বাংলাদেশ ০৩:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
মির্জাগঞ্জে বৃষ্টি কামনায় ইস্তিস্কার নামাজ আদায় শনিবারের ছুটি ও আমাদের অবস্থান মির্জাগঞ্জে বিনাদোষে দুই নারীকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হলেন যে নারী। নবীনগরে সড়ক ও খালের জায়গা দখলের চলছে মহোৎসব! চট্টগ্রামে সহ সারা দেশে সাংবাদিকের উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ‘সিইউজে’ সিংগাইরে সাংবাদিকের চাঁদাবাজি,দুই জন আটক দিনাজপুরে সজনের ডাটার বাম্পার ফলন সাংবাদিক হামলার মামলায় সুদেব মাষ্টার জেল হাজতে প্রেরণ চট্টগ্রাম টেকপাড়া ও এয়াকুব নগরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে নগদ অর্থ ও শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ পিরোজপুরের চরখালী ফেরীতে মেট্রোপলিটন পরিবহনের ধাক্কায় ফেরী থেকে একাধিক মোটরসাইকেল নদীতে কটিয়াদীতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত সাত গ্রামের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এড. রেজাউল করিম বালিয়াডাঙ্গীতে খাপড়া ওয়ার্ড দিবসে শহীদদের স্মরণে সিপিবির লাল পতাকা মিছিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। স্কুলের জমি দখলের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন 

শিক্ষা বিভাগকে নন-ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা সময়ের অনিবার্য দাবি

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৪৮:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
  • ১৮২৬ বার পড়া হয়েছে

 

 

 

 

 

মোঃ ওমর ফারুক

বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস, প্রথম খন্ডের বিধি বিধি-৫(৫৮) অনুযায়ী অবকাশ বিভাগ বলতে এরূপ বিভাগ বা বিভাগের অংশবিশেষকে বোঝায় যেখানে নিয়মিত অবকাশ অনুমোদিত এবং কর্মরত সরকারি কর্মচারীগণ অবকাশকালীন সময়ে কর্মে অনুপস্থিত থাকতে অনুমতিপ্রাপ্ত। অথচ বেশ কিছু কাল ধরে এই বিভাগের ক্ষেত্রে কি হচ্ছে? গত গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখা হলো, তখন বলা হয়েছিল শীতকালীন ছুটির সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটির সমন্বয় করা হবে কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন! বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন থাকায় শীতকালীন অবকাশ ও আর ভোগ করার সুযোগ হয়নি এই বিভাগের গণকর্মচারীদের!

আবার সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশে পবিত্র মাহে রমজানে ও পনের দিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলবে মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়! যদিও জনস্বার্থে জনৈক আইনজীবী রমজানে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং তার প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিলে নির্বাহী সিদ্ধান্তের দোহাই দিয়ে এবং সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে- মর্মে সর্বোচ্চ আদালতকে অবহিত করার মধ্য দিয়ে আপিল বিভাগের মাধ্যমে মাহে রমজানের ছুটি বাতিল করে ১৫ রমজান পর্যন্ত বিদ্যালয় এর কার্যক্রম চলবে মর্মে আপিল বিভাগ থেকে রায় দেওয়ার মধ্য দিয়ে মন্ত্রনালয়ের ঐ আদেশ কার্যকর করা হলো! অর্থাৎ গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন ছুটির পাশাপাশি মাহে রমজানের অর্ধেক ছুটি ও বাতিল করা হলো!

অবশ্য জাতীয় স্বার্থে এবং জাতির বৃহত্তর কল্যাণে শিক্ষকগণ সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং যথাযথভাবেই তাঁরা তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

তবে শিক্ষকদের আপত্তি ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট নিয়ে! উল্লেখ্য, ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট বাদে অন্য ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা/ কর্মচারী প্রতি ১১ দিনে ১ দিন পূর্ণ গড় বেতনের ছুটি পান কিন্তু ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে কর্মরত গণকর্মচারীগণ ১২ দিনে ১ দিন ছুটি পান; তবে তা আবার অর্ধ গড় বেতনে!

