মোঃ আজিজার রহমান, জেলা প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরঃ
রাজনৈতিক লেবাসে রাজনীতিতে ঢুকে পড়ছে একশ্রেণীর চিহ্নিত প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ। যাদের প্রতিহত করা না গেলে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এক সময় চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন এ সমাজের বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষ।
বাংলাদেশে নির্বাচন এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে সমাজের একশ্রেণীর ‘মুখোশধারী মানুষ’। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন স্তরের কমিটিতে জায়গা করে নিতেও তারা বিভিন্ন অপকৌশলে থাকে। তৎপরতা। কেউ কেউ আবার পরিপাটি পাঞ্জাবি ও টুপি পরে ‘ধর্মীয় লেবাস’ ধারণ করে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা হয়ে ভোটার এবং প্রার্থীদের মনজয়েরও চেষ্টা চালান। এই লেবাসধারীদের প্রধান লক্ষ্য- যে কোনো উপায়ে সমাজে প্রভাবশালী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা।
আর রাতারাতি অবৈধ পথে মোটা অঙ্কের টাকা কামিয়ে ধন-সম্পদের মালিক হওয়া। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক ব্যাধি হিসেবে গোটা দেশ ও এ সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব প্রতারক নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টদের নানান কৌশলে মন জয় করে, কখনও প্রার্থিতাও বাগিয়ে নেন। আবার কেউ কেউ নির্বাচনী হওয়ার পর ফের স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হন তারা। স্থানীয়ভাবে গড়ে তোলেন নিজস্ব ‘ক্যাডার বাহিনী’।
ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জড়িয়ে পড়েন অসাধু ব্যবসা-সম্পৃক্ত পণ্য ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে।শুধু তা-ই নয়, মুখোশধারীরা অনেকেই হন দামী প্রার্থী’। তারা নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণে অনুসরণ করেন নানা কৌশল। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে শুরু করেন, বিষোদ্গার। দামী প্রার্থীপক্ষের কিছু লোক প্রকৃত প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, “তাকে ( দামী প্রার্থীকে) ‘ম্যানেজ’ করে বসিয়ে দিতে হবে।
এভাবেই কোনো নির্বাচন সামনে এলে সক্রিয় হয়ে উঠেন এ চক্রের কেউ। সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে কামিয়ে নেন, মোটা অঙ্কের টাকা। নির্বাচন এলেই নির্বাচনকে সামনে রেখ নানা ফন্দি আঁটছে এ ‘দুষ্ট চক্রটি’। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এসব দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ, প্রতারকদের কারণে সমাজে সুনামের অধিকারী যোগ্য ও দক্ষ লোকরা রাজনীতিতে আসার অনাগ্রহ প্রকাশ করেন অনেকে।
আগামী ১৫ জুন দেশের ৩১ জেলার ৬১ উপজেলার নির্বাচনে ওই চক্রের অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখন চলছে তাদের নানা অপতৎপরতা। ‘ম্যানেজড’ হওয়ার পর তাদের কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করে নেবেন। আবার যারা উপরের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছেন, তারা শেষ পর্যন্ত থাকবেন নির্বাচনী মাঠে। অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগও।
বিদ্যমান পরিস্থিতি সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাদের দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, রাজনৈতিক দল যদি প্রতারকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিত, তাহলে তারা এসব অপকর্ম করার সাহস পেত না। কাউকে জিম্মি করত না। ধর্মকে ব্যবহার করে ভণ্ডামি করত না।
এ চক্রটি সমাজকে কলুষিত করছে। প্রশ্নবিদ্ধ করছে রাজনৈতিক অঙ্গনকে। কোনো নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন ও দলের সদস্যপদ দেয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ বলে মনে করেন অনেকেই। স্থানীয় নির্বাচন দলভিত্তিক বা দলিও প্রতীকে হওয়া উচিত নয়। দলের নিয়ন্ত্রণে আসায় ওইসব ব্যক্তি (মুখোশাধারী) সুযোগ নিচ্ছে।
এতে দলের ত্যাগী নেতারা উপক্ষিত হচ্ছেন। আর উড়ে এসে জুড়ে বসা ওইসব ব্যক্তি নানা উপায়ে দলের সদস্যপদ পান, নির্বাচনে মনোনয়ন পান এবং বিভিন্ন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারও করে থাকেন। দলীয় প্রভাবে তারা নির্বাচনী বৈতরণীও পার হয়ে যাচ্ছেন।
দেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখন নির্বাচন হচ্ছে টাকা-পয়সার লেনদেন। যে যত ব্যয় করতে পারবে, সেই এগিয়ে থাকছে। আবার সেই ব্যয়ও সঠিক পথে হয় না, অর্থাৎ কেনাবেচার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। কালো টাকা দিয়ে চলছে ভোটার ও মনোনয়ন কেনাবেচা।
শুধু তা-ই নয়, প্রভাব বিস্তারের জন্য গঠন করা হচ্ছে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীও। আবার এ সন্ত্রাসীদেরই দলের সদস্য করে নেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এ ব্যাপারে কার্যকর অর্থে সচেতন হতেন, তাহলেই ওইসব ব্যক্তি (মুখোশধারী) সমাজের কোনো স্থানেই তাদের অপকর্ম করার সুযোগ পাবে না। এ মুহূর্তে দলের কর্তাদের আশীর্বাদেই তারা নির্বিঘ্নে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন।
একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যারা আসেন, তাদেরই নির্বাচনে মনোনয়ন অথবা দলের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
এক্ষেত্রে জাতির স্বার্থ ও রাজনৈতিক স্বার্থ উপেক্ষিত হয়। এতে রাজনীতির ওপর নীতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং চূড়ান্তভাবে এটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক আদর্শের বিপরীতে যাবে, যা কখনোই রাজনৈতিক ব্যবস্থা বা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর কিছু বয়ে আনবে না।