বাংলাদেশ ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
নগদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ায় বিএনপি নেতার প্রেস বিজ্ঞপ্তি কুষ্টিয়া জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত কাউনিয়ায় জরায়ু মুখে ক্যানসার (এইচপিভি) টিকা নিয়ে ৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে রম্য বির্তক ফুলবাড়ী সরকারি হাসপাতাল ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দখলে বাস চাপায় নিহত ববি শিক্ষার্থী উত্তপ্ত ববি! ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ মাসে অচল ছয় কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে ব্রীজ ও সংযোগ সড়ক ছাদ ভেঙে শ্রেণিকক্ষে খসে পড়ছে পলেস্তারা চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মহিলালীগ নেত্রী ভূমিদস্যু আলেয়ার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও ঝাড়ু মিছিল আমরণ অনশনে রাবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন পংকজ কুমার হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামী সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। ধর্ষক পিতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রাজাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত, আহত ১ রামুর কচ্ছপিয়ায় সরকারি রিজার্ভের জমিতে অবৈধ দখলের অভিযোগ গোদাগাড়ীতে বিপুল পরিমান গাঁজাসহ গ্রেফতার মাদক কারবারী ডালিম

কালের বিবর্তনে রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসব॥

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৯:১৭:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২
  • ১৬৮৮ বার পড়া হয়েছে

কালের বিবর্তনে রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসব॥

 

 

মোঃ ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ

হেমন্তে রোদ মাখা শীতে বিলের পানি কমে গেলে মানুষ দলে দলে পলো নিয়ে মাছ ধরতে বিলে নামেন। তলাবিহীন কলসির মতো দেখতে, বাঁশ-বেতের তৈরি শৈল্পিক কারুকাজময় যে জিনিসটি দিয়ে মাছ ধরা হয়, রামগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম ‘পলো’।

 

 

 

আড়াই থেকে তিন ফুট লম্বা আকৃতির এ খাঁচা সদৃশ পলো পানিতে তলদেশে ফেলে ওপরের ফাঁকা অংশ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মাছ শিকার করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই চিরচেনা প্রাচীন ঐতিহ্য ‘পলো উৎসব’। শীতের সময় খাল-বিল, বাওড় পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা আছে, তবে আগের মতো নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে পলো দিয়ে মাছ ধরা।

 

 

 

রামগঞ্জ উপজেলার  প্রত্যন্ত এলাকার খাল বিল ও পুকুরসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে কয়েকদিন পূর্ব থেকেই দিন তারিখ ঠিক করে আশপাশের প্রত্যেক গ্রামের জনসাধারণকে দাওয়াত দেয়া হতো। নির্দিষ্ট দিনে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সৌখিন মৎস শিকারীরা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে জড়ো হতেন।

 

 

 

 

জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে সকলে একই সাথে লাইন ধরে লুঙ্গি আটঘাট করে বেধে অথবা ‘কাছা’ দিয়ে এক সঙ্গে দল বেধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপ ঝপাঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুরু করতেন এবং সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে। অনেকেরই মাথায় থাকতো গামছা বাঁধা। চলতো পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেওয়া আর হৈ হুল্লোড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া। যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য।

 

 

 

মাছ পড়লেই পলোর ভেতর নাড়া দিত। এতে বুঝা যেত শিকার এবার হাতের মুঠোয়। তখন পলোটিকে কাদা মাটির সাথে ভালোভাবে চাপ দিয়ে ধরে রাখা হতো যাতে নিচের কোন দিকে ফাঁক না থাকে। এরপর ওপরের খোলা মুখ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মনের আনন্দে ধরে আনা হতো সেই শিকার। বর্তমানে অনেক হাওর খাল বিল ও উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট কিংবা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

 

 

 

 

বিভিন্ন নদী-নালা হাওর-বাওর খাল-বিল ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাট। এক সময় নদী-নালা, খাল-বিলে উৎসব করে পলো দিয়ে মাছ শিকার করতো মানুষ। সেই সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে জানান দিতে এসব সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।

 

 

 

আর সে দৃশ্য দেখে অভিভূত হতো গাঁয়ের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। কমবেশি প্রায় সবাই বোয়াল, রুই, কাতল, মৃগেল, আইড় ও গজার মাছ শিকার করত। ৩০০ থেকে ৫০০ বাইছালের বহরে একজন করে সরদার থাকত। শিকার করা মাছ নিয়ে বাইছালরা যখন বাড়ি ফিরত তখন মাছ কোটা, ধোয়া ও রান্নার কাজে আনন্দময় চিত্তে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ত গৃহবধূরা।

 

 

 

 

কিনে খাওয়া মাছের চেয়ে শিকার করা মাছের স্বাদ ছিল আলাদা তৃপ্তির। কিন্তু সেই ঐতিহ্য এখন অতীত হতে চলেছে। নদীনালা ও খালবিলে পানি নেই, মাছ নেই। একসময়কার মৎস্যভাণ্ডারের তালিকা থেকে অনেক নাম মুছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও কিছুটা জলাশয় থাকলেও আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অনেক প্রজাতির মাছ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়।

 

 

 

