বাংলাদেশ ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
মুন্সীগঞ্জ সদর ইউএনওর চরডুমুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন সন্ধ্যার মধ্যে উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসভবন ছাড়ার আল্টিমেটাম কুবি শিক্ষার্থীদের রাবিতে জড়ো হওয়া আন্দোলনকারীদের পুলিশ-বিজিবির ধাওয়া মেহেন্দিগঞ্জে অজ্ঞাতনামা নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার। মুন্সীগঞ্জে গায়েবানা জানাযা থেকে ঈমাম ও বিএনপি নেতাকে ধরে নিয়ে গেলো পুলিশ কোটা আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে ফেনী ইউনিভার্সিটির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বিবৃতি চলমান পরিস্থিতিতে রাবি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি আপাতত স্থগিত: উপাচার্য বিদেশের পাঠানো টাকা চাইতে গিয়ে বিপাকে প্রবাসী স্বামী রাজশাহীতে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র আশুরা পালিত চট্রগ্রামের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত ওয়াসিমের জানাজায় মানুষের ঢল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরসভার রাস্তায় সমবায় সমিতি ভবনের ট্যাংকির ময়লা: জনদুর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা, আহত ৫ হরিপুরে, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর পক্ষ থেকে কর্মী মিটিং ও গ্রাহক সমাবেশ অনুষ্ঠিত। গৌরীপুরে উদীচী কার্য়ালয়ে হামলা ও ভাংচুর স্ত্রীর যৌতুক মামলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কারাগারে

জিন্দাবাহারের গলিতে ৭১-র মার্চের কয়েকটি ভয়াবহ দিন

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:৪৬:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২
  • ১৭৩৭ বার পড়া হয়েছে

