপতি সৈয়দ সোহেল রানার ওপর সন্ত্রাসী হামলা: বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ভান্ডারিয়ায় পূজা উদ্যাপন কমিটির সাথে বিএনপির মতবিনিময় সভা ভান্ডারিয়ায় সিরাত সন্ধ্যায় প্রাণের ছোঁয়া ভান্ডারিয়ায় “মুক্তকন্ঠ” শিল্পী ও সাংস্কৃতিক জোটের কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানে মানুষের কাঁধে চেপে বসা জালিম শাসকের পতন হয়েছে – মাহমুদুর রহমান ২৬ লাখ টাকার ঘড়ি ৪ মাসেই নষ্ট ঠাকুরগাঁওয়ের শ্রী শ্রী রসিক রায় জিও মন্দির প্রাঙ্গন ও আশপাশ এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি ১৪ মাসেই কোরআনের হাফেজ বালক গৌরনদীতে সাংবাদিক সোহেবের চেক ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আদালতে মামলা মুন্সিগঞ্জ জেলা ক্রিড়া অফিসের আয়োজনে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত। শরীয়তপুরের জাজিরায় ডিজিএম এর একঘেয়েমীর কারণে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল এক পল্লীবিদ্যুৎতের লাইনম্যানের।

ঐতিহাসিক বদর দিবস ইসলামের প্রথম  বিজয় ও আল্লাহর সাহায্য

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৮:৫৫:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২
  • ১৭৬২ বার পড়া হয়েছে

ঐতিহাসিক বদর দিবস ইসলামের প্রথম  বিজয় ও আল্লাহর সাহায্য

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।
আজ ১৭ রমজান। আজকের এই  দিনে সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ। যার নাম বদরের যুদ্ধ। পবিত্র আল-কোরআনে এ যুদ্ধকে অভিহিত করা হয়েছে ইয়াওমূল ফুরক্বান অর্থাৎ ফয়সালাকারী দিন হিসেবে। এ যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও মক্কার কাফির শক্তিকে পরাজিত করেন, যার মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার প্রভেদ ঘটে। এ কারণে বদরের যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বলা হয়।
বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয় মদীনায় হিজরতের মাত্র ১ বছর ৬ মাস ২৭ দিন পরে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মদীনা থেকে বের করে দেবার জন্য নানাবিধ অপচেষ্টা চালায়। যেমনভাবে তারা ইতিপূর্বে হাবশায় হিজরতকারী মুসলমানদের সেখান থেকে বের করে দেবার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু সেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
 অবশ্য কুরাইশ কাফিরদের বাণিজ্য কাফিলাকে বাধা দেয়ার লক্ষ্যে ও তাদের সম্পদ আটকের জন্যই একদল মুসলিম মুজাহিদ প্রিয়নবী (সা.) এর নেতৃত্বে মদীনা থেকে বেরিয়ে আসেন। কাফিররা মক্কায় মুসলমানদের অনেক সম্পদ আটক করে রেখেছিল। তাই এ ধরনের হামলার অধিকার মুসলমানদের ছিল। তবে বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ হবে বলে মুসলমানদের কেউই ভাবেননি এবং সে জন্য প্রস্তুতিও ছিল না। কিন্তু কুরাইশ কাফিরদের শীর্ষস্থানীয় নেতা আবু সুফিয়ান তার বাণিজ্য কাফিলার ওপর মুসলমানদের হামলার প্রস্তুতির খবর জানতে পেরে সেই খবর মক্কার কাফিরদের জানালে অনেক কাফির নেতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ফলে তারা একটি সুসংগঠিত যুদ্ধের আয়োজন করে এবং মুসলমানরাও মহানবী(সা.)’র নেতৃত্বে কাফিরদের মোকাবেলা করতে বাধ্য হন।
