রোমান আকন্দ, জবি প্রতিনিধি:
নির্মাণের এক দশকেই বড় ধরণের অগ্নি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন একাডেমিক ভবন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নির্মাণ ত্রুটির কারণে যে কোন অগ্নিকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে অগ্নিকাণ্ডে শিশু ও নারীসহ ৪৬ জন মানুষ প্রাণ হারান। এই ঘটনার পরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি সকলের সামনে আসে। এর আগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকায় নিমতলি অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয় ১২৪ জন মানুষ। চকবাজার অগ্নিকাণ্ডেও অনেকে প্রাণ হারান। এতে পুরান ঢাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ তলা বিশিষ্ট ভবনটিতে ১৮টি বিভাগ রয়েছে। এছাড়াও প্রকৌশল দপ্তর, কেন্দ্রীয় মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, পরিবহন পুল, ডিন অফিস, আই সি টি সেল, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরসহ আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর রয়েছে। ভবনটিতে নিয়মিত প্রায় ১০ হাজার মানুষের চলাচল। ভবনটিতে সীমিত সংখ্যক ফায়ার এক্সটিংগুইশারের ব্যবস্থা রয়েছে। জরুরি বহির্গমনের ব্যবস্থা থাকলেও বিভিন্ন তলায় কলাপসিবল গেট দ্বারা সিঁড়িগুলো আটকানো থাকায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ভবনটিতে অবস্থান করা শিক্ষক – শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে ভবনটিতে বিভিন্ন তলায় গ্যাস লাইন ও রান্নাবান্নার ব্যবস্থা রয়েছে। একাউন্টিং বিভাগ ও শিক্ষক লাউঞ্জে নিয়মিতই গ্যাস ব্যবহারে রান্নাবান্না করা হচ্ছে। সেখানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকলেও যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও কাগজে কলমে যেন তা আটকে আছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাজনিত কারনে সকল ভবন, ক্লাসরুম, অফিস কক্ষ, বারান্দা ও সিঁড়িসমূহের যে সকল স্থানে কলাপসিবল গেইট রয়েছে সে সকল স্থানের কলাপসিবল গেইট অফিস, ক্লাস ও পরীক্ষা চলাকালীন সময় পর্যন্ত খোলা রাখার অনুরোধ করা হলো। এছাড়া যে সকল ক্লাসরুম, ল্যাব ও অফিসকক্ষে এসি রয়েছে সে সকল কক্ষে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রাখতে হবে। এই অফিস আদেশ বা নির্দেশনা মানছে না কোন বিভাগ কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আজিজিল হাকিম জানান, বিবিএ ভবনের দুই পাশের সিঁড়িসমূহের গেইট সব সময় বন্ধ থাকে। যেকোনো দুর্ঘটনায় জরুরী বহির্গমনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এই গেইটগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখার দাবি জানায়।
লোক প্রশাসন বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী শিহাব শেখ বলেন, প্রতিদিন এই ভবনে প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থীর চলাচল করে। দেখা যায় যে ভাঙা চেয়ার টেবিল দিয়ে সিঁড়িগুলো বন্ধ করে রেখেছে। অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবেলায় জরুরী বহির্গমনের জন্য গেইট গুলো খোলা এবং
চলাচল উপযোগী রাখা আবশ্যক।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, সিঁড়িগুলোর গেইট খোলা রাখার বিষয়ে গত ৩ মার্চ বিভাগগুলোকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা না মানলে পুনরায় নির্দেশনা দেওয়া হবে।