প্রেস বিজ্ঞপ্তি
র্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, মুগদা এবং তেজগাঁও এলাকা হতে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি এবং ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৩৭ জন গ্রেফতার; অজ্ঞান ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত মলম ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ও পথচারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে জখমপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। এসব ভ‚ক্তভোগীদের বেশির ভাগই কোন আইন শৃংখলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয় না। ফলে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের প্রায় সকলেই মাদকাসক্ত। সাম্প্রতিককালে ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। ফলশ্রæতিতে র্যাব উক্ত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই প্রেক্ষিতে র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল ২০/০৮/২০২২ তারিখ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, মুগদা এবং তেজগাঁও থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য ১। মোঃ মিজানুর রহমান (২১), পিতা-মোঃ সামসুল মিয়া, সাং-যুদিরগাও, থানা-দোয়ারা বাজার, জেলা-সুনামগঞ্জ, ২। মোঃ সোহেল (২০), পিতা-আজিজ, সাং-মোল্লা কান্দি, থানা-শলংগা, জেলা-সিরাজগঞ্জ, ৩। মাসুদ রানা (২১), পিতা-আব্দুল হামিদ, সাং-হাওড়া, থানা-উল্লাপাড়া, জেলা-সিরাজগঞ্জ, ৪। সাব্বির (২২), পিতা-মোঃ আওলাদ খান, সাং-বেজগাঁও, থানা-লৌহজং, জেলা-মুন্সীগঞ্জ, ৫। মোঃ আবু বকর সিদ্দিক (২২), পিতা-মোঃ হানিফ মিয়া, সাং-সোনামুখী, থানা-পালং, জেলা-শরীয়তপুর, ৬। শাকিল (২০), পিতা-মৃত আবু হোসেন, সাং-নাইমুরি, থানা-শলংগা, জেলা-সিরাজগঞ্জ, ৭। নাঈম মোল্লা (২০), পিতা-মোঃ সোলাইমান মোল্লা, সাং-বালিয়া ডাংগী, থানা-চর ভদ্রশন, জেলা-ফরিদপুর, ৮। মোঃ সালমান(২৬), পিতা-মোঃ আলমগীর, সাং-রুপসা বেড়িবাধ, থানা-রুপসা, জেলা-খুলনা, ৯। মোঃ জালাল হোসেন (২১), পিতা-মোঃ আনোয়ার, সাং-ডুমুরিয়া, থানা-কচুয়া, জেলা-চাঁদপুর, ১০। মোঃ শাওন (২২), পিতা-মিজানুর হাওলাদার, সাং-জাঙ্গালিয়া, থানা-পাতারহাট, জেলা-বরিশাল, ১১। শহিদুল ইসলাম (৪০), পিতা-মৃত সৈয়দ আলী, সাং-কলাখালী, থানা-নাজিরপুর, জেলা-পিরোজপুর, ১২। মোঃ রফিক(৩৩), পিতা-মৃত কবির, সাং-ব্রজেশ্বর, থানা-নড়িয়া, জেলা-শরীয়তপুর, ১৩। আজিজুর (৩৬), পিতা-মৃত নুর ইসলাম, সাং-রায়ের বাজার, থানা-কিশোরগঞ্জ সদর, জেলা-কিশোরগঞ্জ, ১৪। মোঃ সৈকত মন্ডল (১৯), পিতা-মৃত হারুন অর রশিদ, সাং-দাড়িদহ, থানা-শিবগঞ্জ, জেলা-বগুড়া, ১৫। মোঃ আরিফ গাজী (২৬), পিতা-হাফেজ গাজী, সাং-পশ্চিম জাপড়াবাজ, থানা-চাঁদপুর সদর, জেলা-চাঁদপুর, ১৬। মোঃ জনি (১৮), পিতা-মোঃ সাইদুল ইসলাম, সাং-রসুলপুর, থানা-বাহুবল, জেলা-হবিগঞ্জ, ১৭। মোঃ রুবেল (২৮), পিতা-রাসোয়ান শিকদার, সাং-চরশিতা, থানা-রামগতি, জেলা-লক্ষীপুর, ১৮। মোঃ আফজল (১৮), পিতা-শহরুল, সাং-নন্দিরফল, থানা-বিয়ানী বাজার, জেলা-সিলেট, ১৯। দ্বীন ইসলাম (২৩), পিতা-ধন মিয়া, সাং-রসুলপুর, থানা-রায়পুর, জেলা-নরসিংদী, ২০। মোঃ তুহিন (১৮), পিতা-সোলাইমান, সাং-সায়দাবাদ জনপদ এলাকায় ভাসমান, থানা-যাত্রাবাড়ী, ডিএমপি,ঢাকা, ২১। মোঃ রবিউল আউয়াল হৃদয় (২২), পিতা-হারুনুর রশিদ, সাং-কান্দির পাড়, থানা-লাকসাম, জেলা-কুমিল্লা, ২২। মোঃ আরমান(২২), পিতা- শামসুল হক, সাং-মিগয়ারী, থানা-পাগলা, জেলা-ময়মনসিংহ, ২৩। মোঃ সানোয়ার হোসেন (৩১), পিতা-মৃত চাঁন মিয়া, সাং-চরপাড়া,থানা-আটপাড়া, জেলা-নেত্রকোনা, ২৪। মোঃ রুবেল (৩৪), পিতা-মোঃ মিরাজ, সাং-ইলিশা, থানা-ভোলা, জেলা-ভোলা, ২৫। মোঃ সোহেল (৩৫), পিতা-মোঃ হাবিবুর রহমান, সাং-স্টেডিয়াম এলাকায় ভাসমান, ২৬। মোঃ শান্ত (২৫), পিতা-সাইদুর রহমান, সাং-ইন্দ্রয়কুৃল, থানা-বাউফল, জেলা-পটুয়াখালী, ২৭। মোঃ আজাদ (৩৫), পিতা-মৃত ঃ আনিছুর রহমান, সাং-ওসমানগঞ্জ, থানা-চরফ্যাশন, জেলা-ভোলা, ২৮। মোঃ আকাশ (২২), পিতা-মোঃ ইদ্রিস ব্যাপারী, সাং-কামরাঙ্গীরচর, থানা-লালবাগ, ডিএমপি, ঢাকা, ২৯। মোঃ নাইম খান(১৬), পিতা-মোঃ বিল্লাল খান, সাং-কুন্ডা, থানা-নাছিমনগর, জেলা-ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ৩০। মোঃ আপন মিয়া(২০), পিতা-মোঃ কাইয়ুম, সাং-মাইজহাটি, থানা-নান্দাইল, জেলা-ময়মনসিংহ, ৩১। মোঃ নাজমুল হোসেন(২৮), পিতা-মোঃ আলম হোসেন, সাং-লড়ীবাগ, থানা-বুড়িচং, জেলা-কুমিল্লা, ৩২। মোঃ মাসুম মিয়া(২৮), পিতা-মৃত আব্দুল বারেক, সাং-কুমার পাড়া, থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ, ৩৩। মোঃ শান্ত (২০), পিতা-মোঃ আলমগীর হোসেন, সাং-নাজলা পাড়া, থানা-কলাপাড়া, জেলা-পটুয়াখালী, ৩৪। মোঃ সোহেল মাতব্বর(২৩), পিতা-মোঃ জুলহাস মাতব্বর, সাং-ইসলামপুর, থানা-টঙ্গিবাড়ি, জেলা-মুন্সীগঞ্জ, ৩৫। মোঃ হৃদয়(১৯), পিতা-মৃত বাবুল, সাং-ঘোড়াশাল, থানা-পলাশ, জেলা-নরসিংদী, ৩৬। মোঃ সোহরাব (১৯), পিতা-মোঃ আব্দুল জব্বার, সাং-বাইল্লাবাড়ি, থানা-বরুড়া, জেলা-কুমিল্লা এবং ৩৭। মোঃ ইয়াছিন ব্যাপারী (২২), পিতা-মৃত মন্নাফ ব্যাপারী, সাং-গদোজকাঠি, থানা-ডামুডা, জেলা-শরীয়তপুরদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকালে উক্ত আসামীদের নিকট হতে ১২ টি মোবাইলফোন, ০৩ টি সুইচ গিয়ার, ০৩ টি এন্টি কাটার, ১২ টি বেøড, ০১ টি কাঁচি, ০৬ টি চাকু, ০৩ টি ক্ষুর, ০৭ টি বিষাক্ত মলমের কৌটা, ০২ টি বিষাক্ত স্প্রে এবং নগদ ৮,১১০/-টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারী সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। তারপর সহজ সরল যাত্রীদের টার্গেট করে কখনও তাদেরকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং বিষাক্ত চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে।
উক্ত বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেওয়ার পর উক্ত যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। এছাড়াও কখনও ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মূখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে যাত্রীদের যন্ত্রণায় কাতর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। উক্ত সময়ে ভূক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা সীমাহীন দূর্ভোগের মধ্যে পড়েন। তারা স্বজনদের খোঁজে দিশাহারা হয়ে দ্বিগবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। এসব ছিনতাইকারী সদস্যদের ভূক্তভোগীরা খুব কম ক্ষেত্রেই সনাক্ত করতে পারেন। ফলে এসব ছিনতাইকারী সদস্যরা নির্বিঘেœ তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে উৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করেনা। খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালবার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।
এ সকল ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার ফলে পথচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রাজধানীতে আগত যাত্রীরা যাতে নিরাপদে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করে নির্বিঘে স্বস্তির সাথে বাড়ী ফিরে যেতে পারেন এলক্ষ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। ধৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বশির আহাম্মদ
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
স্টাফ অফিসার (মিডিয়া)
পক্ষে পরিচালক