এখানে একটি শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলে শিক্ষকগণ দাবি করেছেন! অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে কর্মরত একজন এমপ্লয়ি ২৪ দিনে একদিন পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি পান!

এদিকে, নন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে কর্মরত একজন গণকর্মচারী বছরে ছুটি ভোগ করেন (শুক্র, শনি × ৫২ সপ্তাহ = ১০৪ + সরকারি সাধারণ ছুটি ২৪) ১২৮ দিন। অন্যদিকে, ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ছুটি শুক্র ও শনিবারের সাধারণ ছুটি বাদে অতিরিক্ত ৭৬ দিন (যার মধ্যে সরকারি ছুটি রয়েছে ২৪ দিন), উল্লেখ্য সরকারি ছুটির এই ২৪ দিনের মধ্যে আবার জাতীয় দিবস সমূহে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জাতীয় দিবসে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে এবং বিদ্যালয়ের বাইরে প্রশাসনিক আহবানে সাড়া দিয়ে নানা রকম অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং অনুষ্ঠান উদযাপন করতে হয়!

এর বাইরে (গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন অবকাশ এর ছুটি বাতিল করার এবং সর্বশেষ মাহে রমজানের ছুটি অর্ধেক বাতিল হওয়ার কারনে) মাহে রমজানের ১৫ দিন এবং দুর্গাপূজার ৭ দিন ব্যতীত এই বিভাগে কর্মরত গণকর্মচারী হিসেবে শিক্ষকগণ উল্লেখযোগ্য কোনো ছুটিই এবার ভোগ করতে পারেননি! মাঝখানে ভ্যাকেশন নামের এই তকমাটা সাথে জুড়ে থাকার কারণে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়ছেন!

উপরের আলোচিত এই বিষয়গুলো হয়তো অভিভাবক এবং দেশের সাধারণ মানুষ জানেন না বা তাদের জানার বিষয়ও নয়! কিন্তু এই জাতীয় সাধারণ মানুষদের প্রায়ই বলতে শোনা যায় শিক্ষকগণ বসে বসে বেতন খান; যা শুনতে একজন শিক্ষক হিসেবে আমারও ভালো লাগেনা! কারণ আমরা শিক্ষকগণ কখনোই বসে বসে রাষ্ট্রের বেতন ভোগ করি না কারণ আমরা যখন ছুটিতে থাকি (ছুটির পরিমাণ ইতোমধ্যে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে!) তখনো আমরা বিভিন্ন প্রকার দাপ্তরিক দায়িত্বের পাশাপাশি শিক্ষা বোর্ডের এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ নানা ধরনের কো-কারিকুলার একটিভিটিজের সাথে সাময়িক পরীক্ষা/ সান্মাসিক/বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ কাজে তটস্থ থাকি! তটস্থ বললাম এজন্য যে খাতা মূল্যায়নের জন্য নূন্যতম যেটুকু সময় প্রয়োজন বিদ্যালয়ের অন্যান্য দায়িত্বের পাশাপাশি ওই পরিমাণ খাতা দেখার জন্য বরাদ্দকৃত সময় খুবই অল্প!

উল্লেখ্য, শিক্ষার পাশাপাশি বিচার বিভাগও ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট বলে আমরা জানি কিন্তু সেখানে কি নির্বাহী আদেশে বা কোর্টের মাধ্যমে তাদের ছুটি কমিয়ে বা কোনো গেজেটেড ছুটি বাতিল করা হয়? তারাও তাঁদের ভ্যাকেশনের সময় টুকুকে কাজে লাগিয়ে ঠান্ডা মাথায় জাজমেন্ট বা রায় লিখে থাকেন। জাজমেন্ট বা রায় লেখার জন্য যেমন ভ্যাকেশনকে কাজে লাগিয়ে থাকেন এবং বৈজ্ঞানিক কারণেই এই অবকাশের প্রয়োজন ও রয়েছে। একইভাবে দেশের ভবিষ্যৎ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্যেও স্থির মস্তিষ্কে মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি! আর সেজন্যই মূলত বিচার বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগকে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করা হয়েছিল!

