রুবেল ইসলাম ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: মুজিবশতবর্ষে হতদরিদ্র ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের-২ ঘর বরাদ্দে টাকা না দেওয়ায় হত-দরিদ্রদের ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। গুচ্ছ গ্রামের ঘর হতদরিদ্রকে পেতে হলে ঘর-প্রতি গুনতে হবে ২০-৫০ হাজার টাকা। টাকা না দিলে ঘর পাবেন না কেউ ভুক্তোভুগীদের বরাত দিয়ে এমনটিই বলেছেন ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো: ইমান আলী। এদিকে প্রশাসন বলছেন, তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তোভুগীও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলারহাট ইউনিয়নের বড়দেশ্বরীতে ভূমিহীনদের জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৮ টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সুযোগে সদর উপজেলার ইউএনও, এসিল্যান্ড এর নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ভুমিহীনদের কাছে ২০-৫০ হাজার টাকা করে তুলছেন। সম্পূর্ণ টাকা দিতে না পারায় বেশ কয়েকজনকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্যজনকে ঘর পাইয়ে দেন এ মহলটি। ছাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মপুর ভদ্রপাড়া এলাকার মা-বাবা হারা ১৮ বছর বয়সী এতিম সবুজ তাদের চাহিদা মত টাকা দিতে না পারায় তাকেও ঘর থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঘর বাতিল হওয়া ভুক্তভোগী জনি ইসলাম সদর এসিল্যান্ডকে অভিযোগ করলে তিনি ভুক্তোভুগী জনিকেই পুলিশ দিয়ে আটক করেন এবং বলেন বেশি কথা বললে অন্য মামলায় দিয়ে জেল দিয়ে দিবে বলে অভিযোগ করেন জনি।
ঘর বাতিল হওয়া এতিম সবুজ জানান, আমার মা-বাবা নাই। অন্যের বাড়ির বারান্দায় রাতে ঘুমাই। ইমান আলী মেম্বার গুচ্ছ গ্রামের আমায় একটা ঘর দেয়। পরে এলাকার মিজান, কুদরত আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। মাঠে কাজ করে তাদের ৭ হাজার টাকা দেয় বাকি টাকা দেয়নি বলে ঘর থেকে আমাকে বের করে দেয়। প্রতিবন্ধী রহিমা অভিযোগ করে বলেন, কুদরত, মিজান আমাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। আমি টাকা দিতে পারিনি বলে তারা আমাদের ঘরের তালা ভেঙ্গে আসবাপত্র বের করে দিয়ে অন্যজনকে তুলে দেয়। আমার ঘর ও গেলে আসবাপত্রও গেলো। আমি এর বিচার চাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইমান আলী জানান, ৬নং ওয়ার্ডের সাত জনকে গুচ্ছগ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। যাদের বের করে দেওয়া হয়েছে তারা খুবই গরিব, ভূমিহীন। অন্যের বাড়িতে রাত কাটান। এখন শুনতেছি একটি প্রভাবশালী মহল নাকি টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে পারেনি বলে তাদের ঘর বাতিল। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি সঠিক তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া ও প্রকৃত ভূমিহীনদের যেন তাদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাদের ঘর দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ৭০ ভাগ মানুষ থাকেনা। এসিল্যান্ডের সহকারি এসে তালিকা করে তাদের ঘর বাতিল করেছে। এসময় এসিল্যান্ড আমাদের ডেকে বলেন ঘর খালী আছে নাম দেন। পরে আমি কুদরতকে বলি। ভুমিহীনদের কাছে টাকা নিয়েছেন এমন প্রশ্নের করলে তিনি এড়িয়ে যান।
ভুমিহীনদের নামে বরাদ্দকৃত ঘর গুলো বাতিল কেন করা হলো এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার রহমান এর যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার বলেন, কারো ঘর বাতিল করা হয়নি। যারা অভিযোগ করছে তাদের আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। জনি নামে এক যুবককে বিনা কারণে পুলিশ দিয়ে আটক করেছেন এমন প্রশ্নেন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু তাহের মো: সামসুজ্জামান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেতে কোন টাকা পয়সা লাগে না। কেউ যদি ঘর দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।