এ যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদদের সংখ্যা মাত্র ৩১৩ জন হওয়া সত্ত্বেও তারা মক্কার সুসজ্জিত প্রায় এক হাজার কাফিরের ওপর বিজয়ী হয়েছিলেন। মহান আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য থাকাতেই তা সম্ভব হয়েছে। এ যুদ্ধে কাফির বাহিনীর ৭০ জন মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত এবং তাদের ৭০ জন মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হয়।
অন্যদিকে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শাহাদত বরণ করেন। মুসলমানদের পক্ষে এই যুদ্ধের প্রধান বীর ছিলেন আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ.)। তিনি একাই ৩৬ জন কাফিরকে হত্যা করেছিলেন যাদের মধ্যে অনেকেই ছিল নেতৃস্থানীয় কাফির সর্দার ও তৎকালীন আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খ্যাতিমান যোদ্ধা ।
বদর যুদ্ধের গুরুত্ব : বদর যুদ্ধ ছিল হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী অথচ একটি অসম যুদ্ধ। ইসলামের টিকে থাকা না থাকার ফায়ছালাকারী যুদ্ধ। কেননা একটি সুসজ্জিত এবং সংখ্যায় তিনগুণ অধিক ও প্রশিক্ষিত সেনাদলের সাথে অপ্রস্ত্তত, অসজ্জিত এবং সংখ্যায় তিনগুণ কম এবং বাস্তভিটা হারা মুহাজির ও নওমুসলিম আনছারদের এ যুদ্ধে জয় লাভ ছিল এক অকল্পনীয় ব্যাপার। এ কারণেই এ যুদ্ধের দিনটিকে পবিত্র কোরআনে ‘ইয়াওমুল ফুরক্বান’ বা কুফর ও ইসলামের মধ্যে ‘ফায়ছালাকারী দিন’ (আনফাল ৮/৪১) বলে অভিহিত করা হয়েছে । বদরের যুদ্ধ ছিল কাফেরদের মূল কর্তনকারী ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা দানকারী।
বদর যুদ্ধ ছিল মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম মুখোমুখি সশস্ত্র যুদ্ধ, যে যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মুসলমানদের শক্তি ও সাহস বৃদ্ধি পায়। দলে দলে লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে। এমনকি মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ প্রকাশ্যে ইসলাম কবুলে বাধ্য হয়। এছাড়া এ যুদ্ধের পরে কাফের সমাজে এমন আতংক প্রবেশ করে যে, তারা আর কখনো বিজয়ের মুখ দেখেনি। বদরের যুদ্ধের বিজয় ছিল মক্কা বিজয়ের সোপান স্বরূপ। এই সময় শা‘বান মাস থেকে কা‘বার দিকে কিবলা পরিবর্তিত হয় এবং বদর যুদ্ধের মাত্র ছয় বছর পরেই ৮ম হিজরীর ১৭ই রমজান তারিখে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে যা পূর্ণতা লাভ করে।
 বদর যুদ্ধের শিক্ষা ধৈর্য্যের শিক্ষা : মক্কায় পরিবেশ প্রতিকূলে থাকায় সেখানে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়নি। পক্ষান্তরে মদীনায় পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবং এখানে সবাই রাসূলের নেতৃত্ব মেনে নিতে মৌখিক ও লিখিতভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার ফলে মুসলমানেরা চালকের আসনে থাকায় রাসূলকে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দিতে হয়নি। এতে বুঝা যায় যে, বিজয়ের সম্ভাবনা ও পরিবেশ না থাকলে যুদ্ধের ঝুঁকি না নিয়ে ছবর করতে হবে। যেমনটি মাক্কী জীবনে করা হয়েছিল।
