বাংলাদেশ ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
নগদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ায় বিএনপি নেতার প্রেস বিজ্ঞপ্তি কুষ্টিয়া জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত কাউনিয়ায় জরায়ু মুখে ক্যানসার (এইচপিভি) টিকা নিয়ে ৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে রম্য বির্তক ফুলবাড়ী সরকারি হাসপাতাল ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দখলে বাস চাপায় নিহত ববি শিক্ষার্থী উত্তপ্ত ববি! ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ মাসে অচল ছয় কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে ব্রীজ ও সংযোগ সড়ক ছাদ ভেঙে শ্রেণিকক্ষে খসে পড়ছে পলেস্তারা চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মহিলালীগ নেত্রী ভূমিদস্যু আলেয়ার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল আমরণ অনশনে রাবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন পংকজ কুমার হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামী সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ধর্ষক পিতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রাজাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত, আহত ১ রামুর কচ্ছপিয়ায় সরকারি রিজার্ভের জমিতে অবৈধ দখলের অভিযোগ গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমান গাঁজাসহ গ্রেফতার মাদক কারবারী ডালিম

বিলুপ্তির পথে শামুক-ঝিনুক।

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:৫৮:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০২২
  • ১৭০৩ বার পড়া হয়েছে

বিলুপ্তির পথে শামুক-ঝিনুক।

 

 

 

 

 

মাহফুজ হাসান,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
ঝিনুক নেব না বলিনি, শামুকও নেব; বিনিময়ে শামুক-ঝিনুক এলোমেলো করার সাড়ে ছ’ইঞ্চি এই ছুরিটা ধারালো, তোমাকে দেব।
মারজুক রাসেলের লেখা কবিতার এ পঙক্তিটি, শামুক-ঝিনুকের মহা মর্যাদার কথা নির্দেশ করে। অর্থ কিম্বা আবেগের সুবিশাল একটা যায়গা জুড়ে শামুক-ঝিনুকের বাস।
এক সময় ঢুল শ্রেণীর লোকেরা নদী নালায় খাল-বিলে জলাশয়ে ঝিনুক কুড়িয়ে মুক্তা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে শামুক, ঝিনুক বিলুপ্তির কারণে ঢুল শ্রেণীর লোকেরা পেশা পাল্টিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। কারণ ঝিনুক ও শামুকের বিচরণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে খাল, বিল, ডোবা, নালা ও পুকুরসহ নানা রকম প্রতিকূল পরিবেশের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে জীববৈচিত্র। কিছু অসাধু চক্র নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংসে মেতে উঠেছে। সরকারী খাল, বিল, ডোবা নালা গুলো প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।
প্রভাবশালীরা এ গুলো দখল করে ভরাট করে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ পুকুর খনন করে বাণিজিকভাবে মাছ চাষ করছে। এতে করে প্রকৃতির বন্ধু শামুক ও ঝিনুকের আশ্রায়স্থল হারিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শামুক ও ঝিনুক প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে নানা প্রতিকুলতার কারনে পানি উৎসের স্তর কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন আর পানি উৎসের সংকটের কারণে বিপন্ন হচ্ছে শামুক-ঝিনুক, বিভিন্ন পোকামাকড় আর কয়েক প্রজাতির মাছ ও প্রাকৃতিক শাকসবজি।
