বাংলাদেশ ০১:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
মির্জাগঞ্জে বৃষ্টি কামনায় ইস্তিস্কার নামাজ আদায় শনিবারের ছুটি ও আমাদের অবস্থান মির্জাগঞ্জে বিনাদোষে দুই নারীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হলেন যে নারী। নবীনগরে সড়ক ও খালের জায়গা দখলের চলছে মহোৎসব! চট্টগ্রামে সহ সারা দেশে সাংবাদিকের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ‘সিইউজে’ সিংগাইরে সাংবাদিকের চাঁদাবাজি,দুই জন আটক দিনাজপুরে সজনের ডাটার বাম্পার ফলন সাংবাদিক হামলার মামলায় সুদেব মাষ্টার জেল হাজতে প্রেরণ চট্টগ্রাম টেকপাড়া ও এয়াকুব নগরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে নগদ অর্থ ও শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ পিরোজপুরের চরখালী ফেরীতে মেট্রোপলিটন পরিবহনের ধাক্কায় ফেরী থেকে একাধিক মোটরসাইকেল নদীতে কটিয়াদীতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত সাত গ্রামের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এড. রেজাউল করিম বালিয়াডাঙ্গীতে খাপড়া ওয়ার্ড দিবসে শহীদদের স্মরণে সিপিবির লাল পতাকা মিছিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। স্কুলের জমি দখলের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন 

মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে মাধ্যমিক শিক্ষা ক্যাডার চালু করতে হবে

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
  • ১৭২৬ বার পড়া হয়েছে

 

 

 

মোঃ ওমর ফারুক

বাংলাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিশেষ করে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত একজন শিক্ষক যে পদে যোগদান করেন ওই পদেই তিনি অবসরে যান! উল্লেখ্য, ৩০ বছরের অধিককাল ধরে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত সহকারী শিক্ষকগণ, ২০২১ সালের ৩০ জুন তারিখের পূর্ব পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক হিসেবে হাজার হাজার শিক্ষক অবসরে গিয়েছেন, যা সত্যিই দুঃখজনক! শিক্ষকতা পেশায় এমন নজির পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই!

এদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আমলাগণ, উন্নয়ন সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ প্রায়ই শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে নানা কথা বলে থাকেন অথচ কি আশ্চর্য! শিক্ষার মেরুদন্ড যে শিক্ষক; তাঁদের জীবন মানের উন্নয়ন নিয়ে এদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গসহ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী সকলেই যেন নিরব! কিন্তু শিক্ষকগণের উন্নয়নে আপনাদের এই নিরবতা কেন? আপনারা কি তাদের কাছে শিক্ষা গ্ৰহণ ছাড়াই আজকের অবস্থানে উপনীত হয়েছেন?

তবে এতো হতাশার মাঝেও আশা জাগানিয়া মানুষ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! তিনি লাল গালিচায় তাঁর শিক্ষক ও জাতীয় অধ্যাপক মরহুম ড. আনিসুজ্জামান স্যারকে সযত্নে অগ্রভাগে রেখে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাঁর পাশে হেটে গোটা শিক্ষক জাতিকে সম্মানিত করেছেন। বিশ্বকে দেখিয়েছেন শিক্ষককে কিভাবে সম্মান জানাতে হয়! তিনি ( মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) ২০১২ সালের ১৫ মে একযোগে সরকারি মাধ্যমিকে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা দেন এবং ঐদিন তাৎক্ষণিকভাবে তা বাস্তবায়নও করেন। আবার চলমান মেয়াদে সরকার গঠন করে বিগত ২০২১ সালের ৩০ জুন তারিখে প্রথমবারের মতো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সাড়ে ৫ হাজার সহকারী শিক্ষককে সিনিয়র শিক্ষক পদে (প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা সম্পন্ন) পদোন্নতির গেজেট জারি হয়! যা শিক্ষক বান্ধব বর্তমান সরকারের শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সদিচ্ছার ই বহিঃপ্রকাশ বলে এই সেক্টরে কর্মরত শিক্ষক কর্মকর্তাগণ মনে করেন। তাঁর এ মহৎ কাজের জন্য সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকগণ তাঁর প্রতি চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবেন।

কিন্তু মোটের উপর ও সার্বিক বিচারে আমাদের দেশে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরটি সবচেয়ে অবহেলিত। মূলত: সামাজিক ও আর্থিকভাবে শিক্ষকদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে আগামী প্রজন্ম কাদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করবে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? বাংলাদেশে পেশা হিসেবে শিক্ষকতার মর্যাদাগত অবস্থা বর্তমানে কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার বাস্তব একটি চিত্র ফুটে উঠেছে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইয়ীদ স্যারের একটি বক্তব্যে! তিনি তাঁর স্মৃতিচারণমূলক একটি গ্রন্থে লিখেছেন, একদিন তিনি তাঁর ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করেন; “তোমরা কে কে শিক্ষক হতে চাও?” অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কোনো একজন ছাত্রও সেদিন হাত তোলেনি!

শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় ও সামাজিকভাবে মর্যাদার আসনে নিতে না পারার কারণে উচ্চ বা একই বেতন স্কেলে বা কখনো কখনো নিম্ন বেতন স্কেলের অন্য পেশায় মেধাবীরা চলে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত! এটা কি জাতির জন্য শুভলক্ষণ?

মেধাবীদের এই চলে যাওয়া বন্ধ করা না গেলে এবং মেধাবীদের এই পেশায় আকৃষ্ট করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিকগণ একদিন মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টির কারনে আজ আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি- এটা খুব ভালো কথা! কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার শিক্ষকগণ যদি স্মার্ট না হন তাহলে তাঁকে অনুসরণ/ অনুকরণ করা ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ তথা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকগণ কিভাবে স্মার্ট হবেন? আর তাঁরা স্মার্ট না হলে কিভাবে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে?!

বর্তমানে শিক্ষকতার এই মহান পেশাটির সামাজিকভাবে তেমন মর্যাদা নেই! নেই আর্থিক নিরাপত্তাও; ফলে এই পেশাটি বর্তমানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর অন্যতম একটি কারণ পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আর তা হচ্ছে, এই পেশায় পদোন্নতি না থাকা বা পদোন্নতিবিহীন অবসর অর্থাৎ এখানে নিয়মিত পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। আর আসলেও বেশি দিন টিকে থাকতে পারেন না, বেটার সুযোগ পেলেই অন্য পেশায় চলে যান!

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক আমলা মরহুম আকবর আলী খান একটি সেমিনারে বলেছিলেন, সার্ভিসের ক্ষেত্রে একজন চাকুরিজীবীর বড় একটি অধিকারের বিষয় হলো: পদোন্নতি। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্ধারিত দক্ষতা অর্জন সাপেক্ষে নিয়মিত পদোন্নতির সুযোগ না থাকলে একজন চাকরিজীবী তাঁর কর্মক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে কাজ করতে পারেন না! “আমরা শিক্ষকগণ ও একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্ধারিত যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন সাপেক্ষে নিয়মিত পদোন্নতির সুযোগ চাই”- আর সদাশয় সরকার এ সুযোগ তৈরি করতে পারলে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি আর্থিক নিরাপত্তা ও নিশ্চিত হবে। আর এই দু’টি বিষয়ের নিশ্চয়তা পেলে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে তার জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নিতে দ্বিধা করবেন বলে আমরা মনে করি না।

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক হলেন শিক্ষার মেরুদন্ড। প্রকৃতপক্ষে একটি দেশের সবচেয়ে মেধাবী সন্তানদেরই শিক্ষক হওয়ার কথা আর এটা হলে ওই মেধাবী শিক্ষকদের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকগণ ও বিশ্বমানের স্মার্ট নাগরিক হয়ে উঠতে পারবেন। অথচ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, এদেশের মেধাবীরা এখন আর শিক্ষকতায় আসতে চান না, তার কারণ উপরে উল্লেখ করেছি! আমাদের দেশে কিছুকাল ধরে একটি কথা প্রচলিত আছে আর তা হচ্ছে: ‘যার নেই কোনো গতি, সে করে মাস্টারি’! এই অবস্থা একটি দেশের জন্য কতটা ভয়ানক হতে পারে; রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকগণ তা একটু ভেবে দেখেছেন কি?