কিন্তু বিধি বাম! দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন কর্তা ব্যক্তিদেরও অবৈজ্ঞানিক ধারণা রয়েছে আর তা হলো শিক্ষকদের আবার ছুটি লাগে নাকি?! আর তাদের এতো টাকা-পয়সার ই বা দরকার কিসে?! এমন বদ্ধমূল অবৈজ্ঞানিক ধারণা থেকে যতদিন না রাষ্ট্রের পরিচালকগণ বেরিয়ে আসবেন ততদিন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ার কারিগর শিক্ষকগণ যেমন তাঁদের মর্যাদার আসনে পৌঁছাতে পারবেন না তেমনি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনও হয়তো সম্ভব হয়ে উঠবে না বলে আমরা আশংকা করছি!

বর্তমান বাস্তবতায় সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের এই বিভাগে কর্মরত শিক্ষকগণ সোচ্চার হয়েছেন এজন্য যে, তাঁরা আর ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট নামের তকমাটা রাখতে চান না!

 

তাই, কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষকদের দাবি: দয়া করে এবার এই ভ্যাকেশনের তকমাটা উঠিয়ে দিন! কারণ আমরা শিক্ষকগণ উল্লেখ করার মতো কোনো ছুটিই ভোগ করতে পারছি না অথচ ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট নামের তকমাটা ওন করায় পেনশনার হিসেবে অন্য ডিপার্টমেন্ট থেকে বরাবরই আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছি! এটা সুস্পষ্ট বৈষম্য! যা থাকা উচিত নয়!

অন্যদিকে এই ভ্যাকেশান ডিপার্টমেন্টের তকমা থাকায় শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নেওয়ার ক্ষেত্রেও অবকাশ দেখে (প্রতি তিন বছর অন্তর) ভাতা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয় কিন্তু অন্য ডিপার্টমেন্টে এই অবকাশের প্রয়োজন হয় না! তারা তাদের ডিউ টাইমেই শ্রান্তি বিনোদন ভাতা উত্তোলনের সুযোগ পান!

শিক্ষকদের বক্তব্য: তাঁরা সেবা দিচ্ছেন, দিতেও প্রস্তুত রয়েছেন; তাই তাঁরা আর অতিরিক্ত কোনো ছুটি চান না! গণকর্মচারী হিসেবে অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট এর মতো সমান সুযোগ লাভ করে যথাযথ সম্মান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা বাঁচতে চান!

বাংলাদেশের শিক্ষকদের দাবি – প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও নন-ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হোক।

লেখক:
সহকারী শিক্ষক (বাংলা)
সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা

সদস্য,
কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি(বাসমাশিস)
ই-মেইল: [email protected]

 

 

 

 

আপলোডকারীর তথ্য

Banglar Alo News

hello
জনপ্রিয় সংবাদ

মির্জাগঞ্জে বৃষ্টি কামনায় ইস্তিস্কার নামাজ আদায়

শিক্ষা বিভাগকে নন-ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা সময়ের অনিবার্য দাবি

আপডেট সময় ১২:৪৮:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪

 

 

 

 

 

মোঃ ওমর ফারুক

বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস, প্রথম খন্ডের বিধি বিধি-৫(৫৮) অনুযায়ী অবকাশ বিভাগ বলতে এরূপ বিভাগ বা বিভাগের অংশবিশেষকে বোঝায় যেখানে নিয়মিত অবকাশ অনুমোদিত এবং কর্মরত সরকারি কর্মচারীগণ অবকাশকালীন সময়ে কর্মে অনুপস্থিত থাকতে অনুমতিপ্রাপ্ত। অথচ বেশ কিছু কাল ধরে এই বিভাগের ক্ষেত্রে কি হচ্ছে? গত গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল করে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু রাখা হলো, তখন বলা হয়েছিল শীতকালীন ছুটির সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটির সমন্বয় করা হবে কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন! বিভিন্ন কারণে বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন থাকায় শীতকালীন অবকাশ ও আর ভোগ করার সুযোগ হয়নি এই বিভাগের গণকর্মচারীদের!

