মো. আজিজার রহমান, দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের খানসামায় খামারপাড়া ইউনিয়নের কায়েমপুর গ্রামের ডাক্টারপাড়ায় প্রথম শ্রেণীর ছাত্রকে অপহরন করে মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারী।
অপহরণ করে মুক্তিপন দাবির দু’দিন পর ৮ বছরের শিশু আরিফুজ্জামানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মুক্তিপণ দাবী করা মোবাইল ফোনের সুত্র ধরে পুলিশ শরিফুল ইসলাম নামে এক ছাত্রকে আটক করে। পুলিশ সুপার ইফতেখার আহমেদের তত্ত্বাবধানে জিঙ্গাসাবাদের মাধ্যমে রবিবার দিনগত রাত ১২.৫০ মিনিটে প্রতিবেশী সালাম এর আঙিনায় পুতে রাখা লাশটি উদ্ধার করা হয়।
অপহৃত আরিফুজ্জামান (৮) খানসামার খামারপাড়া ইউনিয়নের কায়েমপুর ডাক্তারপাড়া মহল্লার বাসিন্দ কৃষক আতিউর রহমানের ছেলে। শিশুটি স্থানীয় চেহেলগাজী কিন্ডার গার্ডেন স্কুলে ২য় শ্রেণিতে পড়ালেখা করতো। শুক্রবার বিকালে মাঠে খেলতে গিয়ে অপহরনের শিকার হয়েছিল শিশু আরিফুজ্জামান।
স্থানীয়রা জানান, বিকালে খেলার মাঠ থেকে নিখোঁজের পর তার সন্ধ্যান করছিল বাবা- মা ও স্বজনরা।
রাত ৮ টার দিকে শিশুর বাবার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে মুক্তিপন হিসেবে ১ লাখ টাকা দাবি করে অপহরনকারী শরিফুল ইসলাম। এ ব্যাপারে থানায় সাধারন ডাইরি করেন আতিউর রহমান।
সাধারণ ডায়েরীকে আমলে নিয়ে খানসামা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতঃ ভিকটিমের পরিবারসহ স্থানীয় বিভিন্ন লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেশী শরিফুল ইসলামসহ আরো কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখে পুলিশ।
দিনাজপুর জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব শাহ ইফতেখার আহমেদ, পিপিএম এর সার্বিক দিক-নির্দেশনায় ও নিবিড় তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোঃ আসলাম উদ্দিন এর নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বীরগঞ্জ সার্কেল) খোদাদাদ হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার (কাহারোল সার্কেল) মোঃ রওশন আলীর সমন্বয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ চিত্তরঞ্জন রায়, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ তাওহীদুল ইসলাম, এসআই (নিঃ)/ইবনে ফরহাদ, তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ)/মোঃ শামীম মিয়াসহ খানসামা থানা ও ডিবি, দিনাজপুর বোলার সমন্বিত টিম অভিযানে অংশগ্রহণ করে।
গত ০৪/১২/২০২২ খ্রিঃ তারিখ নিখোঁজ শিশুর পিতা মোঃ আতিউর রহমান সন্দেহভাজন শরিফুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে খানসামা থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর ৭/৮/৩০ ধারায় একটি নিয়মিত মামলা কচু করা হয়। নিবিড় ও নিরবিচ্ছিন্ন জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশ হেফাজতে নেয়া শরিফুল ইসলাম জানান যে, পুলিশের কাছে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির বিষয় স্বীকার করে এবং অপহৃত শিশু আরিফুজ্জামানের সন্ধান দিতে রাজি হয়।
অদ্য ০৫/১২/২০২২ খ্রি তারিখ রাত্রি ০২.০০ ঘটিকায় আটক শরিফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানিক দল খানসামা থানাধীন ০৩নং আঙ্গারপাড়া ইউপিস্থ পাকেরহাট বাজার সংলগ্ন আরাজি যুগিরঘোপা গ্রামস্থ জনৈক মোঃ আব্দুস সালামের ভাড়া দেয়া বাড়ির উঠানে ধৃত শরিফুলের দেখানো স্থানের মাটি খুঁড়ে শিশু আরিফুজ্জামানের হাত-পা বাধা, বস্তাবন্দি ও মাটিচাপা লাশ উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী জানান যে, মুক্তিপন আদায়ের উদ্দ্যেশে শিশু আরিফুজ্জামানকে অপহরণপূর্বক হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের পূর্বে আসামী শরিফুল শিশু আরিফুজ্জামানকে বলাৎকার করেছিল মর্মে স্বীকার করে। ভিত্তিমের লাশ যেন খুঁজে না পাওয়া যায়, সেজন্য জনৈক আব্দুস সালামের বাড়ির উঠানে গর্ত করে বছাবন্দি অবস্থায় লাশ পুঁতে রাখার পর উঠানের মাটি পুনরায় সমান করে বাড়ির গেইট তালাবদ্ধ করে নিজ গ্রামে চলে যায়। মটরসাইকেল ও মোবাইল ফোন ক্রয়ের জন্য আসামী শরিফুল এই অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে মর্মে প্রাথমিক ভাবে জানা যায়।
উল্লেখ্য যে, শরিফুল ইসলাম বাদী আতিউর রহমানের একই পাড়ার আব্দুল মালেকের ছেলে। খানসামা বিএম কলেজে কম্পিউটার ট্রেড নিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু ছাত্রকে কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করতেন। পাকেরহাট আরাজি যুগিরঘোপা এলাকায় জনৈক আব্দুস সালামের বাসায় ভাড়া থেকে উদ্ধার করা হয়।