আমাদের দেশের জাতীয় শিক্ষাকে এখনো কাঙ্খিত মানে নিয়ে যেতে পারিনি! বিশেষ করে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা এখনও পশ্চাদপদই রয়ে গেছে; যার ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে। মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের ক্ষেত্রে কিছু দুর্বল ও পশ্চাদপদ দিক হচ্ছে:

ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে তারতম্য, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা’ পরিদর্শন ও মনিটরিং এককভাবে মাউশি’র অল্প সংখ্যক কর্মকর্তার পক্ষে সত্যিই অসম্ভব! অর্থাৎ এক্ষেত্রে দুর্বল পরিদর্শন ব্যবস্থা, একই সঙ্গে যথাযথ মনিটরিং এর অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এছাড়াও শিক্ষা প্রশাসনের ওপেন সিক্রেট দুর্নীতি, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং জাতীয় বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দের অপ্রতুলতাও এ সেক্টরটি পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ। বিসিএস সাধারণ শিক্ষার স্কুল এন্ড ইন্সপেকশন ব্রাঞ্চে পিএসসির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রি পদ নবম গ্রেড (ক্যাডার) পদে মাধ্যমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চায় না; ফলে তুলনামূলক কম মেধার শিক্ষক রিক্রুট করে আগামীদিনে উন্নত দেশের জন্য স্মার্ট শিক্ষার্থী তথা স্মার্ট বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তা ‘দিবা স্বপ্নই থেকে যাবে হয়তো!

শিক্ষা ক্ষেত্রের আধুনিকায়ন তথা উন্নয়নে বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের আধুনিকায়ন এবং বিশ্বমানের নাগরিক তৈরি করতে মাধ্যমিক স্তরকে যেভাবে সাজাতে হবে:

ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১: ৩০ এ নামিয়ে আনতে হবে, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় বাজেটে এর বরাদ্দ বাড়াতে হবে, মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে এবং ধরে রাখতে বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস অধিকতর সংশোধনপূর্বক সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের স্কুল এন্ড ইন্সপেকশন ব্রাঞ্চে কর্মরত সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের এন্ট্রিপদটি নবম গ্রেডে (ক্যাডার) উন্নীত করতে হবে এবং সকল স্তরের শিক্ষকদের জন্য একটি মানসম্মত স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করতে হবে, শিক্ষকদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে এবং নির্ধারিত দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন সাপেক্ষে চার স্তরীয় একটি একাডেমিক পদসোপান/পদোন্নতি সিঁড়ি নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষা প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত এবং জাতীয় সংসদে পাশকৃত জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে ভেঙে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর নামে দু’টি আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শক্তিশালী পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে (এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় গবেষণার ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা রয়েছে তা যেমন দূর হবে তেমনি উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হবে এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

লেখকঃ
মোঃ ওমর ফারুক, সহকারী শিক্ষক (বাংলা), সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা

মূখপাত্র
স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি।
ইমেইলঃ [email protected]

 

 

 

 

 

 

আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello
জনপ্রিয় সংবাদ

মির্জাগঞ্জে বৃষ্টি কামনায় ইস্তিস্কার নামাজ আদায়

মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে মাধ্যমিক শিক্ষা ক্যাডার চালু করতে হবে

আপডেট সময় ০১:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

 

 

 

মোঃ ওমর ফারুক

বাংলাদেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিশেষ করে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত একজন শিক্ষক যে পদে যোগদান করেন ওই পদেই তিনি অবসরে যান! উল্লেখ্য, ৩০ বছরের অধিককাল ধরে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে কর্মরত সহকারী শিক্ষকগণ, ২০২১ সালের ৩০ জুন তারিখের পূর্ব পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক হিসেবে হাজার হাজার শিক্ষক অবসরে গিয়েছেন, যা সত্যিই দুঃখজনক! শিক্ষকতা পেশায় এমন নজির পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে আমাদের জানা নেই!

এদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আমলাগণ, উন্নয়ন সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ প্রায়ই শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে নানা কথা বলে থাকেন অথচ কি আশ্চর্য! শিক্ষার মেরুদন্ড যে শিক্ষক; তাঁদের জীবন মানের উন্নয়ন নিয়ে এদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গসহ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী সকলেই যেন নিরব! কিন্তু শিক্ষকগণের উন্নয়নে আপনাদের এই নিরবতা কেন? আপনারা কি তাদের কাছে শিক্ষা গ্ৰহণ ছাড়াই আজকের অবস্থানে উপনীত হয়েছেন?

