মোঃ শহিদুল ইসলাম, টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধিঃ
শুকনো মৌসুমে যমুনায় জেগে ওঠা ছোট-বড় বালুচর বা দ্বীপ। আর এ ধূ-ধূ বালুচরে বিভিন্ন জাতের অর্থকরি রবি ফসলে ভরপুরে যেন সবুজের বিশাল সমারোহ। বালুচরে সবুজ প্রকৃতি ফসলের মাঝে মূল্যবান ওষুধি ফসল নামে যে ফসল পরিচিত সেটি হলো কালোজিরা।
ওষুধিগুণে ভরা অর্থকরি ফসলটি যমুনা চরাঞ্চলে বিগত বছরে তেমন চাষ না হলেও এ বছর ব্যাপকহারে চাষসহ আগ্রহ দেখা দিয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় যমুনা চরাঞ্চলের কৃষকদের। মানুষের কাছে ব্যাপক চাহিদা থাকায় চাষিরা একে তুলনা করছেন সোনার সঙ্গে। বেশ পরিচিতও লাভ করছে কালো সোনা নামে এই কালোজিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর তেমন আগ্রহ না থাকলেও এ বছর কালোজিরা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। তাই এ বছর ১৮ হেক্টর জমিতে কালোজিরা চাষ করা হয়েছে।
যমুনা চরাঞ্চলে বর্তমানে চাষ হচ্ছে বারি কালোজিরা-১, জাতটির জীবনকাল ১৩৫-১৪৫ দিন। এর উচ্চতা ৫৫-৬০ সেন্টিমিটার। প্রতিটি গাছে প্রায় ৫-৭টি প্রাথমিক শাখা এবং ২০-২৫টি ফল থাকে। প্রতিটি ফলের ভেতরে প্রায় ৭৫-৮০টি বীজ থাকে যার ওজন প্রায় ০.২০-০.২৭ গ্রাম।
এ জাতের প্রতিটি গাছে প্রায় ৫-৭ গ্রাম বীজ হয়ে থাকে এবং ১০০০ বীজের ওজন প্রায় ৩.০০-৩.২৫ গ্রাম। হেক্টরপ্রতি এর গড় ফলন ০.৮০-১.০ টন। স্থানীয় জাতের তুলনায় এর রোগবালাই খুবই কম।
সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। বিঘায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ মণ উৎপাদন হবে। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ কালোজিরার দাম ১৬ হাজার টাকা।
অর্জুনা ইউনিয়নের ভরুয়া গ্রামের কালোজিরা চাষি লাল মিয়া বলেন, এ বছর এক বিঘা জমিতে কালোজিরা চাষ করছি। ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি প্রায় ৪ মণ কালোজিরা উৎপাদন হবে।
গাবসারার রুলীপাড়া গ্রামের রহিম বলেন, আমার জমিতে অন্যান্য ফসলের মধ্যে বন্ধু ফসল হিসেবে কালোজিরা ফসল বুনেছি। গাছগুলো বেশ বড় হয়ে ফুল ধরেছে। আশা করছি কালোজিরা চাষে লাভবান হতে পারবো।
কালিপুর গ্রামের আব্দুল আলিম জানান, চরাঞ্চলের আবহাওয়া কালোজিরা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ বছর জমিতে কালোজিরার যে ফলন দেখছি তাতে বাম্পার ফলন হবে। আগামীতে আরো বেশি করে কালোজিরা চাষ করবো।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবির বলেন, কৃষকদের মাঝে কম খরচে বেশি লাভের জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মসলা জাতীয় ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে বলেই এ বছর যমুনা চরাঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপক হারে কালোজিরা চাষ করেছে। আশা করছি এ বছর প্রতি একরে ১৩ থেকে ১৪ মণ কালোজিরা উৎপাদন হবে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও খুশি। আগামী বছর হয়তো কালোজিরা চরাঞ্চলের কৃষকদের কাছে “কালো সোনা” নামে পরিচিতি লাভ করবে।