যদি সুন্দর একখান মন পাইতাম, সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম… বা ‘পান খেয়ে ঠোঁট লাল করিলাম, বন্ধুর দেখা পাইলাম না…
পান নিয়ে এ রকম কতইনা জনপ্রিয় গান আছে বাংলা সংস্কৃতিতে। আর এ পান তৈরির অন্যতম উপাদান হল চুন। কিন্তু চুন তৈরির শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
রসনা বিলাসী মানুষের কাছে পান একটি অতি প্রিয় খাবার। সেই পানের স্বাদ যোগায় চুন। জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চুন তৈরির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত শামুক ও ঝিনুক। এছাড়াও  ঝিনুক আর শামুকের বহুগুণ উপকারিতা রয়েছে।
শামুকের খোলসের ভেতরের নরম অংশ মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শামুকের বিলুপ্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পরছে মাছ উৎপাদনে। দেশীয় মাছ কৈ, শিং, টাকি, টেংরা, শৈল মাছের ডিম থেকে সদ্যজাত পোনার একমাত্র খাদ্য হচ্ছে শামুকের নরম ডিম। আর এ খাবার না পেলে ঐ পোনা মাছ মারা যায়। এভাবে শামুক নিধন হতে থাকলে দেশী প্রজাতির মাছ আরো বেশি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
অপর দিকে শামুক নিসৃত পানির রয়েছে নানান ঔষধি গুন। প্রচলিত রয়েছে ঠান্ডা পাত্রে রক্ষিত শামুক নিসৃত পানি যে কোন ধরণের চোখের রোগের জন্য খুবই উপকারী। শামুক ঝিনুক দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে চুন এমনকি হাঁসের খাবার হিসেবে ও যোগান দেওয়া হয় প্রাকৃতিক ফিল্টার খ্যাত শামুক-ঝিনুক। শামুক আর ঝিনুক পচে জমির মাটিতে প্রাকৃতিক ভাবে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশ সরবরাহ করে।ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ ধানগাছের শিকড় মজবুত ও ফলন অধিক হতে সাহায্য করে।
শামুক দূষিত পানি ফিল্টারিং করে প্রাকৃতিকভাবে পানি দূষণ মুক্ত রাখে। নির্বিচারে ঝিনুক শামুক নিধনের ফলে কৃষিজমি হারাচ্ছে উর্বরতা ও পরিবেশ হারাচ্ছে স্বাভাবিক ভারসাম্যতা। দ্রুত  নদী- নালা, ডোবা, চলাশয় খনন করে শামুক ঝিনুকের আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আশরাফ আহমেদ বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ের বিশেষ করে খাল, বিল, হাওর, বাওরে বংশ বিস্তার করে থাকে শামুক ও ঝিনুক।
অন্যদিকে জলাশয়ের নোংরা পানির পোকামাকড় আহার করে পানি বিশুদ্ধকরণের কাজ করে। শামুক এবং ঝিনুক আমাদের নীরব বন্ধু। এই শান্ত ধীরগতি স্বভাবের প্রাণী নীরবে আমাদের উপকার করছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধকরণসহ স্থানীয় মিঠা পানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে শামুক।এই ঝিনুক এখন বিলুপ্তপ্রায়।ঝিনুক ও শামুকের বিস্তারে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি দেশে পরিকল্পিতভাবে মুক্তার চাষ ও উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে আমাদের দেশ লাভবান হবে। এই পদ্ধতিতে মাছের সাথে মুক্তা চাষ করে অনেক চাষিরাই স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

নগদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ায় বিএনপি নেতার প্রেস বিজ্ঞপ্তি

বিলুপ্তির পথে শামুক-ঝিনুক।

আপডেট সময় ০৭:৫৮:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০২২

 

 

 

 

 

মাহফুজ হাসান,কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
ঝিনুক নেব না বলিনি, শামুকও নেব; বিনিময়ে শামুক-ঝিনুক এলোমেলো করার সাড়ে ছ’ইঞ্চি এই ছুরিটা ধারালো, তোমাকে দেব।
মারজুক রাসেলের লেখা কবিতার এ পঙক্তিটি, শামুক-ঝিনুকের মহা মর্যাদার কথা নির্দেশ করে। অর্থ কিম্বা আবেগের সুবিশাল একটা যায়গা জুড়ে শামুক-ঝিনুকের বাস।
এক সময় ঢুল শ্রেণীর লোকেরা নদী নালায় খাল-বিলে জলাশয়ে ঝিনুক কুড়িয়ে মুক্তা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে শামুক, ঝিনুক বিলুপ্তির কারণে ঢুল শ্রেণীর লোকেরা পেশা পাল্টিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। কারণ ঝিনুক ও শামুকের বিচরণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে খাল, বিল, ডোবা, নালা ও পুকুরসহ নানা রকম প্রতিকূল পরিবেশের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে জীববৈচিত্র। কিছু অসাধু চক্র নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংসে মেতে উঠেছে। সরকারী খাল, বিল, ডোবা নালা গুলো প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।
প্রভাবশালীরা এ গুলো দখল করে ভরাট করে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ পুকুর খনন করে বাণিজিকভাবে মাছ চাষ করছে। এতে করে প্রকৃতির বন্ধু শামুক ও ঝিনুকের আশ্রায়স্থল হারিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শামুক ও ঝিনুক প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে নানা প্রতিকুলতার কারনে পানি উৎসের স্তর কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন আর পানি উৎসের সংকটের কারণে বিপন্ন হচ্ছে শামুক-ঝিনুক, বিভিন্ন পোকামাকড় আর কয়েক প্রজাতির মাছ ও প্রাকৃতিক শাকসবজি।
যদি সুন্দর একখান মন পাইতাম, সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম… বা ‘পান খেয়ে ঠোঁট লাল করিলাম, বন্ধুর দেখা পাইলাম না…
পান নিয়ে এ রকম কতইনা জনপ্রিয় গান আছে বাংলা সংস্কৃতিতে। আর এ পান তৈরির অন্যতম উপাদান হল চুন। কিন্তু চুন তৈরির শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
রসনা বিলাসী মানুষের কাছে পান একটি অতি প্রিয় খাবার। সেই পানের স্বাদ যোগায় চুন। জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে চুন তৈরির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত শামুক ও ঝিনুক। এছাড়াও  ঝিনুক আর শামুকের বহুগুণ উপকারিতা রয়েছে।
শামুকের খোলসের ভেতরের নরম অংশ মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শামুকের বিলুপ্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পরছে মাছ উৎপাদনে। দেশীয় মাছ কৈ, শিং, টাকি, টেংরা, শৈল মাছের ডিম থেকে সদ্যজাত পোনার একমাত্র খাদ্য হচ্ছে শামুকের নরম ডিম। আর এ খাবার না পেলে ঐ পোনা মাছ মারা যায়। এভাবে শামুক নিধন হতে থাকলে দেশী প্রজাতির মাছ আরো বেশি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
অপর দিকে শামুক নিসৃত পানির রয়েছে নানান ঔষধি গুন। প্রচলিত রয়েছে ঠান্ডা পাত্রে রক্ষিত শামুক নিসৃত পানি যে কোন ধরণের চোখের রোগের জন্য খুবই উপকারী। শামুক ঝিনুক দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে চুন এমনকি হাঁসের খাবার হিসেবে ও যোগান দেওয়া হয় প্রাকৃতিক ফিল্টার খ্যাত শামুক-ঝিনুক। শামুক আর ঝিনুক পচে জমির মাটিতে প্রাকৃতিক ভাবে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশ সরবরাহ করে।ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ ধানগাছের শিকড় মজবুত ও ফলন অধিক হতে সাহায্য করে।
শামুক দূষিত পানি ফিল্টারিং করে প্রাকৃতিকভাবে পানি দূষণ মুক্ত রাখে। নির্বিচারে ঝিনুক শামুক নিধনের ফলে কৃষিজমি হারাচ্ছে উর্বরতা ও পরিবেশ হারাচ্ছে স্বাভাবিক ভারসাম্যতা। দ্রুত  নদী- নালা, ডোবা, চলাশয় খনন করে শামুক ঝিনুকের আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আশরাফ আহমেদ বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ের বিশেষ করে খাল, বিল, হাওর, বাওরে বংশ বিস্তার করে থাকে শামুক ও ঝিনুক।
অন্যদিকে জলাশয়ের নোংরা পানির পোকামাকড় আহার করে পানি বিশুদ্ধকরণের কাজ করে। শামুক এবং ঝিনুক আমাদের নীরব বন্ধু। এই শান্ত ধীরগতি স্বভাবের প্রাণী নীরবে আমাদের উপকার করছে। উন্মুক্ত জলাশয়ের পানি বিশুদ্ধকরণসহ স্থানীয় মিঠা পানির মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে শামুক।এই ঝিনুক এখন বিলুপ্তপ্রায়।ঝিনুক ও শামুকের বিস্তারে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যদি দেশে পরিকল্পিতভাবে মুক্তার চাষ ও উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে আমাদের দেশ লাভবান হবে। এই পদ্ধতিতে মাছের সাথে মুক্তা চাষ করে অনেক চাষিরাই স্বাবলম্বী হতে পারবেন।