বিনা কারণে যুদ্ধের অনুমতি নেই: বদরের যুদ্ধ ছিল মূলতঃ আত্মরক্ষামূলক। আবূ জাহলকে বদরে মুকাবিলা না করলে সে সরাসরি মদীনায় হামলা করার দুঃসাহস দেখাত। যা ইতিপূর্বে তাদের একজন নেতা কূরয বিন জাবের ফিহরী সরাসরি মদীনার উপকণ্ঠে হামলা করে গবাদিপশু লুটে নেবার মাধ্যমে জানিয়ে গিয়েছিল। এতে বুঝা যায় যে, আত্মরক্ষা এবং ইসলামের স্বার্থ ব্যতীত অন্য কোন কারণে কাফেরদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি নেই।
আল্লাহর সাহায্যই সবচেয়ে বড় সাহায্য : সংখ্যা ও যুদ্ধ সরঞ্জামের কমবেশী বিজয়ের মাপকাঠি নয়। বরং আল্লাহর উপরে দৃঢ় ঈমান ও তাওয়াক্কুল হ’ল বিজয়ের মূল হাতিয়ার। পরামর্শ সভায় কয়েকজন সাহাবী বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে যুদ্ধ না করে ফিরে যাবার পরামর্শ দিলে আল্লাহ ধমক দিয়ে আয়াত নাযিল করেন (আনফাল ৮/৫-৬)। এতে বুঝা যায়, আল্লাহর গায়েবী মদদ লাভই হ’ল বড় বিষয়। স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যুদ্ধে নামলে আল্লাহ স্বীয় ফেরেশতা মন্ডলী পাঠিয়ে সরাসরি সাহায্য করে থাকেন। যেমন বদর যুদ্ধের শুরুতে রাসূলের বালু নিক্ষেপের মাধ্যমে (আনফাল ৮/১৭) অতঃপর ফেরেশতাদের সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছিল (আনফাল ৮/৯)।
যুদ্ধের উদ্দেশ্য হবে জান্নাত লাভ: যুদ্ধের উদ্দেশ্য হতে হবে জান্নাত লাভ। যেটা যুদ্ধ শুরুর প্রথম নির্দেশেই আল্লাহর রাসূল (সা.) সাহাবীগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। অতএব চিন্তাক্ষেত্রের যুদ্ধ হোক বা সশস্ত্র মুকাবিলা হোক ইসলামের সৈনিকদের একমাত্র লক্ষ্য থাকতে হবে জান্নাত লাভ। কোন অবস্থাতেই দুনিয়া হাছিলের জন্য মুসলমানের চিন্তাশক্তি বা অস্ত্র শক্তি ব্যয়িত হবে না।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা:  বদরের যুদ্ধ আমাদের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতেও শেখায়। বদরের এ দিনটিকে আল্লাহ স্মরণীয় হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, ” “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন বদরের যুদ্ধে। অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। অতএব আল্লাহকে ভয় কর যাতে –+(বাকী অংশ)—–তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার”।(সূরা আল ইমরান-৩/১২৩)
আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello

নলছিটির ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির চাঁদাবাজী।। মহাসচিবের কাছে অভিযোগ।

ঐতিহাসিক বদর দিবস ইসলামের প্রথম  বিজয় ও আল্লাহর সাহায্য

আপডেট সময় ০৮:৫৫:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।
আজ ১৭ রমজান। আজকের এই  দিনে সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ। যার নাম বদরের যুদ্ধ। পবিত্র আল-কোরআনে এ যুদ্ধকে অভিহিত করা হয়েছে ইয়াওমূল ফুরক্বান অর্থাৎ ফয়সালাকারী দিন হিসেবে। এ যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও মক্কার কাফির শক্তিকে পরাজিত করেন, যার মাধ্যমে সত্য-মিথ্যার প্রভেদ ঘটে। এ কারণে বদরের যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বলা হয়।
বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয় মদীনায় হিজরতের মাত্র ১ বছর ৬ মাস ২৭ দিন পরে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মদীনা থেকে বের করে দেবার জন্য নানাবিধ অপচেষ্টা চালায়। যেমনভাবে তারা ইতিপূর্বে হাবশায় হিজরতকারী মুসলমানদের সেখান থেকে বের করে দেবার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু সেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।
 অবশ্য কুরাইশ কাফিরদের বাণিজ্য কাফিলাকে বাধা দেয়ার লক্ষ্যে ও তাদের সম্পদ আটকের জন্যই একদল মুসলিম মুজাহিদ প্রিয়নবী (সা.) এর নেতৃত্বে মদীনা থেকে বেরিয়ে আসেন। কাফিররা মক্কায় মুসলমানদের অনেক সম্পদ আটক করে রেখেছিল। তাই এ ধরনের হামলার অধিকার মুসলমানদের ছিল। তবে বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ হবে বলে মুসলমানদের কেউই ভাবেননি এবং সে জন্য প্রস্তুতিও ছিল না। কিন্তু কুরাইশ কাফিরদের শীর্ষস্থানীয় নেতা আবু সুফিয়ান তার বাণিজ্য কাফিলার ওপর মুসলমানদের হামলার প্রস্তুতির খবর জানতে পেরে সেই খবর মক্কার কাফিরদের জানালে অনেক কাফির নেতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ফলে তারা একটি সুসংগঠিত যুদ্ধের আয়োজন করে এবং মুসলমানরাও মহানবী(সা.)’র নেতৃত্বে কাফিরদের মোকাবেলা করতে বাধ্য হন।
এ যুদ্ধে মুসলিম মুজাহিদদের সংখ্যা মাত্র ৩১৩ জন হওয়া সত্ত্বেও তারা মক্কার সুসজ্জিত প্রায় এক হাজার কাফিরের ওপর বিজয়ী হয়েছিলেন। মহান আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য থাকাতেই তা সম্ভব হয়েছে। এ যুদ্ধে কাফির বাহিনীর ৭০ জন মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত এবং তাদের ৭০ জন মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হয়।
অন্যদিকে মুসলিম বাহিনীর ১৪ জন শাহাদত বরণ করেন। মুসলমানদের পক্ষে এই যুদ্ধের প্রধান বীর ছিলেন আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (আ.)। তিনি একাই ৩৬ জন কাফিরকে হত্যা করেছিলেন যাদের মধ্যে অনেকেই ছিল নেতৃস্থানীয় কাফির সর্দার ও তৎকালীন আরব বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খ্যাতিমান যোদ্ধা ।
বদর যুদ্ধের গুরুত্ব : বদর যুদ্ধ ছিল হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী অথচ একটি অসম যুদ্ধ। ইসলামের টিকে থাকা না থাকার ফায়ছালাকারী যুদ্ধ। কেননা একটি সুসজ্জিত এবং সংখ্যায় তিনগুণ অধিক ও প্রশিক্ষিত সেনাদলের সাথে অপ্রস্ত্তত, অসজ্জিত এবং সংখ্যায় তিনগুণ কম এবং বাস্তভিটা হারা মুহাজির ও নওমুসলিম আনছারদের এ যুদ্ধে জয় লাভ ছিল এক অকল্পনীয় ব্যাপার। এ কারণেই এ যুদ্ধের দিনটিকে পবিত্র কোরআনে ‘ইয়াওমুল ফুরক্বান’ বা কুফর ও ইসলামের মধ্যে ‘ফায়ছালাকারী দিন’ (আনফাল ৮/৪১) বলে অভিহিত করা হয়েছে । বদরের যুদ্ধ ছিল কাফেরদের মূল কর্তনকারী ও সত্যকে প্রতিষ্ঠা দানকারী।
বদর যুদ্ধ ছিল মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম মুখোমুখি সশস্ত্র যুদ্ধ, যে যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মুসলমানদের শক্তি ও সাহস বৃদ্ধি পায়। দলে দলে লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করতে থাকে। এমনকি মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ প্রকাশ্যে ইসলাম কবুলে বাধ্য হয়। এছাড়া এ যুদ্ধের পরে কাফের সমাজে এমন আতংক প্রবেশ করে যে, তারা আর কখনো বিজয়ের মুখ দেখেনি। বদরের যুদ্ধের বিজয় ছিল মক্কা বিজয়ের সোপান স্বরূপ। এই সময় শা‘বান মাস থেকে কা‘বার দিকে কিবলা পরিবর্তিত হয় এবং বদর যুদ্ধের মাত্র ছয় বছর পরেই ৮ম হিজরীর ১৭ই রমজান তারিখে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে যা পূর্ণতা লাভ করে।
