মোঃ আজিজার রহমান, জেলা প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরে গৃহবধূ হত্যার দায়ে সতিন শ্রীমতি প্রতিমা রাণী চৌধুরী, তার পুত্র এবং তার ভাইকে মৃত্যুদন্ড, এক জনের আমৃত্যূ কারাদন্ডসহ অপর এক জনের ১০ বছরের কারাদন্ড সেইসাথে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ড দিয়েছে দিনাজপুর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-৩।
১১ মার্চ বুধবার দুপুর সাড়ে ৩ টায় দিনাজপুর জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম রেজাউল বারী ২২জনের স্বাক্ষ্য প্রমান শেষে এ রায় ঘোষনা করেন।
আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার দক্ষিণ সুজাপুর গ্রামের সাধনানন্দ চৌধুরী তার প্রথম স্ত্রী তপতী রানী চৌধুরীর সঙ্গে সংসার করাকালীণ সময়ে তার বিনা অনুমতিতে প্রতীমা রাণী চৌধুরী দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে প্রথম স্ত্রী তপতী রানীকে সাধনানন্দ চৌধুরী ভরণপোষণ দিতেন না। ফলশ্রুতিতে পরিবারে প্রতিনিয়িত ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকত।
এরই জের ধরে ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল দিবাগত রাতে ১নং আসামি পিতা শ্রী সাধনানন্দ চৌধুরী, ২নং আসামি সৎ ভাই শ্রী আকাশ চৌধুরী, ৩ নং আসামি সৎ মা শ্রীমতি প্রতিমা রাণী চৌধুরীসহ আরো ৩/৪জন একে অপরে যোগসাজস করিয়া ৬ এপ্রিল ২০১৭ সালে আনুমানিক রাত নয়টা হতে পরের দিন সকাল আটটার মধ্যে শারীরিক নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করে। আলামত নষ্টের জন্য বাড়ির পার্শ্ববর্তী সন্দীপ মাষ্টারের বাঁশঝাড়ে লাশ গুম করার উদ্দেশ্য পরণে থাকা কাপড়ে আগুণ ধরিয়ে দেয়। ফলে শরীরের অনেক স্থান আগুনে ঝলসে যায়।
এ ঘটনায় নিহতের পুত্র শুভনন্দ চৌধুরী মাতা অভিযোগে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী থানায় পিতা শ্রী সাধনানন্দ চৌধুরী, সৎ মাতা শ্রীমতি প্রতিমা রাণী চৌধুরীসহ পাঁচজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ফুলবাড়ী থানার মামলা নং ৮, তারিখ ০৭-০৪-২০১৭ইং।
দীর্ঘ পাঁচ বছর শুনানীঅন্তে ১১ মার্চ বুধবার দুপুর সাড়ে ৩ টায় দিনাজপুর জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম রেজাউল বারী ২২জনের স্বাক্ষ্য প্রমান শেষে আসামি সৎ মা শ্রীমতি প্রতিমা রাণী চৌধুরী, তারপুত্র শ্রী আকাশ চৌধুরী ও প্রতিমা রাণী চৌধুরীর ভাই কাজল মহন্তকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়। অপর আসামী নিহতের স্বামী ও বাদীর পিতা শ্রী সাধনানন্দ চৌধুরী কে আমৃত্যু কারাদন্ড এবং আরেক আসামী জীবন দাশকে ১০বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান আদেশ দেন। সেই সাথে এক লক্ষ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ডের আদেশ ঘোষণা করে।
রায় পাওয়ার পর নিহতের পুত্র ও মামলার বাদী বাংলাদেশ কাষ্টমস এর সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা শুভনন্দ চৌধুরী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মামলার রায়ে আমি সন্তুষ্ট। যারা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়েছেন তাদের বলব বাংলাদেশেও বিচার আছে। আমি আশা করব উচ্চ আদালতে দোষীদের শাস্তি বহাল থাকবে।
রায়ের বিষয়ে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পিপি এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এই রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই মামলায় পাঁচজন আসামীর মধ্যে তিন জন আসামীর ফাঁসির আদেশ সেইসাথে অপর একজনকে আমৃত্যু কারাদন্ডসহ অপরজনকে ১০বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক।