স্টাফ রিপোর্টার: নাটোরের সিংড়া সদরের পেট্রোবাংলা মোড়ে অবস্থিত সিংড়া সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্সের নামের একটি বেসরকারী ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অপচিকিৎসা ও নানা অপকর্মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। রবিবার (২৫ আগষ্ট) বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী সরদার অভিযান পরিচালনা করে এ প্রতিষ্ঠান টি সিলগালা করেন।
জানা যায়, এক সময়ের ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হারুন-অর রশিদ। পরবর্তীতে তিনি সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্স নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক বনে যান। গত ১৭ বছর যাবৎ তিনি এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। বেশ কয়েক বছর যাবৎ ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানান সময় বিভিন্ন অভিযোগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। হারুন সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্স এর সাইনবোর্ডের আড়ালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে এজেন্সি ব্যাবসা সহ সুদের সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। ইতিমধ্যে সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্সের পরিচালক হারুনের নানা কুকীর্তি নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক সহ অনলাইন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
পরিচালক হারুনের পোষা দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও প্রতারনার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেখানে সেবার নামে চলছে অপচিকিৎসা, অন্তরালে লুকিয়ে আছে রোগীদের ভোগান্তি আর অনৈতিক কর্মকান্ড। প্রতিবাদ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছে সাংবাদিক সহ সাধারণ মানুষ।
এদিকে চিকিৎসা শাস্ত্রের সনদ না থাকলেও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হারুন বনে গেছেন ডাক্তার। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্যাড ও নাম ব্যাবহার করে নিজেই করছেন অপারেশন। তার প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে এসে অকালে প্রাণ হারিয়েছে নবজাত সহ অনেকে। এখানে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার সুকৌশলে ধামাচাপা দেন তিনি।
সম্প্রতি সেবা মেডিকেল কমপ্লেক্সে এমন একটি লোমহর্ষ ঘটনা ঘটেছে। গত ৫ মে উপজেলার ছাতারদিঘী ইউনিয়নের উদিশা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে জাহিদ হাসানের স্ত্রী তাসলিমা খাতুন (২০) কে সিজার অপারেশনের করেন হারুন।
অপারেশনের ১০ দিনের মাথায় সেলাই কাটার পরের দিন থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে থাকে তাসলিমার। রক্তের সাথে সাদা রঙ্গের গজ বের হয় আসে। ইনফেকশন জনিত কারণে রোগীর অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় তার স্বামী জাহিদ হাসান রামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর তাসলিমা মোটামুটি সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাসলিমার স্বামী জাহিদ হাসান জেলা সিভিল সার্জন অফিসে লিখত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে তাসলিমা জানান, আমার চিকিৎসায় ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। প্রথমে হারুন ক্ষতি পূরণ দিতে না চাইলে আমার স্বামী সিভিল সার্জন অফিসে অভিযোগ দেয়। পরে সে আমাদের বাড়িতে এসে ক্ষমা চেয়ে ১লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে লিখিত নিয়েছে।
জাহিদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে নাটোর জেলা সিভিল সার্জনের তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গত ২১ আগস্ট নাটোর জেলা সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ মশিউর রহমান সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেন।
নাটোর জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে গত রবিবার (২৫ আগষ্ট) বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানী সরদার অভিযান পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠান টি অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলগালা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এ এস এম আলমাস, সেনাবাহিনীর টিম, পুলিশ ও গণ্যমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, স্থানীয়রা বলছেন এক সময়ের ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টিভ এখানে বসে অবৈধ সুদ ব্যাবসায় হয়েছেন কোটিপতি। তার অবৈধ অর্থের গরমে প্রায় তিনি ধরাকে সাড়াজ্ঞান করেন। এর আগেও একই অপরাধে প্রশাসন সিলগালা করেছিল এই প্রতিষ্ঠানকে। কিন্তুু অবৈধ টাকার জোরে কয়দিন যেতে না যেতেই সিলগালা ভেঙে তালা খুলেন হারুন। তাহলে এবারও কি তাই হবে? এমন প্রশ্ন সিংড়াবাসীর মনে?