 বদর যুদ্ধের শিক্ষা ধৈর্য্যের শিক্ষা : মক্কায় পরিবেশ প্রতিকূলে থাকায় সেখানে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হয়নি। পক্ষান্তরে মদীনায় পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবং এখানে সবাই রাসূলের নেতৃত্ব মেনে নিতে মৌখিক ও লিখিতভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার ফলে মুসলমানেরা চালকের আসনে থাকায় রাসূলকে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দিতে হয়নি। এতে বুঝা যায় যে, বিজয়ের সম্ভাবনা ও পরিবেশ না থাকলে যুদ্ধের ঝুঁকি না নিয়ে ছবর করতে হবে। যেমনটি মাক্কী জীবনে করা হয়েছিল।
বিনা কারণে যুদ্ধের অনুমতি নেই: বদরের যুদ্ধ ছিল মূলতঃ আত্মরক্ষামূলক। আবূ জাহলকে বদরে মুকাবিলা না করলে সে সরাসরি মদীনায় হামলা করার দুঃসাহস দেখাত। যা ইতিপূর্বে তাদের একজন নেতা কূরয বিন জাবের ফিহরী সরাসরি মদীনার উপকণ্ঠে হামলা করে গবাদিপশু লুটে নেবার মাধ্যমে জানিয়ে গিয়েছিল। এতে বুঝা যায় যে, আত্মরক্ষা এবং ইসলামের স্বার্থ ব্যতীত অন্য কোন কারণে কাফেরদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি নেই।
আল্লাহর সাহায্যই সবচেয়ে বড় সাহায্য : সংখ্যা ও যুদ্ধ সরঞ্জামের কমবেশী বিজয়ের মাপকাঠি নয়। বরং আল্লাহর উপরে দৃঢ় ঈমান ও তাওয়াক্কুল হ’ল বিজয়ের মূল হাতিয়ার। পরামর্শ সভায় কয়েকজন সাহাবী বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে যুদ্ধ না করে ফিরে যাবার পরামর্শ দিলে আল্লাহ ধমক দিয়ে আয়াত নাযিল করেন (আনফাল ৮/৫-৬)। এতে বুঝা যায়, আল্লাহর গায়েবী মদদ লাভই হ’ল বড় বিষয়। স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যুদ্ধে নামলে আল্লাহ স্বীয় ফেরেশতা মন্ডলী পাঠিয়ে সরাসরি সাহায্য করে থাকেন। যেমন বদর যুদ্ধের শুরুতে রাসূলের বালু নিক্ষেপের মাধ্যমে (আনফাল ৮/১৭) অতঃপর ফেরেশতাদের সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছিল (আনফাল ৮/৯)।
যুদ্ধের উদ্দেশ্য হবে জান্নাত লাভ: যুদ্ধের উদ্দেশ্য হতে হবে জান্নাত লাভ। যেটা যুদ্ধ শুরুর প্রথম নির্দেশেই আল্লাহর রাসূল (সা.) সাহাবীগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। অতএব চিন্তাক্ষেত্রের যুদ্ধ হোক বা সশস্ত্র মুকাবিলা হোক ইসলামের সৈনিকদের একমাত্র লক্ষ্য থাকতে হবে জান্নাত লাভ। কোন অবস্থাতেই দুনিয়া হাছিলের জন্য মুসলমানের চিন্তাশক্তি বা অস্ত্র শক্তি ব্যয়িত হবে না।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা:  বদরের যুদ্ধ আমাদের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতেও শেখায়। বদরের এ দিনটিকে আল্লাহ স্মরণীয় হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, ” “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন বদরের যুদ্ধে। অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। অতএব আল্লাহকে ভয় কর যাতে –+(বাকী অংশ)—–তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার”।(সূরা আল ইমরান-৩/১২৩)