মোঃ শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
চারিদিকে শুধু ধূ ধূ বালির প্রান্তর। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা নদী। শুষ্ক মৌসুমে যমুনার বুকে জেগে উঠা ওই বিস্তীর্ণ চরে এখন সবুজের সমারোহ। এক সময়ের অনাবাদি চরে এখন বিভিন্ন মৌসুমী ফসল চাষ করছেন কৃষকরা। এটি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী গোবিন্দাসী, গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার দৃশ্যমান চিত্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, তপ্ত রোদের মধ্যেও কৃষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কেউ ক্ষেতে বীজ রোপন করছেন কেউ আবার আগাছা পরিস্কার করছেন। কেউ কেউ পানি দিচ্ছেন কিংবা ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নতুন ফসল ঘরে তোলার নেশায় কৃষকের যেন দম ফেলার সময় নেই। তাঁদের চোখে, মুখে কেবল তৃপ্তির হাসি। তাদের নিরলস পরিশ্রমে চাষ হচ্ছে নানা রকমের ফসল। এর মধ্যে বিভিন্ন জাতের আলু, সরিষা, খেসারি, মশুর কালাই, বাদাম, গম, ভূট্টা ও কালোজিরা উল্লেখযোগ্য। একই জমিতে কৃষকেরা নানা জাতের আগাম সবজি চাষ করে থাকেন। এতে করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ভূট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় দুই হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে দুই হাজার ১৫২ হেক্টর জমিতে। ভূট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০.৪৪৪ মেট্রিক টন। ভূট্টার দাম আশানুরূপ, ফলনও বেশি হয়। এ কারণে অন্য কৃষকেরা ভূট্টা চাষের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। ভূট্টা চাষে খরচও কম হয়। ২ থেকে ৩ বার সেঁচ দিলেই হয়। ভূট্টা আহরণের পর বাকি অংশ পশু খাদ্য ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য বেশি আগ্রহ করে ভূট্টা চাষ করেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর যাবত উপজেলার চরাঞ্চলে ভূট্টা চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অল্প খরচে বেশি ফসল পাওয়ায় ভূট্টা চরাঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। তবে ভূট্টা মাড়াইয়ের আধুনিক পদ্ধতি না জানায় লাভের অংশ অনেকটা কমে যায়। এছাড়াও ভুট্টা চাষের পাশাপাশি একই জমিতে চাষ হচ্ছে লালশাক, পালংশাক, ধনেপাতা, পিয়াজ, রসুন ইত্যাদি। এতে কৃষকের বাড়তি আয় হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত ফসল জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
চন্ডিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ। তিনি ভূট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে থাকেন। সফল চাষী হিসেবে তিনি জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ কৃষকের সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি বলেন, আমি এবার ১৬ বিঘা জমিতে ভূট্টা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ৩০-৩৫ মন করে ভূট্টা উৎপাদন হয়। প্রতি মণ ভূট্টার মৌসুম বাজার দর ৮’শ থেকে ৯’শ টাকা। এ হিসেবে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ১৮-২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ভুট্টার পাশাপাশি অন্যান্য ফসলে আসে ৮-১০ হাজার টাকা। সব মিলিযে প্রতি বিঘায় লাভ থাকে ২৫-৩০ হাজার টাকা।
গাবসারা ইউনিয়নের রেহাই গাবসারা গ্রামের ভূট্টা চাষী আলম মন্ডল জানান, এবার ভূট্টার ফলন খুব ভাল হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ থেকে যে প্রণোদনা দেওয়া হয় তা সঠিক সময়ে পাইনা। তাই কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া উন্নত জাতের বীজ আমরা বপন করতে পারি না। এ কারণে ফলন কিছুটা কম হয়ে থাকে। তিনি সঠিক সময়ে সার, বীজ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহের দাবি জানান।
অর্জুনা ইউনিয়নের বাসুদেবকোল গ্রামের কৃষক চান মিয়া জানান, শুষ্ক মৌসুমে চরাঞ্চলে ভূট্টার পাশাপাশি নানা ধরনের সবজি চাষ করা হয়। সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় এবার অনেক সবজি চাষ করেছি। ভূট্টার ফলনও ভাল হয়েছে। কৃষি বিভাগ চরাঞ্চলের কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং আধুনিক মাড়াই পদ্ধতি দিয়ে সহযোগিতা করলে ভূট্টা চাষে আরো বিপ্লব ঘটবে।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় কৃষি সেবা প্রদান ব্যহত হয়। যে সকল জমি বছরে একবার চাষ হয় সে সকল জমিগুলোকে দু’ফসলি করার পরামর্শ দেওয়া হবে। সঠিক সময়ে প্রণোদনার সার ও বীজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। নিরাপদ ফসল উৎপাদনে সচেতনতায় কীটনাশক মুক্ত শাক-সবজি চাষে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। এছাড়াও প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।