জিন্দাবাহারের গলিতে ৭১-র মার্চের কয়েকটি ভয়াবহ দিন

জবি প্রতিনিধি। 
মার্চ আমাদের ইতিহাসে এক অগ্নিঝরা মাস। আমাদের বয়সী যারা তখন ঢাকা শহরে অবস্থান করেছিলেন তাদের সকলেরই কোনো না কোনো স্মৃতি ভর করে আছে। ২৫শে মার্চের ভয়াবহতা যারা অবলোকন করেছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ  কী করে পাকিস্তানপন্থী রাজাকার আল বদর আল সামস-এর  সাথে হাত মেলালেন সেটি চিন্তা করলে জটিল এক  সমীকরণের মতো মনে হয়। ভাবি এ রকমই বোধ হয় আমাদের বাঙ্গালীদের চরিত্র। আমরা বোধ হয় এ রকম স্ববিরোধী।
নবম শ্রেণিতে পড়ি। রাজনীতির অনেক কিছুই তেমন গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে শিখিনি। তবে বর্বর পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিরা যে এবার একটি শক্ত প্রতিরোধ গড়ে  তুলবে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। প্রায়শই আমাদের জিন্দাবাহারের বাড়ীর ছাদে উঠে দেখতাম যে কোথায় বাংলাদেশের  পতাকা উড়ছে। আমাদের ছাদ থেকে আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি, আরমানিটোলা হাই স্কুলের ছাদ দেখা যেত। ঐ স্কুলগুলোতে মার্চের ৩ তারিখ থেকেই লাল সবুজের পতাকা উড়তো। লক্ষ্য করতাম সেগুলো আবার কেউ নামিয়ে ফেলে কি না। অনুপ্রাণিত হতাম, বিদ্রেহী হতাম। চিন্তা করলাম আমিও একটি পতাকা বানিয়ে ফেলি। একদিন সত্যি সত্যি, তারিখ মনে নেই, পাকিস্তানি পতাকার চাঁদ তারা গোল করে কাঁচি দিয়ে কেটে ফেললাম। আপাদের কাছ থেকে লাল কাপড় যোগাড় করলাম।
গোল করে কাটলাম। সুঁই সুতা যোগাড় করলাম। এবং সেলাই করে ফেললাম। মনে পড়ে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল রোমাঞ্চকর। কাজটি করেছিলাম খুব গোপনে, নীরবে, নিভৃতে। একদিন সকাল বেলা ছাদের ফ্লাগ  স্টান্ডে ঠিকই উড়িয়ে দিলাম। বাতাসে পতাকা উড়ছিল, ভাবছিলাম আমিও আন্দোলনের একজন সৈনিক। রাস্তা থেকে এরকম পতাকা দেখে অনেকেই আমার বাবার নিকট বিষয়টি জানান । আমি তখন ছাদ থেকে নিচে নেমে আমার মায়ের ঘরে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার বাবা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে এলেন এবং আমাকে বকাঝকা করলেন। আমার বড় বোনেরাও আমাকে বেশ বকা দিলেন। বাবা বললেন ‘‘তুই করেছিস কি? ”এটা  আমার মনে পড়ে। তারপর  এই পতাকা আমাকে এক ঘণ্টার মধ্যেই নামিয়ে ফেলতে হয়েছিল। অনেকটা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজটি করেছিলাম। অনুতপ্ত হইনি মোটেও।
অপেক্ষায় ছিলাম কবে কখন আবার এই লাল সবুজের পতাকা উড়বে। সেই শুভক্ষণ এসেছিল ২৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তান দিবসে। আমার মনে পড়ে পুরনো ঢাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সেদিন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল সবুজ পতাকা উড়েছিল। সঙ্গে কালোপতাকাও উড়ানো হয়েছিল।সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। পতাকা না উড়ানোটাই ছিল অপরাধের সামিল, আবেগ অনুভূতি বিদ্রোহ সব ঐ পতাকায় মিশে গিয়েছিল, সঙ্গে ছিল কালো রং-এর শোকের পতাকা। ভুট্টো সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা চলছে। পাশাপাশি প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ চলছে। গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার সেই জ্ঞান তখন ছিল না। পঁচিশে মার্চের কালো রাতে বিকট শব্দে চারিদিক কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। সকালে দেখলাম প্রতিবেশিরা ছাদে উঠে কি যেন বলাবলি করছে। ছাদে উঠে দেখলাম শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে আগুনের কুণ্ডলি ও ধোঁয়া। সেই সময় প্রতিরাতেই কারফিউ থাকতো।
২৬ মার্চ আব্বা জিন্দাবাহারের তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে কারফিউবিহীন সকাল বেলা কী  হয়েছে দেখার জন্য ইসলামপুর রোডে বের হলেন আমাকেও নিয়ে গেলেন। হেঁটে আমরা প্রথমে  শাঁখারিবাজার মোড়ে বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে প্রবেশ করলাম। আমাদের মতো অনেকে অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। আমি ফাঁড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি। শুনতে পেলাম বেশ কয়েকজন পুলিশ বাহিনীর সদস্যকে পাকবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। সেই দৃশ্য দেখার আর ইচ্ছে হয়নি। তারপর আব্বা শাঁখারিবাজারে প্রবেশ করলেন। সরু প্রবেশ দ্বার দিয়ে বিভিন্ন্ গৃহে ঢুকে সেদিন যে দৃশ্য দেখেছিলাম  তা আজও ভাবলে গা শিহরিত হয়ে ওঠে। চৌকির নীচে সারিসারি লাশ।
ছড়ানো ছিটানো, এমন কি ছোট শিশুরাও রেহাই পায় নি। বেয়নেট দিয়ে খোঁচানো মৃত শিশুকেও দেখেছিলাম। একরাশ আতংক, ভয়, ঘৃণা মনকে আচ্ছন্ন করেছিল। শাঁখারিবাজারের পুরো এলাকা আর ঘুরে দেখার সাহস করিনি। একা হেঁটে  বাসায় চলে এলাম। ২৬ মার্চ রাতটি ছিল আগুনের মহাউৎসব । একদিকে জল্লাদ ইয়াহিয়ার ভাষণ অন্যদিকে ইংলিশ রোডের কাঠের দোকানগুলোতে  অগ্নিকাণ্ড। পাকিস্তানি সৈন্যরা সুপরিকল্পিতভাবে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এক ধরণের পাউডার ছিটিয়ে পুরো ইংলিশ রোডের দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। মনে  হচ্ছিল সেই আগুন আমাদের পাশের বাড়ীতে লেগেছে। সেই আগুনের ভয়বহতা এতটা ব্যাপক ছিল যে ঐ অঞ্চলের বসবাসকারী অনেক সাধারণ মানুষ বাড়ী ঘর ত্যাগ  করে।
পরদিন ২৭ মার্চ বহু মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করতে থাকে। এই ত্যাগে ছিল অনেক ক্ষোভ, অনেক ক্রোধ, অনেক বারুদ। কোথায় যাবে  ছিল না তার কোনো নিশানা। স্রোতের মতো রিক্সায় করে, হেঁটে সোয়ারিঘাট। সেখান থেকে নৌকায় বুড়িগঙ্গা পার হয়ে জিঞ্জিরা। সেই কাহিনি আরেকবার লিখবো। লিখতে হবে। কারণ এগুলো বলার মতো লোক এক সময় থাকবে না। এতো হত্যা, এতো বিভৎসতা, এতো কান্না, এতো আগুন তারপরও কী করে ঐ মার্চের শ্লোগান “জয় বাংলা”; “তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা,  যমুনা”, “জেলের তালা ভাংবো শেখ মুজিবকে আনবো “ বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর ” হয়ে যায় “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”  (যেমনটি পাকিস্তান জিন্দাবাদ) তা অনুসন্ধান করার অনুসন্ধিৎসু মনকে জাগিয়ে তুলতে হবে এ প্রজন্মের মধ্যে। দেশপ্রেম জাগ্রত হবে সেখান থেকেই, জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
জনপ্রিয় সংবাদ