তবে এতো হতাশার মাঝেও আশা জাগানিয়া মানুষ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! তিনি লাল গালিচায় তাঁর শিক্ষক ও জাতীয় অধ্যাপক মরহুম ড. আনিসুজ্জামান স্যারকে সযত্নে অগ্রভাগে রেখে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাঁর পাশে হেটে গোটা শিক্ষক জাতিকে সম্মানিত করেছেন। বিশ্বকে দেখিয়েছেন শিক্ষককে কিভাবে সম্মান জানাতে হয়! তিনি ( মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) ২০১২ সালের ১৫ মে একযোগে সরকারি মাধ্যমিকে কর্মরত সহকারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষণা দেন এবং ঐদিন তাৎক্ষণিকভাবে তা বাস্তবায়নও করেন। আবার চলমান মেয়াদে সরকার গঠন করে বিগত ২০২১ সালের ৩০ জুন তারিখে প্রথমবারের মতো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সাড়ে ৫ হাজার সহকারী শিক্ষককে সিনিয়র শিক্ষক পদে (প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা সম্পন্ন) পদোন্নতির গেজেট জারি হয়! যা শিক্ষক বান্ধব বর্তমান সরকারের শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সদিচ্ছার ই বহিঃপ্রকাশ বলে এই সেক্টরে কর্মরত শিক্ষক কর্মকর্তাগণ মনে করেন। তাঁর এ মহৎ কাজের জন্য সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকগণ তাঁর প্রতি চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবেন।

কিন্তু মোটের উপর ও সার্বিক বিচারে আমাদের দেশে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরটি সবচেয়ে অবহেলিত। মূলত: সামাজিক ও আর্থিকভাবে শিক্ষকদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে আগামী প্রজন্ম কাদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করবে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? বাংলাদেশে পেশা হিসেবে শিক্ষকতার মর্যাদাগত অবস্থা বর্তমানে কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার বাস্তব একটি চিত্র ফুটে উঠেছে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইয়ীদ স্যারের একটি বক্তব্যে! তিনি তাঁর স্মৃতিচারণমূলক একটি গ্রন্থে লিখেছেন, একদিন তিনি তাঁর ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করেন; “তোমরা কে কে শিক্ষক হতে চাও?” অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কোনো একজন ছাত্রও সেদিন হাত তোলেনি!

শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় ও সামাজিকভাবে মর্যাদার আসনে নিতে না পারার কারণে উচ্চ বা একই বেতন স্কেলে বা কখনো কখনো নিম্ন বেতন স্কেলের অন্য পেশায় মেধাবীরা চলে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত! এটা কি জাতির জন্য শুভলক্ষণ?

মেধাবীদের এই চলে যাওয়া বন্ধ করা না গেলে এবং মেধাবীদের এই পেশায় আকৃষ্ট করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিকগণ একদিন মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টির কারনে আজ আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি- এটা খুব ভালো কথা! কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার শিক্ষকগণ যদি স্মার্ট না হন তাহলে তাঁকে অনুসরণ/ অনুকরণ করা ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ তথা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকগণ কিভাবে স্মার্ট হবেন? আর তাঁরা স্মার্ট না হলে কিভাবে বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে?!

বর্তমানে শিক্ষকতার এই মহান পেশাটির সামাজিকভাবে তেমন মর্যাদা নেই! নেই আর্থিক নিরাপত্তাও; ফলে এই পেশাটি বর্তমানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর অন্যতম একটি কারণ পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আর তা হচ্ছে, এই পেশায় পদোন্নতি না থাকা বা পদোন্নতিবিহীন অবসর অর্থাৎ এখানে নিয়মিত পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। আর আসলেও বেশি দিন টিকে থাকতে পারেন না, বেটার সুযোগ পেলেই অন্য পেশায় চলে যান!

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক আমলা মরহুম আকবর আলী খান একটি সেমিনারে বলেছিলেন, সার্ভিসের ক্ষেত্রে একজন চাকুরিজীবীর বড় একটি অধিকারের বিষয় হলো: পদোন্নতি। একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্ধারিত দক্ষতা অর্জন সাপেক্ষে নিয়মিত পদোন্নতির সুযোগ না থাকলে একজন চাকরিজীবী তাঁর কর্মক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে কাজ করতে পারেন না! “আমরা শিক্ষকগণ ও একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে নির্ধারিত যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জন সাপেক্ষে নিয়মিত পদোন্নতির সুযোগ চাই”- আর সদাশয় সরকার এ সুযোগ তৈরি করতে পারলে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি আর্থিক নিরাপত্তা ও নিশ্চিত হবে। আর এই দু’টি বিষয়ের নিশ্চয়তা পেলে একজন মেধাবী শিক্ষার্থী অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে তার জীবনের ব্রত হিসেবে বেছে নিতে দ্বিধা করবেন বলে আমরা মনে করি না।

