আশিকুর রহমান শান্ত ভোলা প্রতিনিধি
ভোলার তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলার মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষা ও নদীর তীর সংক্ষণের জন্য বৃহৎ একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ভোলা-৩ আসনের মেঘনা নদীর তীর সংক্ষণে ১ হাজার ৯৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ঐ এলাকায় এমন খবর আসার পরপরই সাধারণ মানুষকে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। স্থানীয় মানুষ এত বড় প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং স্থানীয় সাংসদ নুরুন্নবী চৌধূরী-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
সুত্রে জানা যায়, তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলার উপকূলীয় বাঁধ পূর্নবাসন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্পে (১ম পর্যায়) ১ হাজার ৯৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাসান নগর ইউনিয়ন থেকে দক্ষিণে তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলা হয়ে চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার বাঁধের উন্নয়ন হবে। বাঁধের উচ্চতা আরো ৫ ফুট বৃদ্ধি করে ১৮ ফুট কার্পেটিং সড়কের প্রস্তাব করা হয়েছে। সড়ক বাঁধের একপাশে ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা নদীর তীর সংরক্ষণ ও অপরপাশে সবুজায়ন করা হবে।
এরপূর্বে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের আমন্ত্রণে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীমসহ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা লালমোহন ও তজুমদ্দিনের মেঘনার ভাঙ্গন কবলিত তীর পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটি হবে ভোলা জেলার নদী ভাঙ্গন রোধের কাজের জন্য সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ১ হাজার ৯৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার প্রকল্পটি ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সম্ভাবতা যাচাই বাছাই শেষে একনেক সভায় মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) চুড়ান্ত অনুমোদন পেল। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি চরফ্যাশন ও মনপুরার নদী ভাঙ্গন রোধের জন্য ১ হাজার ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের লালমোহন (পওর উপ-বিভাগ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, লালমোহন ও তজুমদ্দিনের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ভাঙ্গন কবলিত নদী তীর সংরক্ষণ, দৃষ্টিনন্দন পর্যবেক্ষণ পার্ক, সোলার স্ট্রিট বাতিসহ বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য ১৯ টি প্যাকেজে এ প্রকল্পের কাজ হবে। তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর থেকে লালমোহন উপজেলার বেতুয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩৪.৬৯০ কিলোমিটার নদী তীর, বেড়িবাঁধ উন্নয়নসহ কয়েকটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন ভোলা-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন। তার প্রচেস্টায় অবশেষে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন হয়েছে।
প্রকল্পটির মধ্যে বেড়িবাঁধের রাস্তা ২০ ফিট চওড়া করা হবে। নদী তীর সংরক্ষণের জন্য বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। লালমোহন মঙ্গলসিকদার, গাটিয়া ও তজুমদ্দিনে ৩টি দৃষ্টিনন্দন পর্যবেক্ষণ পার্ক রয়েছে এ প্রকল্পে। এতে নদী তীর এলাকায় পর্যটকদের আগমন আরো বেশি বাড়বে। জেলেদের নৌকা তীরে ভেড়ানোর জন্য ৯টি হারবার (জেটি) নির্মাণ করা হবে। নতুন ৭টি স্লুইজ গেইট নির্মাণেরও প্রস্তাবনা রয়েছে এ প্রকল্পে। পুরো ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ৩৪৭টি সোলার স্ট্রিট বাতি বসানো হবে। এতে মেঘনার তীর থাকবে রাতের বেলায় সোলারের আলোয় আলোকিত। লালমোহনের ঐতিহ্যবাহী একটি খালের নাম বেতুয়া খাল। এক সময় ছিল এ খাল ¯স্রোতস্বিনী। বড় বড় নৌকা চলত এ খাল দিয়ে, চলত ছোট ছোট যাত্রীবাহী লঞ্চ। কিন্তু কালের আবর্তে বেতুয়া খাল তার যৌবন হারিয়েছে। মরা খালে পরিণত হয়েছে বেতুয়া। বেতুয়া খালের হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে ১৯ কিলোমিটার খাল খনন কাজ হবে এ প্রকল্পে।
এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে লালমোহন-তজুমদ্দিনের দীর্ঘদিনের মেঘনার নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে এই এলাকার নদীর তীরবর্তী সকল শ্রেণির মানুষজন। দীর্ঘদিন ধরে মেঘনার কড়াল গ্রাসে ঘরবাড়ি হারানো মানুষের স্বস্তির শেষ যায়গা হয়ে উঠবে মেঘনার বেড়িবাঁধ। প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ায় লালমোহন-তজুমদ্দিনের মেঘনা পাড়ের মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।
সাংসদ নুরুন্নবী চৌধূরী জানান, এ প্রকল্পটি এলাকার মানুষের প্রানের দাবী ও আমার নির্বাচনী অঙ্গিকার। ভোলার মানুষকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় এবং এ যাবৎকালে জেলার সবচেয়ে বড় প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় এলাকার মানুষের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলেই এদেশে উন্নয়ন হয়। তাই এ প্রকল্পের কারনে ভোলার মানুষ বারবার আওয়ামীলীগকে ভোট দিবে। ইতিপূর্বেও প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য তজুমদ্দিনে ৬শ’ কোটি এবং লালমোহনে ২শ’ ৩২ কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করা হয়।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেষ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলন করার পর এ তথ্য টিভিতে প্রচারের পরপরই মানুষের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখা যায়।