আবার সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী আদেশে পবিত্র মাহে রমজানে ও পনের দিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলবে মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়! যদিও জনস্বার্থে জনৈক আইনজীবী রমজানে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং তার প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিলে নির্বাহী সিদ্ধান্তের দোহাই দিয়ে এবং সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে- মর্মে সর্বোচ্চ আদালতকে অবহিত করার মধ্য দিয়ে আপিল বিভাগের মাধ্যমে মাহে রমজানের ছুটি বাতিল করে ১৫ রমজান পর্যন্ত বিদ্যালয় এর কার্যক্রম চলবে মর্মে আপিল বিভাগ থেকে রায় দেওয়ার মধ্য দিয়ে মন্ত্রনালয়ের ঐ আদেশ কার্যকর করা হলো! অর্থাৎ গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন ছুটির পাশাপাশি মাহে রমজানের অর্ধেক ছুটি ও বাতিল করা হলো!

অবশ্য জাতীয় স্বার্থে এবং জাতির বৃহত্তর কল্যাণে শিক্ষকগণ সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং যথাযথভাবেই তাঁরা তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

তবে শিক্ষকদের আপত্তি ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট নিয়ে! উল্লেখ্য, ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট বাদে অন্য ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা/ কর্মচারী প্রতি ১১ দিনে ১ দিন পূর্ণ গড় বেতনের ছুটি পান কিন্তু ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে কর্মরত গণকর্মচারীগণ ১২ দিনে ১ দিন ছুটি পান; তবে তা আবার অর্ধ গড় বেতনে!

এখানে একটি শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে বলে শিক্ষকগণ দাবি করেছেন! অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে কর্মরত একজন এমপ্লয়ি ২৪ দিনে একদিন পূর্ণ গড় বেতনে ছুটি পান!

এদিকে, নন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে কর্মরত একজন গণকর্মচারী বছরে ছুটি ভোগ করেন (শুক্র, শনি × ৫২ সপ্তাহ = ১০৪ + সরকারি সাধারণ ছুটি ২৪) ১২৮ দিন। অন্যদিকে, ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট ছুটি শুক্র ও শনিবারের সাধারণ ছুটি বাদে অতিরিক্ত ৭৬ দিন (যার মধ্যে সরকারি ছুটি রয়েছে ২৪ দিন), উল্লেখ্য সরকারি ছুটির এই ২৪ দিনের মধ্যে আবার জাতীয় দিবস সমূহে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জাতীয় দিবসে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে এবং বিদ্যালয়ের বাইরে প্রশাসনিক আহবানে সাড়া দিয়ে নানা রকম অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং অনুষ্ঠান উদযাপন করতে হয়!

এর বাইরে (গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন অবকাশ এর ছুটি বাতিল করার এবং সর্বশেষ মাহে রমজানের ছুটি অর্ধেক বাতিল হওয়ার কারনে) মাহে রমজানের ১৫ দিন এবং দুর্গাপূজার ৭ দিন ব্যতীত এই বিভাগে কর্মরত গণকর্মচারী হিসেবে শিক্ষকগণ উল্লেখযোগ্য কোনো ছুটিই এবার ভোগ করতে পারেননি! মাঝখানে ভ্যাকেশন নামের এই তকমাটা সাথে জুড়ে থাকার কারণে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মধ্যে পড়ছেন!

উপরের আলোচিত এই বিষয়গুলো হয়তো অভিভাবক এবং দেশের সাধারণ মানুষ জানেন না বা তাদের জানার বিষয়ও নয়! কিন্তু এই জাতীয় সাধারণ মানুষদের প্রায়ই বলতে শোনা যায় শিক্ষকগণ বসে বসে বেতন খান; যা শুনতে একজন শিক্ষক হিসেবে আমারও ভালো লাগেনা! কারণ আমরা শিক্ষকগণ কখনোই বসে বসে রাষ্ট্রের বেতন ভোগ করি না কারণ আমরা যখন ছুটিতে থাকি (ছুটির পরিমাণ ইতোমধ্যে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে!) তখনো আমরা বিভিন্ন প্রকার দাপ্তরিক দায়িত্বের পাশাপাশি শিক্ষা বোর্ডের এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ নানা ধরনের কো-কারিকুলার একটিভিটিজের সাথে সাময়িক পরীক্ষা/ সান্মাসিক/বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ কাজে তটস্থ থাকি! তটস্থ বললাম এজন্য যে খাতা মূল্যায়নের জন্য নূন্যতম যেটুকু সময় প্রয়োজন বিদ্যালয়ের অন্যান্য দায়িত্বের পাশাপাশি ওই পরিমাণ খাতা দেখার জন্য বরাদ্দকৃত সময় খুবই অল্প!