মুন্সীগঞ্জ সদর ইউএনওর চরডুমুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন

জিন্দাবাহারের গলিতে ৭১-র মার্চের কয়েকটি ভয়াবহ দিন

আপডেট সময় ০৯:৪৬:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০২২
জবি প্রতিনিধি। 
মার্চ আমাদের ইতিহাসে এক অগ্নিঝরা মাস। আমাদের বয়সী যারা তখন ঢাকা শহরে অবস্থান করেছিলেন তাদের সকলেরই কোনো না কোনো স্মৃতি ভর করে আছে। ২৫শে মার্চের ভয়াবহতা যারা অবলোকন করেছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ  কী করে পাকিস্তানপন্থী রাজাকার আল বদর আল সামস-এর  সাথে হাত মেলালেন সেটি চিন্তা করলে জটিল এক  সমীকরণের মতো মনে হয়। ভাবি এ রকমই বোধ হয় আমাদের বাঙ্গালীদের চরিত্র। আমরা বোধ হয় এ রকম স্ববিরোধী।
নবম শ্রেণিতে পড়ি। রাজনীতির অনেক কিছুই তেমন গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে শিখিনি। তবে বর্বর পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিরা যে এবার একটি শক্ত প্রতিরোধ গড়ে  তুলবে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। প্রায়শই আমাদের জিন্দাবাহারের বাড়ীর ছাদে উঠে দেখতাম যে কোথায় বাংলাদেশের  পতাকা উড়ছে। আমাদের ছাদ থেকে আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি, আরমানিটোলা হাই স্কুলের ছাদ দেখা যেত। ঐ স্কুলগুলোতে মার্চের ৩ তারিখ থেকেই লাল সবুজের পতাকা উড়তো। লক্ষ্য করতাম সেগুলো আবার কেউ নামিয়ে ফেলে কি না। অনুপ্রাণিত হতাম, বিদ্রেহী হতাম। চিন্তা করলাম আমিও একটি পতাকা বানিয়ে ফেলি। একদিন সত্যি সত্যি, তারিখ মনে নেই, পাকিস্তানি পতাকার চাঁদ তারা গোল করে কাঁচি দিয়ে কেটে ফেললাম। আপাদের কাছ থেকে লাল কাপড় যোগাড় করলাম।
গোল করে কাটলাম। সুঁই সুতা যোগাড় করলাম। এবং সেলাই করে ফেললাম। মনে পড়ে প্রতিটি মুহূর্ত ছিল রোমাঞ্চকর। কাজটি করেছিলাম খুব গোপনে, নীরবে, নিভৃতে। একদিন সকাল বেলা ছাদের ফ্লাগ  স্টান্ডে ঠিকই উড়িয়ে দিলাম। বাতাসে পতাকা উড়ছিল, ভাবছিলাম আমিও আন্দোলনের একজন সৈনিক। রাস্তা থেকে এরকম পতাকা দেখে অনেকেই আমার বাবার নিকট বিষয়টি জানান । আমি তখন ছাদ থেকে নিচে নেমে আমার মায়ের ঘরে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার বাবা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে এলেন এবং আমাকে বকাঝকা করলেন। আমার বড় বোনেরাও আমাকে বেশ বকা দিলেন। বাবা বললেন ‘‘তুই করেছিস কি? ”এটা  আমার মনে পড়ে। তারপর  এই পতাকা আমাকে এক ঘণ্টার মধ্যেই নামিয়ে ফেলতে হয়েছিল। অনেকটা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজটি করেছিলাম। অনুতপ্ত হইনি মোটেও।
অপেক্ষায় ছিলাম কবে কখন আবার এই লাল সবুজের পতাকা উড়বে। সেই শুভক্ষণ এসেছিল ২৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তান দিবসে। আমার মনে পড়ে পুরনো ঢাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সেদিন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল সবুজ পতাকা উড়েছিল। সঙ্গে কালোপতাকাও উড়ানো হয়েছিল।সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। পতাকা না উড়ানোটাই ছিল অপরাধের সামিল, আবেগ অনুভূতি বিদ্রোহ সব ঐ পতাকায় মিশে গিয়েছিল, সঙ্গে ছিল কালো রং-এর শোকের পতাকা। ভুট্টো সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা চলছে। পাশাপাশি প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ চলছে। গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার সেই জ্ঞান তখন ছিল না। পঁচিশে মার্চের কালো রাতে বিকট শব্দে চারিদিক কেঁপে কেঁপে উঠছিলো। সকালে দেখলাম প্রতিবেশিরা ছাদে উঠে কি যেন বলাবলি করছে। ছাদে উঠে দেখলাম শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে আগুনের কুণ্ডলি ও ধোঁয়া। সেই সময় প্রতিরাতেই কারফিউ থাকতো।
২৬ মার্চ আব্বা জিন্দাবাহারের তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে কারফিউবিহীন সকাল বেলা কী  হয়েছে দেখার জন্য ইসলামপুর রোডে বের হলেন আমাকেও নিয়ে গেলেন। হেঁটে আমরা প্রথমে  শাঁখারিবাজার মোড়ে বাবুবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে প্রবেশ করলাম। আমাদের মতো অনেকে অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। আমি ফাঁড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি। শুনতে পেলাম বেশ কয়েকজন পুলিশ বাহিনীর সদস্যকে পাকবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। সেই দৃশ্য দেখার আর ইচ্ছে হয়নি। তারপর আব্বা শাঁখারিবাজারে প্রবেশ করলেন। সরু প্রবেশ দ্বার দিয়ে বিভিন্ন্ গৃহে ঢুকে সেদিন যে দৃশ্য দেখেছিলাম  তা আজও ভাবলে গা শিহরিত হয়ে ওঠে। চৌকির নীচে সারিসারি লাশ।
ছড়ানো ছিটানো, এমন কি ছোট শিশুরাও রেহাই পায় নি। বেয়নেট দিয়ে খোঁচানো মৃত শিশুকেও দেখেছিলাম। একরাশ আতংক, ভয়, ঘৃণা মনকে আচ্ছন্ন করেছিল। শাঁখারিবাজারের পুরো এলাকা আর ঘুরে দেখার সাহস করিনি। একা হেঁটে  বাসায় চলে এলাম। ২৬ মার্চ রাতটি ছিল আগুনের মহাউৎসব । একদিকে জল্লাদ ইয়াহিয়ার ভাষণ অন্যদিকে ইংলিশ রোডের কাঠের দোকানগুলোতে  অগ্নিকাণ্ড। পাকিস্তানি সৈন্যরা সুপরিকল্পিতভাবে এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এক ধরণের পাউডার ছিটিয়ে পুরো ইংলিশ রোডের দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। মনে  হচ্ছিল সেই আগুন আমাদের পাশের বাড়ীতে লেগেছে। সেই আগুনের ভয়বহতা এতটা ব্যাপক ছিল যে ঐ অঞ্চলের বসবাসকারী অনেক সাধারণ মানুষ বাড়ী ঘর ত্যাগ  করে।
পরদিন ২৭ মার্চ বহু মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকা ত্যাগ করতে থাকে। এই ত্যাগে ছিল অনেক ক্ষোভ, অনেক ক্রোধ, অনেক বারুদ। কোথায় যাবে  ছিল না তার কোনো নিশানা। স্রোতের মতো রিক্সায় করে, হেঁটে সোয়ারিঘাট। সেখান থেকে নৌকায় বুড়িগঙ্গা পার হয়ে জিঞ্জিরা। সেই কাহিনি আরেকবার লিখবো। লিখতে হবে। কারণ এগুলো বলার মতো লোক এক সময় থাকবে না। এতো হত্যা, এতো বিভৎসতা, এতো কান্না, এতো আগুন তারপরও কী করে ঐ মার্চের শ্লোগান “জয় বাংলা”; “তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা,  যমুনা”, “জেলের তালা ভাংবো শেখ মুজিবকে আনবো “ বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর ” হয়ে যায় “বাংলাদেশ জিন্দাবাদ”  (যেমনটি পাকিস্তান জিন্দাবাদ) তা অনুসন্ধান করার অনুসন্ধিৎসু মনকে জাগিয়ে তুলতে হবে এ প্রজন্মের মধ্যে। দেশপ্রেম জাগ্রত হবে সেখান থেকেই, জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।