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষক হলেন শিক্ষার মেরুদন্ড। প্রকৃতপক্ষে একটি দেশের সবচেয়ে মেধাবী সন্তানদেরই শিক্ষক হওয়ার কথা আর এটা হলে ওই মেধাবী শিক্ষকদের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকগণ ও বিশ্বমানের স্মার্ট নাগরিক হয়ে উঠতে পারবেন। অথচ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, এদেশের মেধাবীরা এখন আর শিক্ষকতায় আসতে চান না, তার কারণ উপরে উল্লেখ করেছি! আমাদের দেশে কিছুকাল ধরে একটি কথা প্রচলিত আছে আর তা হচ্ছে: ‘যার নেই কোনো গতি, সে করে মাস্টারি’! এই অবস্থা একটি দেশের জন্য কতটা ভয়ানক হতে পারে; রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকগণ তা একটু ভেবে দেখেছেন কি?

আমাদের দেশের জাতীয় শিক্ষাকে এখনো কাঙ্খিত মানে নিয়ে যেতে পারিনি! বিশেষ করে দেশের মাধ্যমিক শিক্ষা এখনও পশ্চাদপদই রয়ে গেছে; যার ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে। মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের ক্ষেত্রে কিছু দুর্বল ও পশ্চাদপদ দিক হচ্ছে:

ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে তারতম্য, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজারের কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা’ পরিদর্শন ও মনিটরিং এককভাবে মাউশি’র অল্প সংখ্যক কর্মকর্তার পক্ষে সত্যিই অসম্ভব! অর্থাৎ এক্ষেত্রে দুর্বল পরিদর্শন ব্যবস্থা, একই সঙ্গে যথাযথ মনিটরিং এর অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এছাড়াও শিক্ষা প্রশাসনের ওপেন সিক্রেট দুর্নীতি, শিক্ষা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং জাতীয় বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দের অপ্রতুলতাও এ সেক্টরটি পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ। বিসিএস সাধারণ শিক্ষার স্কুল এন্ড ইন্সপেকশন ব্রাঞ্চে পিএসসির মাধ্যমে সহকারী শিক্ষকের এন্ট্রি পদ নবম গ্রেড (ক্যাডার) পদে মাধ্যমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চায় না; ফলে তুলনামূলক কম মেধার শিক্ষক রিক্রুট করে আগামীদিনে উন্নত দেশের জন্য স্মার্ট শিক্ষার্থী তথা স্মার্ট বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তা ‘দিবা স্বপ্নই থেকে যাবে হয়তো!

শিক্ষা ক্ষেত্রের আধুনিকায়ন তথা উন্নয়নে বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের আধুনিকায়ন এবং বিশ্বমানের নাগরিক তৈরি করতে মাধ্যমিক স্তরকে যেভাবে সাজাতে হবে:

ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১: ৩০ এ নামিয়ে আনতে হবে, শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় বাজেটে এর বরাদ্দ বাড়াতে হবে, মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে এবং ধরে রাখতে বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুলস অধিকতর সংশোধনপূর্বক সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের স্কুল এন্ড ইন্সপেকশন ব্রাঞ্চে কর্মরত সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের এন্ট্রিপদটি নবম গ্রেডে (ক্যাডার) উন্নীত করতে হবে এবং সকল স্তরের শিক্ষকদের জন্য একটি মানসম্মত স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করতে হবে, শিক্ষকদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে এবং নির্ধারিত দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন সাপেক্ষে চার স্তরীয় একটি একাডেমিক পদসোপান/পদোন্নতি সিঁড়ি নিশ্চিত করতে হবে, শিক্ষা প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত এবং জাতীয় সংসদে পাশকৃত জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে ভেঙে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর নামে দু’টি আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শক্তিশালী পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে (এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় গবেষণার ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা রয়েছে তা যেমন দূর হবে তেমনি উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হবে এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

লেখকঃ
মোঃ ওমর ফারুক, সহকারী শিক্ষক (বাংলা), সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা

মূখপাত্র
স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি।
ইমেইলঃ [email protected]