উল্লেখ্য, শিক্ষার পাশাপাশি বিচার বিভাগও ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট বলে আমরা জানি কিন্তু সেখানে কি নির্বাহী আদেশে বা কোর্টের মাধ্যমে তাদের ছুটি কমিয়ে বা কোনো গেজেটেড ছুটি বাতিল করা হয়? তারাও তাঁদের ভ্যাকেশনের সময় টুকুকে কাজে লাগিয়ে ঠান্ডা মাথায় জাজমেন্ট বা রায় লিখে থাকেন। জাজমেন্ট বা রায় লেখার জন্য যেমন ভ্যাকেশনকে কাজে লাগিয়ে থাকেন এবং বৈজ্ঞানিক কারণেই এই অবকাশের প্রয়োজন ও রয়েছে। একইভাবে দেশের ভবিষ্যৎ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের জন্যেও স্থির মস্তিষ্কে মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি! আর সেজন্যই মূলত বিচার বিভাগ ও শিক্ষা বিভাগকে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করা হয়েছিল!

কিন্তু বিধি বাম! দেশের সাধারণ মানুষের ন্যায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন কর্তা ব্যক্তিদেরও অবৈজ্ঞানিক ধারণা রয়েছে আর তা হলো শিক্ষকদের আবার ছুটি লাগে নাকি?! আর তাদের এতো টাকা-পয়সার ই বা দরকার কিসে?! এমন বদ্ধমূল অবৈজ্ঞানিক ধারণা থেকে যতদিন না রাষ্ট্রের পরিচালকগণ বেরিয়ে আসবেন ততদিন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ার কারিগর শিক্ষকগণ যেমন তাঁদের মর্যাদার আসনে পৌঁছাতে পারবেন না তেমনি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনও হয়তো সম্ভব হয়ে উঠবে না বলে আমরা আশংকা করছি!

বর্তমান বাস্তবতায় সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের এই বিভাগে কর্মরত শিক্ষকগণ সোচ্চার হয়েছেন এজন্য যে, তাঁরা আর ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট নামের তকমাটা রাখতে চান না!

 

তাই, কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষকদের দাবি: দয়া করে এবার এই ভ্যাকেশনের তকমাটা উঠিয়ে দিন! কারণ আমরা শিক্ষকগণ উল্লেখ করার মতো কোনো ছুটিই ভোগ করতে পারছি না অথচ ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট নামের তকমাটা ওন করায় পেনশনার হিসেবে অন্য ডিপার্টমেন্ট থেকে বরাবরই আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছি! এটা সুস্পষ্ট বৈষম্য! যা থাকা উচিত নয়!

অন্যদিকে এই ভ্যাকেশান ডিপার্টমেন্টের তকমা থাকায় শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নেওয়ার ক্ষেত্রেও অবকাশ দেখে (প্রতি তিন বছর অন্তর) ভাতা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয় কিন্তু অন্য ডিপার্টমেন্টে এই অবকাশের প্রয়োজন হয় না! তারা তাদের ডিউ টাইমেই শ্রান্তি বিনোদন ভাতা উত্তোলনের সুযোগ পান!

শিক্ষকদের বক্তব্য: তাঁরা সেবা দিচ্ছেন, দিতেও প্রস্তুত রয়েছেন; তাই তাঁরা আর অতিরিক্ত কোনো ছুটি চান না! গণকর্মচারী হিসেবে অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট এর মতো সমান সুযোগ লাভ করে যথাযথ সম্মান ও আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা বাঁচতে চান!

বাংলাদেশের শিক্ষকদের দাবি – প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও নন-ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হোক।

লেখক:
সহকারী শিক্ষক (বাংলা)
সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা

সদস্য,
কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি(বাসমাশিস)
ই-মেইল: [email protected]