মাহফুজ হাসান, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের পঞ্চাশ বছর বয়সী দৈনিক শ্রমিক শওকত আলী দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুময় যন্ত্রণায় ঘরে থেকে কাতরাচ্ছেন।বর্তমানে তার পায়ের মাংসে পচন ধরে পোকা হয়ে গেছে, টাকার অভাবে না পারছেন নিয়মিত খেতে,না পারছেন চিকিৎসা চালাতে।
শনিবার (১ এপ্রিল) ) সরেজমিনে দেখা যায়, চৌকি থেকে পা ঝুলিয়ে বসে বসে কাঁদছেন আর অসুস্থতার অস্থির যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। শওকতের পায়ের পচনের মাংসে পোকার বসবাস দূর্গন্ধও বের হচ্ছে। তার স্ত্রী এবং ভাতিজা ও ভাতিজা বধুদের ভাষ্য অনুযায়ী এভাবেই নাকি রাত-দিন পা ঝুলিয়ে রেখে চিৎকার করেন, ৩/৪-মাস ধরে ঘুম নেই, বিছানায় না শুয়ে এভাবেই বসে থাকেন। তার সামনে আবার বাঁশের খুটি গেড়ে আড় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, না হয় বসে থাকতে থাকতে ভারসাম্য রাখতে না পেরে চৌকি থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অল্প খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতেছেন স্ত্রী ও ছোট ছোট দুটি সন্তান নিয়ে।
ঘরে খাবার নেই, চিকিৎসার টাকা নেই, থাকবেই বা কেমন করে দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষ শওকত সংসারের একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি তিনিই ছিলেন। সয়সম্বল কিছু নেই, তার বাবা আব্দুল এর রেখে যাওয়া এক শতাংশ মাটিতেই ছোট একটি ঘরে থাকেন।
শওকতের স্ত্রী নাছিমা বেগমের তত্বমতে, গত ৩/৪ বছর থেকেই শওকত অসুস্থ, এর আগে তিনি পরের জমিতে দৈনিক শ্রমিকের কাজ করতেন মোটামুটি বেশ ভালো আনন্দেই চলতো তার সংসার কিন্তু হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়েন, যেহেতু দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ সেহেতু সঞ্চয় বলতে কিছু নেই, যাইহোক স্থানীয় যুবকদের সহযোগিতায় টাকা উঠিয়ে ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়, আলসার ধরা পড়ে। স্থানীয়দের মারফত চিকিৎসা ঔষধ কোনোমতে ব্যবস্তা হয় কিন্তু কাজে যাওয়ার মতো শারিরীক সক্ষমতা হয়নি, আরও জানা যায়- সংসারের এমন কঠিনতম দূরাবস্থার কথা তৎকালীন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন এর কানে যায়, স্থানীয় যুবকদের মাধ্যমে।
চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন খুঁজ খবর নিয়ে পরিবারটির খাবার কষ্ট লাঘব করতে শওকতের স্ত্রী নাছিমার নামে একটি দুস্থ মাতা (বিনামূল্যে মাসে ৩০ কেজি চালের কার্ড) ও শওকতের নামে একটি ফেয়ার প্রাইজ কার্ড (১০ টাকা কেজি মূল্যে ৩০ কেজি চাল) কিন্তু কার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বর্তমানে কোন কার্ডেই তাদের নামে নেই। অথচ আগের তুলনায় খুব বেশি নাজেহাল পরিবারটি। হঠাৎ পায়ের একটি আঙ্গুলের মাথা ফুটা হয়ে যায়, যন্ত্রণা করতে থাকে কিশোরগঞ্জ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে চেক-আপ করলে জানতে পারে আঙুলে পচন ধরেছে এবং পায়ের একটি আঙুলের অগ্রভাগ কেটে ফেলে দেয় তাতে কোন লাভ হয়নি। কিছুদিন পরে আবার ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার জানায় হাটু পর্যন্ত কেটে ফেললেও লাভ নেই রক্তের সাথে বাস করতেছে ক্যান্সার সেল। ঢাকা নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করলে হয়তো এহেন দুরারোগ্য থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
কিন্তু হায়! নিয়তির কি নির্মম পরিহাস চিকিৎসা চালানো তো দূরের কথা মুখেই খাবার জোটেনা পরিবারটির।
মূমূর্ষ রোগি ঘরে রেখে সুযোগ পেলে অন্যের জমিতে মরিচ তোলার কাজ করে যা পায় তা দিয়ে খাবার জুটে নাছিমা-শওকতের ঘরে।
স্বজনরা বলছেন, শওকতের চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু চিকিৎসার ব্যয় বহন করার মতো আর্থিক অবস্থা তার পরিবারের নেই।
শওকতের স্ত্রী নাছিমা বলেন, সারা দিন রাইত কান্দে নড়াচড়া করতে পারেনা,অহন তো মাংস পঁচে কিরা(পোকা) ধরছে দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। ‘মাঝে মাঝে ডর লাগে উনার কিছু অইয়া গেলে আমার ছোট ছেরাছেরিরে দেখবো কেলা? আমি কি করাম বুঝদাছিনা। আমার পক্ষে অতো টেহার ব্যবস্থা করা সম্ভব না। আল্লাহ যেন দুষমনরেও এরুম কষ্ট না দেয়। উনির অবস্থা দিন দিন খুবই খারাপের দিকে যাইতাছে।২/৩ মাস আগে একজনের কাছে কাগজ পত্তর রেডি কইরা দিছলাম হুমায়ুন সাহেব (মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন) সাহেবরে দিতো যাতে আমরার প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) কিছু সহযোগিতা করে। হুমায়ুন সাহেবের মাধ্যমে মেলা মাইনষে সহযোগিতা পায় হুনছি।কিন্তু যার ঠায় কাগজ দিছি এইলা অহনও জমা দিচেনা।পরে হেনতে কাগজ আইনা আমরার আগের চেয়ারম্যান (সিরাজ উদ্দিন) সাহেবরে দিছি উনি পরে মাহফুজ (সাংবাদিক মাহফুজ রাজা)ভাইরে লয়া জমা দেয়া দিছে শুক্রবার রাতে।
সাংবাদিক মাহফুজ রাজা ও পাড়া-প্রতিবেশী যোবকরা বলেন, ‘আমরা সবাই চেষ্টা করতেছি শওকতের চিকিৎসার টাকা সংগ্রহ করতে,ইতিমধ্যে সামান্য কিছু টাকা সংগ্রহ হয়েছে আবার অনেকে আশ্বাস দিয়েছে দিবে। সিদলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দীন সাহেবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আর্থিক সাহায্য চেয়ে আবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন মহোদয়ের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
হৃদয়বান ধনী ব্যক্তিদের কাছে এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে সামর্থ্যানুযায়ী সাহায্যের আবেদনও জানান স্থানীয়রা।
সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন বলেন, শওকতের অসুস্থতা ও দূরাবস্থা দেখে দুটি কার্ড পরিবারের জন্য ব্যবস্থা করছিলাম আমি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায়।বর্তমানে শুনলাম কার্ড দুটির মেয়াদ শেষ হবার কারণে আর চাল পাচ্ছে না। আমার জানামতে শওকতই প্রকৃত সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতা সর্ব্রাগে পাওয়ার অধিকার রাখে। আমি চেয়ারম্যান এখন নেই তবুও অসহায়দের পাশে ছিলাম, আছি থাকবো ইনশাআল্লাহ। জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সুপারিশসহ প্রধানমন্ত্রী বরাবর করা আবেদন, পৌছিয়েছি প্রিয় নেতা কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন ভাইয়ের কাছে।