রামগঞ্জের ৯০ বছরের বৃদ্ধা আবদুর রব বলেন, ‘ঝপ ঝপাঝপ পলো বাও/মজার মজার মাছ খাও’- সদলবলে পলো দিয়ে মাছ ধরার অভিযানে নামার স্নোগান এটি। হারিয়ে যাচ্ছে পলো নিয়ে মাছ ধরা। আগামী প্রজন্ম পলো কী তা চিনবে না। নতুন প্রজন্মের জন্য এসব ঐতিহ্য ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে দাবি করেন।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

নগদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ও মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেওয়ায় বিএনপি নেতার প্রেস বিজ্ঞপ্তি

কালের বিবর্তনে রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসব॥

আপডেট সময় ০৯:১৭:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২

 

 

মোঃ ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধিঃ

হেমন্তে রোদ মাখা শীতে বিলের পানি কমে গেলে মানুষ দলে দলে পলো নিয়ে মাছ ধরতে বিলে নামেন। তলাবিহীন কলসির মতো দেখতে, বাঁশ-বেতের তৈরি শৈল্পিক কারুকাজময় যে জিনিসটি দিয়ে মাছ ধরা হয়, রামগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম ‘পলো’।

 

 

 

আড়াই থেকে তিন ফুট লম্বা আকৃতির এ খাঁচা সদৃশ পলো পানিতে তলদেশে ফেলে ওপরের ফাঁকা অংশ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মাছ শিকার করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই চিরচেনা প্রাচীন ঐতিহ্য ‘পলো উৎসব’। শীতের সময় খাল-বিল, বাওড় পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা আছে, তবে আগের মতো নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে পলো দিয়ে মাছ ধরা।

 

 

 

রামগঞ্জ উপজেলার  প্রত্যন্ত এলাকার খাল বিল ও পুকুরসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে কয়েকদিন পূর্ব থেকেই দিন তারিখ ঠিক করে আশপাশের প্রত্যেক গ্রামের জনসাধারণকে দাওয়াত দেয়া হতো। নির্দিষ্ট দিনে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সৌখিন মৎস শিকারীরা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে জড়ো হতেন।

 

 

 

 

জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে সকলে একই সাথে লাইন ধরে লুঙ্গি আটঘাট করে বেধে অথবা ‘কাছা’ দিয়ে এক সঙ্গে দল বেধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপ ঝপাঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুরু করতেন এবং সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে। অনেকেরই মাথায় থাকতো গামছা বাঁধা। চলতো পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেওয়া আর হৈ হুল্লোড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া। যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য।

 

 

 

মাছ পড়লেই পলোর ভেতর নাড়া দিত। এতে বুঝা যেত শিকার এবার হাতের মুঠোয়। তখন পলোটিকে কাদা মাটির সাথে ভালোভাবে চাপ দিয়ে ধরে রাখা হতো যাতে নিচের কোন দিকে ফাঁক না থাকে। এরপর ওপরের খোলা মুখ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মনের আনন্দে ধরে আনা হতো সেই শিকার। বর্তমানে অনেক হাওর খাল বিল ও উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট কিংবা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

 

 

 

 

বিভিন্ন নদী-নালা হাওর-বাওর খাল-বিল ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক প্লট ও ফ্ল্যাট। এক সময় নদী-নালা, খাল-বিলে উৎসব করে পলো দিয়ে মাছ শিকার করতো মানুষ। সেই সংস্কৃতি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে জানান দিতে এসব সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন।

 

 

 

আর সে দৃশ্য দেখে অভিভূত হতো গাঁয়ের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। কমবেশি প্রায় সবাই বোয়াল, রুই, কাতল, মৃগেল, আইড় ও গজার মাছ শিকার করত। ৩০০ থেকে ৫০০ বাইছালের বহরে একজন করে সরদার থাকত। শিকার করা মাছ নিয়ে বাইছালরা যখন বাড়ি ফিরত তখন মাছ কোটা, ধোয়া ও রান্নার কাজে আনন্দময় চিত্তে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ত গৃহবধূরা।

 

 

 

 

কিনে খাওয়া মাছের চেয়ে শিকার করা মাছের স্বাদ ছিল আলাদা তৃপ্তির। কিন্তু সেই ঐতিহ্য এখন অতীত হতে চলেছে। নদীনালা ও খালবিলে পানি নেই, মাছ নেই। একসময়কার মৎস্যভাণ্ডারের তালিকা থেকে অনেক নাম মুছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও কিছুটা জলাশয় থাকলেও আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অনেক প্রজাতির মাছ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়।

 

 

 

রামগঞ্জের ৯০ বছরের বৃদ্ধা আবদুর রব বলেন, ‘ঝপ ঝপাঝপ পলো বাও/মজার মজার মাছ খাও’- সদলবলে পলো দিয়ে মাছ ধরার অভিযানে নামার স্নোগান এটি। হারিয়ে যাচ্ছে পলো নিয়ে মাছ ধরা। আগামী প্রজন্ম পলো কী তা চিনবে না। নতুন প্রজন্মের জন্য এসব ঐতিহ্য ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে দাবি করেন।